“ধারণা করছি, তারা হয়তো সবাই শিশু,” বলেন বিশেষ সহকারী সায়েদুর রহমান।
নিহতদের সাতজনকে ‘চেনার’ উপায় নেই: বিশেষ সহকারী

- আপডেট সময় ১২:৫০:২০ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২২ জুলাই ২০২৫
- / ৩১ বার পড়া হয়েছে

বিমান দুর্ঘটনায় আহতদের জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের জরুরি বিভাগ থেকে নেওয়া হচ্ছে অবজারভেশন ওয়ার্ডে। ছবি: আব্দুল্লাহ আল মমীন
ঢাকার দিয়াবাড়িতে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ভবনে বিমান বাহিনীর উড়োজাহাজ বিধ্বস্তের ঘটনায় নিহতদের মধ্যে ‘ভষ্ম’ হয়ে যাওয়ায় সাতজনের পরিচয় শনাক্ত সম্ভব হয়নি বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের বিশেষ সহকারী মো. সায়েদুর রহমান।
তিনি বলেন, “সাতটি লাশ, সাতজনকে এখনও শনাক্ত করা যায়নি। এটা একেবারে দেহাবশেষ। তাদের ডিএনএ নমুনা নেওয়া হচ্ছে।
“এরমধ্যে ছয়জন সিএমএইচে আর একজন উত্তরা আধুনিক হাসপাতালে রয়েছে। দেহাবশেষ থেকে জানা যাবে তাদের পরিচয়। ধারণা করছি, তারা হয়তো সবাই শিশু।”
সোমবার রাতে জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটে সংবাদ সম্মেলনে বিশেষ সহকারী ১৭ জনের মৃত্যুর তথ্য দেন। সংখ্যায় কিছুটা তারতম্যের কারণ হিসেবে তার ভাষ্য, ‘সমন্বয়’ করতে কিছুটা সময় লাগছে।
তবে তিনি যে ১৭ জনের মৃত্যুর তথ্য দিয়েছেন, সবাই শিশু বলে জানিয়েছেন।
এদিন মাইলস্টোন কলেজের ভেতর বিমান বাহিনীর এটি জঙ্গি বিমান বিধ্বস্ত হয়ে অন্তত ২০ জন নিহত হয়েছে; দগ্ধ ও আহত হয়েছে দেড় শতাধিক।
বিশেষ সহকারী সায়েদুর রহমান বলেন, “সবমিলে সংখ্যাটা ৮৮ জনকে আমরা নিশ্চিত করছি, যারা হাসপাতালে ভর্তি অবস্থায় আছেন।”
এদের মধ্যে ২৫ জনের অবস্থা ‘আশঙ্কাজনক’ বললেও তাদের কেউ শঙ্কামুক্ত হবেন বলে আশা প্রকাশ করেছেন।
তিনি বলেন, “আহতের যারা পুড়েছেন তাদের মধ্যে বেশি বয়সী শুধুমাত্র উদ্ধারকর্মী ও দুইজন শিক্ষক আর একজন ওই স্কুলের কর্মী। এছাড়া বাকি সবাই শিশু।”
“আহত শিশুর সংখ্যা ১০০ এর বেশি, অন্যদের সংখ্যা ১৫ এর মত।”
১০০ জনের মধ্যে অল্পকিছু আছে যারা চিকিৎসা শেষ করে বাড়ি গেছেন, সে সংখ্যাটা খুবই কম আর অধিকাংশই হাসপাতালে আছেন বলে জানান বিশেষ সহকারী।
তিনি জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটে ‘কিছুক্ষণ আগে’ দুইজনের মৃত্যর তথ্য দিয়ে বলেন, “মৃত্যু বা আহতের সংখ্যার বিষয়টি, সংখ্যায় খুব বেশি জোর না দিয়ে, আমরা বুঝার চেষ্টা করি ঘটনাটির ভয়াবহতা। এখানে সব মিলে সাতটি হাসপাতালে এ রোগীরা এ মূহুর্তে ভর্তি আছে।
“প্রাথমিকভাবে উত্তরা ওই অঞ্চলের হাসপাতালগুলোতে গিয়েছে, চূড়ান্তভাবে এখন প্রধানত জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটে এবং সিএমএইচে রোগীরা ভর্তি আছেন। এখানে প্রাথমিকভাবে রোগীরা যা আসছিলেন, তারমধ্যে এ মূহুর্তে ভর্তি আছেন ৪৪ জন। এখানে মৃত্যুবরণ করেছেন তিনজন।”
বার্ন ইনস্টিটিউট থেকে চারজনকে ঢাকা মেডিক্যালে কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছিল, তারমধ্যে একজন মারা গেছেন বলেও জানান তিনি।
“সিএমএইচে এখন পর্যন্ত ১২ জনের মৃত্যুর সংবাদ নিশ্চিত করা হচ্ছে, সেখানে চিকিৎসাধীন আছেন ২৫ জন।”
বার্ন ইনস্টিটিউটে চিকিৎসার ক্ষেত্রে দক্ষতা, এ প্রতিষ্ঠানের যে সামর্থ্য, দক্ষ চিকিৎসক, রক্ত, আনুষঙ্গিক সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন আছে বলেও জানান তিনি।
বিশেষ সহকারী বলেন, “এখানে প্রায় নয়জন রোগী আইসিইউতে ভ্যান্টিলেট অবস্থায় আছে। আরও অনেক ভ্যান্টিলেটর এখানে ও ঢাকা মেডিকেলে তাদের প্রয়োজন হলে প্রস্তুত করা আছে।”
অনেক মানুষ রক্ত দান করেছেন বা আগ্রহ প্রকাশ করেছেন তুলে ধরে তিনি বলেন, “রক্ত মূলত প্রয়োজন হবে আগামীকাল থেকে। এই হাসপাতালে যারা এসেছেন তাদের জন্য প্রয়োজনীয় রক্ত আছে। তারপরেও আগামীকাল থেকে রক্তদানে আগ্রহীদের সংগ্রহ করা হবে।
“এ হাসপাতালে সবচেয়ে জটিল রোগীরা আছে। ভেতরে কেউ প্রবেশ করবেন না। শুধুমাত্র সংক্রমণের কারণে একটা বড়সংখ্যক মানুষের মৃত্যুর সম্ভাবনা তৈরি হবে।”
আহতদের জন্য দোয়া চেয়ে সায়েদুর রহমান বলেন, “আমরা যেন কোনো ভুল না করি, আমরা যেন আমাদের সামর্থ্যের প্রয়োগ করতে ব্যার্থ না হই। ছোট্ট বাচ্চাদের জন্য দোয়া করেন। প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি চিকিৎসকরা সার্বক্ষণিক থাকবেন।”
বার্ন ইনস্টিটিউটের পরিচালক নাসির উদ্দিন বলেন, “লোকজন যত কম আসবেন ততই আমাদের জন্য, রোগীর জন্য ভালো হবে।”
গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি ও রাজনীতিবিদ যারা আসছেন তারা রোগীদের কাছে যাচ্ছেন না, শুধুমাত্র হাসপাতালের সেবাদাতা যারা তারা যাচ্ছেন, বলেন তিনি।
এক প্রশ্নের জবাবে বিশেষ সহকারী বলেন, “এই হাসপাতালের যে সক্ষমতা আছে। সে অনুযায়ী কোনো অভিভাবককে, কাউকেই চিকিৎসার জন্য কোনকিছুই বাইরে থেকে এ মূহুর্তে প্রয়োজন নাই।
“তাদের বাইরে থেকে সহায়তা দরকার নাই। অযথা যেন কেউ ভিড় না করে।”
রক্তের প্রয়োজনীয়তার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আমরা শুরুতেই বলেছি, বার্নের রোগীর জন্য সাধারণত প্রথমদিন রক্তের প্রয়োজন হয় না, যদি না আলাদা জখম না থাকে। সেজন্য আমাদের আজকের রক্তের প্রয়োজন হবে না।
“সবাইকে আহ্বান জানিয়েছি আজকে রক্তের জন্য কেউ থাকবেন না। যারা দিতে চান রক্ত, নাম-মোবাইল নম্বর দিয়ে যেতে বলেছি, সে অনুযায়ী তাদের ডাকা হবে। আমরা ডাক দিলেই কেবল আপনারা আসবেন। অনুগ্রহ করে হাসপাতালের সামনে এসে ভিড় করবেন না।”
এক প্রশ্নের জবাবে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান উপদেষ্টার এই বিশেষ সহকারী বলেন, “পর্যাপ্ত আইসিইউ শয্যা না থাকার বিষয়টি সত্য নয়। আইসিইউতে এ মূহুর্তে যে রোগীগুলা আছে, তাদের দেওয়া হয়েছে। অতিরিক্ত শয্যার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।”
২০টি ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট-আইসিইউর বাইরে হাই ডিপেনডেন্সি ইউনিট-এইচডিইউ আছে, ২০টা ভেন্টিলেটর রয়েছে বলেও জানান তিনি।
সায়েদুর রহমান বলেন, “৫০ ভাগের মত রোগী প্রাইমারি ক্রিটিক্যাল কন্ডিশনে আছে। বাকি যারা আছে, ২০-১৫ ভাগ দগ্ধের রোগীও যদি ক্রস ইনফেকশনের হয়, যে কোন সময় খারাপ হয়ে যেতে পারে। ৫ ভাগ দগ্ধ রোগীরও অনেকসময় জীবনের আশঙ্কা থাকে।”
মইদুল হাসান – জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক : বিডিপলিটিক্স টোয়েন্টিফোর ডটকম