নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র থেকে কেবিনে দেওয়া হয়েছে ফরিদা পারভীনকে।
অর্থ নয়, ‘চিকিৎসা সহযোগিতা’ চায় লালনগীতি ফরিদা পারভীনের পরিবার

- আপডেট সময় ০৫:৩০:২৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ৭ জুলাই ২০২৫
- / ২৭ বার পড়া হয়েছে
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন লালনগীতি শিল্পী ফরিদা পারভীনের শারীরিক অবস্থার ‘কিছুটা উন্নতি’ হয়েছে বলে জানিয়েছে তার পরিবার।
সোমবার দুপুরে তার স্বামী বাঁশিবাদক গাজী আবদুল হাকিম বিডিপলিটিক্স টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছেন, ফরিদা পারভীনকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) রেখে চিকিৎসা সেবা দেওয়ার পর রোববার ৬ জুলাই থেকে তাকে সাধারণ কেবিনে দেওয়া হয়েছে।
এর মধ্যে লালনের গানের এই শিল্পীর চিকিৎসায় সরকারের তরফ থেকে আর্থিক সহযোগিতার প্রস্তাব দেওয়া হলেও, তার পরিবার জানিয়েছে টাকাপয়সা নয়, শিল্পীর চিকিৎসা প্রক্রিয়ায় সহযোগিতা প্রয়োজন আছে তাদের।
ফরিদা পারভীনের শারীরিক অসুস্থতা নিয়ে গত বৃহস্পতিবার ৩ জুলাই খবর প্রকাশ করেছিল বিডিপলিটিক্স টোয়েন্টিফোর ডটকমকে । তখন বাসাতেই চিকিৎসা চলছিল, পরে অবস্থার অবনতি হলে শনিবার ৫ জুলাই একটি বেসরকারি হাসপাতালে নেওয়া হয়।
বৃহস্পতিবার ৩ জুলাই গাজী আব্দুল হাকিম বলেছিলেন, “ফরিদার তো প্রায়ই ডায়ালাইসিস করতে হয়, এবার পরপর তিনদিন করতে হয়েছে। ডায়ালাইসিস করতে গিয়ে অসুবিধা হয়, তখন তাকে আইসিইউতে নেওয়া হয়। এ নিয়ে তিনবার আইসিউতে ভর্তি করা হল।”
“একবার কোভিড মহামারীর সময়, ফেব্রুয়ারিতে নিউমোনিয়া হয়েছিল। এবার ডায়ালাইসিস করতে গিয়ে এই সুস্থ হচ্ছে, আবার অসুস্থ হচ্ছে। এইভাবে আর কয়দিন বাঁচবেন তিনি।”
ফরিদা পারভীনের খবর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়ানোর পর কেউ সরকারকে এই শিল্পীর পাশে দাঁড়ানোর আহ্বানও জানান।
সরকারের সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে আর্থিক সহযোগিতার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে বলে বিডিপলিটিক্স টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন গাজী আব্দুল হাকিম।
তবে ফরিদা পারভীনের পরিবার আর্থিক সহযোগিতা নয়, তার চিকিৎসায় বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের নিয়ে মেডিকেল বোর্ড গঠন করার জন্য সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন তারা।
গাজী আব্দুল হাকিম বলেন, “ফরিদা পারভীন রাষ্ট্রীয় সম্পদ, একজন ফরিদা পারভীনকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার ব্যবস্থাটুকু তো করা যায়। যদি সেটাও না হয় আমাদের দেশে যত বড় বড় হাসপাতাল আছে, বিশেষজ্ঞদের দিয়ে একটা চিকিৎসা বোর্ড তৈরি করা যেতে পারে। এটা একমাত্র সরকারের পক্ষেই করা সম্ভব।”
৭১ বছর বয়সী এই শিল্পী শুধু কিডনি সমস্যা নয়, ডায়াবেটিসসহ নানা শারীরিক জটিলতায় ভুগছেন দীর্ঘদিন ধরে।
গাজী আব্দুল হাকিম বলেন, “আমরা পরিবার থেকে সাধ্যমত চেষ্টা করছি। কিন্তু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসা বোর্ড তৈরি করার ব্যাপারে সরকার সহযোগিতা পেলে ভালো হত।
“মন্ত্রণালয় থেকে যোগাযোগ করে তারা অর্থ সহযোগিতা দিতে চেয়েছিল। আমরা তো টাকা চাই না। তারা এসে দেখে বিদেশে নেওয়া প্রয়োজন কিনা, পরামর্শ দিক, অথবা দেশে মেডিকেল বোর্ড গঠন করে চিকিৎসা প্রক্রিয়ার ব্যবস্থা করুক, এটাই চাই।”
চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে ১৩ দিন হাসপাতালের আইসিইউতে ছিলেন ফরিদা পারভীন। শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল তাকে।
নজরুলসংগীত ও দেশাত্মবোধক গান শুরুর পর লালনসংগীত দিয়ে শ্রোতাদের কাছে পরিচিতি পান ফরিদা পারভীন। সাধক মোকসেদ আলী শাহর কাছে তিনি লালনসংগীতের তালিম নেন।
সংগীতাঙ্গনে বিশেষ অবদানের জন্য ১৯৮৭ সালে একুশে পদক পান ফরিদা পারভীন। ২০০৮ সালে জাপান সরকারের ‘ফুকুওয়াকা এশিয়ান কালচার’ পুরস্কার পান তিনি।
বেশ কয়েকটি চলচ্চিত্রের গানেও কণ্ঠ দিয়েছেন এই শিল্পী। সেরা প্লেব্যাক গায়িকা হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন ১৯৯৩ সালে।
ফরিদা পারভীনের কণ্ঠে লালনের গানের যে চর্চা হয়ে এসেছে গেল পাঁচ দশক ধরে, সেটি প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে ছড়িয়ে দিতে প্রায় ১৬ বছর আগে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন ‘অচিন পাখি সংগীত একাডেমি’।
কিন্তু শারীরিক অসুস্থতা, প্রতিষ্ঠানের আয়ের চেয়ে ব্যয় বেশি হওয়া, এবং নিজস্ব ভবন না থাকায় এ প্রতিষ্ঠানটিও টিকে থাকার লড়াইয়ে জর্জরিত।
নিজস্ব প্রতিবেদক : বিডিপলিটিক্স টোয়েন্টিফোর ডটকম