০৫:৩৩ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৪ অগাস্ট ২০২৫
রোববার পরবর্তী রিমান্ড শুনানির দিন রেখে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

সহকর্মীকে ধর্ষণের মামলা: আদালতে যা বললেন কনস্টেবল সাফিউর

মইদুল হাসান - জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক : বিডিপলিটিক্স টোয়েন্টিফোর ডটকম
  • আপডেট সময় ১০:১২:৩৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৩ অগাস্ট ২০২৫
  • / ২৭ বার পড়া হয়েছে

আদালতে কনস্টেবল সাফিউর রহমান।

 

আদালতে আসামির কাঠগড়ায় এক কোণায় দাঁড়িয়ে ছিলেন কনস্টেবল সাফিউর রহমান, তার বিরুদ্ধে ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানা ব্যারাকে সহকর্মীকে ‘ধর্ষণের’ অভিযোগে মামলা হয়েছে।

শনিবার তাকে আদালতে হাজির করে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ওই থানার এসআই জুলফিকার আলী পাঁচ দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন।

সাফিউরের পক্ষে আইনজীবী না থাকায় ঢাকার জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ সালেহ তার বক্তব্য শুনতে চান।

এক বছর আগে বিয়ের পিড়িতে বসা এই কনস্টেবল আদালতে বলেন, তার বিরুদ্ধে যে সহকর্মী অভিযোগ করেছেন তাকে বিয়ে করে সংসার করতে চান তিনি।

আদালত বাদীর সঙ্গে যোগাযোগ করে মামলা মিটিয়ে নেওয়ার ‘পরামর্শ’ দিয়ে সাফিউরকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

ধর্ষণের অভিযোগে মামলা দায়েরের পর শুক্রবার বিকেল ৩টার দিকে ঢাকার মিল ব্যারাক পুলিশ লাইন থেকে ৩০ বছর বয়সী সাফিউরকে গ্রেপ্তার করে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানা পুলিশ।

তার আগে মঙ্গলবার থানার ওসির কাছে একজন নারী কনস্টেবল সহকর্মী সাফিউরের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ করেন।

তিনি অভিযো করে বলেছেন, তিনি গত ফেব্রুয়ারিতে আশুলিয়া থানা থেকে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানায় যোগ দেন। তাকে পাঁচ মাস ধরে ‘বিয়ের প্রলোভনে ধর্ষণ করে আসছেন’ সাফিউর।

বৃহস্পতিবার ঢাকার পুলিশ সুপারের তরফে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, তিনি বিষয়টি জানার পর তাৎক্ষণিকভাবে উভয় পুলিশ সদস্যকে জেলা পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করেন এবং ঘটনাটি তদন্তের জন্য তদন্তকারী কর্মকর্তা নিয়োগ করেছেন।

সেদিন কনস্টেবল সাফিউরের নাম না বলেই এ বিষয়ে ইতোমধ্যে তদন্ত শুরু হওয়ার কথা জানানো হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “পুলিশের কোনো সদস্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ উত্থাপিত হলে তদন্ত সাপেক্ষে বিভাগীয় ও আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়ে থাকে।”

এ ঘটনায় ওই কনস্টেবল ‘দোষী সাব্যস্ত হলে’ তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় এবং আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করার কথাও বলা হয়।

পরদিন শুক্রবার ধর্ষণের অভিযোগ এনে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানায় মামলা করেন ওই নারী কনস্টেবল।

শনিবার ঢাকার জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালতে হাজির করার পর রিমান্ড আবেদনের শুনানিতে বিচারক আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ সালেহ এই কনস্টেবলের কাছে ঘটনার বিষয়ে জানতে চান। তাকে সামনে আসতে বলেন।

পরে সাফিউর সামনে এগিয়ে এসে বলেন, তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক ছিল। তিনি তাকে (নারী কনস্টেবলকে) বিয়ে করবেন।

আগে বিয়ে করেছেন কি না আদালত জানতে চাইলে তিনি বলেন, “গ্রামের বাড়িতে স্ত্রী আছে। এক বছর আগে বিয়ে করেছি।”

স্ত্রীকে রেখে আরেকজনের সাথে প্রেম করেন কেন? বিচারকের এই প্রশ্নের জবাব না দিয়ে সাফিউর বলেন, ইসলামি শরিয়া অনুযায়ী তাকে বিয়ে করবেন।

এসময় আদালত তাকে বলেন, “সে (ভুক্তভোগী) তো মামলা দিয়েছে।”

ওই মেয়ের সাথে যোগাযোগ করে মামলা সমাধানের পরামর্শ দিয়ে আদালত বলেন, “বউ রেখে আরেক নারীর দিকে চোখ যায় কেমনে?”

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আদালতে উপস্থিত ছিলেন। তার উপস্থিতিতে রিমান্ড শুনানির দিন রোববার ধার্য করে সাফিউরকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন আদালত।

মামলায় নারী কনস্টেবল অভিযোগ করেছেন, ‘বিয়ের প্রলোভন’ দেখিয়ে সাফিউর রহমান ১৫ অগাস্ট রাত আড়াইটা থেকে ৪টা পর্যন্ত দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানা ভবনের দ্বিতীয় তলায় দক্ষিণ পাশের নারী ব্যারাকে তার শয়নকক্ষে তাকে ‘ধর্ষণ’ করেন।

তার অভিযোগ, একইভাবে বিগত পাঁচ মাসে সপ্তাহে দুইবার করে তাকে ধর্ষণ করার পাশাপাশি তাদের অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ভিডিও চিত্র তার ব্যবহৃত আইফোনে ধারণ করেন সাফিউর। এই ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ার ‘হুমকিও’ দেন তিনি।

 

 

 

মইদুল হাসান – জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক : বিডিপলিটিক্স টোয়েন্টিফোর ডটকম

নিউজটি শেয়ার করুন

রোববার পরবর্তী রিমান্ড শুনানির দিন রেখে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

সহকর্মীকে ধর্ষণের মামলা: আদালতে যা বললেন কনস্টেবল সাফিউর

আপডেট সময় ১০:১২:৩৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৩ অগাস্ট ২০২৫

 

আদালতে আসামির কাঠগড়ায় এক কোণায় দাঁড়িয়ে ছিলেন কনস্টেবল সাফিউর রহমান, তার বিরুদ্ধে ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানা ব্যারাকে সহকর্মীকে ‘ধর্ষণের’ অভিযোগে মামলা হয়েছে।

শনিবার তাকে আদালতে হাজির করে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ওই থানার এসআই জুলফিকার আলী পাঁচ দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন।

সাফিউরের পক্ষে আইনজীবী না থাকায় ঢাকার জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ সালেহ তার বক্তব্য শুনতে চান।

এক বছর আগে বিয়ের পিড়িতে বসা এই কনস্টেবল আদালতে বলেন, তার বিরুদ্ধে যে সহকর্মী অভিযোগ করেছেন তাকে বিয়ে করে সংসার করতে চান তিনি।

আদালত বাদীর সঙ্গে যোগাযোগ করে মামলা মিটিয়ে নেওয়ার ‘পরামর্শ’ দিয়ে সাফিউরকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

ধর্ষণের অভিযোগে মামলা দায়েরের পর শুক্রবার বিকেল ৩টার দিকে ঢাকার মিল ব্যারাক পুলিশ লাইন থেকে ৩০ বছর বয়সী সাফিউরকে গ্রেপ্তার করে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানা পুলিশ।

তার আগে মঙ্গলবার থানার ওসির কাছে একজন নারী কনস্টেবল সহকর্মী সাফিউরের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ করেন।

তিনি অভিযো করে বলেছেন, তিনি গত ফেব্রুয়ারিতে আশুলিয়া থানা থেকে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানায় যোগ দেন। তাকে পাঁচ মাস ধরে ‘বিয়ের প্রলোভনে ধর্ষণ করে আসছেন’ সাফিউর।

বৃহস্পতিবার ঢাকার পুলিশ সুপারের তরফে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, তিনি বিষয়টি জানার পর তাৎক্ষণিকভাবে উভয় পুলিশ সদস্যকে জেলা পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করেন এবং ঘটনাটি তদন্তের জন্য তদন্তকারী কর্মকর্তা নিয়োগ করেছেন।

সেদিন কনস্টেবল সাফিউরের নাম না বলেই এ বিষয়ে ইতোমধ্যে তদন্ত শুরু হওয়ার কথা জানানো হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “পুলিশের কোনো সদস্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ উত্থাপিত হলে তদন্ত সাপেক্ষে বিভাগীয় ও আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়ে থাকে।”

এ ঘটনায় ওই কনস্টেবল ‘দোষী সাব্যস্ত হলে’ তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় এবং আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করার কথাও বলা হয়।

পরদিন শুক্রবার ধর্ষণের অভিযোগ এনে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানায় মামলা করেন ওই নারী কনস্টেবল।

শনিবার ঢাকার জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালতে হাজির করার পর রিমান্ড আবেদনের শুনানিতে বিচারক আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ সালেহ এই কনস্টেবলের কাছে ঘটনার বিষয়ে জানতে চান। তাকে সামনে আসতে বলেন।

পরে সাফিউর সামনে এগিয়ে এসে বলেন, তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক ছিল। তিনি তাকে (নারী কনস্টেবলকে) বিয়ে করবেন।

আগে বিয়ে করেছেন কি না আদালত জানতে চাইলে তিনি বলেন, “গ্রামের বাড়িতে স্ত্রী আছে। এক বছর আগে বিয়ে করেছি।”

স্ত্রীকে রেখে আরেকজনের সাথে প্রেম করেন কেন? বিচারকের এই প্রশ্নের জবাব না দিয়ে সাফিউর বলেন, ইসলামি শরিয়া অনুযায়ী তাকে বিয়ে করবেন।

এসময় আদালত তাকে বলেন, “সে (ভুক্তভোগী) তো মামলা দিয়েছে।”

ওই মেয়ের সাথে যোগাযোগ করে মামলা সমাধানের পরামর্শ দিয়ে আদালত বলেন, “বউ রেখে আরেক নারীর দিকে চোখ যায় কেমনে?”

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আদালতে উপস্থিত ছিলেন। তার উপস্থিতিতে রিমান্ড শুনানির দিন রোববার ধার্য করে সাফিউরকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন আদালত।

মামলায় নারী কনস্টেবল অভিযোগ করেছেন, ‘বিয়ের প্রলোভন’ দেখিয়ে সাফিউর রহমান ১৫ অগাস্ট রাত আড়াইটা থেকে ৪টা পর্যন্ত দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানা ভবনের দ্বিতীয় তলায় দক্ষিণ পাশের নারী ব্যারাকে তার শয়নকক্ষে তাকে ‘ধর্ষণ’ করেন।

তার অভিযোগ, একইভাবে বিগত পাঁচ মাসে সপ্তাহে দুইবার করে তাকে ধর্ষণ করার পাশাপাশি তাদের অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ভিডিও চিত্র তার ব্যবহৃত আইফোনে ধারণ করেন সাফিউর। এই ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ার ‘হুমকিও’ দেন তিনি।

 

 

 

মইদুল হাসান – জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক : বিডিপলিটিক্স টোয়েন্টিফোর ডটকম