ভোটে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই-এর অপব্যবহার রোধে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের প্রচারে নজরদারি এবং বিধিলঙ্ঘন করলে ব্যবস্থাসহ নতুন কয়েকটি প্রস্তাব এসেছে।
নির্বাচনি আচরণবিধি নিয়ে আরও যেসব প্রস্তাব পেল ইসি

- আপডেট সময় ১১:৫৪:২৬ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৮ জুলাই ২০২৫
- / ৪৫ বার পড়া হয়েছে
ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ‘রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর আচরণ বিধিমালা’র খসড়া প্রকাশের পর বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, বেসরকারি সংস্থা ও নাগরিকদের কাছ থেকে একগুচ্ছ সুপারিশ পেয়েছে নির্বাচন কমিশন।
পোস্টার ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারের সুযোগসহ বেশ কিছু বিষয় এবার আচরণবিধিতে রাখা হয়েছে।
ইসির সঙ্গে ভিন্নমত পোষণ না করলেও ভোটে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই-এর অপব্যবহার রোধে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের প্রচারে নজরদারি এবং বিধিলঙ্ঘন করলে ব্যবস্থাসহ নতুন কয়েকটি প্রস্তাব এসেছে।

নির্বাচন কমিশনার মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার বলেন, “এআই ব্যবহারের প্রসঙ্গটি প্রস্তাবিত আচরণবিধিতে না থাকলেও এর অপব্যবহার রোধসহ বেশ কিছু প্রস্তাব দল ও নাগরিকদের কাছ থেকে আমরা পেয়েছি। এসব বিষয় আমরা পর্যালোচনা করছি। আচরণবিধি চূড়ান্ত করার সময় বাছাই করা প্রস্তাব রাখার চেষ্টা করব। কম্পাইল করে সবার প্রস্তাব উপস্থাপনের পর কমিশন সভায় বসে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।”
প্রধান নির্বাচন কমিশনার এএমএম নাসির উদ্দিন গত শনিবার খুলনায় এক অনুষ্ঠানে বলেন, নির্বাচন ঘিরে নানা ‘ভুয়া তথ্য ও গুজব’ ছড়ানো প্রতিরোধে কমিশন কাজ করছে। নতুন চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিয়েছে প্রযুক্তির অপব্যবহার। যাচাই-বাছাই না করে সোশাল মিডিয়ায় ভুল তথ্য ছড়ানো হচ্ছে।
“এআই একটি বড় চ্যালেঞ্জ। এ প্রযুক্তি ব্যবহার করে হুবহু নকল করা হচ্ছে একজনের বক্তব্য। এজন্য দেশি-বিদেশি বিশেষজ্ঞ দল কাজ করছে,” বলেন সিইসি।
অঙ্গীকারনামায় সম্মত বিএনপি প্রচারে চায় হেলিকপ্টার
‘আচরণবিধি মেনে চলব এবং বিধি লঙ্ঘনে শাস্তি মেনে নিতে বাধ্য থাকব’–দল ও প্রার্থীর এরকম অঙ্গীকারনামায় সই করার প্রস্তাবে একমত পোষণ করেছে বিএনপি।
সেই সঙ্গে নির্বাচনের আগে গণমাধ্যমে ইসির আয়োজনে প্রার্থী বা দলীয়ভাবে নির্বাচনী বক্তব্য দেওয়ার সুযোগ চায় দলটি।
২০০৮ সালে নবম সংসদের আগে বিটিভিতে ভোটের আগে কয়েকটি দলকে এমন সুযোগ দেওয়ার নজির রয়েছে।
বিএনপি বলছে, বিদেশে বসে সোশাল মিডিয়ায় ভোটারদের বিভ্রান্ত করতে কোনো কনটেন্ট কেউ ছড়ালে দেশে তার প্রচার বন্ধ করার দায়িত্ব দিতে হবে বিটিআরসিকে।একইসঙ্গে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই এর ‘অপব্যবহার’ বন্ধ করতে আচরণবিধিতে আলাদা বিধান যুক্ত করতে হবে।
সিটি করপোরেশনে প্রতি ওয়ার্ডে সর্বোচ্চ তিনটি ক্যাম্প করার সুযোগ চায় দলটি। দলীয় প্রধানের পাশাপাশি দলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান, মহাসচিবের জন্য হেলিকপ্টার বা আকাশযানে প্রচার চালানোর সুযোগ রাখার প্রস্তাব দিয়েছে তারা।
যেসব সরকারি সুবিধাভোগী ব্যক্তিদের ভোটের প্রচারে অংশ নেওয়া মানা, তাদের তালিকায় সাংবিধানিক ও সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানের সদস্যদেরও রাখার সুপারিশ করেছে বিএনপি।
ভোটের প্রচারে পোস্টার ব্যবহার বন্ধসহ খসড়া আচরণবিধির প্রতিটি বিষয়ে সঙ্গে একমত পোষণা করে নতুন করে এসব প্রস্তাব যুক্ত করার প্রস্তাব দিয়েছে দলটি।
এআই নিয়ে উদ্বেগে টিআইবি
আচরণ বিধিমালায় যুক্ত করার জন্য একগুচ্ছ প্রস্তাব দিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল, বাংলাদেশ (টিআইবি)
- পোস্টারের সংজ্ঞায় প্রার্থীর ছবি বা চিহ্ন সংবলিত কাগজ, শার্ট, জ্যাকেট, ফতুয়া, রেক্সিন ডিজিটাল ডিসপ্লে বোর্ড বা ইলেকট্রনিক মাধ্যমসহ অন্য যে কোনো মাধ্যমে প্রস্তুত করা প্রচারপত্র, প্রচারচিত্র, বিজ্ঞাপনচিত্র এবং বিলবোর্ড পোস্টার অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
- প্রার্থীদের হলফনামায় দেওয়া সম্পদ, ঋণ ও আয়-ব্যয়ের তথ্য যাচাইয়ে অটোমেশন পদ্ধতি প্রস্তুত করতে হবে।
- ভোটের প্রচারে অংশ নিতে পারবেন না–এমন সরকারি সুবিধাভোগী অতিগুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সংজ্ঞায় ‘প্রধান উপদেষ্টা’ যুক্ত করতে হবে।
- সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারের কোনো নীতিমালা নেই এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহারের বিষয়েও স্পষ্ট নির্দেশনা থাকতে হবে। এআই ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ব্যবহারের বিষয়ে আলাদা অনুচ্ছেদ আচরণবিধিতে যুক্ত করা যায়।
- এক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞদের অন্তর্ভুক্ত করে মিডিয়া সেল গঠন, এআই ব্যবহার করলে স্পষ্ট ঘোষণা দেওয়া, অপব্যবহারকে নির্বাচনী অপরাধ গণ্য করা এবং সংশ্লিষ্ট দল ও প্রার্থীর দায় নির্ধারণের ব্যবস্থা রাখতে হবে।
গত ৩০ জুন আচরণ বিধিমালার খসড়া প্রকাশ করে এর ওপর মতামত দিতে দশ দিন সময় দিয়েছিল নির্বাচন কমিশন। কর্মকর্তারা জানান, নির্ধারিত সময়ে অন্তত ৪২টি মতামত জমা পড়েছে।
রাজনৈতিক দলগুলার মধ্যে বিএনপি, বিকল্পধারা বাংলাদেশ, বাংলাদেশ জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (বাংলাদেশ জাসদ), ইসলামী ঐক্যজোট, বাংলাদেশ রক্ষণশীল দল, জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন-এনডিএম, বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট-বিএনএফ ও সম্মিলিত গণতান্ত্রিক দল মতামত দিয়েছে।
টিআইবি ছাড়াও ইনস্টিটিউট ফর এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (আইইডি) মতামত জমা দিয়েছে। এছাড়া প্রবাসীসহ ব্যক্তিপর্যায়ের অন্তত ২৯ জনের মতামত পাওয়া গেছে।
নির্বাচন কমিশনার মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার বলেন, আচরণবিধির বিষয়টি আরপিও সংশোধনের সঙ্গে যুক্ত। সে কারণে ইসিকে অপেক্ষা করতে হচ্ছে। আইনের সঙ্গে সমন্বয় রেখে নতুন প্রস্তাব যুক্ত করে খসড়া আচরণবিধিও চূড়ান্ত করবে ইসি।
গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংশোধন প্রস্তাবও গুছিয়ে আনা হয়েছে। কমিশনের অনুমোদন পেলে তা আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে সরকারের সায় মিললে তা অধ্যাদেশ আকারে জারি হবে।
সাবরিনা জাহান- বিশেষ প্রতিনিধি : বিডিপলিটিক্স টোয়েন্টিফোর ডটকম