“কাগুজে প্রতিষ্ঠানের নামে নেওয়া ৬১৫ কোটি টাকার ঋণের প্রকৃত সুবিধাভোগী হয়েছেন নজরুল ইসলাম মজুমদার ও তার পরিবার,” বলছে দুদক।
৬১৫ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে মজুমদার পরিবারের ‘আত্মসাৎ’, দুদকের মামলা

- আপডেট সময় ০৬:০৭:২৬ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২১ অগাস্ট ২০২৫
- / ৫ বার পড়া হয়েছে
এক্সিম ব্যাংক থেকে ৬১৫ কোটি ৭৫ লাখ টাকা ঋণ নিয়ে বিভিন্ন কৌশলে আত্মসাতের অভিযোগে ব্যাংকটির সাবেক চেয়ারম্যান ও নাসা গ্রুপের কর্ণধার নজরুল ইসলাম মজুমদারসহ ৩০ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুদক।
সংস্থাটির উপপরিচালক মো. আল-আমিন বুধবার ঢাকার সমন্বিত জেলা কার্যালয়-১ এ মামলা করেন।
দুদক বলছে, ‘ফ্লামিংগো এন্টারপ্রাইজ’ নামে একটি ‘কাগুজে প্রতিষ্ঠানের’ মাধ্যমে এক্সিম ব্যাংক থেকে নেওয়া ৬১৫ কোটি ৭৫ লাখ টাকা ঋণের প্রকৃত সুবিধাভোগী হয়েছেন নজরুল ইসলাম মজুমদার ও তার পরিবার।
এজাহারে বলা হয়, কাগুজে প্রতিষ্ঠানের কোনো বাস্তব যাচাই, পরিদর্শন আর সহায়ক জামানত ছাড়াই এক্সিম ব্যাংক বিপুল ঋণ বিতরণ করে। ঋণের অর্থ প্রকৃত ব্যবসায় কাজে ব্যবহার না হয়ে বিভিন্ন কাগুজে লেনদেন ও মানি লন্ডারিংয়ের মাধ্যমে নাসা গ্রুপ ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের হিসাবে স্থানান্তর করা হয়। ব্যাংকের কর্মকর্তারা বিষয়টি জেনেও অসৎ উদ্দেশে লাভবান হতে ঋণ অনুমোদন ও বিতরণে সহযোগিতা করেন।
দুদকের অভিযোগ, ২০২৩ সালের ১৬ এপ্রিল মো. মোশারফ হোসেন এক্সিম ব্যাংকের টাওয়ার শাখায় মাত্র ১০ হাজার টাকা জমা দিয়ে ফ্লামিংগো এন্টারপ্রাইজের নামে একটি চলতি হিসাব খোলেন। এর আগে ১৩ এপ্রিল ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন থেকে একটি ট্রেড লাইসেন্স সংগ্রহ করা হয়, যেখানে ব্যবসা শুরুর তারিখ দেওয়া হয় ২০২৪ সালের ৬ এপ্রিল। ব্যবসার ঠিকানা ও মালিকের ঠিকানা হিসেবে নাসা গ্রুপের ঠিকানা ব্যবহার করা হয়।
২০২৩ সালের জুলাই থেকে ২০২৪ সালের জুলাই পর্যন্ত ধাপে ধাপে ফ্লামিংগো এন্টারপ্রাইজের নামে ৬১৫ কোটি ৭৫ লাখ টাকার ঋণ অনুমোদন ও বিতরণ করা হয়। ঋণ বিতরণের পর ফ্লামিংগো এন্টারপ্রাইজের হিসাবে জমা হওয়া অর্থ বিভিন্ন কাগুজে বিল ও ক্যাশ মেমো দেখিয়ে বৈধ করার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু বাস্তবে ওই অর্থ মোশারফ হোসেন স্বাক্ষরিত চেকের মাধ্যমে নাসা গ্রুপের কর্মচারী ও ঘনিষ্ঠদের নামে উত্তোলন করা হয়। পরে তা নগদ জমা বা ট্রান্সফারের মাধ্যমে নাসা গ্রুপের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান যেমন মদিনা ডেটস অ্যান্ড নাটস, এমএনসি অ্যাপারেলস লিমিটেডসহ বিভিন্ন হিসাবে স্থানান্তর করা হয়। অবশিষ্ট অর্থ বিভিন্ন ব্যক্তির নামে পে-অর্ডার করা হয়।
এজাহারে বলা হয়, ‘বাই মুয়াজ্জাল’ ও ‘আইবিবি’ ঋণ এখনো পরিশোধ করা হয়নি। ‘এমটিআর’ ঋণের অর্থ এলসির মাধ্যমে বিদেশি রপ্তানিকারকের ব্যাংকে পাঠানো হলেও গ্রাহক নির্ধারিত ৯০ দিনের মধ্যে তা ফেরত দেয়নি।
এক্সিম ব্যাংকের টাওয়ার শাখার কর্মকর্তারা (ম্যানেজার, ইনভেস্টমেন্ট ইনচার্জ, সেকেন্ড অফিসারসহ) গ্রাহকের ব্যবসার বাস্তব যাচাই, স্টক পরিদর্শন, লাভ-ক্ষতি বা ‘টার্নওভার’ বিশ্লেষণ না করেই কেবল পণ্য জামানত দেখিয়ে ঋণ অনুমোদনের সুপারিশ করেন। রিজিওনাল অফিস ও হেড অফিসের কর্মকর্তারা যাচাই না করেই সেই প্রস্তাব অনুমোদন করে বোর্ডে পাঠান। এরপর এক্সিম ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদও কোনো প্রশ্ন না তুলে ঋণ অনুমোদন করে।
নথি, লেনদেন আর প্রমাণের বরাতে দুদক বলছে, “ফ্লামিংগো এন্টারপ্রাইজ আসলে নাসা গ্রুপের একটি কাগুজে প্রতিষ্ঠান। এর মাধ্যমে এক্সিম ব্যাংকের কর্মকর্তাদের সহযোগিতায় মোট ৬১৫ কোটি ৭৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে, যা মূলত নাসা গ্রুপের কর্ণধার ও সাবেক চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদার এবং তার পরিবারের স্বার্থে ব্যবহার করা হয়েছে।”
মামলার আসামি
নজরুল ইসলাম মজুমদার ছাড়াও মামলায় ফ্লামিংগো এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী মো. মোশারফ হোসেন, নাসা বেসিকস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ওয়ালিদ ইবনে ইসলাম, মিসেস আনিকা ইসলাম, মদিনা ডেটস অ্যান্ড নাটসের প্রোপ্রাইটর মোজাম্মেল হোসাইন, জান্নাত এন্টারপ্রাইজের প্রোপ্রাইটর মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ, এমএনসি অ্যাপারেলস লিমিটেডের ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর আবুল কালাম ভূঁইয়া, এক্সিম ব্যাংকের ম্যানেজার (এসভিপি) মোহাম্মদ আশরাফুল হক, এভিপি ও সেকেন্ড অফিসার আব্দুল্লাহ আল মামুন, সাবেক এসপিও ও ইনভেস্টমেন্ট অফিসার এবং বর্তমান যমুনা ব্যাংকের সিনিয়র এক্সিকিউটিভ অফিসার মো. হুমায়ুন কাদের হিমু, ভাইস প্রেসিডেন্ট ও সাবেক ম্যানেজার মো. মনোয়ার হোসেন, সাবেক এসভিপি ও বর্তমান যমুনা ব্যাংকের এসভিপি মেফতা উদ্দিন খান, প্রিন্সিপাল অফিসার মো. শহিদুল ইসলাম, ইনভেস্টমেন্ট রিলেশনশিপ অফিসার ও এসপিও মোছা. শিরিনা আক্তার, ভাইস প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ আরমান হোসেন, সাবেক এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট মো. আনিছুল আলম, অতিরিক্ত ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর মো. ইছরাইল খান, অতিরিক্ত ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর মো. মঈদুল ইসলাম, ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর মাকসুদা খানম, ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর মো. জসিম উদ্দিন ভূঁইয়া, সাবেক অতিরিক্ত ম্যানেজিং ডিরেক্টর শাহ মো. আব্দুল বারি, সাবেক অতিরিক্ত ম্যানেজিং ডিরেক্টর ও সিএফও মো. হুমায়ুন কবীর, ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. ফিরোজ হোসেন, পরিচালক নাসরিন ইসলাম, সাবেক পরিচালক ও বর্তমান চেয়ারম্যান মো. নজরুল ইসলাম স্বপন, সাবেক পরিচালক মো. আব্দুল্লাহ, পরিচালক মো. নুরুল আমিন, পরিচালক অঞ্জন কুমার সাহা, সাবেক স্বতন্ত্র পরিচালক মো. নাজমুস ছালেহিন এবং সাবেক স্বতন্ত্র পরিচালক মিয়া মোহাম্মদ কাওছার আলম।
নিঝুম আহমেদ – জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক : বিডিপলিটিক্স টোয়েন্টিফোর ডটকম