০৪:৩৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২১ অগাস্ট ২০২৫
“কাউন্সিলের মাধ্যমে দেখাতে চাই, জাতীয় পার্টি কোনো ব্যক্তিকেন্দ্রিক দল নয়, জাতীয় পার্টি একটি আদর্শ।”

‘ঐক্যের ডাক’ দিয়ে সম্মেলনের ঘোষণা আনিসুল-হাওলাদার-চুন্নুর

মইদুল হাসান - জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক : বিডিপলিটিক্স টোয়েন্টিফোর ডটকম
  • আপডেট সময় ০৪:৪২:৩৭ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৮ অগাস্ট ২০২৫
  • / ৫০ বার পড়া হয়েছে

 

জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের ওপর আদালতের অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার পর দলটিতে নতুন করে যে ‘ভাঙনের সুর’ শোনা যাচ্ছিল, তা উড়িয়ে দিয়ে ‘ঐক্যের’ গল্প শোনালেন প্রবীণ নেতা আনিসুল ইসলাম মাহমুদ।

সেইসঙ্গে শনিবার ঢাকার গুলশানের ইমানুয়েল কনভেনশন সেন্টারে জাতীয় সম্মেলনের ঘোষণা দিয়ে তিনি বললেন, “এখানে ভাগাভাগির কোনো প্রশ্ন নাই। এটা এরশাদ সাহেবের ১২ নম্বর নিবন্ধিত জাতীয় পার্টির লাঙ্গল মার্কার সম্মেলন।”

গত ৭ জুলাই সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার ও মহাসচিব মো. মুজিবুল হক চুন্নুসহ দলের ১০ নেতাকে অব্যাহতি দিয়েছিলেন দলের চেয়ারম্যান জি এম কাদের।

পরে অব্যাহতি পাওয়া নেতারা আদালতের দ্বারস্থ হলে ৩১ জুলাই জি এম কাদের এবং যুগ্ম দপ্তর সম্পাদক মাহমুদ আলমের সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনার ওপর অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে আদালত।

গত মঙ্গলবার জিএম কাদেরের অব্যাহতি দেওয়া দলের দপ্তর সম্পাদক এম এ রাজ্জাক খান স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে পার্টির কো চেয়ারম্যান আনিসুল ইসলাম মাহমুদকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান করার কথা বলা হয়।

এর তিন দিনের মাথায় শুক্রবার গুলশান এভিনিউর হাওলাদার টাওয়ারের হলরুমে সাংবাদিকদের সামনে এক মঞ্চে এসে জাতীয় সম্মেলনের ঘোষণা দিলেন আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার ও মুজিবুল হক চুন্নু।

সেখানে বলা হয়, তারা আদালতের নির্দেশে দলের পদে বহাল হয়েছেন এবং তাদেরকে অব্যাহতি দেওয়া জি এম কাদের দলীয় কার্যক্রমে নিষেধাজ্ঞা পেয়েছেন।

শনিবার বেলা ১১টায় জাতীয় সম্মেলনের ঘোষণা দিয়ে চুন্নু সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে বলেন, দলকে সাংগঠনিক স্থবিরতা থেকে ‘মুক্ত করতে’ মঙ্গলবার প্রেসিডিয়াম সভায় অতি দ্রুত এই জাতীয় সম্মেলনের সিদ্ধান্ত হয়েছে।

যে জাতীয় পার্টি নিয়ে সম্প্রতি ‘বিভ্রান্তি’ তৈরি হয়েছিল, সেই দল সম্মেলনের মাধ্যমে ‘দায়িত্বশীলতা, শৃঙ্খলা ও ঐক্যের’ বার্তা নিয়ে দেশবাসীর সামনে ‘নতুন করে আত্মপ্রকাশ করছে’ বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

চুন্নু বলেন, তাদের এ সম্মেলন হবে ‘আত্মশুদ্ধি এবং গণতান্ত্রিক নেতৃত্ব পুনর্গঠনের’ সম্মেলন।

“কাউন্সিলের মাধ্যমে দেখাতে চাই, জাতীয় পার্টি কোনো ব্যক্তিকেন্দ্রিক দল নয়, জাতীয় পার্টি একটি আদর্শ। জাতীয় পার্টি সবসময় মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

“এ কাউন্সিল হবে তৃণমূল কর্মীদের জাগরণের দিন। নবীন-প্রবীণ নেতৃত্বের সম্মিলন, ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ বিনির্মাণের রূপরেখা। এটি কেবল আনুষ্ঠানিকতা নয়, এটি আমাদের নতুন শপথের দিন।”

ঐক্যের শক্তি, গণতন্ত্রের ভিত্তি ও জনগণের প্রত্যাশা বুকে নিয়ে জাতীয় পার্টি ‘এগিয়ে যাচ্ছে’ মন্তব্য করে চুন্নু বলেন, “আমরা বিশ্বাস করি এই শক্তি, ঐক্য ও গণতন্ত্রের যাত্রায় দেশের মানুষ আবারও জাতীয় পার্টির দিকে প্রত্যাশা নিয়ে তাকিয়ে থাকবে। জাতীয় পার্টি আবারও সেই বিশ্বাসের প্রতীক হয়ে উঠবে।”

জি এম কাদেরের সঙ্গে দলের অন্য নেতাদের ‘মতবিরোধের’ কথাও সংবাদ সম্মেলনে তুলে ধরেন রুহুল আমিন হাওলাদার।

তিনি বলেন, “সবারই মতামতের গুরুত্ব আছে। আমরা পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের সাহেবকে বহুবার যৌথ নেতৃত্বের কথা বলেছিলাম। ঐক্যবদ্ধভাবে দলকে সমৃদ্ধ করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু জিএম কাদের সাহেব দলটাকে একত্রিত করতে পারলেন না।”

তার দাবি, ‘পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে’ দেশবাসী ‘অধীর আগ্রহে’ জাতীয় পার্টির জন্য ‘অপেক্ষা করছে’। পক্ষান্তরে জি এম কাদের সেই সুযোগ থেকে সবাইকে ‘বঞ্চিত করতে’ চেয়েছিলেন।

সবশেষে আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ‘গঠনতন্ত্র অনুযায়ী’ নিজের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন এবং জি এম কাদেরের অব্যাহতি দেওয়া নেতাদের পদে বহালের নির্দেশনা পড়ে শোনান।

৩১ জুলাই আদালত এ নির্দেশনা দিলেও জি এম কাদেরের আট দিনেও আপিল না করার বিষয়টিকে ‘মজার ব্যাপার’ হিসেবে বর্ণনা করেন আনিসুল ইসলাম মাহমুদ। তার ভাষায়, জি এম কাদের আদালতে যাননি, কারণ সেখানে ‘প্রশ্ন আছে’।

তিনি নির্বাচন কমিশনকে জানিয়ে শনিবার জাতীয় সম্মেলন করার কথা বলেন এবং সেখানে নির্বাচন কমিশনের প্রতিনিধিদের থাকতে অনুরোধ করেন।

আদালত যাদেরকে পদে বহাল করেছে, তাদেরকে নিয়েই এ সম্মেলন করা হচ্ছে এবং এই সম্মেলনে প্রত্যেক জেলা থেকে নেতাকর্মীরা যোগ দিবেন বলে আশা প্রকাশ করেন আনিসুল ইসলাম মাহমুদ।

তিনি বলেন, “আমরা এমন একটি দল করতে চাই–গণতন্ত্র দেশে করব আর পার্টিতে গণতন্ত্র রাখব না–এটা কিন্তু হবে না। আমরা পার্টিতে গঠনতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে চাই।”

জাতীয় পার্টির বিভিন্ন ভাগে বিভক্তির বিষয়টি সামনে এনে তিনি বলেন, “আমরা এখানে কোনো ভাগ করছি না। আমরা জাতীয় পার্টি, যেটা ১২ নম্বর নিবন্ধিত পার্টি নির্বাচন কমিশনে, সেই পার্টির কাউন্সিল করছি। নির্বাচন কমিশনকে জানিয়ে, তাদের পর্যবেক্ষক নিয়ে আমরা আইনগতভাবে কাউন্সিল করছি।

“এখানে ভাগাভাগির কোনো প্রশ্ন নাই, এখানে আনিস সাহেবের কোনো দল নাই, চুন্নু সাহেবের কোনো দল নাই, হাওলাদার সাহেবের কোনো দল নাই। এরশাদ সাহেবের ১২ নম্বর নিবন্ধিত জাতীয় পার্টির লাঙ্গল মার্কার সম্মেলন।”

আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেন, “আমাদের অনেকে বলে জাতীয় পার্টি অনেকভাবে ভাগ হয়েছে। সেটাও আমরা ঐক্যবদ্ধ করার চেষ্টা করছি।”

ইতোমধ্যে রওশন এরশাদ ও আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর সঙ্গে যোগাযোগ করার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, “তারাও কালকে আমাদের কাউন্সিলে থাকবেন। আশা করি কাউন্সিলের পরে আমরা মিলিত হয়ে যাব। আরও দুই-তিনটা বিভেদ আছে ছোট ছোট, তাদেরকেও আমরা একীভূত করছি। বিভক্তি শেষ করে দিয়ে ঐক্যবদ্ধ জাতীয় পার্টি করতে চাই।”

দলের গঠনতন্ত্র পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিয়ে আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেন, ভবিষ্যতে যাতে কোনো চেয়ারম্যান ইচ্ছামত তার কমিটি বদলাতে না পারেন, সেই ব্যবস্থা তারা করতে চান।

নব্বইয়ের গণআন্দোলনে এরশাদের পতনের পর প্রথমবারের মত ভাঙন ধরে জাতীয় পার্টিতে, ১৯৯৭ সালে আনোয়ার হোসেন মঞ্জু ও শেখ শহিদুল ইসলামের নেতৃত্বে দ্বিতীয় দফা ভাঙন হয়।

কাজী জাফর ও শাহ মোয়াজ্জেমের নেতৃত্বে ১৯৯৮ সালে, ২০০১ সালে নাজিউর রহমানের নেতৃত্বে চতুর্থ দফা এবং ২০১৩ সালের ২০ ডিসেম্বর বিশেষ কাউন্সিলের মাধ্যমে জাপায় পঞ্চমবারের মত ভাঙন জাতীয় পার্টি।

এরশাদ মারা যাওয়ার পর সবশেষ ২০২৪ সালের ২০ এপ্রিল তার স্ত্রী রওশন এরশাদের নেতৃত্বে জাতীয় পার্টির একটি অংশ ভাগ হয়ে যায়।

শনিবারের সম্মেলনের মাধ্যমে জাতীয় পার্টির সকল ভাগকে এক করে আবার ‘ঐক্যবদ্ধ’ হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন আনিসুল ইসলাম মাহমুদ।

 

 

 

মইদুল হাসান – জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক : বিডিপলিটিক্স টোয়েন্টিফোর ডটকম

নিউজটি শেয়ার করুন

“কাউন্সিলের মাধ্যমে দেখাতে চাই, জাতীয় পার্টি কোনো ব্যক্তিকেন্দ্রিক দল নয়, জাতীয় পার্টি একটি আদর্শ।”

‘ঐক্যের ডাক’ দিয়ে সম্মেলনের ঘোষণা আনিসুল-হাওলাদার-চুন্নুর

আপডেট সময় ০৪:৪২:৩৭ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৮ অগাস্ট ২০২৫

 

জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের ওপর আদালতের অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার পর দলটিতে নতুন করে যে ‘ভাঙনের সুর’ শোনা যাচ্ছিল, তা উড়িয়ে দিয়ে ‘ঐক্যের’ গল্প শোনালেন প্রবীণ নেতা আনিসুল ইসলাম মাহমুদ।

সেইসঙ্গে শনিবার ঢাকার গুলশানের ইমানুয়েল কনভেনশন সেন্টারে জাতীয় সম্মেলনের ঘোষণা দিয়ে তিনি বললেন, “এখানে ভাগাভাগির কোনো প্রশ্ন নাই। এটা এরশাদ সাহেবের ১২ নম্বর নিবন্ধিত জাতীয় পার্টির লাঙ্গল মার্কার সম্মেলন।”

গত ৭ জুলাই সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার ও মহাসচিব মো. মুজিবুল হক চুন্নুসহ দলের ১০ নেতাকে অব্যাহতি দিয়েছিলেন দলের চেয়ারম্যান জি এম কাদের।

পরে অব্যাহতি পাওয়া নেতারা আদালতের দ্বারস্থ হলে ৩১ জুলাই জি এম কাদের এবং যুগ্ম দপ্তর সম্পাদক মাহমুদ আলমের সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনার ওপর অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে আদালত।

গত মঙ্গলবার জিএম কাদেরের অব্যাহতি দেওয়া দলের দপ্তর সম্পাদক এম এ রাজ্জাক খান স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে পার্টির কো চেয়ারম্যান আনিসুল ইসলাম মাহমুদকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান করার কথা বলা হয়।

এর তিন দিনের মাথায় শুক্রবার গুলশান এভিনিউর হাওলাদার টাওয়ারের হলরুমে সাংবাদিকদের সামনে এক মঞ্চে এসে জাতীয় সম্মেলনের ঘোষণা দিলেন আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার ও মুজিবুল হক চুন্নু।

সেখানে বলা হয়, তারা আদালতের নির্দেশে দলের পদে বহাল হয়েছেন এবং তাদেরকে অব্যাহতি দেওয়া জি এম কাদের দলীয় কার্যক্রমে নিষেধাজ্ঞা পেয়েছেন।

শনিবার বেলা ১১টায় জাতীয় সম্মেলনের ঘোষণা দিয়ে চুন্নু সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে বলেন, দলকে সাংগঠনিক স্থবিরতা থেকে ‘মুক্ত করতে’ মঙ্গলবার প্রেসিডিয়াম সভায় অতি দ্রুত এই জাতীয় সম্মেলনের সিদ্ধান্ত হয়েছে।

যে জাতীয় পার্টি নিয়ে সম্প্রতি ‘বিভ্রান্তি’ তৈরি হয়েছিল, সেই দল সম্মেলনের মাধ্যমে ‘দায়িত্বশীলতা, শৃঙ্খলা ও ঐক্যের’ বার্তা নিয়ে দেশবাসীর সামনে ‘নতুন করে আত্মপ্রকাশ করছে’ বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

চুন্নু বলেন, তাদের এ সম্মেলন হবে ‘আত্মশুদ্ধি এবং গণতান্ত্রিক নেতৃত্ব পুনর্গঠনের’ সম্মেলন।

“কাউন্সিলের মাধ্যমে দেখাতে চাই, জাতীয় পার্টি কোনো ব্যক্তিকেন্দ্রিক দল নয়, জাতীয় পার্টি একটি আদর্শ। জাতীয় পার্টি সবসময় মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

“এ কাউন্সিল হবে তৃণমূল কর্মীদের জাগরণের দিন। নবীন-প্রবীণ নেতৃত্বের সম্মিলন, ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ বিনির্মাণের রূপরেখা। এটি কেবল আনুষ্ঠানিকতা নয়, এটি আমাদের নতুন শপথের দিন।”

ঐক্যের শক্তি, গণতন্ত্রের ভিত্তি ও জনগণের প্রত্যাশা বুকে নিয়ে জাতীয় পার্টি ‘এগিয়ে যাচ্ছে’ মন্তব্য করে চুন্নু বলেন, “আমরা বিশ্বাস করি এই শক্তি, ঐক্য ও গণতন্ত্রের যাত্রায় দেশের মানুষ আবারও জাতীয় পার্টির দিকে প্রত্যাশা নিয়ে তাকিয়ে থাকবে। জাতীয় পার্টি আবারও সেই বিশ্বাসের প্রতীক হয়ে উঠবে।”

জি এম কাদেরের সঙ্গে দলের অন্য নেতাদের ‘মতবিরোধের’ কথাও সংবাদ সম্মেলনে তুলে ধরেন রুহুল আমিন হাওলাদার।

তিনি বলেন, “সবারই মতামতের গুরুত্ব আছে। আমরা পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের সাহেবকে বহুবার যৌথ নেতৃত্বের কথা বলেছিলাম। ঐক্যবদ্ধভাবে দলকে সমৃদ্ধ করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু জিএম কাদের সাহেব দলটাকে একত্রিত করতে পারলেন না।”

তার দাবি, ‘পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে’ দেশবাসী ‘অধীর আগ্রহে’ জাতীয় পার্টির জন্য ‘অপেক্ষা করছে’। পক্ষান্তরে জি এম কাদের সেই সুযোগ থেকে সবাইকে ‘বঞ্চিত করতে’ চেয়েছিলেন।

সবশেষে আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ‘গঠনতন্ত্র অনুযায়ী’ নিজের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন এবং জি এম কাদেরের অব্যাহতি দেওয়া নেতাদের পদে বহালের নির্দেশনা পড়ে শোনান।

৩১ জুলাই আদালত এ নির্দেশনা দিলেও জি এম কাদেরের আট দিনেও আপিল না করার বিষয়টিকে ‘মজার ব্যাপার’ হিসেবে বর্ণনা করেন আনিসুল ইসলাম মাহমুদ। তার ভাষায়, জি এম কাদের আদালতে যাননি, কারণ সেখানে ‘প্রশ্ন আছে’।

তিনি নির্বাচন কমিশনকে জানিয়ে শনিবার জাতীয় সম্মেলন করার কথা বলেন এবং সেখানে নির্বাচন কমিশনের প্রতিনিধিদের থাকতে অনুরোধ করেন।

আদালত যাদেরকে পদে বহাল করেছে, তাদেরকে নিয়েই এ সম্মেলন করা হচ্ছে এবং এই সম্মেলনে প্রত্যেক জেলা থেকে নেতাকর্মীরা যোগ দিবেন বলে আশা প্রকাশ করেন আনিসুল ইসলাম মাহমুদ।

তিনি বলেন, “আমরা এমন একটি দল করতে চাই–গণতন্ত্র দেশে করব আর পার্টিতে গণতন্ত্র রাখব না–এটা কিন্তু হবে না। আমরা পার্টিতে গঠনতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে চাই।”

জাতীয় পার্টির বিভিন্ন ভাগে বিভক্তির বিষয়টি সামনে এনে তিনি বলেন, “আমরা এখানে কোনো ভাগ করছি না। আমরা জাতীয় পার্টি, যেটা ১২ নম্বর নিবন্ধিত পার্টি নির্বাচন কমিশনে, সেই পার্টির কাউন্সিল করছি। নির্বাচন কমিশনকে জানিয়ে, তাদের পর্যবেক্ষক নিয়ে আমরা আইনগতভাবে কাউন্সিল করছি।

“এখানে ভাগাভাগির কোনো প্রশ্ন নাই, এখানে আনিস সাহেবের কোনো দল নাই, চুন্নু সাহেবের কোনো দল নাই, হাওলাদার সাহেবের কোনো দল নাই। এরশাদ সাহেবের ১২ নম্বর নিবন্ধিত জাতীয় পার্টির লাঙ্গল মার্কার সম্মেলন।”

আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেন, “আমাদের অনেকে বলে জাতীয় পার্টি অনেকভাবে ভাগ হয়েছে। সেটাও আমরা ঐক্যবদ্ধ করার চেষ্টা করছি।”

ইতোমধ্যে রওশন এরশাদ ও আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর সঙ্গে যোগাযোগ করার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, “তারাও কালকে আমাদের কাউন্সিলে থাকবেন। আশা করি কাউন্সিলের পরে আমরা মিলিত হয়ে যাব। আরও দুই-তিনটা বিভেদ আছে ছোট ছোট, তাদেরকেও আমরা একীভূত করছি। বিভক্তি শেষ করে দিয়ে ঐক্যবদ্ধ জাতীয় পার্টি করতে চাই।”

দলের গঠনতন্ত্র পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিয়ে আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেন, ভবিষ্যতে যাতে কোনো চেয়ারম্যান ইচ্ছামত তার কমিটি বদলাতে না পারেন, সেই ব্যবস্থা তারা করতে চান।

নব্বইয়ের গণআন্দোলনে এরশাদের পতনের পর প্রথমবারের মত ভাঙন ধরে জাতীয় পার্টিতে, ১৯৯৭ সালে আনোয়ার হোসেন মঞ্জু ও শেখ শহিদুল ইসলামের নেতৃত্বে দ্বিতীয় দফা ভাঙন হয়।

কাজী জাফর ও শাহ মোয়াজ্জেমের নেতৃত্বে ১৯৯৮ সালে, ২০০১ সালে নাজিউর রহমানের নেতৃত্বে চতুর্থ দফা এবং ২০১৩ সালের ২০ ডিসেম্বর বিশেষ কাউন্সিলের মাধ্যমে জাপায় পঞ্চমবারের মত ভাঙন জাতীয় পার্টি।

এরশাদ মারা যাওয়ার পর সবশেষ ২০২৪ সালের ২০ এপ্রিল তার স্ত্রী রওশন এরশাদের নেতৃত্বে জাতীয় পার্টির একটি অংশ ভাগ হয়ে যায়।

শনিবারের সম্মেলনের মাধ্যমে জাতীয় পার্টির সকল ভাগকে এক করে আবার ‘ঐক্যবদ্ধ’ হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন আনিসুল ইসলাম মাহমুদ।

 

 

 

মইদুল হাসান – জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক : বিডিপলিটিক্স টোয়েন্টিফোর ডটকম