বরখাস্তের আদেশের খবর জেনে রাত পৌনে ১১টার দিকে ফেইসবুকে এক পোস্টে প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন এই কর্মকর্তা। লিখেছেন, “অবৈধ ইউনুস সরকার আমাকে নাকি বরখাস্ত করছে! আজ থেকে আমি মুক্ত, স্বাধীন।”
স্বরাষ্ট্রের ‘পলাতক’ যুগ্ম সচিব ধনঞ্জয়ের চাকরি গেল, নিজেকে বললেন ‘ভাগ্যবান’

- আপডেট সময় ১০:৪৮:১৪ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৩০ জুলাই ২০২৫
- / ১৭ বার পড়া হয়েছে
দীর্ঘদিন কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকায় ‘পলাতক’ দেখিয়ে এবং অসদাচরণের অভিযোগে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাবেক যুগ্ম সচিব ধনঞ্জয় কুমার দাসকে চাকরিচ্যুত করেছে সরকার; যে আদেশকে স্বাগত জানিয়ে এ কর্মকর্তা নিজেকে ‘অনেক ভাগ্যবান’ হিসেবে তুলে ধরেছেন বর্তমান সরকারের অধীনে ‘একদিনও চাকরি’ করতে না হওয়ায়।
মঙ্গলবার ২৯ জুলাই তাকে বরখাস্তের আদেশের প্রজ্ঞাপন জারি করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।
প্রজ্ঞাপনে চাকরিতে অনুপস্থিতির অর্থাৎ পলায়নের তারিখ ২০২৪ সালের ৩ সেপ্টেম্বর থেকে তাকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করার কথা বলা হয়েছে।
এতে বলা হয়, চূড়ান্ত তদন্তে অসদাচরণ ও পলায়নের অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হলেও নাশকতার অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি।
এদিকে বরখাস্তের আদেশের খবর জেনে রাত পৌনে ১১টার দিকে ফেইসবুকে এক পোস্টে প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন ধনঞ্জয়। লিখেছেন, “অবৈধ ইউনুস সরকার আমাকে নাকি বরখাস্ত করছে! আজ থেকে আমি মুক্ত, স্বাধীন।
“নিজেকে অনেক ভাগ্যবান মনে হচ্ছে এমন অথর্ব সরকারের অধীনে আমাকে একদিনও চাকরি করতে হয়নি। থ্রী চিয়ার্স ফর ‘মোখলেসীয় সিভিল সার্ভিস’।“
কাজে যোগ না দেওয়ার পাশাপাশি ধনঞ্জয়ের বিরুদ্ধে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারকে নিয়ে তার ফেইসুবক অ্যাকাউন্ট থেকে বিভিন্ন ধরনের ’রাষ্ট্রদ্রোহিতামূলক বক্তব্য ও পোস্ট’ দেওয়ার অভিযোগ আনা হয়।
প্রজ্ঞাপনে তার বিরুদ্ধে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় নিহত এক ছাত্রের পিতার তেজগাঁও থানায় মামলা করার তথ্যও তুলে ধরা হয়।
সাবেক এই যুগ্ম সচিবের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগগুলোর বিষয়ে তার আত্মপক্ষ সমর্থনে বক্তব্য জানতে নোটিস দেওয়া, বিভাগীয় তদন্তসহ সব ধাপ পেরিয়ে তাকে চাকরি থেকে বরখাস্তের গুরুদণ্ড দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়; যা সরকারি কর্ম কমিশনও সুপারিশ করেছে বলে প্রজ্ঞাপনে বলা হয়।
প্রজ্ঞাপনে বরখাস্তের পুরো প্রক্রিয়া তুলে ধরে বলা হয়, ২০২৪ সালের ৩১ অগাস্ট ধনঞ্জয়কে বাংলাদেশ রেশম উন্নয়ন বোর্ডের পরিচালক নিয়োগের জন্য তার চাকরি বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ে ন্যস্ত করা হয়। ২ সেপ্টেম্বর তিনি বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ে যোগ দেন। এরপর তার বিরুদ্ধে গণমাধ্যমে দুর্নীতির অভিযোগ প্রকাশিত হওয়ায় তার আদেশ প্রত্যাহার বা বাতিলের জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় চিঠি দেয় বস্ত্র মন্ত্রণালয়। বস্ত্র মন্ত্রণালয়ে যোগদানের পর গত ৩ থেকে ১৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তিনি কর্মস্থলে উপস্থিত ছিলেন না।
পরে গত ৫ ডিসেম্বর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ধনঞ্জয়কে যুগ্ম সচিব হিসেবে পরবর্তী পদায়নের জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে ন্যস্ত করে। তবে তিনি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে যোগ না দিয়ে ৩ সেপ্টেম্বর থেকে বিনা অনুমতিতে কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকেন, যা ‘পলায়ন’ এর পর্যায়ভুক্ত অপরাধ।
আদেশে বলা হয়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহত ছাত্র রমিজ উদ্দিন আহমেদের পিতা এ কে এম রকিবুল আহমেদ তার ছেলেকে হত্যার দায়ে গত ৭ সেপ্টেম্বর ধনঞ্জয়সহ ২২৩ জনের বিরুদ্ধে তেজগাঁও থানায় মামলা করেছেন।
”এছাড়া ধনঞ্জয় কুমার জুলাই-আগস্ট বিপ্লবকালীন ও পরবর্তী সময়ে তার ফেইসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে বিভিন্ন ধরনের রাষ্ট্রদ্রোহিতামূলক বক্তব্য ও পোস্ট দিয়েছেন, যাতে মন্ত্রণালয় ও বিভাগে কর্মরত অন্যান্য কর্মকর্তাদের মনে বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে ও নাশকতা সংঘটিত হতে পারে মর্মে আশঙ্কা করা হচ্ছে এবং তার বক্তব্য সরকারি প্রতিষ্ঠানে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার নির্দেশিকা অনুযায়ী পরিহারযোগ্য বিষয়াদির আওতাভুক্ত।“
এসব কারণে ধনঞ্জয়ের বিরুদ্ধে গত ২০ ফেব্রুয়ারি অসদাচরণ, পলায়ন ও নাশকতার অভিযোগে বিভাগীয় মামলা করে তাকে কারণ দর্শানোর নোটিস দেওয়া হয়। তার স্থায়ী ও বর্তমান ঠিকানা এবং ই-মেইলে অভিযোগনামা ও অভিযোগ বিবরণী পাঠানো হয়। নির্ধারিত সময় অতিক্রান্ত হওয়ার পরেও তিনি লিখিত জবাব না দেওয়ায় তদন্ত বোর্ড গঠন করা হয়।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, তদন্ত বোর্ডের প্রতিবেদন অনুযায়ী ধনঞ্জয়ের বিরুদ্ধে অসদাচরণ ও পলায়নের অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হলেও নাশকতার অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি। ফলে তাকে চাকরি হতে বরখাস্তের গুরুদণ্ড কেন দেওয়া হবে না তা জানতে চেয়ে দ্বিতীয়বার কারণ দর্শানোর নোটিস দেওয়া হয়। এটির জবাব না পাওয়ায় তাকে চাকরি থেকে বরখাস্তের দণ্ড দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।
সাবরিনা জাহান- বিশেষ প্রতিনিধি : বিডিপলিটিক্স টোয়েন্টিফোর ডটকম