০৪:৫৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২১ অগাস্ট ২০২৫
পুলিশ বলছে, গার্মেন্ট শ্রমিক বাদশা মিয়ার কাছে ২৫ হাজার টাকা দেখে ‘হানি ট্র্যাপে’ ফেলার জন্য তার পিছু নেন গোলাপী।

সাংবাদিক তুহিন হত্যা: কে এই গোলাপী, কী কারণে গ্রেপ্তার

গাজীপুর প্রতিনিধি : বিডিপলিটিক্স টোয়েন্টিফোর ডটকম
  • আপডেট সময় ১২:০১:৩৯ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১০ অগাস্ট ২০২৫
  • / ৫৫ বার পড়া হয়েছে

গাজীপুরে সাংবাদিক তুহিন হত্যায় গ্রেপ্তার গোলাপী ও তার স্বামী ফয়সাল।

 

গাজীপুরে সাংবাদিক আসাদুজ্জামান তুহিন হত্যার ঘটনায় যে সাতজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে তার মধ্যে একজন নারী রয়েছেন। পুলিশ জানিয়েছে, তার নাম গোলাপী।

গোলাপীর স্বামী ফয়সাল ওরফে ‘কেটু মিজান’কেও মঙ্গলবার রাতে নগরীর ভবানীপুর এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে; যাকে এই হত্যাকাণ্ডের ‘মূল হোতা’ বলে দাবি করেছে গাজীপুর মহানগর পুলিশ।

তুহিন হত্যার ভিডিও এবং আসামিদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাতে পুলিশ মনে করছে, মূল ঘটনার শুরু এই গোলাপীর মাধ্যমেই। তিনি মূলত একজন ‘হানি ট্র্যাপার’ হিসেবে কাজ করেন। পূর্বপরিকল্পনা মত আর্থিকভাবে লাভবান হতে গার্মেন্ট শ্রমিক বাদশা মিয়াকে টার্গেট করেন। একপর্যায়ে তার সঙ্গে ঝগড়া বাঁধিয়ে দেন।

তখন আগে থেকে ওত পেতে থাকা গোলাপীর স্বামী ফয়সাল ও অন্যান্যরা মুহূর্তের মধ্যে সেখানে হাজির হয়ে অস্ত্র নিয়ে বাদশা মিয়ার উপর আক্রমণ চালায়। কিছু আহত হলেও বাদশা মিয়া সেখান থেকে দৌড়ে পালিয়ে যেতে সক্ষম হন। এই দৃশ্য পাশ থেকে ভিডিও করেছিলেন সাংবাদিক তুহিন। ভিডিও করার দৃশ্য দেখে ফেলার কারণেই তুহিনকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

এসব তথ্য দিয়ে গাজীপুর মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মো. জাহিদুল হাসান বিডিপলিটিক্স টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, রোজ পোশাক কারখানার শ্রমিক বাদশা মিয়া মহানগরীর একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তার সঙ্গে পুলিশের কথা হয়েছে। সব তথ্য, ভিডিও বিশ্লেষণ করেই গোলাপীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

 

“মানুষকে ‘হানি ট্র্যাপে’ ফেলে দিয়ে অর্থ ও মূল্যবান জিনিসপত্র ছিনিয়ে নেওয়ার প্রচুর ঘটনা রাজধানীর গুলিস্তান এলাকায় ঘটতে দেখেছি। সাধারণত কাউকে মোবাইল ফোনে ডেকে এনে পরিকল্পনা করে ফাঁসানো হয়।”

পুলিশ জানিয়েছে, গোলাপীর বাড়ি জামালপুরের মেলান্দহ উপজেলায়। তার বাবার নাম সোলায়মান। তিনি ও ফয়সাল গাজীপুরের চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় থাকেন।

বৃহস্পতিবার রাত ৮টার দিকে গাজীপুর মহানগরীর ব্যস্ততম চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় প্রকাশ্যে কুপিয়ে ও গলা কেটে হত্যা করা হয় সাংবাদিক আসাদুজ্জামান তুহিনকে (৩৮)। এ ঘটনায় শনিবার পর্যন্ত মোট সাতজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

তুহিন দৈনিক প্রতিদিনের কাগজ পত্রিকার গাজীপুরের স্টাফ রিপোর্টার ছিলেন। তিনি ময়মনসিংহ জেলার ফুলবাড়িয়া থানার ভাটিপাড়া গ্রামের হাসান জামালের ছেলে। তিনি স্ত্রী ও দুই ছেলেকে নিয়ে গাজীপুর মহানগরীর চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় ভাড়া বাসায় বসবাস করতেন।

জিএমপির বাসন থানার ওসি শাহীন খান জানান, সাংবাদিক তুহিন হত্যার ঘটনায় বাসন থানায় দুটি মামলা হয়েছে। একটি মামলার বাদী হয়েছেন তুহিনের বড় ভাই মো. সেলিম। অপর একটি মামলার বাদী, তুহিন হত্যার আগে সংগঠিত আরেকটি হামলার ঘটনায় আহত বাদশা মিয়ার ভাই। মামলায় অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করা হয়েছে।

শুক্রবার সকালে নিহত সাংবাদিক আসাদুজ্জামান তুহিনের মরদেহের ময়নাতদন্ত গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমেদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে সম্পন্ন হয়েছে।

জুমার নামাজের পর গাজীপুর মহানগরীর চান্দনা চৌরাস্তা এলাকার যেখানে তাকে হত্যা করা হয়, সেখানেই ঈদগাহ মাঠে তার জানাজা অনুষ্ঠিত হয়েছে। পরে ময়মনসিংহে গ্রামের বাড়িতে তার দাফন সম্পন্ন হয়।

 

‘২৫ হাজার টাকা দেখে টার্গেট’

সাংবাদিক তুহিন হত্যার ঘটনায় সাতজনকে গ্রেপ্তারের পর শনিবার দুপুরে গাজীপুর মহানগর পুলিশ ওয়্যারলেস গেইট এলাকায় সদর দপ্তরে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে। সেখানে পুলিশ কমিশনার নাজমুল করিম খানের বক্তব্যের গোলাপীর এই বিষয়টি ওঠে আসে।

সেখানে হত্যার ঘটনার শুরুর বর্ণনা দিয়ে বলা হয়, সেদিন এই ঘটনার প্রথম ভিকটিম বাদশা মিয়া স্থানীয় একটি এটিএম বুথ থেকে ২৫ হাজার টাকা তোলেন। বিষয়টি দেখে তাকে ফাঁসানোর জন্য গোলাপি বাদশাকে ‘হানি ট্র্যাপে’ ফেলার চেষ্টা করেন।

গোলাপির সঙ্গে কথাবার্তার এক পর্যায়ে বাদশা মিয়া বিষয়টি বুঝতে পারেন, যে তাকে ‘হানি ট্র্যাপে’ ফেলার চেষ্টা করা হচ্ছে। কথাবার্তার এক পর্যায়ে তাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব দেখা দেয় এবং বাদশা মিয়া গোলাপিকে ঘুষি মারেন। সিসিটিভি ফুটেজে বিষয়টি দেখা যায়।

পুলিশ কমিশনার আরও বলেন, গোলাপীকে ঘুষি মারার পর পরই আগে থেকে ওত পেতে থাকা গোলাপীর সহযোগী ৫-৬ জন এগিয়ে এসে চাপাতি দিয়ে বাদশা মিয়াকে এলোপাতাড়ি কোপাতে শুরু করে। কিন্তু বাদশা মিয়া দৌড়ে পালাতে সক্ষম হন।

এই ঘটনায় ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিওতে দেখা যায়, একটি জনবহুল এলাকায় হঠাৎ করেই সাদা শার্ট পরা এক ব্যক্তি (বাদশা মিয়া) এক নারীকে আঘাত করেন। আর সঙ্গে সঙ্গেই দেখানে থাকা কয়েকজন অস্ত্র হাতে সেই ব্যক্তির ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েন।

যারা এই হামলা করেছে, ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, তারা আশপাশে অবস্থান নিয়েছিলেন এবং ঘটনার দিকে লক্ষ্য রাখছিলেন।

 

‘খুনিরা তুহিনকে ভিডিও মুছতে বলে’

গাজীপুর মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জাহিদুল হাসান বলেন, গোলাপী যাকে টার্গেট করেন তার সঙ্গে ইচ্ছাকৃত এবং পরিকল্পিতভাবে ঝগড়া বাঁধিয়ে দেন। তখন দ্রুত তার অন্য সঙ্গীরা সাধারণ মানুষের বেশে গিয়ে সেখানে হাজির হয় এবং জিজ্ঞাসা করে তাদের কী হয়েছে? একপর্যায়ে তারা টার্গেট ওই ব্যক্তিকে ভয়ভীতি দেখিয়ে ছিনতাইয়ের কাজ করে।

“এক্ষেত্রেও সেদিন পোশাক শ্রমিক বাদশা মিয়ার কাছ থেকে টাকা ছিনিয়ে নেওয়ার জন্য তার পিছু নেন গোলাপী। এক পর্যায়ে বাদশা মিয়ার সঙ্গে ইচ্ছাকৃতভাবে ঝগড়া বাঁধিয়ে দেন তিনি। এক পর্যায়ে বাদশা মিয়া ক্ষিপ্ত হয়ে গোলাপীকে মারধর করেন। আর সঙ্গে সঙ্গে সঙ্গীরা সেখানে হাজির হয়ে চাপাতি দিয়ে বাদশা মিয়াকে আঘাত করেন।”

জাহিদুল হাসান বলেন, “এক পর্যায়ে আহত বাদশা মিয়া দৌড়ে পালাতে সক্ষম হয়। কিন্তু এ সময় পাশে থাকা সাংবাদিক তুহিন তার মোবাইলের ক্যামেরায় ওই হামলার দৃশ্য ভিডিও ধারণ করেন। যা ওই সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা দেখে ফেলে।

 

“পরে তারা সাংবাদিক তুহিনকে দৌড়ে ধরে ফেলে এবং তাকে মোবাইল থেকে ওই ভিডিও মুছে ফেলার জন্য চাপ দেয়। কিন্তু তুহিন রাজি না হওয়ায় সন্ত্রাসীরা হামলা করে। একপর্যায়ে তুহিন দৌড়ে ঈদগাহ মার্কেটের পাশে মুদির দোকানে আশ্রয় নিলে তারা সেখানে গিয়ে উপর্যুপরি ধারালো অস্ত্রে কুপিয়ে ও জবাই করে তুহিনের হত্যা নিশ্চিত করে পালিয়ে যায়।

জাহিদুল বলেন, পরে ওই হামলার কিছু অংশ আশেপাশের সিসি ক্যামেরায় ভিডিও দেখে আটজনকে শনাক্ত করা হয়েছে এবং তাদের মধ্যে সাতজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

গোলাপী ও ফয়সাল ছাড়া এ ঘটনায় গ্রেপ্তার অন্যরা হলেন- সুমন, আল আমিন, স্বাধীন, মো. শাহ জালাল (৩২), এবং মো. ফয়সাল হাসান (২৩)।

 

 

গাজীপুর প্রতিনিধি : বিডিপলিটিক্স টোয়েন্টিফোর ডটকম

নিউজটি শেয়ার করুন

পুলিশ বলছে, গার্মেন্ট শ্রমিক বাদশা মিয়ার কাছে ২৫ হাজার টাকা দেখে ‘হানি ট্র্যাপে’ ফেলার জন্য তার পিছু নেন গোলাপী।

সাংবাদিক তুহিন হত্যা: কে এই গোলাপী, কী কারণে গ্রেপ্তার

আপডেট সময় ১২:০১:৩৯ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১০ অগাস্ট ২০২৫

 

গাজীপুরে সাংবাদিক আসাদুজ্জামান তুহিন হত্যার ঘটনায় যে সাতজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে তার মধ্যে একজন নারী রয়েছেন। পুলিশ জানিয়েছে, তার নাম গোলাপী।

গোলাপীর স্বামী ফয়সাল ওরফে ‘কেটু মিজান’কেও মঙ্গলবার রাতে নগরীর ভবানীপুর এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে; যাকে এই হত্যাকাণ্ডের ‘মূল হোতা’ বলে দাবি করেছে গাজীপুর মহানগর পুলিশ।

তুহিন হত্যার ভিডিও এবং আসামিদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাতে পুলিশ মনে করছে, মূল ঘটনার শুরু এই গোলাপীর মাধ্যমেই। তিনি মূলত একজন ‘হানি ট্র্যাপার’ হিসেবে কাজ করেন। পূর্বপরিকল্পনা মত আর্থিকভাবে লাভবান হতে গার্মেন্ট শ্রমিক বাদশা মিয়াকে টার্গেট করেন। একপর্যায়ে তার সঙ্গে ঝগড়া বাঁধিয়ে দেন।

তখন আগে থেকে ওত পেতে থাকা গোলাপীর স্বামী ফয়সাল ও অন্যান্যরা মুহূর্তের মধ্যে সেখানে হাজির হয়ে অস্ত্র নিয়ে বাদশা মিয়ার উপর আক্রমণ চালায়। কিছু আহত হলেও বাদশা মিয়া সেখান থেকে দৌড়ে পালিয়ে যেতে সক্ষম হন। এই দৃশ্য পাশ থেকে ভিডিও করেছিলেন সাংবাদিক তুহিন। ভিডিও করার দৃশ্য দেখে ফেলার কারণেই তুহিনকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

এসব তথ্য দিয়ে গাজীপুর মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মো. জাহিদুল হাসান বিডিপলিটিক্স টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, রোজ পোশাক কারখানার শ্রমিক বাদশা মিয়া মহানগরীর একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তার সঙ্গে পুলিশের কথা হয়েছে। সব তথ্য, ভিডিও বিশ্লেষণ করেই গোলাপীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

 

“মানুষকে ‘হানি ট্র্যাপে’ ফেলে দিয়ে অর্থ ও মূল্যবান জিনিসপত্র ছিনিয়ে নেওয়ার প্রচুর ঘটনা রাজধানীর গুলিস্তান এলাকায় ঘটতে দেখেছি। সাধারণত কাউকে মোবাইল ফোনে ডেকে এনে পরিকল্পনা করে ফাঁসানো হয়।”

পুলিশ জানিয়েছে, গোলাপীর বাড়ি জামালপুরের মেলান্দহ উপজেলায়। তার বাবার নাম সোলায়মান। তিনি ও ফয়সাল গাজীপুরের চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় থাকেন।

বৃহস্পতিবার রাত ৮টার দিকে গাজীপুর মহানগরীর ব্যস্ততম চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় প্রকাশ্যে কুপিয়ে ও গলা কেটে হত্যা করা হয় সাংবাদিক আসাদুজ্জামান তুহিনকে (৩৮)। এ ঘটনায় শনিবার পর্যন্ত মোট সাতজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

তুহিন দৈনিক প্রতিদিনের কাগজ পত্রিকার গাজীপুরের স্টাফ রিপোর্টার ছিলেন। তিনি ময়মনসিংহ জেলার ফুলবাড়িয়া থানার ভাটিপাড়া গ্রামের হাসান জামালের ছেলে। তিনি স্ত্রী ও দুই ছেলেকে নিয়ে গাজীপুর মহানগরীর চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় ভাড়া বাসায় বসবাস করতেন।

জিএমপির বাসন থানার ওসি শাহীন খান জানান, সাংবাদিক তুহিন হত্যার ঘটনায় বাসন থানায় দুটি মামলা হয়েছে। একটি মামলার বাদী হয়েছেন তুহিনের বড় ভাই মো. সেলিম। অপর একটি মামলার বাদী, তুহিন হত্যার আগে সংগঠিত আরেকটি হামলার ঘটনায় আহত বাদশা মিয়ার ভাই। মামলায় অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করা হয়েছে।

শুক্রবার সকালে নিহত সাংবাদিক আসাদুজ্জামান তুহিনের মরদেহের ময়নাতদন্ত গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমেদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে সম্পন্ন হয়েছে।

জুমার নামাজের পর গাজীপুর মহানগরীর চান্দনা চৌরাস্তা এলাকার যেখানে তাকে হত্যা করা হয়, সেখানেই ঈদগাহ মাঠে তার জানাজা অনুষ্ঠিত হয়েছে। পরে ময়মনসিংহে গ্রামের বাড়িতে তার দাফন সম্পন্ন হয়।

 

‘২৫ হাজার টাকা দেখে টার্গেট’

সাংবাদিক তুহিন হত্যার ঘটনায় সাতজনকে গ্রেপ্তারের পর শনিবার দুপুরে গাজীপুর মহানগর পুলিশ ওয়্যারলেস গেইট এলাকায় সদর দপ্তরে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে। সেখানে পুলিশ কমিশনার নাজমুল করিম খানের বক্তব্যের গোলাপীর এই বিষয়টি ওঠে আসে।

সেখানে হত্যার ঘটনার শুরুর বর্ণনা দিয়ে বলা হয়, সেদিন এই ঘটনার প্রথম ভিকটিম বাদশা মিয়া স্থানীয় একটি এটিএম বুথ থেকে ২৫ হাজার টাকা তোলেন। বিষয়টি দেখে তাকে ফাঁসানোর জন্য গোলাপি বাদশাকে ‘হানি ট্র্যাপে’ ফেলার চেষ্টা করেন।

গোলাপির সঙ্গে কথাবার্তার এক পর্যায়ে বাদশা মিয়া বিষয়টি বুঝতে পারেন, যে তাকে ‘হানি ট্র্যাপে’ ফেলার চেষ্টা করা হচ্ছে। কথাবার্তার এক পর্যায়ে তাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব দেখা দেয় এবং বাদশা মিয়া গোলাপিকে ঘুষি মারেন। সিসিটিভি ফুটেজে বিষয়টি দেখা যায়।

পুলিশ কমিশনার আরও বলেন, গোলাপীকে ঘুষি মারার পর পরই আগে থেকে ওত পেতে থাকা গোলাপীর সহযোগী ৫-৬ জন এগিয়ে এসে চাপাতি দিয়ে বাদশা মিয়াকে এলোপাতাড়ি কোপাতে শুরু করে। কিন্তু বাদশা মিয়া দৌড়ে পালাতে সক্ষম হন।

এই ঘটনায় ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিওতে দেখা যায়, একটি জনবহুল এলাকায় হঠাৎ করেই সাদা শার্ট পরা এক ব্যক্তি (বাদশা মিয়া) এক নারীকে আঘাত করেন। আর সঙ্গে সঙ্গেই দেখানে থাকা কয়েকজন অস্ত্র হাতে সেই ব্যক্তির ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েন।

যারা এই হামলা করেছে, ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, তারা আশপাশে অবস্থান নিয়েছিলেন এবং ঘটনার দিকে লক্ষ্য রাখছিলেন।

 

‘খুনিরা তুহিনকে ভিডিও মুছতে বলে’

গাজীপুর মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জাহিদুল হাসান বলেন, গোলাপী যাকে টার্গেট করেন তার সঙ্গে ইচ্ছাকৃত এবং পরিকল্পিতভাবে ঝগড়া বাঁধিয়ে দেন। তখন দ্রুত তার অন্য সঙ্গীরা সাধারণ মানুষের বেশে গিয়ে সেখানে হাজির হয় এবং জিজ্ঞাসা করে তাদের কী হয়েছে? একপর্যায়ে তারা টার্গেট ওই ব্যক্তিকে ভয়ভীতি দেখিয়ে ছিনতাইয়ের কাজ করে।

“এক্ষেত্রেও সেদিন পোশাক শ্রমিক বাদশা মিয়ার কাছ থেকে টাকা ছিনিয়ে নেওয়ার জন্য তার পিছু নেন গোলাপী। এক পর্যায়ে বাদশা মিয়ার সঙ্গে ইচ্ছাকৃতভাবে ঝগড়া বাঁধিয়ে দেন তিনি। এক পর্যায়ে বাদশা মিয়া ক্ষিপ্ত হয়ে গোলাপীকে মারধর করেন। আর সঙ্গে সঙ্গে সঙ্গীরা সেখানে হাজির হয়ে চাপাতি দিয়ে বাদশা মিয়াকে আঘাত করেন।”

জাহিদুল হাসান বলেন, “এক পর্যায়ে আহত বাদশা মিয়া দৌড়ে পালাতে সক্ষম হয়। কিন্তু এ সময় পাশে থাকা সাংবাদিক তুহিন তার মোবাইলের ক্যামেরায় ওই হামলার দৃশ্য ভিডিও ধারণ করেন। যা ওই সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা দেখে ফেলে।

 

“পরে তারা সাংবাদিক তুহিনকে দৌড়ে ধরে ফেলে এবং তাকে মোবাইল থেকে ওই ভিডিও মুছে ফেলার জন্য চাপ দেয়। কিন্তু তুহিন রাজি না হওয়ায় সন্ত্রাসীরা হামলা করে। একপর্যায়ে তুহিন দৌড়ে ঈদগাহ মার্কেটের পাশে মুদির দোকানে আশ্রয় নিলে তারা সেখানে গিয়ে উপর্যুপরি ধারালো অস্ত্রে কুপিয়ে ও জবাই করে তুহিনের হত্যা নিশ্চিত করে পালিয়ে যায়।

জাহিদুল বলেন, পরে ওই হামলার কিছু অংশ আশেপাশের সিসি ক্যামেরায় ভিডিও দেখে আটজনকে শনাক্ত করা হয়েছে এবং তাদের মধ্যে সাতজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

গোলাপী ও ফয়সাল ছাড়া এ ঘটনায় গ্রেপ্তার অন্যরা হলেন- সুমন, আল আমিন, স্বাধীন, মো. শাহ জালাল (৩২), এবং মো. ফয়সাল হাসান (২৩)।

 

 

গাজীপুর প্রতিনিধি : বিডিপলিটিক্স টোয়েন্টিফোর ডটকম