রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে ভর্তির পর তার একটি অস্ত্রোপচার করা হয়েছে।
হাসপাতালে কামাল হোসেন, ‘নেওয়া হতে পারে বিদেশে’

- আপডেট সময় ১১:৩১:৫৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫
- / ২২ বার পড়া হয়েছে
বার্ধক্যজনিত জটিলতা ও শারীরিক বিভিন্ন অসুস্থতা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন গণফোরামের এমিরেটাস সভাপতি ড. কামাল হোসেন। উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে নেওয়ারও কথা ভাবছেন দলটির নেতারা।
রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে রোববার তাকে ভর্তির পর সোমবার ইউরিনারি ব্লাডারে একটি অস্ত্রোপচার করা হয়েছে বলে গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান জানিয়েছেন। মিজান বলেন, “আগামীকাল (বুধবার) সকালে বোর্ড গঠন করে ডাক্তাররা বসবেন পরবর্তী সিদ্ধান্তের জন্য। ডাক্তারদের পরামর্শ অনুযায়ী যদি বিদেশে নেওয়ার প্রয়োজন হয়, তবে আমরা উনাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিয়ে যাওয়া কথা ভাবছি।”
বাংলাদেশের প্রথম সংবিধান প্রণয়ন কমিটির সভাপতি ড. কামাল হোসেন পাঁচ দশকের রাজনৈতিক জীবনের অবসানের ঘোষণা দেন দু্ই বছর আগে, ২০২৩ সালের ২৭ অক্টোবর।
আওয়ামী লীগের হাত ধরে শুরু হওয়া ঘটনাবহুল রাজনৈতিক জীবনের শেষ তিনটি দশক তিনি ছিলেন ক্রমাগত ক্ষয়িষ্ণু গণফোরামের নেতৃত্বে। সেই দলটিকেও এক রাখতে না পারার এক বছর পর থামার ঘোষণা দেন।
১৯৯৩ সালে নিজ হাতে গড়া দলের সভাপতির পদ থেকে অব্যাহতির ঘোষণা দেন তিনি। রাজনীতি থেকে দূরে সরে গেলেও দেশের জন্য সাধ্যমত কাজ করে যাওয়ার কথা বলেন এ আইনজীবী।
সবশেষ ২০২৪ সালে দলের কাউন্সিলে নতুন কমিটিতে ড. কামাল হোসেনকে এমিরেটাস সভাপতি ও মোস্তফা মোহসীনকে (মন্টু) সভাপতি করা হয়। সাধারণ সম্পাদক হন মো. মিজানুর রহমান।
কামাল হোসেন রাজনীতিতে সব সময়ই ছিল বড় এক নাম। পাকিস্তান আমলে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় তিনি ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আইনজীবীদের একজন।
১৯৭০ ও ১৯৭৩ সালে বঙ্গবন্ধুর ছেড়ে দেওয়া আসনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন ড. কামাল। মুক্তিযুদ্ধের পর তিনি বাংলাদেশের সংবিধান প্রণয়ন কমিটির সভাপতি ছিলেন।
মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানের কারাগারে ছিলেন তিনিও। বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পর ১৯৭২-এর ৮ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে তাকেও মুক্তি দেওয়া হয়। তিনি বঙ্গবন্ধুর সঙ্গেই ১০ জানুয়ারি লন্ডন হয়ে বাংলাদেশে ফেরেন।
১৯৭২ সালে আইনমন্ত্রী এবং ১৯৭৩ থেকে ১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্ট পর্যন্ত বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন।
১৯৮১ সালে জিয়াউর রহমানকে হত্যার পর রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। বিএনপির প্রার্থী বিচারপতি আবদুস সাত্তারের ৬৫ শতাংশের বিপরীতে নৌকা নিয়ে পান ২৬ শতাংশ ভোট।
সেসময় সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য হিসেবে দলের নীতি নির্ধারণে তার ভূমিকা ছিল ব্যাপক। তবে ১৯৯১ সালের জাতীয় নির্বাচনের পর সভাপতি শেখ হাসিনার সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হয়।
সেই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের অপ্রত্যাশিত পরাজয়ের পর শেখ হাসিনা আনেন সূক্ষ্ম কারচুপির অভিযোগ। তবে বিবিসিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ড. কামাল বলেন, ‘নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে’।
শেখ হাসিনার কাছে দেওয়া এক চিঠিতে তিনি নির্বাচনে পরাজয়ের পেছনে দলীয় কোন্দল এবং অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসের কথা তুলে ধরেন।
১৯৯২ সালের মার্চ মাসের প্রথম দিকে আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভায় ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েন ড. কামাল। এরপর তিনি গণতান্ত্রিক ফোরাম নামে একটি উদ্যোগ নেন।
১৯৯২ সালের ১৯ এবং ২০ সেপ্টেম্বর আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলনের পর দলের সভাপতিমণ্ডলীর পদ হারান তিনি।
১৯৯৩ সালের অগাস্টের শেষ দিকে গণতান্ত্রিক ফোরামের তিনব্যাপী জাতীয় মহাসম্মেলন আহ্বান করা হয়। এই সম্মেলনের মাধ্যমে ২৯ অগাস্ট গণফোরাম গঠনের ঘোষণা দেওয়া হয়।
সে সময় এই দলটি বেশ আলোড়ন তোলে। ১৯৯৬ সালে প্রথমবারের মতো ভোটে অংশ নেয় গণফোরাম। কিন্তু তারা সুবিধা করতে পারেনি। সারা দেশে মোট ভোটের কেবল ০.১৩ শতাংশ পায় তারা।
তবে কামাল হোসেন কখনও আলোচনার বাইরে যাননি। ২০০৬ সালে আওয়ামী লীগ যখন সব বিরোধী দলগুলোকে এক মঞ্চে এনে মহাজোট গঠনের চেষ্টা করে, তখন এক মঞ্চে ওঠেন শেখ হাসিনা ও কামাল হোসেন।
তবে একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে রাজনীতিতে ঘটে নতুন এক মেরুকরণ। বিএনপির সঙ্গে জোটে যান কামাল হোসেন। জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নামে সেই জোটের প্রধান নেতায় পরিণত হন তিনি।
ভোটের আগে ভারতের একটি গণমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, জামায়াত থাকবে জানলে তিনি সেই ভোটে যেতেন না।
সেই নির্বাচনে বিএনপি তার ২০ দলীয় জোটও চালিয়ে যাচ্ছিল এবং জোটের প্রার্থীরাও ধানের শীষ নিয়ে ভোটে লড়েন। কামাল হোসেনের দলের প্রার্থীদেরও ছিল একই মার্কা।
ভোট শেষে বিএনপির সঙ্গে কামাল হোসেনের সম্পর্কে টানাপড়েন শুরু হয়। বিএনপি সব দলকে নিয়ে যে যুগপৎ আন্দোলনে নামে, তখন তাকে এড়িয়ে যাওয়া হয়।
বারবার জাতীয় ঐক্যের আহ্বান করে আসা কামাল হোসেন তার নিজের দলকেই ঐক্যবদ্ধ রাখতে পারেননি। একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে দলে টানা রেজা কিবরিয়াকে ঘিরে শুরু হয় ভাঙন।
সাবরিনা জাহান- বিশেষ প্রতিনিধি : বিডিপলিটিক্স টোয়েন্টিফোর ডটকম