জেরুজালেমে চলা দীর্ঘ বৈঠকের পর এই সিদ্ধান্ত হয় বলে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে।
গাজা সিটি দখলের পরিকল্পনায় সায় ইসরায়েলি নিরাপত্তা মন্ত্রিসভার

- আপডেট সময় ০২:৩৮:৩৮ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৮ অগাস্ট ২০২৫
- / ৫৬ বার পড়া হয়েছে
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর প্রস্তাবে গাজা সিটি দখলের পরিকল্পনা অনুমোদন করেছে ইসরায়েলের নিরাপত্তা মন্ত্রিসভা।
বৃহস্পতিবার রাত থেকে শুক্রবার স্থানীয় সময় ভোর পর্যন্ত জেরুজালেমে চলা দীর্ঘ বৈঠকের পর এই সিদ্ধান্ত হয় বলে নেতানিয়াহুর কার্যালয়ের বিবৃতির বরাত দিয়ে বিবিসি জানিয়েছে।
ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের ওই বিবৃতিতে বলা হয়েছে, হামাসকে ‘পরাজিত করার’ লক্ষ্যেই এ পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
যদিও ইসরায়েলি সেনাবাহিনী আগেই সতর্ক করে বলেছিল, ঘনবসতিপূর্ণ গাজা সিটিতে সামরিক অভিযান জীবিত অবশিষ্ট জিম্মিদের জীবনের জন্য বড় ঝুঁকি তৈরি করবে এবং ভয়াবহ মানবিক সংকট ডেকে আনবে।
নেতানিয়াহুর এ পরিকল্পনা আগের ঘোষণার তুলনায় সীমিত। আগে তিনি পুরো গাজা দখলের ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। বৈঠকের আগে ফক্স নিউজকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি জানান, ইসরায়েল গাজার পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নিতে চায়, তবে দীর্ঘমেয়াদে তা নিজেদের করে রাখতে চায় না।
বিবিসি জানিয়েছে, যুদ্ধ শেষের জন্য পাঁচটি নীতি অনুমোদন করেছে ইসরায়েলি নিরাপত্তা মন্ত্রিসভা। এগুলো হচ্ছে- হামাসকে নিরস্ত্র করা, জীবিত-মৃত সব জিম্মিকে ফিরিয়ে আনা, গাজার অসামরিকীকরণ নিশ্চিত করা, গাজা ভূখণ্ডে ইসরায়েলি নিরাপত্তা বাহিনীর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা এবং হামাস বা ফিলিস্তিন(পিএ) কর্তৃপক্ষ ছাড়া বিকল্প কোনো বেসামরিক সরকার গঠন।
বৈঠকের আগে সাংবাদিকরা নেতানিয়াহুকে জিজ্ঞেস করেছিল ইসরায়েল গাজার নিয়ন্ত্রণ নেবে কিনা। জবাবে তিনি বলেছিলেন, “আমাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য, হামাসকে সরানোর জন্য, গাজার মানুষকে মুক্ত করার জন্য এবং গাজাকে বেসামরিক শাসনের আওতায় আনার জন্য আমরা (গাজা) নিয়ন্ত্রণ নিতে ইচ্ছুক।”
“আমরা গাজাকে এমন একটি বেসামরিক শাসনের অধীনে হস্তান্তর করতে চাই, যারা হামাস নয় এবং যারা ইসরায়েলের ধ্বংসের পক্ষে সোচ্চার হবে না,” বলেছেন তিনি।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী বলছে, বর্তমানে গাজার ৭৫ শতাংশ এলাকা তাদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। অবশিষ্ট ২৫ শতাংশ—যার মধ্যে গাজা সিটি ও মধ্য গাজার শরণার্থী শিবিরগুলোও রয়েছে; এগুলোই গাজার সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা।
গাজা সিটি দখল করতে গেলে এখন ইসরায়েলকে ভূখণ্ডটিতে আরও হাজার হাজার সেনা পাঠাতে হবে। তাতে বেসামরিক মৃত্যুর সম্ভাবনা যেমন আছে, তেমনি জিম্মিরাও ঝুঁকিতে পড়বে।
হামাস আগেই হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছিল, ইসরায়েলি সেনারা কাছে গেলে তারা জিম্মিদের হত্যা করবে। গত অগাস্টে রাফাহ শহরে ছয় ইসরায়েলি জিম্মিকে হত্যা করেছিল তারা, যখন আইডিএফ ‘অনিচ্ছাকৃতভাবে’ জিম্মিদের যে টানেলে রাখা হয়েছিল তার কাছে পৌঁছে গিয়েছিল।
গাজা সিটি দখলের পরিকল্পনা ইসরায়েলের ভেতরেই ব্যাপক প্রতিবাদের মুখে পড়েছে। বিরোধী দলীয় নেতা ইয়ায়ির লাপিদ এ সিদ্ধান্তকে ‘বিপর্যয়’ আখ্যা দিয়েছেন। জিম্মিদের পরিবারও সিদ্ধান্তটির তুমুল সমালোচনা করেছে।
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ের স্টারমার একে ‘অন্যায়’ অভিহিত করে বলেছেন, এমন পদক্ষেপে কেবল ‘রক্তপাতই বাড়বে’।
অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী পেনি ওং এক বিবৃতিতে ইসরায়েলকে গাজা সিটি দখলের পথে না হাঁটার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, এতে গাজায় মানবিক বিপর্যয় আরও বাড়বে, পাশাপাশি সেখানকার বাসিন্দাদের স্থায়ীভাবে উৎখাতের যে কোনো পদক্ষেপ হবে আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন।
“দুই-রাষ্ট্র সমাধানই একমাত্র পথ—যেখানে ফিলিস্তিন রাষ্ট্র ও ইসরায়েল আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত সীমানায় পাশাপাশি শান্তিতে বসবাস করবে,” বলেছেন পেনি ওয়ং।
জাতিসংঘও সতর্ক করে বলেছে, গাজা সিটি দখলে ইসরায়েলের পদক্ষেপ “বিপর্যয়কর পরিণতি” বয়ে আনতে পারে।
আন্তর্জাতিক ডেস্ক : বিডিপলিটিক্স টোয়েন্টিফোর ডটকম