মিঠুর বিরুদ্ধে ৭৫ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ এনে মামলা করে দুদক।
স্বাস্থ্যের আলোচিত ঠিকাদার মিঠু গ্রেপ্তার

- আপডেট সময় ০২:১৯:৩১ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৫
- / ২৫ বার পড়া হয়েছে
স্বাস্থ্য খাতে ‘সিন্ডিকেট করে অর্থ আত্মসাৎ ও পাচারে’ জড়িত থাকার অভিযোগে আলোচিত ঠিকাদার মোতাজ্জেরুল ইসলাম মিঠুকে দুদকের করা মামলায় গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
৭৫ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দুদক মামলা করার পর বুধবার রাতে মিঠুকে রাজধানীর গুলশান থেকে গ্রেপ্তারের তথ্য দিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ।
বৃহস্পতিবার ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশনস বিভাগের উপ কমিশনার তালেবুর রহমান বলেন, “দুদকের করা মামলায় সংস্থাটির অনুরোধে গতরাতে তাকে গুলশান থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।”
এছাড়া এক বার্তায় ডিএমপি বলছে, আওয়ামী সরকারের আমলে স্বাস্থ্যখাতে দুর্নীতির হোতা মোতাজ্জেরুল ইসলাম মিঠুক গুলশান থেকে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে।
স্বাস্থ্য খাতে ‘সিন্ডিকেট করে অর্থ আত্মসাৎ ও পাচারে’ জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
এই ঠিকাদারের বিরুদ্ধে ৭৫ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ এনে বুধবার দুদকের উপপরিচালক মো. সাইদুজ্জামান বাদী হয়ে সমন্বিত জেলা কার্যালয়, ঢাকা-১ এ মামলাটি দায়ের করেন।
মামলা করার দিনই বিকালে দুদকের মহাপরিচালক মো. আক্তার হোসেন মামলাটি অনুমোদনের তথ্য দিয়েছিলেন।
দুদকের অনুসন্ধান প্রতিবেদনে বলা হয়, লেক্সিকোন মার্চেন্ডাইস ও টেকনোক্রেট নামের কোম্পানির মালিক মো. মোতাজ্জেরুল ইসলাম (মিঠু) কৃষি জমি ক্রয়, জমি লিজ, প্লট, ফ্ল্যাট ও বাড়ি নির্মাণে মোট ১৮ কোটি ৪০ লাখ ৫১ হাজার ৫০০ টাকার স্থাবর সম্পদ অর্জন করেন।
এছাড়া বিভিন্ন কোম্পানিতে শেয়ার ও বিনিয়োগ, গাড়ি ক্রয়, ব্যাংক হিসাবের স্থিতি, স্বর্ণালংকার, আসবাবপত্র ও ইলেকট্রনিকস সামগ্রী মিলিয়ে তার আরও ৫৭ কোটি ৪৪ লাখ ৮০ হাজার ২৩৮ টাকার অস্থাবর সম্পদের তথ্য পাওয়া গেছে।
সব মিলিয়ে তার স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদের মোট মূল্য দাঁড়িয়েছে ৭৫ কোটি ৮৫ লাখ ৩১ হাজার ৭৩৮ টাকা।
এছাড়া মিঠুর নামে পারিবারিক ব্যয়ের পরিমাণ পাওয়া গেছে ৭১ কোটি ৪৫ লাখ ১৪ হাজার ৪৩৪ টাকা। অর্থাৎ পারিবারিক ব্যয়সহ তার মোট সম্পদ ও ব্যয়ের হিসাব দাঁড়িয়েছে প্রায় ১৪৭ কোটি ৩০ লাখ ৪৬ হাজার ১৭২ টাকা।
দুদক বলছে, ব্যবসা, বাড়িভাড়া, কৃষি আয়, বেতন-ভাতা, ফার্মের অংশ, ব্যাংক সুদ, নিরাপত্তা জামানতের সুদ এবং বৈদেশিক রেমিট্যান্স থেকে মোতাজ্জেরুল ইসলামের বৈধ ও গ্রহণযোগ্য আয় পাওয়া গেছে ৭১ কোটি ৪৯ লাখ ৬৮ হাজার ৭৩৫ টাকা।
ফলে দেখা যায়, তিনি জ্ঞাত আয়ের উৎসের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণভাবে প্রায় ৭৫ কোটি ৮০ লাখ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন ও ভোগদখল করেছেন।
এ কারণে তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪ এর ২৭(১) ধারায় মামলা করেছে দুদক।
২০১৬ সালে প্রকাশিত বহুল আলোচিত পানামা পেপারসে যেসব বাংলাদেশির নাম এসেছিল, তাদের মধ্যে ছিলেন ঠিকাদারি ব্যবসায়ী মোতাজ্জেরুল ইসলাম মিঠু।
অভিযোগ রয়েছে, তার মালিকানাধীন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলোর মাধ্যমে বিভিন্ন মালামাল সরবরাহ ও উন্নয়নকাজের নামে প্রভাব খাটিয়ে তিনি কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন।
সেন্ট্রাল মেডিসিন স্টোরসের (সিএমএসডি) সাবেক পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. শহীদউল্লাহ মৃত্যুর আগে লিখিতভাবে সরকারকে জানিয়েছিলেন, স্বাস্থ্যখাতে কেনাকাটার অনিয়ন্ত্রিত দুর্নীতির মূল কারণ হল এই খাত ‘মিঠু চক্রের’ দখলে থাকা।
এ প্রতিবেদনের পরই বিষয়টি নিয়ে তৎপরতা শুরু করে রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা, দুদকসহ একাধিক আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা।
মোহাম্মদ আলিমুজ্জামান – বিশেষ প্রতিনিধি : বিডিপলিটিক্স টোয়েন্টিফোর ডটকম