০৫:৪০ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৪ অগাস্ট ২০২৫
“যেখানে সেখানে যাকে তাকে ধরে নেওয়া হচ্ছে, যাকে তাকে বিনা বিচারে আটক করা হচ্ছে, জামিন দেওয়া হচ্ছে না,” বলেন তিনি।

সরকারপ্রধান ‘চান না’ নির্বাচন হোক: জিএম কাদের

মইদুল হাসান - জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক : বিডিপলিটিক্স টোয়েন্টিফোর ডটকম
  • আপডেট সময় ১০:২৬:১০ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৩ অগাস্ট ২০২৫
  • / ২৮ বার পড়া হয়েছে

দলের সমাবেশে বক্তব্য রাখেন জাতীয় পার্টির চেয়ার‌ম্যান জিএম কাদের।

 

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন হোক, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান তা ‘চান না’ বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের।

শনিবার বিকালে দলের সমাবেশে তিনি প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও বিচার বিভাগ নিয়ে সরকারের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের সমালোচনা করে বলেন, নির্বাচনের কোনো পরিবেশ তিনি ‘দেখছেন না’।

জিএম কাদের বলেন, “দেশে আইনশৃঙ্খলা সম্পূর্ণভাবে ভেঙে পড়ল, একটি হানাহানি, মারামারি-কাটাকাটির দেশ তৈরি হল, এখন আপনি নির্বাচন দিচ্ছেন।

“এই সরকার নির্বাচন দেওয়ার জন্য যথেষ্টভাবে উপযুক্ত? উপযুক্ত বলে আমি মনে করি না।

গেল ৫ অগাস্ট আগামী ফেব্রুয়ারিতে রোজার আগে ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন আয়োজনের ঘোষণা দিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস ।

বিএনপি এ ঘোষণাকে স্বাগত জানালেও অভ্যুত্থানের সামনের সারিতে থাকা নেতাদের গড়া দল জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপি নতুন সংবিধান লিখতে গণপরিষদ নির্বাচন দাবি করেছে।

জামায়াতে নির্বাচনের বিষয়টিকে ইতিবাচক হিসেবে নেওয়ার কথা বললেও তারা বলছে, মাঠে সব দলের সমান সুযোগ নেই।

আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়েও উদ্বেগের কথা বলেছেন কেউ কেউ।

এ অবস্থার দিকে ইঙ্গিত করে জিএম কাদের বলেন, “নির্বাচনের জন্য পুলিশ আর প্রশাসন, বিচার বিভাগের দায়িত্ব থাকে। এগুলোকে ওনারা (সরকার) বিভিন্নভাবে মনোবল ভেঙে দিয়েছেন। বিভিন্নভাবে আইনঙ্খলা বাহিনীর হাজার হাজার মানুষকে মামলা মোকাদ্দমা দিয়ে অন্যায়ভাবে চাকরিচ্যুত করেছে।

“তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন নির্যাতনমূলক কাজ করা হচ্ছে। পালিয়ে আছে অনেকে আর যে জায়গাগুলো খালি হচ্ছে সেখানে বিভিন্ন দলের লোককে ঢুকিয়ে দিয়ে দলীয়করণ করা হচ্ছে। মনোবলশূন্য একটি বাহিনী গঠন করা হয়েছে। এই বাহিনীর দ্বারা কখনোই নির্বাচন সঠিকভাবে হতে পারে না।”

নির্বাচন সঠিকভাবে দেওয়ার এই সরকারের কোনো ইচ্ছা আছে কি না তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করে তিনি বলেন, “আপনি (সরকার প্রধান) যদি নির্বাচন অবাধ করতে চান, তাহলে সকলকে অংশগ্রহণ করতে দিতে হবে। আপনি তো সকলকে অংশগ্রহণ করতে দিবেন না। শুধু সরকারি দল, তাদেরকেই অংশগ্রহণ করতে দিবেন। তাহলে অবাধ হলো কীভাবে?

“আর নিরপেক্ষ নির্বাচন দিতে পারবেন? নিরপেক্ষতার জন্য আপনার নিজের দলকে আপনি রাখতে পারেন না, আপনার নিজের দলের লোক এখনো নিবন্ধনের বাইরে আছে। তাদের পুলিশের প্রটেকশন শুধু নয়, আর্মি দিয়ে প্রটেকশন দেওয়া হচ্ছে। এটা নিয়ে আপনি কীভাবে নিরপেক্ষ নির্বাচন দিবেন।”

এনসিপির প্রতি ইঙ্গিত দিয়ে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান বলেন, “আপনি কি আসলেই নির্বাচন দিতে চান? সরকারি দলের মধ্যে এখন দেখা যাচ্ছে, তারা, একটি অংশ বলছে, ‘আমরা চাই সংস্কার, বিচার না হলে আমরা নির্বাচন করব না’। সংস্কার একটি প্রক্রিয়া যেটার কোনো শেষ নাই।”

সরকারের বাইরে বড় দুটি দলও সরকারের সকল সুযোগ সুবিধা নিয়ে কাজ করছে দাবি করে জিএম কাদের বলেন, “দেশ কে চালাচ্ছে আমরা কেউ নিশ্চিতভাবে বলতে পারছি না। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দেশ চালাচ্ছে, এটাই আমরা আনুষ্ঠানিকভাবে জানি। আবার শুনি যে, সরকারের ভিতরে আরও একটি সরকার আছে। সেই সরকারও নাকি দেশ পরিচালনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।

“একটি সরকারি দল হলো- তারা ঘোষণা দিয়ে সরকারি দল। যার কিছু অংশ এখন সরকারে, কিছু অংশে বাইরে আছে। আর বড় দুটি দল আছে, তারা সরকারি দলের সব ধরনের সুযোগ সুবিধা নিয়ে কাজ করছেন। একটি হল জামায়াত আর একটি হল… আছে। এছাড়া অনেকে কোনদিকে নির্বাচনই করেননি তারাও কিন্তু সরকারি দলের সুযোগ সুবিধা লাভ করছে।”

এর বাইরে যারা আছেন তারা নির্বাচন করতে পারবে কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তিনি।

নির্বাচনের কোনো পরিবেশ নেই দাবি করে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান বলেন, “পরবর্তী নির্বাচন হবে কি হবে না, সেটা নিয়ে সবাই চিন্তায় আছে। নির্বাচন হওয়ার কোনো পরিবেশ আমরা দেখতে পাচ্ছি না।”

জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যানসহ নেতাকর্মীদের নামে করা মামলা প্রত্যাহার ও আটককৃতদের মুক্তির দাবিতে কাকরাইলে দলের কার্যালয়ের সামনে আয়োজিত সমাবেশে সভাপতির বক্তব্য রাখছিলেন জিএম কাদের।

ন্যায় বিচার না পাওয়া ও অবিচারের অভিযোগ তুলে তিনি বলেন, “যেখানে সেখানে যাকে তাকে ধরে নেওয়া হচ্ছে, যাকে তাকে বিনা বিচারে আটক করা হচ্ছে, জামিন দেওয়া হচ্ছে না। বিভিন্নভাবে মানুষকে নির্যাতন করা হচ্ছে, নিপীড়ন করা হচ্ছে এবং মব তৈরি করে মানুষকে অত্যাচার করা হচ্ছে।”

সরকারের কর্মকাণ্ডে বিরক্ত মানুষের মুখপাত্র হিসেবে জাতীয় পার্টি দাঁড়িয়েছে দাবি করে তিনি বলেন, “এই কারণেই জাতীয় পার্টির উপর অত্যাচার। সরকারের একটা মহল তাই মামলা দিচ্ছে।”

গত বছরের ৫ অগাস্ট ছাত্র-গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটে। সে দিন দেশে ছেড়ে ভারতে চলে যান ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

আওয়ামী লীগের সরকারের তিন মেয়াদে বিরোধী দলে বসা জাতীয় পার্টি গণঅভ্যুত্থানের পর বিপাকে পড়ে।

 

‘দেশে কী বিরোধী কণ্ঠস্বর থাকবে না?’

বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে দমনপীড়নের অভিযোগ তুলে সাবেক স্বৈরশাসক এরশাদের গড়া দলটির চেয়ারম্যান ও তার ভাই জিএম কাদের বলেন, “গণতন্ত্রের দিকে এগিয়ে যাওয়ার কথা বলছেন, অথচ আপনারা যে পথে যাচ্ছেন, একই কাজে করেছিল এর আগের শেখ হাসিনা সরকার। একই কাজ করেছিল, কিছু লোক সরকারি সুযোগ সুবিধা নিয়েছিল। এখন আমাদের জেল জুলুম দিচ্ছেন।”

বিরোধী মতের প্রতি সরকারের মনোভাবের সমালোচনা করে তিনি বলেন, “বিরোধী রাজনীতি থাকবে না, তাহলে এখন প্রশ্ন আসে, সেই কারণে যদি হয়, সেটাই যদি হয়, তাহলে হাসিনা কি অপরাধ করেছেন। আপনারা যদি একই কাজ করেন, তাহলে পরিবর্তন কি দেখলাম।”

সাবেক এই মন্ত্রী বলেন, “আপনারা (সরকার) আগের তুলনায় শক্তিশালীভাবে দেশকে ফ্যাসিবাদের দিকে নিতে যাচ্ছেন। ফ্যাসিবাদ তৈরি করেছেন।”

সরকার ব্যর্থ হয়েছে দাবি করে জিএম কাদের বলেন, “এর প্রমাণ হল-যার রিকশাওয়ালা কাছে যান, রিকশা উপরে বসেন তাদের কাছে যান, মিল ফ্যাক্টরিতে যান, শপিং সেন্টারে যান। বেশিরভাগ মানুষ বলছে, আমরা আগেই তো ভালো ছিলাম। আগেই তো ভালো ছিলাম এখনকার চেয়ে ভালো।”

“তখন যেটা ছিলাম সেটা ভালো ছিলাম বলা যায় না, এখনকার তুলনায় ভালো ছিলাম। এখন যদি বেশিরভাগ লোক এই কথাতে যায় তার মানে বেশিরভাগ লোক বর্তমান পরিবর্তনদ, বিপ্লব, সরকারবিরোধী আন্দোলনের সাফল্যে তারা খুশি হতে পারছে না। যদিও মানুষের মধ্যে একটা স্বতঃস্ফূর্ততা ছিল, সরকারের পতনের পরে। একটি সুন্দর দেশ হবে যে দেশে সুন্দর একটি নির্বাচন হবে।”

তিনি বলেন, “আর ক্ষতি করেন না। দেশটাকে অন্য কাউকে দিয়ে…যারা ভালো করতে পারবে, তাদেরকে দিয়ে আপনারা বিদায় হন। আমরা রক্ষা পাই। দেশ রক্ষা পাওয়ার চেষ্টা করুন। আপনাদের দ্বারা ভালো কিছু হওয়ার সম্ভাবনা আমরা দেখি না এবং সামনের দিকে ভালো কিছু হবে না বলে আমরা মোটামুটি নিশ্চিত।”

সমাবেশে জাতীয় পার্টি মহাসচিব শামীম হায়দার পাটোয়ারী, কো- চেয়ারম্যান মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা, প্রেসিডিয়াম সদস্য মীর আব্দুস সবুর আসুদ, সাইফুদ্দিন আহমেদ মিলন, মো. রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া, আলমগীর সিকদার লোটন বক্তব্য রাখেন।

 

 

মইদুল হাসান – জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক : বিডিপলিটিক্স টোয়েন্টিফোর ডটকম

নিউজটি শেয়ার করুন

“যেখানে সেখানে যাকে তাকে ধরে নেওয়া হচ্ছে, যাকে তাকে বিনা বিচারে আটক করা হচ্ছে, জামিন দেওয়া হচ্ছে না,” বলেন তিনি।

সরকারপ্রধান ‘চান না’ নির্বাচন হোক: জিএম কাদের

আপডেট সময় ১০:২৬:১০ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৩ অগাস্ট ২০২৫

 

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন হোক, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান তা ‘চান না’ বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের।

শনিবার বিকালে দলের সমাবেশে তিনি প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও বিচার বিভাগ নিয়ে সরকারের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের সমালোচনা করে বলেন, নির্বাচনের কোনো পরিবেশ তিনি ‘দেখছেন না’।

জিএম কাদের বলেন, “দেশে আইনশৃঙ্খলা সম্পূর্ণভাবে ভেঙে পড়ল, একটি হানাহানি, মারামারি-কাটাকাটির দেশ তৈরি হল, এখন আপনি নির্বাচন দিচ্ছেন।

“এই সরকার নির্বাচন দেওয়ার জন্য যথেষ্টভাবে উপযুক্ত? উপযুক্ত বলে আমি মনে করি না।

গেল ৫ অগাস্ট আগামী ফেব্রুয়ারিতে রোজার আগে ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন আয়োজনের ঘোষণা দিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস ।

বিএনপি এ ঘোষণাকে স্বাগত জানালেও অভ্যুত্থানের সামনের সারিতে থাকা নেতাদের গড়া দল জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপি নতুন সংবিধান লিখতে গণপরিষদ নির্বাচন দাবি করেছে।

জামায়াতে নির্বাচনের বিষয়টিকে ইতিবাচক হিসেবে নেওয়ার কথা বললেও তারা বলছে, মাঠে সব দলের সমান সুযোগ নেই।

আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়েও উদ্বেগের কথা বলেছেন কেউ কেউ।

এ অবস্থার দিকে ইঙ্গিত করে জিএম কাদের বলেন, “নির্বাচনের জন্য পুলিশ আর প্রশাসন, বিচার বিভাগের দায়িত্ব থাকে। এগুলোকে ওনারা (সরকার) বিভিন্নভাবে মনোবল ভেঙে দিয়েছেন। বিভিন্নভাবে আইনঙ্খলা বাহিনীর হাজার হাজার মানুষকে মামলা মোকাদ্দমা দিয়ে অন্যায়ভাবে চাকরিচ্যুত করেছে।

“তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন নির্যাতনমূলক কাজ করা হচ্ছে। পালিয়ে আছে অনেকে আর যে জায়গাগুলো খালি হচ্ছে সেখানে বিভিন্ন দলের লোককে ঢুকিয়ে দিয়ে দলীয়করণ করা হচ্ছে। মনোবলশূন্য একটি বাহিনী গঠন করা হয়েছে। এই বাহিনীর দ্বারা কখনোই নির্বাচন সঠিকভাবে হতে পারে না।”

নির্বাচন সঠিকভাবে দেওয়ার এই সরকারের কোনো ইচ্ছা আছে কি না তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করে তিনি বলেন, “আপনি (সরকার প্রধান) যদি নির্বাচন অবাধ করতে চান, তাহলে সকলকে অংশগ্রহণ করতে দিতে হবে। আপনি তো সকলকে অংশগ্রহণ করতে দিবেন না। শুধু সরকারি দল, তাদেরকেই অংশগ্রহণ করতে দিবেন। তাহলে অবাধ হলো কীভাবে?

“আর নিরপেক্ষ নির্বাচন দিতে পারবেন? নিরপেক্ষতার জন্য আপনার নিজের দলকে আপনি রাখতে পারেন না, আপনার নিজের দলের লোক এখনো নিবন্ধনের বাইরে আছে। তাদের পুলিশের প্রটেকশন শুধু নয়, আর্মি দিয়ে প্রটেকশন দেওয়া হচ্ছে। এটা নিয়ে আপনি কীভাবে নিরপেক্ষ নির্বাচন দিবেন।”

এনসিপির প্রতি ইঙ্গিত দিয়ে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান বলেন, “আপনি কি আসলেই নির্বাচন দিতে চান? সরকারি দলের মধ্যে এখন দেখা যাচ্ছে, তারা, একটি অংশ বলছে, ‘আমরা চাই সংস্কার, বিচার না হলে আমরা নির্বাচন করব না’। সংস্কার একটি প্রক্রিয়া যেটার কোনো শেষ নাই।”

সরকারের বাইরে বড় দুটি দলও সরকারের সকল সুযোগ সুবিধা নিয়ে কাজ করছে দাবি করে জিএম কাদের বলেন, “দেশ কে চালাচ্ছে আমরা কেউ নিশ্চিতভাবে বলতে পারছি না। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দেশ চালাচ্ছে, এটাই আমরা আনুষ্ঠানিকভাবে জানি। আবার শুনি যে, সরকারের ভিতরে আরও একটি সরকার আছে। সেই সরকারও নাকি দেশ পরিচালনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।

“একটি সরকারি দল হলো- তারা ঘোষণা দিয়ে সরকারি দল। যার কিছু অংশ এখন সরকারে, কিছু অংশে বাইরে আছে। আর বড় দুটি দল আছে, তারা সরকারি দলের সব ধরনের সুযোগ সুবিধা নিয়ে কাজ করছেন। একটি হল জামায়াত আর একটি হল… আছে। এছাড়া অনেকে কোনদিকে নির্বাচনই করেননি তারাও কিন্তু সরকারি দলের সুযোগ সুবিধা লাভ করছে।”

এর বাইরে যারা আছেন তারা নির্বাচন করতে পারবে কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তিনি।

নির্বাচনের কোনো পরিবেশ নেই দাবি করে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান বলেন, “পরবর্তী নির্বাচন হবে কি হবে না, সেটা নিয়ে সবাই চিন্তায় আছে। নির্বাচন হওয়ার কোনো পরিবেশ আমরা দেখতে পাচ্ছি না।”

জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যানসহ নেতাকর্মীদের নামে করা মামলা প্রত্যাহার ও আটককৃতদের মুক্তির দাবিতে কাকরাইলে দলের কার্যালয়ের সামনে আয়োজিত সমাবেশে সভাপতির বক্তব্য রাখছিলেন জিএম কাদের।

ন্যায় বিচার না পাওয়া ও অবিচারের অভিযোগ তুলে তিনি বলেন, “যেখানে সেখানে যাকে তাকে ধরে নেওয়া হচ্ছে, যাকে তাকে বিনা বিচারে আটক করা হচ্ছে, জামিন দেওয়া হচ্ছে না। বিভিন্নভাবে মানুষকে নির্যাতন করা হচ্ছে, নিপীড়ন করা হচ্ছে এবং মব তৈরি করে মানুষকে অত্যাচার করা হচ্ছে।”

সরকারের কর্মকাণ্ডে বিরক্ত মানুষের মুখপাত্র হিসেবে জাতীয় পার্টি দাঁড়িয়েছে দাবি করে তিনি বলেন, “এই কারণেই জাতীয় পার্টির উপর অত্যাচার। সরকারের একটা মহল তাই মামলা দিচ্ছে।”

গত বছরের ৫ অগাস্ট ছাত্র-গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটে। সে দিন দেশে ছেড়ে ভারতে চলে যান ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

আওয়ামী লীগের সরকারের তিন মেয়াদে বিরোধী দলে বসা জাতীয় পার্টি গণঅভ্যুত্থানের পর বিপাকে পড়ে।

 

‘দেশে কী বিরোধী কণ্ঠস্বর থাকবে না?’

বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে দমনপীড়নের অভিযোগ তুলে সাবেক স্বৈরশাসক এরশাদের গড়া দলটির চেয়ারম্যান ও তার ভাই জিএম কাদের বলেন, “গণতন্ত্রের দিকে এগিয়ে যাওয়ার কথা বলছেন, অথচ আপনারা যে পথে যাচ্ছেন, একই কাজে করেছিল এর আগের শেখ হাসিনা সরকার। একই কাজ করেছিল, কিছু লোক সরকারি সুযোগ সুবিধা নিয়েছিল। এখন আমাদের জেল জুলুম দিচ্ছেন।”

বিরোধী মতের প্রতি সরকারের মনোভাবের সমালোচনা করে তিনি বলেন, “বিরোধী রাজনীতি থাকবে না, তাহলে এখন প্রশ্ন আসে, সেই কারণে যদি হয়, সেটাই যদি হয়, তাহলে হাসিনা কি অপরাধ করেছেন। আপনারা যদি একই কাজ করেন, তাহলে পরিবর্তন কি দেখলাম।”

সাবেক এই মন্ত্রী বলেন, “আপনারা (সরকার) আগের তুলনায় শক্তিশালীভাবে দেশকে ফ্যাসিবাদের দিকে নিতে যাচ্ছেন। ফ্যাসিবাদ তৈরি করেছেন।”

সরকার ব্যর্থ হয়েছে দাবি করে জিএম কাদের বলেন, “এর প্রমাণ হল-যার রিকশাওয়ালা কাছে যান, রিকশা উপরে বসেন তাদের কাছে যান, মিল ফ্যাক্টরিতে যান, শপিং সেন্টারে যান। বেশিরভাগ মানুষ বলছে, আমরা আগেই তো ভালো ছিলাম। আগেই তো ভালো ছিলাম এখনকার চেয়ে ভালো।”

“তখন যেটা ছিলাম সেটা ভালো ছিলাম বলা যায় না, এখনকার তুলনায় ভালো ছিলাম। এখন যদি বেশিরভাগ লোক এই কথাতে যায় তার মানে বেশিরভাগ লোক বর্তমান পরিবর্তনদ, বিপ্লব, সরকারবিরোধী আন্দোলনের সাফল্যে তারা খুশি হতে পারছে না। যদিও মানুষের মধ্যে একটা স্বতঃস্ফূর্ততা ছিল, সরকারের পতনের পরে। একটি সুন্দর দেশ হবে যে দেশে সুন্দর একটি নির্বাচন হবে।”

তিনি বলেন, “আর ক্ষতি করেন না। দেশটাকে অন্য কাউকে দিয়ে…যারা ভালো করতে পারবে, তাদেরকে দিয়ে আপনারা বিদায় হন। আমরা রক্ষা পাই। দেশ রক্ষা পাওয়ার চেষ্টা করুন। আপনাদের দ্বারা ভালো কিছু হওয়ার সম্ভাবনা আমরা দেখি না এবং সামনের দিকে ভালো কিছু হবে না বলে আমরা মোটামুটি নিশ্চিত।”

সমাবেশে জাতীয় পার্টি মহাসচিব শামীম হায়দার পাটোয়ারী, কো- চেয়ারম্যান মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা, প্রেসিডিয়াম সদস্য মীর আব্দুস সবুর আসুদ, সাইফুদ্দিন আহমেদ মিলন, মো. রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া, আলমগীর সিকদার লোটন বক্তব্য রাখেন।

 

 

মইদুল হাসান – জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক : বিডিপলিটিক্স টোয়েন্টিফোর ডটকম