“চলমান এই বৃষ্টির প্রবণতা ৯ জুলাই থেকে কিছুটা কমবে। এরপর ২-৩ দিনের বিরতি দিয়ে আবার বাড়তে পারে।”
কক্সবাজারে টানা বৃষ্টিতে ৮০টির বেশি গ্রাম প্লাবিত-হাজারো মানুষ পানিবন্দি

- আপডেট সময় ০৬:৩৭:০৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৮ জুলাই ২০২৫
- / ১৮ বার পড়া হয়েছে

সপ্তাহব্যাপী টানা ভারি বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলের পানি প্রবেশ করায় কক্সবাজারের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। ৮০টিরও বেশি গ্রামের হাজারো মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
সপ্তাহব্যাপী টানা ভারি বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলের পানি প্রবেশ করায় কক্সবাজারের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। ৮০টিরও বেশি গ্রামের হাজারো মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ইমরান হোসন সজিব বলছেন, “টানা বৃষ্টিতে পুরো জেলার আনুমানিক ৮০টি গ্রামের মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানা গেছে।”
মাতামুহুরী নদীর পানি উপচে পড়ায় চকরিয়া ও পেকুয়া উপজেলায় দুই হাজারের এর বেশি ঘরবাড়ি প্লাবিত হয়েছে। এই এসব উপজেলায় অন্তত দশ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
এ তথ্য জানিয়ে কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মো. সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, “বাঁকখালী ও মাতামুহুরী নদীর পানি বিপৎসীমার কাছাকাছি উঠে এসেছে। ফলে নদীর পাড়ের অনেক এলাকা প্লাবিত হয়েছে।”
তিনি বলেন, মহেশখালী ও কুতুবদিয়া উপজেলার কিছু বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং সেগুলোর সংস্কার কাজ চলছে।
কক্সবাজার আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ এ বি হান্নান বলছেন, জুলাই মাসের প্রথম সাত দিনে জেলায় ৬৯৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।
“এটি ভারি বৃষ্টিপাত হিসেবে ধরা হয়, কারণ কক্সবাজারে প্রতিদিন গড়ে ৯৯ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়।”
হান্নান বলেন, “জুলাই বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপাতের মাস। এ মাসে গড়ে ২২ দিন বৃষ্টি হয়। চলমান এই বৃষ্টির প্রবণতা ৯ জুলাই থেকে কিছুটা কমবে। এরপর ২-৩ দিনের বিরতি দিয়ে আবার বাড়তে পারে।”
“গত বছর কক্সবাজারে জুলাই মাসে ১ হাজার ৭০৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছিল। চলতি মাসে সেই রেকর্ড ভাঙতে পারে।”
জেলার ছয়টি দুর্যোগপ্রবণ উপজেলার মধ্যে টেকনাফের পরিস্থিতি সবচেয়ে ভয়াবহ। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের মতে, উপজেলার প্রায় বহু গ্রাম প্লাবিত হয়েছে এবং অন্তত ৫০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
টেকনাফের হোয়াইক্যং ইউনিয়নে ৮টি, হ্নীলা ইউনিয়নে ১২টি, টেকনাফ পৌরসভায় ৭টি, টেকনাফ সদর ইউনিয়নে ৬টি, সাবরাং ইউনিয়নে ৭টি এবং বাহারছড়া ইউনিয়নে ১০টি গ্রাম পানির নিচে চলে গেছে।
টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শেখ এহেসান উদ্দিন বলেন, “ভারি বর্ষণের কারণে বেশ কয়েকটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। আমরা স্থানীয়দের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি এবং পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি।”
টেকনাফের হ্নীলা ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলী বলেন, তার ইউনিয়নের ১২টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে চার হাজারের বেশি পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। গ্রামগুলোর রাস্তাঘাট পানির নিচে তলিয়ে যাওয়ায় যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে।
টেকনাফ সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমান বলেন, মহেশখালিয়াপাড়া, নতুন পল্লানপাড়া, তুলাতুলি, লেঙ্গুরবিল, খোনকারপাড়া, মাঠপাড়া ও রাজারছড়াসহ ছয়টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।
সেন্টমার্টিন দ্বীপেও জোয়ার ও সাগর উত্তাল থাকায় কয়েকটি গ্রামে সাগরের পানি ঢুকে পড়েছে। টানা বৃষ্টির কারণে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে।
কারণ দ্বীপে দ্রুত পানি অপসারণের মতো ড্রেনেজ ব্যবস্থা নেই বলে জানান সেখানকার স্থানীয় বাসিন্দা তৈয়ব উল্লাহ।
উখিয়া উপজেলায় পাহাড়ি ঢলে প্লাবিত হয়েছে অন্তত ১৬টি গ্রাম। এতে প্রায় ১০ হাজার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কামরুল হোসেন চৌধুরী।
তিনি বলেন, “টানা বৃষ্টিতে হঠাৎ করে পানি নেমে আসায় এ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। ৫-৬ ঘণ্টার বিরতি পেলে পানি নেমে যেতে পারে। তবে উপজেলার বিভিন্ন সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।”
উখিয়ার রাজাপালং ইউপির ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য হেলাল উদ্দিন বলেছেন, ৩, ৭ রোহিঙ্গা ক্যাম্পেও হঠাৎ বন্যায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
এছাড়াও ১২ ও ২২ নম্বর ক্যাম্পেও জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। এতে প্রায় ১৫ হাজার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তায় এনজিওগুলো কাজ করছে বলে জানান তিনি।
রামু উপজেলার ফতেখাঁরকুল, রাজারকুল ও শ্রীকুল ইউনিয়নের ১০ থেকে ১২টি গ্রাম এবং সদর উপজেলার ঝিলংজা ইউনিয়নের বাংলাবাজার ও খরুলিয়া এলাকার প্রায় এক হাজার বাড়িঘর বাঁকখালী নদীর পানি বেড়ে প্লাবিত হয়েছে বলে ইউএনও রাশিদুল ইসলাম জানিয়েছেন।
কক্সবাজার প্রতিনিধি : বিডিপলিটিক্স টোয়েন্টিফোর ডটকম