সুপ্রিম কোর্টের একজন আইনজীবী বলেছেন, ময়নাতদন্ত না হওয়ায় তারা কার গুলিতে নিহত হলেন, তা উদঘাটনের সম্ভাবনাও কমে গেল।
গোপালগঞ্জে নিহতদের ময়নাতদন্ত হল না কেন?

- আপডেট সময় ০৭:৫১:২১ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৮ জুলাই ২০২৫
- / ৩৩ বার পড়া হয়েছে
গোপালগঞ্জে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের সংঘর্ষের মধ্যে গুলিতে নিহত চারজনের লাশ সুরতহাল ও ময়নাতদন্ত ছাড়াই দাফন বা সৎকার করে ফেলা হয়েছে; তাতে ভবিষ্যতে মামলা চালাতে জটিলতা হবে কি না, সেই প্রশ্ন উঠেছে।
সুপ্রিম কোর্টের একজন আইনজীবী বলেছেন, ময়নাতদন্ত না হওয়ায় তারা কার গুলিতে নিহত হলেন, তা উদঘাটনের সম্ভাবনাও কমে গেল।
বুধবার ১৬ জুলাই গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) কর্মসূচিতে দফায় দফায় হামলার পর পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সঙ্গে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ বাঁধে। এক পর্যায়ে পুরো শহরে সংঘাত ছড়িয়ে পড়ে।
সংঘর্ষের মধ্যে চারজন নিহত এবং অন্তত নয়জন গুলিবিদ্ধসহ অর্ধশতাধিক আহত হন। এসব ঘটনায় বৃহস্পতিবার রাত ১৭ জুলাই পর্যন্ত কোনো মামলা হয়নি।
নিহতরা হলেন- শহরের উদয়ন রোডের সন্তোষ সাহার ছেলে দীপ্ত সাহা (৩০), কোটালিপাড়ার হরিণাহাটি গ্রামের কামরুল কাজীর ছেলে রমজান কাজী (১৭), শহরের শানাপাড়ার সোহেল রানা (৩৫) এবং সদর উপজেলার ভেড়ার বাজার এলাকার ইমন।
সংঘাতের শহরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বুধবার রাত থেকে কারফিউ জারি করা হয়। বৃহস্পতিবার ১৭ জুলাই সন্ধ্যায় কারফিউয়ের মেয়াদ শুক্রবার পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। বুধবারের ঘটনায় জড়িত সন্দেহে ২৪ জনকে আটক করেছে যৌথ বাহিনী।
আগের দিন সন্ধ্যা থেকে শুরু হওয়া কারফিউয়ের মধ্যে থমথমে হয়ে পড়া শহর এখন অনেকটা শান্ত। বৃহস্পতিবার দিনের বেলা জরুরি প্রয়োজন ছাড়া শহরে মানুষের চলাচল ছিল না বললেই চলে।
তবে শহর ও আশপাশের বাসিন্দাদের মধ্যে গ্রেপ্তার আতঙ্ক বিরাজ করছে। আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের নেতার্কর্মীদের পাশাপাশি সমর্থকদের অনেকে এলাকা ছেড়ে গেছেন।
কোলাহলবিহীন শহরজুড়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কঠোর অবস্থানে রয়েছে। বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে তারা নিয়মিত টহল দিয়েছেন। হামলাকারীদের ধরতে অভিযান চালানোর কথা বলা হয়েছে পুলিশের তরফে। সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকার কথা বলেছেন ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার শরফ উদ্দিন আহমেদ।
ময়নাতদন্ত ছাড়াই দাফন ও দাহ
আগের দিন সংঘর্ষের সময় নিহতদের মধ্যে পোশাক ব্যবসায়ী দীপ্ত সাহাকে বুধবার রাতে পৌর শ্মশানে সৎকার করা হয়।
এছাড়া টাইলস মিস্ত্রির সহকারী রমজান কাজীকে বুধবার রাতে ১৬ জুলাই এশার নামাজের পর এবং মোবাইল ফোন ব্যবসায়ী সোহেল রানা ও ক্রোকারিজ দোকানের কর্মচারী ইমন তালুকদারকে বৃহস্পতিবার সকালে পৌর কবরস্থানে দাফন করা হয়।
পুলিশ বলছে, পরিবার আগেই হাসপাতাল থেকে লাশ নিয়ে যাওয়ায় সুরতহাল বা ময়নাতদন্ত করা যায়নি। তবে এ বিষয়ে মৃতের পরিবারের সদস্যরা কেউ কোনো কথা বলতে চাইছেন না।
২০২৪ সালের জুলাইয়ে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে প্রাণ হারানো শতাধিক ছাত্র-জনতার লাশ ময়নাতদন্ত ছাড়াই দাফন করা হয়। কাউকে কাউকে ময়নাতদন্ত ছাড়াই লাশ নিতে বাধ্য করা হয় বলে অভিযোগ রয়েছে।
কয়েকটি ঘটনায় হত্যা মামলা দায়ের হলে নিহত হওয়ার কয়েক মাস পর কয়েকজনের লাশ উত্তোলন করে ময়নাতদন্ত করা হয়। অনেকের পরিবারই কবর থেকে লাশ উত্তোলন করতে দিতে চাননি। ফলে তাদেরও ন্যায়বিচারপ্রাপ্তির ক্ষেত্রে একটা শঙ্কা রয়ে গেছে।
গোপালগঞ্জের ঘটনা নিয়ে বুধবার প্রধান উপদেষ্টার দপ্তরের ফেইসবুক পেইজে পুলিশের যে প্রতিবেদনটি শেয়ার করা হয়েছে, সেখানে বলা হয়েছে, “সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে উচ্ছৃঙ্খল জনতা নিহত চারজনের মরদেহ পোস্টমর্টেম করতে না দিয়ে জেলা হাসপাতাল থেকে জোরপূর্বক নিয়ে যায়।”
কোন পরিস্থিতিতে জেলা হাসপাতাল থেকে তারা লাশ নিয়ে গেল জানতে চাইলে গোপালগঞ্জের সিভিল সার্জন আবু সাইদ মো. ফারুক বৃহস্পতিবার রাতে বলেন, “ওই সময় আমাদের সাপোর্ট কম ছিল। মানে নিরাপত্তার ব্যবস্থাটা কম ছিল।
“ওই সময় যারা (লোকজন) হাসপাতালে আসছিল তারা সংখ্যায় অনেক বেশি ছিল। যখন দেখা গেল যে দুই-তিনজন মারা গেছে তখন হাসপাতালে উত্তেজনা তৈরি হয়। সঙ্গে আসা লোকজন তখন জোর করে ডেডবডিগুলো নিয়ে যায়।”
সিভিল সার্জন বলেন, “হাসপাতালের ডাক্তার বা সেবাকর্মী যারা ছিলেন তারা সংখ্যায় অত বেশি ছিলেন না যে লোকজনের সঙ্গে জবরদস্তি করে লাশগুলোকে হাসপাতালে ধরে রাখবেন। পরে তারা লাশগুলো নিয়ে যায়।”
এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী জ্যোতির্ময় বড়ুয়া বলেন, “এভাবে মারা যাওয়া চারজনের লাশ নিয়ে যাওয়ার প্রক্রিয়াটাই তো অবৈধ। যখন যে ঘটনাই ঘটুক না কেন, যদি আইনের জায়গায় চিন্তা করি, তাহলে ময়নাতদন্ত ছাড়া তাদের লাশ দাফন করবেন কীভাবে।
“যেহেতু এটা একটা ক্রিমিনাল ইনভেস্টিগেশনের বিষয়। এরকম ক্রিমিনাল কেইসে পোস্ট মর্টেম ভাইটাল এভিডেন্স।”
গুলি করল কে?
পুলিশ মহাপরিদর্শক বাহারুল আলম বুধবারই বলেছিলেন গোপালগঞ্জের সংঘাত দমনে পুলিশ কোনো ‘প্রাণঘাতী অস্ত্র’ ব্যবহার করেনি। তাহলে কাদের গুলিতে চারজনের মৃত্যু হল, সে প্রশ্নের উত্তের মেলেনি বৃহস্পতিবারও।
তবে সংঘাত ও সংঘর্ষে গোপালগঞ্জ রণক্ষেত্রে পরিণত হওয়ার ঘটনা নিয়ে পুলিশের প্রতিবেদনে চারজন নিহত হওয়ার কথা বলা হয়েছে।
সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে বৃহস্পতিবার সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে বলা হয়েছে, গোপালগঞ্জে বার বার মাইকে ঘোষণা দিয়েও হামলাকারীদের নিবৃত্ত করতে না পেরে সেনাবাহিনী ‘আত্মরক্ষার্থে বলপ্রয়োগে বাধ্য হয়’।
তবে আইএসপিআর’র পাঠানো ওই সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে কোথাও গুলির কথা বলা হযনি। হতাহতের সংখ্যাও উল্লেখ করা হয়নি।
বেসরকারি সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্র বৃহস্পতিবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলেছে, “এ ঘটনা নিয়ে পুলিশের মহাপরিদর্শক গণমাধ্যমে দেওয়া বক্তব্যে জানিয়েছেন, পুলিশ গোপালগঞ্জের ঘটনায় প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করেনি। অথচ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওচিত্রে আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার এবং গুলির শব্দ স্পষ্টভাবে শোনা যাচ্ছে। তাহলে কারা এই আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করল?
“আসক মনে করে, এ প্রশ্নের সুস্পষ্ট ও প্রামাণ্য ব্যাখ্যা দেওয়া না হলে জনগণের মধ্যে বিভ্রান্তি, ভয় ও প্রশাসনের প্রতি অনাস্থা আরও বাড়বে।”
এখন তাহলে এর সুরাহা কীভাবে হবে জানতে চাইলে আইনজীবী জ্যোতির্ময় বলেন, “পোস্টমর্টেম হলে না হয় বোঝা যেত কোন ধরনের গুলি বা কোন ধরনের আঘাত পাওয়া গেল। ব্যালাস্টিক টেস্টের প্রশ্ন আছে, যেখানে জানা যাবে কোন ধরনের গুলি নিহতদের শরীরে রয়েছে।
“এরকম ঘটনায় ময়নাতদন্তটা খুব জরুরি। ময়নাতদন্ত না হওয়াটা আইনের বাত্যয়। এবং এটা তড়িঘড়ি করে কোনো অপরাধ চাপা দেওয়ার চেষ্টাও তো হতে পারে। এটায় আমরা সিরিয়াসলি আপত্তি জানাই। যে কোনো পরিস্থিতিতেই রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো একটা নৈর্ব্যত্তিক জায়গা ধরে রেখে তাদের আচরণ ঠিক রাখবে, সেজন্যই তো এতগুলো (২০২৪ এর অভ্যুত্থানে) মানুষ প্রাণ দিয়েছিল।”
তিনি বলেন, “পরিবারগুলো তো নিশ্চয় বলবে না যে ‘আমরা খুব খুশি যে আমাদের ছেলেদের মেরে ফেলেছে, তাদের মেরে ফেলাই উচিৎ ছিল’। পরিবার নিশ্চয় ন্যায়বিচার চাইবে। তাদের এই মৃতদেহগুলোকে কোনো রকম আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ না করে যেটা করল, এখন যদি পরিবার মামলা করে, তাহলে কিন্তু আবারও লাশ উত্তোলন করে ময়নাতদন্তের প্রশ্ন আসবে।”
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় গোপালগঞ্জ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ বিষয়ে জানতে চাইলে পুলিশের ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি রেজাউল করিম মল্লিক বলেন, “বিষয়টি আমরা আইনি প্রক্রিয়ার মধ্যে নিয়ে আসব।”
তদন্ত কমিটি
গোপালগঞ্জে হামলা ও সংঘর্ষের ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যের একটি কমিটি করেছে সরকার।
প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর বলছে, স্বরাষ্ট্র সচিব নাসিমুল গনির নেতৃত্বাধীন এ কমিটিকে দুই সপ্তাহের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। কমিটিতে সদস্য হিসেবে আছেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এবং আইন মন্ত্রণালয়ের একজন করে অতিরিক্ত সচিব।
আগের দিনের ঘটনার প্রেক্ষাপটে সরকারপ্রধানের দপ্তর জননিরাপত্তা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষার অঙ্গীকারের কথাও পুনর্ব্যক্ত করেছে।
আহতরা কে কোথায়
গোপালগঞ্জের ঘটনা নিয়ে তৈরি পুলিশের প্রতিবেদনে সংঘর্ষে চারজন নিহত হওয়ার পাশাপাশি প্রায় ৪৫ জন পুলিশ সদস্য ও সাংবাদিকসহ প্রায় অর্ধশত আহত হওয়ার কথা বলা হয়েছে। সিভিল সার্জন, ২০ জন আহতকে জেলার হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়ার তথ্য দেন।
সংঘাতের সময় আহতদের মধ্যে গুলিবিদ্ধ তিনজনকে বুধবার রাতেই ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়।
তারা হলেন- সুমন বিশ্বাস (২৫), রমজান মুন্সী (২৮) ও আব্বাস আলী সরকার (৩০)।
এদের মধ্যে অটোরিকশা চালক আব্বাস আলী সরকারের পায়ে একটি গুলি আটকে রয়েছে। সেটি বের করতে অস্ত্রোপচার করতে হবে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকেরা।
বৃহস্পতিবার আব্বাস আলী বলেন, “পায়ে এখনো একটা গুলি আছে, অপারেশন লাগবে বলিছে ডাক্তার। অনেক টাকার ব্যাপার ভাইরে, কনে পাব এতো টাকা। খুব কষ্ট হচ্ছে।”
কথা বলার সময় ব্যাথায় কাতরাচ্ছিলেন আব্বাস। তার দাবি, তিনি অটোরিকশা চালান। গোপালগঞ্জের লঞ্চঘাট এলাকা দিয়ে দিয়ে যাওয়ার সময় তার গায়ে দুটো গুলি লাগে। একটি গুলি লেগে আবার বেরিয়ে যায়। আর বাম পায়ের হাঁটুর ওপরে লাগা গুলি এখনো রয়ে গেছে, যেটার অপারেশন লাগবে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকেরা।
গোপালগঞ্জের সিভিল সার্জন আবু সাইদ মো. ফারুক বৃহস্পতিবার রাতে বলেন, “সংঘাতে আহত মোট ২০ জনের মতো হাসপাতালে চিকিৎসা নেন। তাদের দুজন এখন গোপালগঞ্জ হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। তাদের (ভর্তি রোগী) ’পেনিটারিং ইনজুরি’ ছিল, অস্ত্রোপচারের পর সেখানে সেলাই দেওয়া হয়েছে।”
’পেনিটারিং ইনজুরি’ মানে হচ্ছে শরীরে বাইরে থেকে কোনো কিছু ঢুকেছে। তবে কী ঢুকেছে তা পরিষ্কার করেননি সিভিল সার্জন।
গ্রেপ্তার ২৪ জন
এদিন সন্ধ্যায় গোপালগঞ্জ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে ছিলেন ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজ রেজাউল করিম মল্লিক। সংঘর্ষের পরের দিনের পরিস্থিতিসহ তিনি আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, “এখন পর্যন্ত ২৪ জনের অধিক গ্রেপ্তার হয়েছে। যারা দুষ্কৃতিকারী রয়েছেন, যারা বুধবারের এই অনাকাঙ্খিত ঘটনার পেছনে জড়িত তাদেরকে আমরা অবশ্যই আইনের আওতায় আনব এবং সেই প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকবে।”
এ ঘটনায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছেও বলেও তখন জানান তিনি।
ডিআইজি বলেন, “আমরা মনে করছি যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর যে অবস্থা আছে, আমাদের কাছে যে তথ্য আছে কিছু দুষ্কৃতিকারী বাইরে থেকেও এসেছিল। তারা এখনো গোপালগঞ্জে অবস্থান করছেন- এই মর্মে আমাদের কাছে গোয়েন্দা তথ্য আছে। আমরা তাদেরকে চিহ্নিত করার চেষ্টা করছি এবং পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি।
”যতক্ষণ পর্যন্ত আমাদের মনে হবে না যে, পরিস্থিতি সাধারণ মানুষের জন্য সুখকর হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত আমরা এটা অব্যাহত রাখব।”
শহর শান্ত, তবে থমথমে
ব্যাপক সংঘাত-সহিংসতার প্রেক্ষাপটে গোপালগঞ্জ জেলায় জারি করা কারফিউ অব্যাহত রাখার সিদ্ধান্ত দিয়েছে সরকার।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, চলমান কারফিউ শুক্রবার সকাল ১১টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে। পরে দুপুর ২টা পর্যন্ত তিন ঘণ্টার জন্য কারফিউ থাকবে না। পরে তা পরবর্তী ঘোষণা না দেওয়া পর্যন্ত চলবে।
কারফিউয়ের কারণে সকাল থেকেই রাস্তাঘাট ফাঁকা ছিল। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শুধু সীমিত আকারে কিছু রিকশা ও ইজিবাইক চলতে দেখা যায়। জরুরি ছাড়া সব দোকানপাট বন্ধ ছিল।
সকাল থেকে শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে পুলিশ ও এপিবিএন মোতয়েন করা হয়। সারাদিন সেনা সদস্যরা সাঁজোয়া যান নিয়ে শহরে টহল দিয়েছেন। শহরের ব্যস্ততম এলাকায় তেমন কোনো কোলাহল ছিল না। মানুষের মধ্যে চাপা আতঙ্ক বিরাজ করতে দেখা গেছে।
আটক অভিযান শুরুর পর আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা আত্মগোপনে চলে গেছেন। গ্রেপ্তার এড়াতে জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতা ও কর্মীদের এলাকা ছেড়ে যাওয়ার তথ্য মিলেছে। আটক নিয়ে সাধারণের মধ্যেও ভয় ও আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।
গোপালগঞ্জ জেলা প্রেস ক্লাবের সভাপতি জুবায়ের হোসেন বৃহস্পতিবার রাতে বলেন, শহর এখন শান্ত। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রচুর সদস্য বিভিন্ন জায়গায় টহল দিচ্ছেন।
ঢাকার বিভাগীয় কমিশনার শরফ উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় গোপালগঞ্জের জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে সংবাদ সম্মেলনে বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এখন সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে আছে।
এর আগে তিনি সেনাবাহিনী, পুলিশ, র্যাব সহ বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিনিধিদের সঙ্গে সভা করেন তিনি।
সংবাদ সম্মলনে এ ঘটনায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলার কথা তুলে ধরে ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি রেজাউল করিম মল্লিক বলেন, “যারা দুষ্কৃতিকারী রয়েছেন, যারা বুধবারের এই অনাকাঙ্খিত ঘটনার পেছনে জড়িত তাদেরকে আমরা অবশ্যই আইনের আওতায় আনব এবং সেই প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকবে।”
সূত্র : বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক : বিডিপলিটিক্স টোয়েন্টিফোর ডটকম