“আমরা লক্ষ্য করছি, বাংলাদেশের সবার দাবি তাদের কানে পৌঁছায়, কিন্তু ঢাকা দক্ষিণ সিটিবাসীর দাবি কেন জানি তাদের কানে পৌঁছাচ্ছে না।”
স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা ‘মিথ্যাচার করছেন’: ইশরাক

- আপডেট সময় ১০:১৩:৩৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৮ জুন ২০২৫
- / ১৪ বার পড়া হয়েছে
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র হিসেবে শপথ পড়ানোর বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া ক্রমাগত মিথ্যাচার করছেন বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেন।
বুধবার নগর ভবনে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, বাইরের কিছু গণমাধ্যম এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আন্দোলনকে ‘ভুলভাবে’ উপস্থাপন করা হচ্ছে। মানুষের কাছে মিথ্যা তথ্য উপস্থাপন করছে। পাশাপাশি স্থানীয় সরকার উপদেষ্টাও বিষয়টি নিয়ে ক্রমাগত ‘মিথ্যাচার করছেন’।
“তিনি (স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা) বারেবারে বলেছেন, এখানে আইনি জটিলতা আছে, সাব জুডিস ম্যাটার আছে। অথচ বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালত থেকে এই বিষয়টি বহু আগেই নিষ্পত্তি হয়েছে। তারপরও যদি তিনি বলেন আইনি ঝামেলা আছে তাহলে আমি বলব এই ধরনের মূর্খ উপদেষ্টা বাংলাদেশের ইতিহাসে কেউ কোনো দিন দেখে নাই।”
গত ১৪ মে থেকে নগর ভবনের সামনে ‘ঢাকাবাসী’ ব্যানারে অবস্থান কর্মসূচি শুরু করে ইশরাক সমর্থক ও বিএনপি নেতাকর্মীরা। পরে ডিএসসিসি কর্মচারী ইউনিয়নও তাতে যোগ দেয়।
মাঝে ঈদ ঘিরে ছুটির কদিন নগর ভবনে ইশরাক সমর্থকদের আন্দোলনে পাওয়া যায়নি। ঈদের ছুটির শেষে অফিস খোলার প্রথম দিন রোববার ফের সেখানে আন্দোলন শুরু করেন ইশরাক সমর্থকরা।
সে সময় আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি সেবা কার্যক্রমে অচলাবস্থা কাটাতে নিজের তত্ত্বাবধানে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের কার্যক্রম চালিয়ে নেওয়ার ঘোষণা দেন ইশরাক।
জন্ম নিবন্ধন সনদসহ দৈনন্দিন জরুরি সব সেবা চালু থাকার ঘোষণা দিয়ে তিনি বলেছিলেন, অন্যান্য উন্নয়ন কর্মকাণ্ড পরিচালনা করা কর্মকর্তারা অফিস করতে পারবে না।
সেবা কার্যক্রম শুরু করলেও এক্ষেত্রে আন্দোলন থেকে সরে আসার কোনো ‘সুযোগ নেই’ বলে জানিয়েছেন ইশকার।
তিনি বলেছেন, নগর ভবনের ফটকে ‘তালা ঝুলবেই’। কারণ বিষয়টিকে আন্দোলনের প্রতীক হিসেবে দেখছেন তারা।
সংকট সুরাহায় মেয়র হিসেবে শপথ পড়ার অনুমতি দিতে প্রধান উপদেষ্টার হস্তক্ষেপ চেয়েছেন ইশরাক; না হলে বিরতিহীনভাবে অবস্থান কর্মসূচি চলবে বলেও হুঁশিয়ার করেছেন তিনি।
ইশরাক বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার গণঅভ্যুত্থানের সরকার হিসেবে দাবি করলেও তারা বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালতে আপিল নিষ্পত্তি হয়ে যাওয়ার পরও ‘জনগণের দাবির প্রতি কোনো ধরনের তোয়াক্কা করছেন না’।
“তারা আমাদের মানুষ বলে মনে করছে না। ঈদের আগে থেকে ধারাবাহিক আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছি। ঢাকাবাসী তাদের যৌক্তিক দাবিতে যে আন্দোলন করে যাচ্ছে। আমরা লক্ষ্য করছি, বাংলাদেশের সবার দাবি তাদের কানে পৌঁছায়, কিন্তু ঢাকা দক্ষিণ সিটিবাসীর দাবি কেন জানি তাদের কানে পৌঁছাচ্ছে না। তারা দেখেও দেখছে না, শুনেও শুনছে না।”
তিনি অভিযোগ করেন, মেয়র হিসেবে শপথ পড়ানোর বিষয়টি নিয়ে সরকারও ‘স্বৈরাচারী’ আচরণ করছে।
“তারা প্রতিনিয়ত ষড়যন্ত্র করে চলেছে কীভাবে আমাদের এই আন্দোলনকে দমানো যায়। কীভাবে আমাদের আন্দোলনকে বিতর্কিত করা যায়। কীভাবে জনগণের সামনে আমাদের কার্যক্রমকে ভুলভাবে উপস্থাপন করে আমাদের মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করা যায়।”
ইশরাক হোসেন বলেন, “স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ নগর ভবনের কর্মকর্তাদের ফোন করে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার গাড়িতে জ্বালানি বন্ধ করে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন।
“তার উদ্দেশ্য ছিল জ্বালানি বন্ধ করে দিলে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম বন্ধ করা যাবে। সেই দায়টা আমাদের ওপর চাপাবেন। মানুষের কাছে ভুল তথ্য উপস্থাপন করে আমাদের আন্দোলন ক্ষতিগ্রস্ত করবেন। জ্বালানি বন্ধ করার আপনারা কে?”
২০২০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত ঢাকা দক্ষিণ সিটি নির্বাচনে বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক কমিটির সদস্য ইশরাক হোসেনকে পৌনে ২ লাখ ভোটের ব্যবধানে হারিয়ে মেয়র হন আওয়ামী লীগের শেখ ফজলে নূর তাপস।
ক্ষমতার পট পরিবর্তনের পর গেল ২৭ মার্চ ঢাকার নির্বাচনি ট্রাইব্যুনাল সেই ফল বাতিল করে অবিভক্ত ঢাকা সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার ছেলে ইশরাককে মেয়র ঘোষণা করে।
এরপর ২৭ এপ্রিল ইশরাককে ডিএসসিসি মেয়র ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশন। কিন্তু আইনি জটিলতার কথা বলে ইশরাকের শপথের আয়োজন থেকে বিরত থাকে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়।
এমন পরিস্থিতিতে ইশরাক সমর্থকরা আন্দোলনে নামলে নগর ভবন কার্যত অচল হয়ে পড়ে।