০৪:৩১ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৫
নেপালের ছাত্র-যুব নেতৃত্ব বুধবার সুপ্রিম কোর্টের সাবেক প্রধান বিচারপতি সুশীলাকে নেপালের অন্তবর্তী সরকার প্রধান পদে চেয়েছিল। কিন্তু ২৪ ঘন্টা পরই তারা এ পদে কুলমান ঘিসিংয়ের নাম প্রস্তাব করে।

সুশীলা না কুলমান- কার হাতে নেপালের রাশ? বিভক্ত আন্দোলনকারীরা

মিজানুর রহমান খান - বিশেষ প্রতিনিধি, আন্তর্জাতিক ডেস্ক : বিডিপলিটিক্স টোয়েন্টিফোর ডটকম
  • আপডেট সময় ০২:২৩:৪৩ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • / ১৬ বার পড়া হয়েছে

কুলমান ঘিসিং ও সুশীলা কার্কি। ছবি: রয়টার্স

 

নেপালের অন্তবর্তী সরকারের প্রধান কে হবেন? কার নেতৃত্বে এগোবে নেপাল? প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলির পদত্যাগের পর থেকে এ প্রশ্নই ঘুরপাক খাচ্ছে। প্রথমে শোনা গিয়েছিল অন্তবর্তী সরকারের প্রধান হিসাবে আন্দোলনকারীদের পছন্দ কাঠমান্ডুর নির্দল মেয়র বলেন্দ্র শাহ ওরফে বলেন।

তবে বুধবার নেপালের ছাত্র-যুব নেতৃত্বের পক্ষ থেকেই উঠে আসে সুপ্রিম কোর্টের সাবেক প্রধান বিচারপতি সুশীলা কার্কির নাম। বুধবার রাত পর্যন্ত সেই সম্ভাবনাই ছিল প্রবল। কিন্তু হঠাৎই তা ভিন্ন মোড় নেয়।

শোনা যায় সুশীলা নন, এই পদে বসতে পারেন কুলমান ঘিসিং। ভারতীয় পত্রিকা এনডিটিভি জানায়, সুশীলাকে বেছে নেওয়ার ২৪ ঘণ্টা পরই জেন-জি আন্দোলনকারীরা একটি বিবৃতি দিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান পদের জন্য কুলমান ঘিসিংয়ের নাম প্রস্তাব করে।

কুলমান সাবেক ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার। তিনি নেপালের অন্তর্বর্তী সরকারের হাল ধরুন, এমনটাই চাইছেন গণবিক্ষোভে নেপালের ওলি সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করা আন্দোলনকারীরা।

আন্দোলনকারীরা বলছেন, ঘিসিং একজন দেশভক্ত এবং সবার প্রিয়। দেশের ইলেকট্রিসিটি বোর্ডের প্রাক্তন প্রধান কুলমান বিদ্যুত সঙ্কট মেটাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। দেশকে চরম বিদ্যুৎবিভ্রাট থেকে তিনি বের করে এনেছিলেন।

তাই অনেকেই চান, যে ভাবে নেপালকে অন্ধকার থেকে আলোর পথে এনেছিলেন ঘিসিং, তেমনই এখন অস্থির অবস্থায় দেশের দায়িত্ব গ্রহণ করুন তিনি।

কিন্তু সাবেক বিচারপতি সুশীলার অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হওয়ার ক্ষেত্রে সাংবিধানিক বাধা আছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে জেন-জি আন্দোলনকারীদের বিবৃতিতে। সংবিধানে অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতিদের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হওয়া নিষেধ আছে।

তাছাড়া, ৭৩ বছরের সুশীলার বয়সেও বেশি বলেও তাকে এই পদে বসানো নিয়ে দ্বিধায় আছে আন্দোলনকারীরা। ফলে সুশীলা না কুলমান কার হাতে থাকবে নেপালের রাশ তা নিয়ে এখনও একমত হতে পারেনি নেপালের জেন-জি (তরুণ প্রজন্ম)।

বেশ কয়েকটি সংবাদমাধ্যমে বলা হয়, আন্দোলনকারীদের মধ্যে দুই সম্ভাব্য প্রধানকে নিয়ে মতবিরোধ দেখা দেয়। কাঠমান্ডুতে সেনাবাহিনী সদরদপ্তরের বাইরে দুই গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘর্ষও হয়েছে বলে খবর এসেছে।

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান কে হবেন, তা বাছতে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করছেন নেপালের প্রেসিডেন্ট রামচন্দ্র পৌডেল এবং সেনাপ্রধান অশোকরাজ সিগডেল।

তবে বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত কোনও ফয়সালা হয়নি। কাকে চূড়ান্ত করা হচ্ছে, তা স্থির হয়নি। দফায় দফায় বৈঠক চললেও অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধানের নাম ঘোষণা করা হবে, তা নিয়ে জল্পনা চলছে।

নেপালে সরকারবিরোধী আন্দোলনের ঢেউয়ে পতন ঘটে ওলির সরকারের। সহিংস বিক্ষোভে অন্তত ৩১ জনের মৃত্যুর পর প্রধানমন্ত্রীর পদ ছাড়তে বাধ্য হন কেপি শর্মা ওলি।

বর্তমানে নেপালের নিরাপত্তার ভার সেনাবাহিনীর হাতে। বুধবার আনুষ্ঠানিকভাবে দায়িত্ব নেওয়ার পরেই দেশ জুড়ে কারফিউ জারি করে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার চেষ্টা করছে সেনারা।

তবে রাতে কার্ফু শিথিল হয়েছে। বহস্পতিবার সকাল থেকে নেপালে বড় ধরনের উত্তেজনা বা অশান্তির খবর মেলেনি। তবে কোথাও কোথাও বিক্ষিপ্ত অশান্তির খবরে এসেছে।

আন্দোলনকারীরা কাকে অন্তর্বর্তী সরকারের নেতৃত্বে চায় তা নিয়ে এখনও একমত হতে না পারলেও তাদের একটি দাবি স্পষ্ট। আর তা হল: পুরনো রাজনৈতিক নেতৃত্বের কাছে আর ক্ষমতা নয়।

একজন বিক্ষোভকারী বলেন, “এই রক্তপাত পুরনো নেতাদের কারণেই। যদি রক্ত ঝরানো শুরু করি, তারা টিকতে পারবে না।”

 

 

মিজানুর রহমান খান – বিশেষ প্রতিনিধি, আন্তর্জাতিক ডেস্ক : বিডিপলিটিক্স টোয়েন্টিফোর ডটকম

নিউজটি শেয়ার করুন

নেপালের ছাত্র-যুব নেতৃত্ব বুধবার সুপ্রিম কোর্টের সাবেক প্রধান বিচারপতি সুশীলাকে নেপালের অন্তবর্তী সরকার প্রধান পদে চেয়েছিল। কিন্তু ২৪ ঘন্টা পরই তারা এ পদে কুলমান ঘিসিংয়ের নাম প্রস্তাব করে।

সুশীলা না কুলমান- কার হাতে নেপালের রাশ? বিভক্ত আন্দোলনকারীরা

আপডেট সময় ০২:২৩:৪৩ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৫

 

নেপালের অন্তবর্তী সরকারের প্রধান কে হবেন? কার নেতৃত্বে এগোবে নেপাল? প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলির পদত্যাগের পর থেকে এ প্রশ্নই ঘুরপাক খাচ্ছে। প্রথমে শোনা গিয়েছিল অন্তবর্তী সরকারের প্রধান হিসাবে আন্দোলনকারীদের পছন্দ কাঠমান্ডুর নির্দল মেয়র বলেন্দ্র শাহ ওরফে বলেন।

তবে বুধবার নেপালের ছাত্র-যুব নেতৃত্বের পক্ষ থেকেই উঠে আসে সুপ্রিম কোর্টের সাবেক প্রধান বিচারপতি সুশীলা কার্কির নাম। বুধবার রাত পর্যন্ত সেই সম্ভাবনাই ছিল প্রবল। কিন্তু হঠাৎই তা ভিন্ন মোড় নেয়।

শোনা যায় সুশীলা নন, এই পদে বসতে পারেন কুলমান ঘিসিং। ভারতীয় পত্রিকা এনডিটিভি জানায়, সুশীলাকে বেছে নেওয়ার ২৪ ঘণ্টা পরই জেন-জি আন্দোলনকারীরা একটি বিবৃতি দিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান পদের জন্য কুলমান ঘিসিংয়ের নাম প্রস্তাব করে।

কুলমান সাবেক ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার। তিনি নেপালের অন্তর্বর্তী সরকারের হাল ধরুন, এমনটাই চাইছেন গণবিক্ষোভে নেপালের ওলি সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করা আন্দোলনকারীরা।

আন্দোলনকারীরা বলছেন, ঘিসিং একজন দেশভক্ত এবং সবার প্রিয়। দেশের ইলেকট্রিসিটি বোর্ডের প্রাক্তন প্রধান কুলমান বিদ্যুত সঙ্কট মেটাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। দেশকে চরম বিদ্যুৎবিভ্রাট থেকে তিনি বের করে এনেছিলেন।

তাই অনেকেই চান, যে ভাবে নেপালকে অন্ধকার থেকে আলোর পথে এনেছিলেন ঘিসিং, তেমনই এখন অস্থির অবস্থায় দেশের দায়িত্ব গ্রহণ করুন তিনি।

কিন্তু সাবেক বিচারপতি সুশীলার অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হওয়ার ক্ষেত্রে সাংবিধানিক বাধা আছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে জেন-জি আন্দোলনকারীদের বিবৃতিতে। সংবিধানে অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতিদের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হওয়া নিষেধ আছে।

তাছাড়া, ৭৩ বছরের সুশীলার বয়সেও বেশি বলেও তাকে এই পদে বসানো নিয়ে দ্বিধায় আছে আন্দোলনকারীরা। ফলে সুশীলা না কুলমান কার হাতে থাকবে নেপালের রাশ তা নিয়ে এখনও একমত হতে পারেনি নেপালের জেন-জি (তরুণ প্রজন্ম)।

বেশ কয়েকটি সংবাদমাধ্যমে বলা হয়, আন্দোলনকারীদের মধ্যে দুই সম্ভাব্য প্রধানকে নিয়ে মতবিরোধ দেখা দেয়। কাঠমান্ডুতে সেনাবাহিনী সদরদপ্তরের বাইরে দুই গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘর্ষও হয়েছে বলে খবর এসেছে।

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান কে হবেন, তা বাছতে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করছেন নেপালের প্রেসিডেন্ট রামচন্দ্র পৌডেল এবং সেনাপ্রধান অশোকরাজ সিগডেল।

তবে বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত কোনও ফয়সালা হয়নি। কাকে চূড়ান্ত করা হচ্ছে, তা স্থির হয়নি। দফায় দফায় বৈঠক চললেও অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধানের নাম ঘোষণা করা হবে, তা নিয়ে জল্পনা চলছে।

নেপালে সরকারবিরোধী আন্দোলনের ঢেউয়ে পতন ঘটে ওলির সরকারের। সহিংস বিক্ষোভে অন্তত ৩১ জনের মৃত্যুর পর প্রধানমন্ত্রীর পদ ছাড়তে বাধ্য হন কেপি শর্মা ওলি।

বর্তমানে নেপালের নিরাপত্তার ভার সেনাবাহিনীর হাতে। বুধবার আনুষ্ঠানিকভাবে দায়িত্ব নেওয়ার পরেই দেশ জুড়ে কারফিউ জারি করে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার চেষ্টা করছে সেনারা।

তবে রাতে কার্ফু শিথিল হয়েছে। বহস্পতিবার সকাল থেকে নেপালে বড় ধরনের উত্তেজনা বা অশান্তির খবর মেলেনি। তবে কোথাও কোথাও বিক্ষিপ্ত অশান্তির খবরে এসেছে।

আন্দোলনকারীরা কাকে অন্তর্বর্তী সরকারের নেতৃত্বে চায় তা নিয়ে এখনও একমত হতে না পারলেও তাদের একটি দাবি স্পষ্ট। আর তা হল: পুরনো রাজনৈতিক নেতৃত্বের কাছে আর ক্ষমতা নয়।

একজন বিক্ষোভকারী বলেন, “এই রক্তপাত পুরনো নেতাদের কারণেই। যদি রক্ত ঝরানো শুরু করি, তারা টিকতে পারবে না।”

 

 

মিজানুর রহমান খান – বিশেষ প্রতিনিধি, আন্তর্জাতিক ডেস্ক : বিডিপলিটিক্স টোয়েন্টিফোর ডটকম