কম্বোডিয়ার সঙ্গে সীমান্ত সংঘর্ষের দ্বিতীয় দিনে পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নেওয়ায় থাই সেনাবাহিনীর এক সীমান্ত কমান্ডার এই সামরিক আইন ঘোষণা করেন।
কম্বোডিয়ার সঙ্গে সংঘাত: সীমান্তের ৮ জেলায় থাইল্যান্ডের সামরিক আইন জারি

- আপডেট সময় ০৭:৩৯:৩১ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৬ জুলাই ২০২৫
- / ৩৬ বার পড়া হয়েছে
কম্বোডিয়ার সঙ্গে সীমান্ত সংঘর্ষের দ্বিতীয় দিনে পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নেওয়ায় সীমান্তবর্তী অন্তত আট জেলায় সামরিক আইন (মার্শাল ল’) জারি করেছে থাইল্যান্ড।
এনডিটিভি জানিয়েছে, এ সংঘর্ষে এখন পর্যন্ত হতাহত হয়েছে বহু মানুষ। নিরাপত্তার কারণে দুই দেশের সীমান্ত অঞ্চল থেকে সরে যেতে বাধ্য হয়েছেন প্রায় ১ লাখ ৪০ হাজারের বেশি মানুষ।
শুক্রবার সন্ধ্যায় থাই সেনাবাহিনীর এক সীমান্ত কমান্ডার মার্শাল ল’ ঘোষণা করেন। থাইল্যান্ডের ভূখণ্ডে ঢুকতে কম্বোডীয় বাহিনী শক্তি প্রয়োগ করছে বলে জানান তিনি।
থাইল্যান্ডের ভারপ্রাপ্ত প্রধানমন্ত্রী ফুমথাম ওয়েচায়াচাই এক সংবাদ সম্মেলনে সতর্ক করে বলেন, “পরিস্থিতি যদি আরও খারাপ হয়, তবে তা যুদ্ধেও রূপ নিতে পারে। আপাতত সংঘর্ষ সীমিত থাকলেও, আমরা সেনাবাহিনীকে জরুরি পরিস্থিতিতে অবিলম্বে পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছি।”
দ্বিতীয় দিনের সংঘর্ষ
শুক্রবার ভোর ৪টার দিকে সংঘর্ষ ফের শুরু হয়। থাই সেনাবাহিনীর দাবি, কম্বোডিয়ার বাহিনী ভারী অস্ত্র, কামান ও রকেট লঞ্চার দিয়ে গোলাবর্ষণ শুরু করলে থাই বাহিনীও পাল্টা হামলা চালায়।
থাইল্যান্ডের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, সংঘর্ষে এখন পর্যন্ত অন্তত ১৫ জন নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে ১৪ জনই বেসামরিক নাগরিক এবং একজন সেনা। আহত হয়েছেন অন্তত ৪৬ জন।
অন্যদিকে, কম্বোডিয়ার ওদ্দার মিনচে প্রদেশে এক ৭০ বছর বয়সী বৃদ্ধ নিহত হয়েছেন এবং আহত হয়েছেন আরও অন্তত পাঁচজন।
স্থানীয় সময় শুক্রবার বিকেলে থাই পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র নিকোর্নদেজ বলানকুরা বলেন, “সংঘর্ষ কিছুটা কমে এসেছে এবং আমরা আলোচনার জন্য প্রস্তুত আছি। চাইলেই কম্বোডিয়ার সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বা মালয়েশিয়ার মাধ্যমে আলোচনায় বসা যেতে পারে। তবে এখন পর্যন্ত কম্বোডিয়ার পক্ষ থেকে সাড়া পাওয়া যায়নি।”
মালয়েশিয়া বর্তমানে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আঞ্চলিক জোট আসিয়ানের সভাপতির দায়িত্বে রয়েছে, যার সদস্য থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়া দু’দেশই।
শান্তিচেষ্টায় টানাপোড়েন
কম্বোডিয়ার প্রধানমন্ত্রী হুন মানেত অভিযোগ করেন, থাইল্যান্ড একবার একটি যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব থেকে সরে গেছে। “আমরা ব্যাংককের প্রকৃত সদিচ্ছার অপেক্ষায় আছি,” বলেন তিনি।
চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই এ সংঘর্ষে হতাহতের ঘটনাকে “গভীরভাবে দুঃখজনক” উল্লেখ করে সবাইকে শান্তভাবে পরিস্থিতি মোকাবেলার আহ্বান জানিয়েছেন।
আতঙ্কিত মানুষ, পুরনো বিবাদ
কম্বোডিয়ার সামরোং শহরে বিস্ফোরণের শব্দ শুনে অনেক পরিবার শিশু ও মালপত্র নিয়ে যানবাহনে করে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে ছুটে যান।
৪১ বছর বয়সী প্রো বাক বলেন, “আমি সীমান্তের খুব কাছে থাকি। আমরা খুবই ভয়ে আছি।” তিনি স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে একটি বৌদ্ধ মন্দিরে আশ্রয় নিতে যাচ্ছিলেন।
থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার মধ্যে প্রায় ৮০০ কিলোমিটার সীমান্ত রয়েছে, যার বিভিন্ন অংশ নিয়ে বহুদিন ধরেই বিরোধ চলে আসছে। ২০০৮ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত সময়ে কয়েক দফা রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে অন্তত ২৮ জন নিহত হন।
২০১৩ সালে জাতিসংঘের আদালতের রায়ে বিবাদ অনেকটা মিটে গেলেও চলতি বছরের মে মাসে নতুন করে সংঘর্ষ শুরু হয়, যেখানে এক কম্বোডিয়ান সেনা নিহত হয়।
বৃহস্পতিবারের সংঘর্ষে ছয়টি এলাকা প্রধান যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত হয়, যার মধ্যে দুটি প্রাচীন মন্দিরের আশপাশের অঞ্চলও ছিল। উভয় দেশ একে অপরকে সংঘর্ষ শুরু করার জন্য দায়ী করেছে।
থাইল্যান্ড অভিযোগ করেছে, কম্বোডিয়া ইচ্ছাকৃতভাবে একটি হাসপাতাল ও একটি পেট্রোল স্টেশনে হামলা চালিয়েছে। জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ শুক্রবার এই সংকট নিয়ে জরুরি বৈঠক আহ্বান করেছে।
সূত্র : বার্তাসংস্থা রয়টার্স / বিবিসি / এনডিটিভি
বিশেষ প্রতিনিধি, আন্তর্জাতিক ডেস্ক : বিডিপলিটিক্স টোয়েন্টিফোর ডটকম