০২:০০ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ০১ অগাস্ট ২০২৫
পদযাত্রার গাড়িগুলো বাংলামোটরে দলীয় কার্যালয়ে পৌঁছালে ঢাকা মহানগরের নেতাকর্মীরা ফুল ছিটিয়ে শীর্ষ নেতাদের বরণ করে নেন।

সারাদেশ ঘুরে ঢাকায় ফিরল এনসিপির জুলাই পদযাত্রা

মইদুল হাসান - জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক : বিডিপলিটিক্স টোয়েন্টিফোর ডটকম
  • আপডেট সময় ০৪:৫২:০৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩১ জুলাই ২০২৫
  • / ৩৬ বার পড়া হয়েছে

 

দেশের সব প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা জুলাই অভ্যুত্থানের অনুসারীদের সঙ্গে মিলিত হওয়ার মাসব্যাপী অভিযাত্রা শেষে ঢাকায় ফিরে এসেছে জাতীয় নাগরিক পার্টি- এনসিপির ‘জুলাই পদযাত্রা’।

বুধবার মধ্যরাতে পদযাত্রার গাড়িগুলো বাংলামোটরে দলীয় কার্যালয়ে পৌঁছালে ঢাকা মহানগরের নেতাকর্মীরা ফুল ছিটিয়ে শীর্ষ নেতাদের বরণ করে নেন।

মধ্যরাতে বৃষ্টির মধ্যেও অপেক্ষমান নেতাকর্মীদের উদ্দেশে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য দেন এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম।

গত ৩০ জুন মধ্যরাতে বাংলামোটর থেকেই শুরু হয়েছিল এনসিপির ‘দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রা’। ৬৪ জেলায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদ ও আহতদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাৎ, ‘নতুন বাংলাদেশ’ নিয়ে অভ্যুত্থানের সম্মুখসারির নেতাদের ভাবনা এবং ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের বিভিন্ন ‘অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের’ বিচার, রাষ্ট্রের মৌলিক সংস্কার ও নতুন সংবিধান প্রণয়নের লক্ষ্যে গণপরিষদ নির্বাচনের পক্ষে জনমত গঠনে এ কর্মসূচির আয়োজন করেছিল দলটি।

জুলাই আন্দোলনের শুরুর দিকে রংপুরে পুলিশের গুলিতে প্রাণ হারানো আবু সাঈদের কবর জিয়ারাতের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয় পদযাত্রার।

মাসব্যাপী এ কর্মসূচি রংপুর, রাজশাহী, বগুড়া, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, সিলেট, ময়মনসিংহ অঞ্চলের অন্তত ৬০টি জেলা পরিভ্রমণ শেষে বুধবার রাতে সাভারের বাইপাইলে শেষ পথসভা করে।

মাঝে গোপালগঞ্জে আওয়ামী লীগের কর্মীদের সঙ্গে এবং কক্সবাজারে বিএনপি কর্মীদের সঙ্গে সংঘর্ষ ছাড়া বাদ বাকি জেলাগুলোর কর্মসূচি ছিল শান্তিপূর্ণ।

রাতে বাংলামোটরে দলীয় কার্যালয়ের নিচে এক সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে নাহিদ ইসলাম বলেন, “আবু সাঈদের কবর জিয়ারাতের মাধ্যমে আমরা পদযাত্রা শুরু করেছিলাম। আজকে রক্তস্নাত সাভারের বাইপাইলে পথসভা করে ঢাকায় প্রত্যাবর্তন করেছি।”

এই পদযাত্রা নবগঠিত দলটির ‘রাজনীতি বিনির্মাণে’ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আশা করেন নাহিদ ইসলাম।

তিনি বলেন, “এই জুলাই পদযাত্রার মাধ্যমে জাতীয় নাগরিক পার্টির যে উত্থান হল, যেই অভিজ্ঞতা হল, তা জনগণের রাজনীতি করার জন্য আমাদেরকে কাজে দেবে। আমরা ক্ষমতাকে জনতার কাছে নিয়ে যেতে চেয়েছিলাম। জুলাই পদযাত্রার মাধ্যমে আমরা সেই কাজটি করেছি।

“গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী বৈষম্যহীন গণতান্ত্রিক নতুন বাংলাদেশ গড়ার জন্য জাতীয় নাগরিক পার্টি কাজ করে যাবে। এই পদযাত্রা থেকে জাতীয় সংসদে গিয়ে জাতীয় নাগরিক পার্টির লক্ষ্য বাস্তবায়ন করব।”

 

পরিপক্কতার অভাব?

মাসব্যাপী পদযাত্রায় জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সম্মুখসারির নেতাদের কাছে পেয়ে আবেগে আপ্লুত হয়েছেন বিভিন্ন জেলায় শহীদ পরিবারের সদস্যরা। আবার তরুণ নেতাদের নিরলস পরিশ্রম সাধারণ মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে।

কখনো গাড়িতে আবার কখনও পায়ে হেঁটে কিছু এলাকা অতিক্রম করেছেন এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতারা। এ সময় জেলা শহরগুলোতে তরুণ সমর্থক ও উৎসুক মানুষের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মত।

নাহিদ ইসলাম, নাসির উদ্দীন পাটোয়ারী, হাসনাত আব্দুল্লাহসহ কেন্দ্রেীয় নেতাদের দেখা গেছে যাত্রাপথে ঝিলের পানিতে নেমে গোসল করতে।

তবে তাদের কর্মসূচিতে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কড়া পাহারা ও ‘প্রটোকলের’ কারণে জনদুর্ভোগ, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের প্রতি ব্যক্তি আক্রমণের বিষয়গুলোও বিশ্লেষকদের দৃষ্টিতে এসেছে।

সরকারি সুযোগ সুবিধা নিয়ে এনসিপি ‘কিংস পার্টিতে’ পরিণত হয়েছে কি না, সেই সমালোচনাও হয়েছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সাব্বির আহমেদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “জনসম্পৃক্ততার জন্য এই ধরনের পদযাত্রার গুরুত্ব আছে। বিশেষ করে সারা দেশে ঘুরে ঘুরে নিজেদের রাজনীতি তুলে ধরার ব্যাপারটাও বেশ সুন্দর। কিন্তু কিছু ক্ষেত্রে তাদেরকে আরও পরিপক্কতার পরিচয় দিতে হত। গোপালগঞ্জের মতো ঘটনা নিঃসন্দেহে অনভিপ্রেত।”

সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা বাদ দিয়ে এনসিপিকে ‘নিজেদের সক্ষমতায়’ পথ চলার শক্তি অর্জনের পরামর্শ দিয়েছেন রাজনীতির এই অধ্যাপক।

তিনি বলেন, “আরেকটু সক্ষমতা তৈরি হওয়া দরকার। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় রাজনৈতিক কর্মসূচি থেকে বের হতে হবে। তা না হলে জনগণের সম্পৃক্ততা হবে না। কোথাও কোথাও ব্যক্তিগত আক্রমণ দেখা গেছে। কাজগুলো থেকে বিরত না হলে ইমেজের সংকটে পড়বে।”

 

বাদ পড়েছে চারটি জেলা

গত ২১ জুলাই এনসিপির পদযাত্রা খাগড়াছড়ি হয়ে ফেনী জেলার উদ্দেশ্যে আসছিল। দুপুরের পর ঢাকার মাইলস্টোন কলেজে বিমান দুর্ঘটনায় বহু শিক্ষার্থী হতাহতের পর ফেনীর কর্মসূচি সংক্ষিপ্ত করে দলটি।

সেখানে আগে থেকে তৈরি থাকা মঞ্চে সংক্ষিপ্ত দোয়া ও স্থানীয় নেতাদের বক্তব্যের মধ্য দিয়ে শেষ হয় কর্মসূচি। রাষ্ট্রীয় শোকের সঙ্গে একাত্ম হয়ে নোয়াখালী ও লক্ষ্মীপুরের পদযাত্রা কর্মসূচি বাতিল করা হয়।

এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামসহ শীর্ষ নেতাদের বড় একটি অংশ ঢাকায় এসে মাইলস্টোন ট্রাজেডিতে ক্ষতিগ্রস্ততের সহায়তার চেষ্টা করেন। একদিন বিরতি দিয়ে ২৩ জুলাই কুমিল্লার পদযাত্রাকে শোক মিছিলে রূপান্তর করে দলটি।

১৬ জুলাই গোপালগঞ্জ জেলায় এনসিপির পদযাত্রা ও সমাবেশ ঘিরে অনেক দিন থেকেই সামাজিক মাধ্যমে চলছিল উত্তেজনা। নির্ধারিত দিনে নেতাকর্মীদের গাড়িবহনের হামলা ও গোলাগুলিতে পাঁচজনের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে শঙ্কাই সত্যি হয়।

রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ থাকা আওয়ামী লীগের শক্ত ঘাঁটি হিসাবে পরিচিত গোপালগঞ্জে গেলে এনসিপি নেতাদের প্রতিরোধের হুমকি পাওয়া যাচ্ছিল সামাজিক মাধ্যমে। এনসিপির পক্ষ থেকেও গোপালগঞ্জকে চ্যালেঞ্জ হিসাবে নেওয়া হয়। পদযাত্রার নাম পরিবর্তন করে দেওয়া হয় ‘মার্চ ফর গোপালগঞ্জ’। এনসিপি নেতারা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কবর ভেঙে দেবেন–এমন প্রচারও বিভিন্ন মহল থেকে করা হচ্ছিল।

গোপালগঞ্জ শহরে কোনো রকমে সমাবেশ শেষ করে মাদারীপুর ও শরীয়তপুরের দিকে যাওয়ার পথে ব্যাপক প্রতিরোধের মুখে পড়েন এনসিপি নেতারা। তাদের উদ্ধার ও আওয়ামী লীগ সমর্থকদের প্রতিহত করতে এক পর্যায়ে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারীরা গুলি চালালে সেখানে নিহত হন ৫ জন। ওই ঘটনার মধ্যে সেদিন মাদারীপুর ও শরীয়তপুরের কর্মসূচি বাতিল হয়।

নাহিদ ইসলাম বলেন, “গোপালগঞ্জে সশস্ত্র হামলা এবং মাইলস্টোন ট্রাজেডির কারণে কয়েকটি জেলায় পথসভা করতে পারি নাই। ৫ অগাস্ট পরবর্তী সময়ে সেই সব জেলায় সমাবেশ করব। ৬৪টি জেলায় আমাদের পদার্পণ হবে, জনগণের কাছে যাওয়ার এই কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে।”

পথসভার কারণে বিভিন্ন রকম জনদুর্ভোগের কথা স্বীকার করে সেজন্য দুঃখপ্রকাশ করেন নাহিদ।

তিনি বলেন, “পথসভা ও পদযাত্রায় সাধারণ মানুষের দুর্ভোগের জন্য দুঃখপ্রকাশ করছি। জনগণের সঙ্গে আমাদের যে আত্মার সম্পর্ক রয়েছে, তা অটুট থাকবে। জনগণের জন্য আমাদের রাজনীতি চলমান থাকবে।”

 

 

মইদুল হাসান – জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক : বিডিপলিটিক্স টোয়েন্টিফোর ডটকম

নিউজটি শেয়ার করুন

পদযাত্রার গাড়িগুলো বাংলামোটরে দলীয় কার্যালয়ে পৌঁছালে ঢাকা মহানগরের নেতাকর্মীরা ফুল ছিটিয়ে শীর্ষ নেতাদের বরণ করে নেন।

সারাদেশ ঘুরে ঢাকায় ফিরল এনসিপির জুলাই পদযাত্রা

আপডেট সময় ০৪:৫২:০৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩১ জুলাই ২০২৫

 

দেশের সব প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা জুলাই অভ্যুত্থানের অনুসারীদের সঙ্গে মিলিত হওয়ার মাসব্যাপী অভিযাত্রা শেষে ঢাকায় ফিরে এসেছে জাতীয় নাগরিক পার্টি- এনসিপির ‘জুলাই পদযাত্রা’।

বুধবার মধ্যরাতে পদযাত্রার গাড়িগুলো বাংলামোটরে দলীয় কার্যালয়ে পৌঁছালে ঢাকা মহানগরের নেতাকর্মীরা ফুল ছিটিয়ে শীর্ষ নেতাদের বরণ করে নেন।

মধ্যরাতে বৃষ্টির মধ্যেও অপেক্ষমান নেতাকর্মীদের উদ্দেশে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য দেন এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম।

গত ৩০ জুন মধ্যরাতে বাংলামোটর থেকেই শুরু হয়েছিল এনসিপির ‘দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রা’। ৬৪ জেলায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদ ও আহতদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাৎ, ‘নতুন বাংলাদেশ’ নিয়ে অভ্যুত্থানের সম্মুখসারির নেতাদের ভাবনা এবং ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের বিভিন্ন ‘অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের’ বিচার, রাষ্ট্রের মৌলিক সংস্কার ও নতুন সংবিধান প্রণয়নের লক্ষ্যে গণপরিষদ নির্বাচনের পক্ষে জনমত গঠনে এ কর্মসূচির আয়োজন করেছিল দলটি।

জুলাই আন্দোলনের শুরুর দিকে রংপুরে পুলিশের গুলিতে প্রাণ হারানো আবু সাঈদের কবর জিয়ারাতের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয় পদযাত্রার।

মাসব্যাপী এ কর্মসূচি রংপুর, রাজশাহী, বগুড়া, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, সিলেট, ময়মনসিংহ অঞ্চলের অন্তত ৬০টি জেলা পরিভ্রমণ শেষে বুধবার রাতে সাভারের বাইপাইলে শেষ পথসভা করে।

মাঝে গোপালগঞ্জে আওয়ামী লীগের কর্মীদের সঙ্গে এবং কক্সবাজারে বিএনপি কর্মীদের সঙ্গে সংঘর্ষ ছাড়া বাদ বাকি জেলাগুলোর কর্মসূচি ছিল শান্তিপূর্ণ।

রাতে বাংলামোটরে দলীয় কার্যালয়ের নিচে এক সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে নাহিদ ইসলাম বলেন, “আবু সাঈদের কবর জিয়ারাতের মাধ্যমে আমরা পদযাত্রা শুরু করেছিলাম। আজকে রক্তস্নাত সাভারের বাইপাইলে পথসভা করে ঢাকায় প্রত্যাবর্তন করেছি।”

এই পদযাত্রা নবগঠিত দলটির ‘রাজনীতি বিনির্মাণে’ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আশা করেন নাহিদ ইসলাম।

তিনি বলেন, “এই জুলাই পদযাত্রার মাধ্যমে জাতীয় নাগরিক পার্টির যে উত্থান হল, যেই অভিজ্ঞতা হল, তা জনগণের রাজনীতি করার জন্য আমাদেরকে কাজে দেবে। আমরা ক্ষমতাকে জনতার কাছে নিয়ে যেতে চেয়েছিলাম। জুলাই পদযাত্রার মাধ্যমে আমরা সেই কাজটি করেছি।

“গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী বৈষম্যহীন গণতান্ত্রিক নতুন বাংলাদেশ গড়ার জন্য জাতীয় নাগরিক পার্টি কাজ করে যাবে। এই পদযাত্রা থেকে জাতীয় সংসদে গিয়ে জাতীয় নাগরিক পার্টির লক্ষ্য বাস্তবায়ন করব।”

 

পরিপক্কতার অভাব?

মাসব্যাপী পদযাত্রায় জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সম্মুখসারির নেতাদের কাছে পেয়ে আবেগে আপ্লুত হয়েছেন বিভিন্ন জেলায় শহীদ পরিবারের সদস্যরা। আবার তরুণ নেতাদের নিরলস পরিশ্রম সাধারণ মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে।

কখনো গাড়িতে আবার কখনও পায়ে হেঁটে কিছু এলাকা অতিক্রম করেছেন এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতারা। এ সময় জেলা শহরগুলোতে তরুণ সমর্থক ও উৎসুক মানুষের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মত।

নাহিদ ইসলাম, নাসির উদ্দীন পাটোয়ারী, হাসনাত আব্দুল্লাহসহ কেন্দ্রেীয় নেতাদের দেখা গেছে যাত্রাপথে ঝিলের পানিতে নেমে গোসল করতে।

তবে তাদের কর্মসূচিতে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কড়া পাহারা ও ‘প্রটোকলের’ কারণে জনদুর্ভোগ, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের প্রতি ব্যক্তি আক্রমণের বিষয়গুলোও বিশ্লেষকদের দৃষ্টিতে এসেছে।

সরকারি সুযোগ সুবিধা নিয়ে এনসিপি ‘কিংস পার্টিতে’ পরিণত হয়েছে কি না, সেই সমালোচনাও হয়েছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সাব্বির আহমেদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “জনসম্পৃক্ততার জন্য এই ধরনের পদযাত্রার গুরুত্ব আছে। বিশেষ করে সারা দেশে ঘুরে ঘুরে নিজেদের রাজনীতি তুলে ধরার ব্যাপারটাও বেশ সুন্দর। কিন্তু কিছু ক্ষেত্রে তাদেরকে আরও পরিপক্কতার পরিচয় দিতে হত। গোপালগঞ্জের মতো ঘটনা নিঃসন্দেহে অনভিপ্রেত।”

সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা বাদ দিয়ে এনসিপিকে ‘নিজেদের সক্ষমতায়’ পথ চলার শক্তি অর্জনের পরামর্শ দিয়েছেন রাজনীতির এই অধ্যাপক।

তিনি বলেন, “আরেকটু সক্ষমতা তৈরি হওয়া দরকার। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় রাজনৈতিক কর্মসূচি থেকে বের হতে হবে। তা না হলে জনগণের সম্পৃক্ততা হবে না। কোথাও কোথাও ব্যক্তিগত আক্রমণ দেখা গেছে। কাজগুলো থেকে বিরত না হলে ইমেজের সংকটে পড়বে।”

 

বাদ পড়েছে চারটি জেলা

গত ২১ জুলাই এনসিপির পদযাত্রা খাগড়াছড়ি হয়ে ফেনী জেলার উদ্দেশ্যে আসছিল। দুপুরের পর ঢাকার মাইলস্টোন কলেজে বিমান দুর্ঘটনায় বহু শিক্ষার্থী হতাহতের পর ফেনীর কর্মসূচি সংক্ষিপ্ত করে দলটি।

সেখানে আগে থেকে তৈরি থাকা মঞ্চে সংক্ষিপ্ত দোয়া ও স্থানীয় নেতাদের বক্তব্যের মধ্য দিয়ে শেষ হয় কর্মসূচি। রাষ্ট্রীয় শোকের সঙ্গে একাত্ম হয়ে নোয়াখালী ও লক্ষ্মীপুরের পদযাত্রা কর্মসূচি বাতিল করা হয়।

এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামসহ শীর্ষ নেতাদের বড় একটি অংশ ঢাকায় এসে মাইলস্টোন ট্রাজেডিতে ক্ষতিগ্রস্ততের সহায়তার চেষ্টা করেন। একদিন বিরতি দিয়ে ২৩ জুলাই কুমিল্লার পদযাত্রাকে শোক মিছিলে রূপান্তর করে দলটি।

১৬ জুলাই গোপালগঞ্জ জেলায় এনসিপির পদযাত্রা ও সমাবেশ ঘিরে অনেক দিন থেকেই সামাজিক মাধ্যমে চলছিল উত্তেজনা। নির্ধারিত দিনে নেতাকর্মীদের গাড়িবহনের হামলা ও গোলাগুলিতে পাঁচজনের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে শঙ্কাই সত্যি হয়।

রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ থাকা আওয়ামী লীগের শক্ত ঘাঁটি হিসাবে পরিচিত গোপালগঞ্জে গেলে এনসিপি নেতাদের প্রতিরোধের হুমকি পাওয়া যাচ্ছিল সামাজিক মাধ্যমে। এনসিপির পক্ষ থেকেও গোপালগঞ্জকে চ্যালেঞ্জ হিসাবে নেওয়া হয়। পদযাত্রার নাম পরিবর্তন করে দেওয়া হয় ‘মার্চ ফর গোপালগঞ্জ’। এনসিপি নেতারা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কবর ভেঙে দেবেন–এমন প্রচারও বিভিন্ন মহল থেকে করা হচ্ছিল।

গোপালগঞ্জ শহরে কোনো রকমে সমাবেশ শেষ করে মাদারীপুর ও শরীয়তপুরের দিকে যাওয়ার পথে ব্যাপক প্রতিরোধের মুখে পড়েন এনসিপি নেতারা। তাদের উদ্ধার ও আওয়ামী লীগ সমর্থকদের প্রতিহত করতে এক পর্যায়ে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারীরা গুলি চালালে সেখানে নিহত হন ৫ জন। ওই ঘটনার মধ্যে সেদিন মাদারীপুর ও শরীয়তপুরের কর্মসূচি বাতিল হয়।

নাহিদ ইসলাম বলেন, “গোপালগঞ্জে সশস্ত্র হামলা এবং মাইলস্টোন ট্রাজেডির কারণে কয়েকটি জেলায় পথসভা করতে পারি নাই। ৫ অগাস্ট পরবর্তী সময়ে সেই সব জেলায় সমাবেশ করব। ৬৪টি জেলায় আমাদের পদার্পণ হবে, জনগণের কাছে যাওয়ার এই কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে।”

পথসভার কারণে বিভিন্ন রকম জনদুর্ভোগের কথা স্বীকার করে সেজন্য দুঃখপ্রকাশ করেন নাহিদ।

তিনি বলেন, “পথসভা ও পদযাত্রায় সাধারণ মানুষের দুর্ভোগের জন্য দুঃখপ্রকাশ করছি। জনগণের সঙ্গে আমাদের যে আত্মার সম্পর্ক রয়েছে, তা অটুট থাকবে। জনগণের জন্য আমাদের রাজনীতি চলমান থাকবে।”

 

 

মইদুল হাসান – জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক : বিডিপলিটিক্স টোয়েন্টিফোর ডটকম