১৯ বছর পর সচিবালয়ে এলেন সাবেক এই স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার সঙ্গে সাবেক প্রতিমন্ত্রী বাবরের ২ ঘণ্টা বৈঠক

- আপডেট সময় ০১:৪৯:২৮ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫
- / ২৩ বার পড়া হয়েছে

১৯ বছর পর সচিবালয়ে সাব্কে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বাবরের আসার খবরে সেখানে যান সাংবাদিকরা। পরে সাংবাদিকদের সামনে আসেন তারা।
বিএনপি জোট সরকারের সময়কার স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর সঙ্গে দুই ঘণ্টা বৈঠক করেছেন।
রোববার ব্কিালে সচিবালয়ে ওই বৈঠক ফলপ্রসূ হয়েছে বলেও সাংবাদিকদের কাছে তুলে ধরেন বাবর; যিনি ২০০৭ সালে গ্রেপ্তারের পর থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত কারাগারে ছিলেন।
এদিন বিকাল ৪টা ২০ মিনিট থেকে সন্ধ্যা ৬টা ২০ মিনিট পর্যন্ত এ বৈঠকে রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হওয়ার কথা বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের বলেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা।
১৯ বছর পর সচিবালয়ে সাব্কে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বাবরের আসার খবরে সেখানে যান সাংবাদিকরা। পরে সাংবাদিকদের সামনে আসেন তারা।
এ বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মো. খোদা বখস চৌধুরী, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব নাসিমুল গনি ও পুলিশের মহাপরিদর্শক বাহারুল আলম উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকে রাষ্ট্রীয় কোনো বিষয়ে কথা হয়েছে কিনা জানতে চাওয়া হয় স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার কাছে। জবাবে তিনি বলেন, “আলোচনার মধ্যে হয়তো দুই একটা রাষ্ট্রীয় লেবেলে চলে আসে। তবে এটা খুব একটা বড় আলোচনা না।”
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার বক্তব্য শেষে সাবেক প্রতিমন্ত্রী বাবরের কাছে বৈঠকের বিষয়বস্তু নিয়ে প্রশ্ন করেন সাংবাদিকরা। তখন তিনি ১৯ বছর পর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আসতে পারায় সৃষ্টিকর্তার কাছে কৃতজ্ঞাতা প্রকাশ করে বলেন, নির্দোষ হওয়ায় মুক্তি মিলেছে।
বিএনপির জোট সরকারের সময়ে ২০০১ থেকে ২০০৬ মেয়াদে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলেন বাবর। এরপর সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে ২০০৭ সালের ২৮ মে বাবরকে তার বাসা থেকে আটক করা হয়। পরদিন তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। সেই থেকে তিনি কারাগারে ছিলেন। আওয়ামী লীগের পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় এলে একে একে সব মামলা থেকে খালাস পান বাবর।
কারাগার থেকে চলতি বছর ১৬ জানুয়ারি মুক্তির পর এই প্রথম সচিবালয়ে এলেন সাবেক প্রতিমন্ত্রী।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকের কারণ হিসেবে বাবর বলেন, “আমাদের আসার কারণ হচ্ছে কিছু কিছু জিনিস আমাদের মেটার অব কনসার্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে, উদ্বেগের জায়গা। যেগুলো আমরা অত্যন্ত আন্তরিকতার সাথে সৌহার্দ্য পরিবেশে আলোচনা করেছি।
“আমরা এসেছি বিশেষ করে পাশ্বর্বর্তী দেশে পতিত সরকার শেখ হাসিনা ওনার সাথে একটি বিশেষ শিল্প গোষ্ঠী, পত্রিকায় দেখেছেন আপনারা এস আলম গ্রুপ- তারা সেখানে একটা মিটিং করেছে পত্রপত্রিকায় এসেছে। মিটিং এর উদ্দেশ্য ছিল বাংলাদেশে নির্বাচন বানচাল করা, সহিংস ঘটনা ঘটানো। এটা একটা উদ্বেগের জায়গা।”
এসবের পাশাপাশি অবৈধ অস্ত্র ও লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধার না হওয়ার মত উদ্বেগের বিষয় নিয়েও কথা হওয়ার কথা বলেন তিনি। বলেন, “আলোচনা অত্যন্ত ফলপ্রসূ হয়েছে।”
এর বাইরে বৈঠকে পুলিশে এএসআই নিয়োগ নিয়ে কথা হওয়ার তুলে ধরে তিনি বলেন, “কনস্টেবল থেকে যারা (এএসআই) হয় তাদের একটা ক্যারিয়ার সে এএসআই হবে, এসআই হবে পরে পরিদর্শক পর্যন্ত হতে পারে। আর যারা এসআই নিয়োগ হচ্ছে তারা পরিদর্শক থেকে ডিআইজি পর্যন্ত হওয়ার উদাহরণ আছে। আর এএসপি নিয়োগ হয় সেখানে আইজি পর্যন্ত হতে পারে। এই এএসআই নিয়োগ হলে কনস্টেবলদের মধ্যে একটা…এটা উদ্বেগের কারণ।”
বর্তমান আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বিষয়ক এক প্রশ্নের জবাবে বাবর বলেন, “তারা (অন্তর্বর্তী সরকার) ভালো করার যথেষ্ট চেষ্টা করছেন। আন্তরিকতার কোনো কমতি নেই।”
তারেক রহমানের দেশে ফিরে আসার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “ইনশাল্লাহ দ্রুত ফিরে আসবেন, দোয়া করবেন।”
সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে ২০০৭ সালের ২৮ মে লুৎফুজ্জামান বাবরকে গ্রেপ্তার করা হয়। জরুরি অবস্থার সেই দুই বছর এবং পরে আওয়ামী লীগ সরকারের ১৫ বছরে কয়েকটি মামলায় তাকে সাজা দেওয়া হয়।
এর মধ্যে দুটি মামলায় তার মৃত্যুদণ্ড হয়, একটিতে হয় যাবজ্জীবন কারাদণ্ড। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত বছরের ৫ অগাস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর আপিল শুনানি শেষে একে একে এসব মামলায় খালাস পান বাবর।
গত ২৩ অক্টোবর দুর্নীতির এক মামলায় ৮ বছরের দণ্ড থেকে খালাস পান বাবর। ২১ অগাস্ট গ্রেনেড হামলার মামলায় মৃত্যুদণ্ডের আসামি বাবরসহ সব আসামিকে গত ১ ডিসেম্বর খালাস দেয় হাই কোর্ট।
১০ ট্রাক অস্ত্র চোরাচালানের বিশেষ ক্ষমতা আইনের মামলাতেও বাবরের মৃত্যুদণ্ড হয়েছিল। আর অস্ত্র আইনের পৃথক মামলায় হয়েছিল যাবজ্জীবন কারাদণ্ড।
গত ১৮ ডিসেম্বর ও ১৪ জানুয়ারি আপিলের রায়ে হাই কোর্ট দুই মামলাতেই বাবরকে খালাস দিলে তার মুক্তির পথ খোলে।