“মন্দিরের জন্য জমি বরাদ্দের আলোচনার মধ্যে জানতে পারি মসজিদ নিয়েও একই রকমের সংকট আছে। সেজন্য একটি মন্দিরের পাশাপাশি দুটি মসজিদের জন্যও জমি বরাদ্দ দেওয়া হল।”
সেই জোয়ার সাহারায় একটি মন্দির ও দুটি মসজিদের জন্য জমি দিল রেলওয়ে

- আপডেট সময় ০৮:২৪:৫০ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৭ অগাস্ট ২০২৫
- / ২৪ বার পড়া হয়েছে

রাজধানীর খিলক্ষেতে জোয়ার সাহারা মৌজায় দুটি মসজিদ এবং একটি মন্দিরের জন্য জমি বরাদ্দ দিয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ে।
রাজধানীর খিলক্ষেতে জোয়ার সাহারা মৌজায় দুটি মসজিদ এবং একটি মন্দিরের জন্য জমি বরাদ্দ দিয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ে।
বুধবার রেলভবনে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে সংশ্লিষ্ট মসজিদ ও মন্দির পরিচালনা কমিটির কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে বরাদ্দপত্র তুলে দেওয়া হয় বলে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় জানিয়েছে।
বরাদ্দ পাওয়া প্রতিষ্ঠানগুলো হলো-ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট থানাধীন জোয়ার সাহারা মৌজার খিলক্ষেত রেলওয়ে জামে মসজিদ (০.২০১১ একর বা ৮৭৬০ বর্গফুট), আন-নূর জামে মসজিদ (০.০৫৫২ একর বা ২৪০৫ বর্গফুট) এবং খিলক্ষেত সার্বজনীন শ্রী শ্রী দুর্গা মন্দির (০.০৫৬২ একর বা ২৪৫০ বর্গফুট)।
প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর বলছে, এসব জমি রেলওয়ের নির্ধারিত ‘প্রতীকী মূল্যে’ বরাদ্দ দেওয়া হয়।
সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান অনুষ্ঠানে বলেন, ‘‘গতবছর দুর্গাপূজার আগে আমাকে জানানো হয় যে রেলের জমিতে একটি মণ্ডপ তৈরি করা হয়েছে। আমি বলেছি, যেহেতু মণ্ডপ হয়ে গেছে, তাদেরকে বলে দিও পূজা হয়ে যাওয়ার পরে যাতে মণ্ডপ সরিয়ে ফেলে।
“কিন্তু সেটা সরানো হয়নি। পরে ওই জায়গাটা রেলের প্রয়োজন পড়লে শুধু মণ্ডপ নয়, সেখানকার সকল অবৈধ স্থাপনাই সরিয়ে নেওয়া হয়। আমি বলে দিয়েছিলাম, প্রতিমা যাতে সযত্নে বিসর্জন দেওয়া হয়। বালু নদীতে প্রতিমা বিসর্জন হয়েছে বলে আমাকে জানানো হয়।”
উপদেষ্টা বলেন, “কিন্তু পরে একটি ভিডিও ক্লিপে আমরা দেখেছি প্রতিমা মাটিতে পড়ে আছে। সেটা কীভাবে হল আমি খোঁজ নিয়েছি। এ ঘটনার জন্য আমি সংশ্লিষ্টদের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করি।”
তিনি বলেন, “মন্দিরের জন্য জমি বরাদ্দের আলোচনার মধ্যে জানতে পারি মসজিদ নিয়েও একই রকমের সংকট আছে। সেজন্য একটি মন্দিরের পাশাপাশি দুটি মসজিদের জন্যও জমি বরাদ্দ দেওয়া হল।”
রেলওয়ের জমি মসজিদ ও মন্দিরকে বরাদ্দ দেওয়াকে ‘সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির অনন্য নজির’ হিসেবে বর্ণনা করে ধর্ম উপদেষ্টা আ ফ ম খালিদ হোসেন বলেন, “বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্যের রোল মডেল। তারপরও বিভিন্ন সময়ে কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটে। ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান কিংবা উপাসনালয়গুলোকে যারা অপবিত্র করতে চায় তাদের ধর্মীয় কোনো পরিচয় নেই, তারা দুষ্কৃতকারী, অপরাধী।”
অনুষ্ঠানে উপস্থিত মসজিদ ও মন্দির সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও এলাকাবাসীর উদ্দেশে ধর্ম উপদেষ্টা বলেন, “সম্প্রীতি নষ্ট হয় এমন যে কোনো কর্মকাণ্ড সবাই মিলে থামাতে হবে। আমরা নিজেরা আগে থামাতে চেষ্টা করব, সেটা না হলে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর মাধ্যমে কঠিন ব্যবস্থা নেব।”
তিনি বলেন, হিন্দু সম্প্রদায়ের বেহাত হয়ে যাওয়া যেসব দেবোত্তর সম্পত্তি নিয়ে আদালতে কোনো মামলা নেই, সেসব সম্পত্তি উদ্ধারে মন্ত্রণালয় ‘সর্বোচ্চ সহযোগিতা’ দেবে।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার বাংলাদেশ রেলওয়ের এই উদ্যোগের প্রশংসা করে বলেন, “এটি একটি ব্যতিক্রম অনুষ্ঠান। এর মধ্য নিয়ে অনন্য নজির সৃষ্টি হয়েছে। জুলাইয়ের শহীদ ও আহতরা ধর্ম, বর্ণ, শ্রেণি নির্বিশেষে যে বৈষম্যহীন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছে আমরা সবাই মিলে সেটা বাস্তবায়ন করব।
‘এটি একটি ঐতিহাসিক ঘটনা’ মন্তব্য করে রেল বিভাগের সকলকে আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান মহানগর সর্বজনীন পূজা কমিটির সভাপতি জয়ন্ত কুমার দেব।
অন্যদের মধ্যে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী শেখ মইনউদ্দিন, রেলপথ সচিব মো. ফাহিমুল ইসলাম, রেলওয়ের মহাপরিচালক মো. আফজাল হোসেন, ঢাকা বিভাগের রেলওয়ে ম্যানেজার মো. মহিউদ্দিন আরিফ, বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোটের মহাসচিব অ্যাডভোকেট গোবিন্দ চন্দ্র প্রামাণিকসহ স্থানীয় মসজিদের ইমাম, মন্দিরের প্রতিনিধিরা, এলাকাবাসী এবং রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
সাবরিনা জাহান- বিশেষ প্রতিনিধি : বিডিপলিটিক্স টোয়েন্টিফোর ডটকম