যুক্তরাজ্যের ইতিহাসের অন্যতম ভয়াবহ বিচারিক ব্যর্থতা বিপুল সংখ্যক মানুষকে কী যে মর্মান্তিক বিপদে ফেলেছিল, তদন্ত প্রতিবেদনে সেই চিত্রই ফুটে উঠেছে।
যুক্তরাজ্যে পোস্ট অফিস কেলেঙ্কারিতে ‘১৩ আত্মহত্যা’, অনেকে দেউলিয়া, ভেঙেছে বিয়ে-পরিবার

- আপডেট সময় ০৩:০০:০৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১০ জুলাই ২০২৫
- / ৩৪ বার পড়া হয়েছে
কম্পিউটার সিস্টেমের ত্রুটি কর্মীদের ঘাড়ে চাপানোর কারণে ব্রিটেনের পোস্ট অফিসের ১৩ কর্মী আত্মহত্যা করে থাকতে পারেন, এবং এর বাইরেও অনেকে দেউলিয়া ও গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন বলে দেশটির সরকারি এক তদন্তে উঠে এসেছে।
যুক্তরাজ্যের ইতিহাসের অন্যতম ভয়াবহ বিচারিক ব্যর্থতা বিপুল সংখ্যক মানুষকে কী যে মর্মান্তিক বিপদে ফেলেছিল, তদন্ত প্রতিবেদনে সেই চিত্রই ফুটে উঠেছে বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
তদন্তদলের প্রধান উইন উইলিয়ামস মঙ্গলবার ৮ জুলাই বলেন, তিনি নিশ্চিত যে রাষ্ট্রায়ত্ত পোস্ট অফিসের শীর্ষ কর্তারা জানতেন কিংবা তাদের জানা উচিত ছিল যে তাদের কম্পিউটার ব্যবস্থা ত্রুটিপ্রবণ, অথচ এরপরও তারা প্রকাশ্যে ওই কম্পিউটার ব্যবস্থাকে নির্ভুল বলে রটিয়ে গেছেন।
২০০০ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত পোস্ট অফিস শাখা ব্যবস্থাপকদের হিসাবে লোকসানের দায়ে সাবপোস্টমাস্টার নামে পরিচিত ওই ব্যবস্থাপকদেরই সাজা দিয়েছিল। অথচ এই লোকসান হয়েছিল জাপানি কোম্পানি ফুজিৎসুর সরবরাহ করা ত্রুটিপূর্ণ এক আইটি ব্যবস্থাপনার কারণে। লোকসানজনিত কারণে পোস্ট অফিসের প্রায় এক হাজার জন দোষী সাব্যস্ত হন।
এ ঘটনা নিয়ে গতবছর টেলিভিশন নাটক ‘মিস্টার বেটস ভার্সেস দ্য পোস্ট অফিস’ প্রচারিত হওয়ার পর নাগরিকদের ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়ার পর ওই দোষী সাব্যস্ত ব্যক্তিদের দায়মুক্তি দিয়ে আইন পাস হয়।
নিজের তদন্ত প্রতিবেদনের ১৬২ পৃষ্ঠার প্রথম খণ্ডে উইলিয়ামস ভুক্তভোগীদের ‘পূর্ণাঙ্গ ও ন্যায্য’ ক্ষতিপূরণ দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তার সুপারিশগুলোর মধ্যে বিনামূল্যে আইনি পরামর্শ ও পরিবারের সদস্যদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথাও আছে।
উইলিয়ামস বলেছেন, এই কেলেঙ্কারিতে সুনির্দিষ্ট কতজন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, তা বের করা অসম্ভব হলেও চারটি প্রকল্পের আওতায় ক্ষতিপূরণ পেতে প্রায় ১০ হাজার জন যোগ্য দাবিদার রয়েছেন।
“হাজার হাজার লোক গুরুতর আর্থিক ক্ষতির শিকার হয়েছেন। অনেকে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও বাড়িঘর হারিয়েছেন, দেউলিয়া হয়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে, বিয়ে-পরিবার ভেঙে গেছে।
“দুঃখজনক হচ্ছে, আমি এমন লোকেদের কথাও শুনেছি যাদের সম্পর্কে বলা হয় যে তারা নিজেরাই তাদের জীবনপ্রদীপ নিভিয়ে দিতে প্ররোচিত হয়েছিলেন,” প্রতিবেদন প্রকাশের পর দেওয়া বক্তৃতায় বলেন তিনি।
১৭টি ঘটনার উল্লেখ করে উইলিয়ামস বলেন, ভুক্তভোগীদের মধ্যে সামান্য পরিমাণ টাকার জন্য দোষী সাব্যস্ত হওয়া থেকে শুরু করে অন্যায়ভাবে কারাগারে যাওয়া, গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়া, প্রচণ্ড হতাশাগ্রস্ত হওয়া এবং আত্মহত্যার ঘটনাও আছে।
এদেরই একজন পোস্টমাস্টার মার্টিন গ্রিফিথস। হিসাবে লোকসান দেখে ২০১৩ সালে তাকে চাকরিচ্যুতির নোটিস দেওয়া হয়। এর প্রতিক্রিয়ায় গ্রিফিথস নিজের ইচ্ছায় চলন্ত বাসের সামনে গিয়ে দাঁড়ান। ওই দুর্ঘটনায় শরীরের একাধিক জায়গায় আঘাত পান তিনি, এরই ফলশ্রুতিতে ৫৯ বছর বয়সে মৃত্যু হয় তার।
তদন্তদলের করা অনুরোধের প্রেক্ষিতে পোস্ট অফিস এরকম ছয়জন পোস্টমাস্টারকে শনাক্ত করেছে, যারা আত্মহত্যা করেছেন বলে তাদের পরিবার বলছে। পোস্টমাস্টার ছিলেন না, এমন ৭ কর্মীও একই কারণে আত্মহত্যা করেছেন বলে দাবি তাদের পরিবারের।
ভুক্তভোগী অনেকে মানসিক ও শারীরিক নানা সমস্যায় ভুগেছেন, কেউ দেউলিয়া হয়েছেন, অনেকের সম্পর্ক ভেঙে গেছে।
যুক্তরাজ্যের বাণিজ্যমন্ত্রী জনাথন রেনল্ডস বলেছেন, মঙ্গলবার প্রকাশিত তদন্ত প্রতিবেদনটি সাবপোস্টমাস্টার ও তাদের পরিবারের সদস্যদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক।
“অন্যায় ক্ষতির শিকার হওয়া সাবপোস্টমাস্টারদের দ্রুত, পূর্ণাঙ্গ ও ন্যায্য ক্ষতিপূরণ দেওয়ার ব্যাপারে আমি প্রতিজ্ঞাবদ্ধ,” বলেছেন তিনি।
তদন্তে ২২৬ দিন ধরে শুনানি হয়েছে, ২৯৮ সাক্ষীকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে।
চূড়ান্ত প্রতিবেদনের দ্বিতীয় খণ্ড, যেখানে পোস্ট অফিসের ভূমিকার প্রসঙ্গও আছে, তা সামনের দিনে প্রকাশিত হবে।
সূত্র : বিবিসি / রয়টার্স
আন্তর্জাতিক ডেস্ক : বিডিপলিটিক্স টোয়েন্টিফোর ডটকম