“ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষার্থীদের জন্য যে কাজ করতে পারবে বলে মনে হয়েছে আমি তাকেই ভোট দিয়ে এসেছি। তবে হলের প্রার্থীদের ক্ষেত্রে কিছু ব্যক্তিগত সম্পর্কের বিষয়ও রয়েছে।”
‘হোমওয়ার্ক’ করে ভোট, ভ্যাপসা গরমে চলছে আড্ডা গল্প

- আপডেট সময় ১১:০১:৫০ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫
- / ৩০ বার পড়া হয়েছে
ছয় বছর পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনে প্রতিনিধি বাছাইয়ে যে ভোট শুরু হয়েছে, তাতে একজন ভোটারকে ৪১টি করে ভোট দিতে হচ্ছে।
ভোট দিয়ে আসা শিক্ষার্থীরা বলছেন, তারা কোন প্রার্থীকে ভোট দিবেন এই নিয়ে কদিন ধরে ‘হোমওয়ার্ক’ করেছেন। প্রার্থী বাছাইয়ের জন্য রাতে বিস্তর আলোচনা করে সকাল বেলায় ক্যাম্পাসে এসেছেন ভোট দিতে।
বুধবার সকালে কেন্দ্রীয় খেলার মাঠ কেন্দ্র থেকে ভোট দিয়ে বেরোনোর পর কয়েক শিক্ষার্থী আঙুলে লাগিয়ে দেওয়া কালো কালির ছবি তুলছিলেন সোশাল মিডিয়ায় পোস্ট করার জন্য।
তাদের একজন সাকিব হোসেন বলেন, “আমরা কয়েকদিন ধরেই হোমওয়ার্ক করেছি, কাল রাতেও নিজেদের মধ্যে অনেক আলোচনা করেছি। যারা প্রার্থীদের সরাসরি কর্মী বা বন্ধু নন তাদের বাইরে সাধারণ শিক্ষার্থীরা মোটামুটি সবাই যে যার মত করে চিন্তা করে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলেই আমি দেখেছি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষার্থীদের জন্য যে কাজ করতে পারবে বলে মনে হয়েছে আমি তাকেই ভোট দিয়ে এসেছি। তবে হলের প্রার্থীদের ক্ষেত্রে কিছু ব্যক্তিগত সম্পর্কের বিষয়ও রয়েছে।”
বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের আটটি কেন্দ্রে মঙ্গলবার সকাল ৮টায় ভোট শুরু হয়েছে। বিকাল ৪টা পর্যন্ত ৮১০টি বুথে একটানা ভোটগ্রহণ চলবে।
ডাকসুতে ২৮টি পদের বিপরীতে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নেমেছেন মোট ৪৭১ জন প্রার্থী। অন্তত ১০টি প্যানেলের বাইরে স্বতন্ত্র হিসেবেও লড়ছেন অনেকে।
এমন এক সময়ে এই নির্বাচন হচ্ছে, যখন ক্যাম্পাসে কোনো ছাত্র সংগঠনের একক আধিপত্য নেই; ক্ষমতাসীন দলের সংগঠনের দাপটও নেই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এমন পরিস্থিতি অনেকটাই নজিরবিহীন।
ফলে এককভাবে কোনো প্রার্থী বা প্যানেলকে বড় ব্যবধানে এগিয়ে রাখছেন না ভোটাররা।
• নির্বাচনে মোট ভোটার সংখ্যা ৩৯ হাজার ৮৭৪ জন।
• পাঁচ ছাত্রী হলে ১৮ হাজার ৯৫৯ জন; ১৩ ছাত্র হলে এই সংখ্যা ২০ হাজার ৯১৫ জন ভোটার
• ডাকসুতে ২৮টি পদের বিপরীতে প্রার্থী মোট ৪৭১ জন।
• প্রতি হল সংসদে ১৩টি করে মোট পদের সংখ্যা ২৩৪টি।
• ১৮টি হলে এসব পদে ভোটের লড়াইয়ে নেমেছেন ১ হাজার ৩৫ জন প্রার্থী।
সকাল ৮টা বাজার আগে থেকেই টিএসসি কেন্দ্রের সামনে দেখা যায় ভোট দেওয়ার জন্য দুই শতাধিক শিক্ষার্থী অপেক্ষা করছিলেন।
কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে সকাল সকালই দীর্ঘ লাইন পড়েছে ভোটারদের। সকালে এখানে ছাত্রদলের প্যানেলের ভিপি পদপ্রার্থী আবিদুল ইসলাম খান আবিদ ভোটকেন্দ্রের বুধে ঢুকে পড়লে অন্য প্রার্থীদের মধ্যে প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়।
অল্প সময়ের মধ্যেই অবশ্যই তিনি ভোটকেন্দ্র থেকে বেরিয়ে যান।
ভোটকেন্দ্র থেকে বেরিয়ে অনেকে ছবি তুলছেন সোশাল মিডিয়ায় পোস্ট করবেন বলে। আর প্রার্থীরা ভোট কেন্দ্রের বাইরে দাঁড়িয়ে কেবল নিজেদের ব্যালট নম্বরটি স্মরণ করিয়ে দিচ্ছেন ভোটারদের।
টিএসসিতে রোকেয়া হলের ছাত্রদের জন্য নির্ধারিত ভোটকেন্দ্রের বাইরে হাঁটতে হাঁটতে নিজের ব্যালট নম্বর ২১ স্মরণ করিয়ে দেয়ার চেষ্টা করছিলেন ডিপি পদপ্রার্থী আবিদ।
তিনি প্রার্থীদের বলেন, “আপুরা মনে রাখবেন সালটা কিন্তু ১৯২১, ব্যালট নম্বর ২১।”
সাদা পাঞ্জাবি পরা আবিদ এক জায়গায় স্থির ছিলেন না। ঘুরছিলেন কোনো সঙ্গীর মোটরসাইকেলের পেছনে চেপে।
একই কেন্দ্রে ভিপি পদপ্রার্থী ইসলামী ছাত্রশিবিরের নেতা আবু সাদিক (সাদিক কায়েম) এসেছেন কালো পাঞ্জাবি পডরে। তিনি যেদিকেই যাচ্ছেন কিছু গণমাধ্যম কর্মীরা তাকে ঘিরে ধরছেন।
একপর্যায়ে সাদিক বলেন, “ভাই আমি ভেতরে কথা বলে এলাম। বাইরেও একবার বলেছি। একটু ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে নেই।”
প্রতিটি ভোট কেন্দ্রের বাইরে হলের প্রার্থী ও তাদের শুভানুধ্যায়ীরা নিজেদের বা প্রার্থীর ব্যালট নম্বর মনে করিয়ে দেয়ার চেষ্টা করছেন ভোটারদের।
ভাদ্রের এই ভ্যাপসা গরমে কাউকে স্বস্তিতে দেখা যায়নি, তবে থেমে নেই গল্প, আড্ডা। কার্জন হল ভোটকেন্দ্রে ভোট চাইতে এসে অসুস্থ হয়ে পড়েন একুশে হলের এজিএস প্রার্থী অর্ক। তাকে নেওয়া হয়েছে হাসপাতালে।
তবে গরম উৎসাহে ভাঁটা ফেলতে পারেনি। হল থেকে শিক্ষার্থীরা আসছেন দলে দলেই। ভোট দিয়ে এসে বন্ধুদের সঙ্গে ফুটপাতে বসে আড্ডা দিচ্ছেন কেউ কেউ। বিশ্ববিদ্যালয়ের লাল বাসগুলোর ব্যস্ততা দেখা গেছে হল থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত। আবার অনাবাসিক শিক্ষার্থীদের নিয়েও ক্যাম্পাসে এসে কেন্দ্রে কেন্দ্রে পৌঁছে গেছে বাসগুলো।
কেন্দ্রীয় খেলার মাঠের সামনের ফুটপাতে বসে আড্ডা দিচ্ছিলেন চারজন। তাদের একজন আলিফ বলছিলেন, “অন্য বন্ধুদের জন্য অপেক্ষা করছি, সবাই একসঙ্গে হলে ফিরব।”
আড্ডা চলছে ভালোই তবে ‘চা ওয়ালা মামাদে’র খুব ‘মিস করছেন’ জানিয়ে শিক্ষার্থী নাইমুর বলছেন, “ক্যাম্পাসে একটা উৎসবের আমেজ। সবাই খুব আনন্দে আছে। কিন্তু এই আনন্দের দিনে ক্যাম্পাসে চা পাওয়া যাচ্ছে না। ভোট উপলক্ষে চা ওয়ালা মামাদের দোকানগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।”
মইদুল হাসান – জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক : বিডিপলিটিক্স টোয়েন্টিফোর ডটকম