০২:৪৯ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৯ জুলাই ২০২৫
শনিবার ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর মাঝে ঢেউটিন ও অর্থ বিতরণ করা হবে বলে জানিয়েছে উপজেলা প্রশাসন।

টর্নেডো: সিরাজগঞ্জে খোলা আকাশের নিচে ৩০ পরিবার, পৌঁছায়নি সহায়তা

সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি : বিডিপলিটিক্স টোয়েন্টিফোর ডটকম
  • আপডেট সময় ০৮:৪৮:০৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৮ জুলাই ২০২৫
  • / ২৯ বার পড়া হয়েছে

তিন দিন আগে ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার একটি বাড়ি।

 

সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার চারটি গ্রামের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া টর্নেডোতে ঘরবাড়ি হারানো অন্তত ৩০টি পরিবার তিন দিন ধরে খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছেন।

ঘটনার দিন উপজেলা প্রশাসন থেকে ক্ষতিগ্রস্ত এসব পরিবারকে কিছু শুকনো খাবার সরবরাহ করা হলেও এরপর থেকে তাদের আর খোঁজখবর নেয়নি কেউ। এ ছাড়া ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনের তালিকা করা হলেও এখন পর্যন্ত কোনো ধরনের সহায়তা পাননি তারা।

তবে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ভয়েস অব কাজিপুর ও সুখপাখিসহ ব্যক্তি উদ্যোগে কিছু লোকজন ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত এসব পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছেন।

শুক্রবার বিকালে সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মনোয়ার হোসেন বলেন, শনিবার সকালে সিরাজগঞ্জ জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মাঝে টিন বিতরণ করবেন।

 

 

মঙ্গলবার ১৫ জুলাই দুপুরে উপজেলার রতনকান্দি ইউনিয়নের চরচিলগাছা, চিলগাছা, বাহুকা ও ইটালী গ্রামের উপর দিয়ে টর্নেডো বয়ে যায়। মাত্র দুই মিনিটের ঝড়ে চারটি গ্রামের অন্তত ৩০টি পরিবারের বসতবাড়ি লণ্ডভণ্ড হয়েছে।

ঘূর্ণিঝড়ের পর থেকে প্রায় সবাই খোলা আকাশের নিচে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। যমুনা নদীর তীরবর্তী এসব অঞ্চলের কম বেশি সবাই অতীতে নদীভাঙনের শিকার হয়েছেন। এবারের ঝড় তাদের একেবারে নিঃস্ব করে দিয়েছে।

চিলগাছা গ্রামের মনু খানের একমাত্র টিনের ঘরটি ঝড়ে উড়ে গেছে। এ ছাড়া ঝড়ে তার ৩০ শতাংশ জমির আধা-পাকা ধান মাটিতে লুটিয়ে পড়েছে। ঘটনার পর থেকে পরিবার-পরিজন নিয়ে খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছেন তিনি।

অশ্রুসজল চোখে মনু খান বিডিপলিটিক্স টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ঝড়ে বসত ঘরটি উড়িয়ে নিয়ে গেছে। যে জমির ধানে দিয়ে সারা বছর সংসার চলতো, সেই ধান মাটির সঙ্গে মিশে গেছে। সম্বল বলতে আর কিছু নেই। আমি নিঃস্ব হয়ে গেছি।”

চরচিলগাছা গ্রামের সোহাগ মণ্ডল বলেন, ঝড়ে তার ঘরের টিনের চালা প্রায় ২০০ মিটার দূরে গিয়ে আছড়ে পড়ে। অনেক কষ্টে টিনগুলো কুড়িয়ে এনে বসতবাড়িতে রেখেছেন। কয়েকদিন হলো রাতে খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছেন। এর মধ্যে দুই বছর বয়সি ছেলেটির ঠান্ডা লেগেছে।

দুই সন্তানের জননী বাহুকা গ্রামের রুমা বেগম কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, “ঝড়ে বসতঘরটি উড়ে গেছে। তিন দিন বাড়িতে চুলা জ্বলেনি। ছোট ছোট ছেলে-মেয়েরা কেউ ভাত খায়নি। শুক্রবার লোকজনের সহায়তার চাল দিয়ে ভাত রান্না করছি।”

রতনকান্দি ইউনিয়ন পরিষদের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য রফিকুল ইসলাম বলেন, “এমন ঝড় আমি জীবনে দেখি নাই। অসংখ্য ঘর উড়ে গেছে, গাছপালা পড়ে রাস্তাঘাট বন্ধ হয়ে গিয়েছিল।

“ঘটনার পর থেকে এসব এলাকায় বিদ্যুৎ নেই। ক্ষতিগ্রস্তদের চোখে-মুখে আতঙ্ক বিরাজ করছে। মনে হচ্ছে যেন তারা একটা যুদ্ধের মধ্যে পড়ে গেছে।”

শুক্রবার সকালে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ভয়েস অব কাজিপুরের পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে সহায়তা দেওয়া হয়েছে। সংগঠনটি বেশি ক্ষতিগ্রস্ত ১৫টি পরিবারকে পাঁচ হাজার টাকা এবং অপেক্ষাকৃত কম ক্ষতিগ্রস্ত ১৫টি পরিবারকে আড়াই হাজার করে টাকা দিয়েছে।

এ ছাড়া প্রতিটি পরিবারকে পাঁচ কেজি চাল, এক কেজি ডাল, এক লিটার তেল, এক কেজি চিনি, এক কেজি পেঁয়াজ, দুই কেজি আলু, এক কেজি লবণ, বিস্কুট, মুড়ি, চিড়া ও সাবান সহায়তা করা হয়।

ভয়েস অব কাজিপুরের সাধারণ সম্পাদক ফার্মাসিস্ট কালাম আজাদ বলেন, “আমরা একেকটা পরিবারের কান্না শুনেছি, একেকটা সন্তানের ক্ষুধার্ত চোখ দেখেছি। কোনো রাজনীতি, কোনো পরিচয় না দেখে এখানে এসেছি মানুষ হয়ে। আমরা চাই না কেউ খোলা আকাশের নিচে রাত কাটাক।”

টর্নেডোর দিন তাৎক্ষণিক ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর মধ্যে শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছিল বলে বিডিপলিটিক্স টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান ইউএনও মনোয়ার হোসেন।

তিনি বলেন, “ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত ২৪টি পরিবারের তালিকা করেছি। তাদের ক্ষতির ধরন ভেদে পরিবার প্রতি এক থেকে তিন বান্ডিল করে ঢেউটিন সহায়তা করা হবে। শনিবার সকালে জেলা প্রশাসক এসব টিন বিতরণ করবেন।

এ ছাড়া প্রতি বান্ডিল টিনের সঙ্গে ঘর নির্মাণের জন্য আরও তিন হাজার করে টাকা দেওয়া হবে বলে জানান ইউএনও মনোয়ার হোসেন।

 

 

সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি : বিডিপলিটিক্স টোয়েন্টিফোর ডটকম

নিউজটি শেয়ার করুন

শনিবার ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর মাঝে ঢেউটিন ও অর্থ বিতরণ করা হবে বলে জানিয়েছে উপজেলা প্রশাসন।

টর্নেডো: সিরাজগঞ্জে খোলা আকাশের নিচে ৩০ পরিবার, পৌঁছায়নি সহায়তা

আপডেট সময় ০৮:৪৮:০৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৮ জুলাই ২০২৫

 

সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার চারটি গ্রামের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া টর্নেডোতে ঘরবাড়ি হারানো অন্তত ৩০টি পরিবার তিন দিন ধরে খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছেন।

ঘটনার দিন উপজেলা প্রশাসন থেকে ক্ষতিগ্রস্ত এসব পরিবারকে কিছু শুকনো খাবার সরবরাহ করা হলেও এরপর থেকে তাদের আর খোঁজখবর নেয়নি কেউ। এ ছাড়া ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনের তালিকা করা হলেও এখন পর্যন্ত কোনো ধরনের সহায়তা পাননি তারা।

তবে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ভয়েস অব কাজিপুর ও সুখপাখিসহ ব্যক্তি উদ্যোগে কিছু লোকজন ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত এসব পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছেন।

শুক্রবার বিকালে সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মনোয়ার হোসেন বলেন, শনিবার সকালে সিরাজগঞ্জ জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মাঝে টিন বিতরণ করবেন।

 

 

মঙ্গলবার ১৫ জুলাই দুপুরে উপজেলার রতনকান্দি ইউনিয়নের চরচিলগাছা, চিলগাছা, বাহুকা ও ইটালী গ্রামের উপর দিয়ে টর্নেডো বয়ে যায়। মাত্র দুই মিনিটের ঝড়ে চারটি গ্রামের অন্তত ৩০টি পরিবারের বসতবাড়ি লণ্ডভণ্ড হয়েছে।

ঘূর্ণিঝড়ের পর থেকে প্রায় সবাই খোলা আকাশের নিচে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। যমুনা নদীর তীরবর্তী এসব অঞ্চলের কম বেশি সবাই অতীতে নদীভাঙনের শিকার হয়েছেন। এবারের ঝড় তাদের একেবারে নিঃস্ব করে দিয়েছে।

চিলগাছা গ্রামের মনু খানের একমাত্র টিনের ঘরটি ঝড়ে উড়ে গেছে। এ ছাড়া ঝড়ে তার ৩০ শতাংশ জমির আধা-পাকা ধান মাটিতে লুটিয়ে পড়েছে। ঘটনার পর থেকে পরিবার-পরিজন নিয়ে খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছেন তিনি।

অশ্রুসজল চোখে মনু খান বিডিপলিটিক্স টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ঝড়ে বসত ঘরটি উড়িয়ে নিয়ে গেছে। যে জমির ধানে দিয়ে সারা বছর সংসার চলতো, সেই ধান মাটির সঙ্গে মিশে গেছে। সম্বল বলতে আর কিছু নেই। আমি নিঃস্ব হয়ে গেছি।”

চরচিলগাছা গ্রামের সোহাগ মণ্ডল বলেন, ঝড়ে তার ঘরের টিনের চালা প্রায় ২০০ মিটার দূরে গিয়ে আছড়ে পড়ে। অনেক কষ্টে টিনগুলো কুড়িয়ে এনে বসতবাড়িতে রেখেছেন। কয়েকদিন হলো রাতে খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছেন। এর মধ্যে দুই বছর বয়সি ছেলেটির ঠান্ডা লেগেছে।

দুই সন্তানের জননী বাহুকা গ্রামের রুমা বেগম কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, “ঝড়ে বসতঘরটি উড়ে গেছে। তিন দিন বাড়িতে চুলা জ্বলেনি। ছোট ছোট ছেলে-মেয়েরা কেউ ভাত খায়নি। শুক্রবার লোকজনের সহায়তার চাল দিয়ে ভাত রান্না করছি।”

রতনকান্দি ইউনিয়ন পরিষদের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য রফিকুল ইসলাম বলেন, “এমন ঝড় আমি জীবনে দেখি নাই। অসংখ্য ঘর উড়ে গেছে, গাছপালা পড়ে রাস্তাঘাট বন্ধ হয়ে গিয়েছিল।

“ঘটনার পর থেকে এসব এলাকায় বিদ্যুৎ নেই। ক্ষতিগ্রস্তদের চোখে-মুখে আতঙ্ক বিরাজ করছে। মনে হচ্ছে যেন তারা একটা যুদ্ধের মধ্যে পড়ে গেছে।”

শুক্রবার সকালে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ভয়েস অব কাজিপুরের পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে সহায়তা দেওয়া হয়েছে। সংগঠনটি বেশি ক্ষতিগ্রস্ত ১৫টি পরিবারকে পাঁচ হাজার টাকা এবং অপেক্ষাকৃত কম ক্ষতিগ্রস্ত ১৫টি পরিবারকে আড়াই হাজার করে টাকা দিয়েছে।

এ ছাড়া প্রতিটি পরিবারকে পাঁচ কেজি চাল, এক কেজি ডাল, এক লিটার তেল, এক কেজি চিনি, এক কেজি পেঁয়াজ, দুই কেজি আলু, এক কেজি লবণ, বিস্কুট, মুড়ি, চিড়া ও সাবান সহায়তা করা হয়।

ভয়েস অব কাজিপুরের সাধারণ সম্পাদক ফার্মাসিস্ট কালাম আজাদ বলেন, “আমরা একেকটা পরিবারের কান্না শুনেছি, একেকটা সন্তানের ক্ষুধার্ত চোখ দেখেছি। কোনো রাজনীতি, কোনো পরিচয় না দেখে এখানে এসেছি মানুষ হয়ে। আমরা চাই না কেউ খোলা আকাশের নিচে রাত কাটাক।”

টর্নেডোর দিন তাৎক্ষণিক ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর মধ্যে শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছিল বলে বিডিপলিটিক্স টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান ইউএনও মনোয়ার হোসেন।

তিনি বলেন, “ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত ২৪টি পরিবারের তালিকা করেছি। তাদের ক্ষতির ধরন ভেদে পরিবার প্রতি এক থেকে তিন বান্ডিল করে ঢেউটিন সহায়তা করা হবে। শনিবার সকালে জেলা প্রশাসক এসব টিন বিতরণ করবেন।

এ ছাড়া প্রতি বান্ডিল টিনের সঙ্গে ঘর নির্মাণের জন্য আরও তিন হাজার করে টাকা দেওয়া হবে বলে জানান ইউএনও মনোয়ার হোসেন।

 

 

সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি : বিডিপলিটিক্স টোয়েন্টিফোর ডটকম