“বিক্ষোভ করার অধিকার আমরা দৃঢ়ভাবেই রক্ষা করি, কিন্তু এটি আলাদা প্রেক্ষাপট; একটি নির্দিষ্ট, নিষিদ্ধ সংগঠনের প্রতি সমর্থনের বিষয়,” বলছেন ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
লন্ডনে নিষিদ্ধ প্যালেস্টাইন অ্যাকশনকে সমর্থনের অভিযোগে গ্রেপ্তার ৪৬৬

- আপডেট সময় ১২:৪৪:০৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ১০ অগাস্ট ২০২৫
- / ৪৭ বার পড়া হয়েছে

প্যালেস্টাইন অ্যাকশনকে নিষিদ্ধ করার সরকারি সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে শনিবার লন্ডনের পার্লামেন্ট স্কয়ারে বিক্ষোভ আয়োজন করে ডিফেন্ড আওয়ার জুরিজ। ছবি: রয়টার্স
ব্রিটিশ সরকার সন্ত্রাসবিরোধী আইনে ফিলিস্তিনপন্থি যে সংগঠনকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে, সেই প্যালেস্টাইন অ্যাকশনের কয়েকশ সমর্থককে গ্রেপ্তার করেছে লন্ডন পুলিশ।
মেট্রোপলিটন পুলিশ শনিবার এক্স পোস্টে বলেছে, “প্যালেস্টাইন অ্যাকশনকে সমর্থন জানানোর জন্য রাত ৯টা পর্যন্ত ৪৬৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।”
এছাড়া পুলিশের ওপর হামলাসহ অন্যান্য অভিযোগে আরও ৮ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তবে বাহিনীর কেউ গুরুতর আহত হননি বলে পুলিশের ভাষ্য।
সিএনএন লিখেছে, প্যালেস্টাইন অ্যাকশন যুক্তরাজ্যভিত্তিক একটি সংগঠন, যারা ইসরায়েলি সরকারকে অস্ত্র সরবরাহকারী কোম্পানিগুলোর কার্যক্রমে ব্যাঘাত ঘটানোর চেষ্টা করে।
গত জুনে সংগঠনটির দুই সদস্য ইংল্যান্ডের কেন্দ্রস্থলে সবচেয়ে বড় বিমান ঘাঁটিতে ঢুকে দুটি সামরিক বিমানের ক্ষতি করে। এরপর ব্রিটিশ আইনপ্রণেতারা সংগঠনটিকে নিষিদ্ধ করার পক্ষে ভোট দেন।
এই নিষেধাজ্ঞার ফলে যুক্তরাজ্যে প্যালেস্টাইন অ্যাকশনের সদস্য হওয়া বা সংগঠনটির পক্ষে সমর্থন জানানো এখন বেআইনি। সংগঠনটিকে এখন হামাস, আল-কায়েদা বা আইএসআইএসের মত সন্ত্রাসী সংগঠনের তালিকায় রাখা হয়েছে।
প্যালেস্টাইন অ্যাকশনকে নিষিদ্ধ করার সরকারি সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে শনিবার লন্ডনের পার্লামেন্ট স্কয়ারে বিক্ষোভ করেন কয়েকশ সমর্থক। ছবি: রয়টার্স
শনিবার বিকালে লন্ডনের পার্লামেন্ট স্কয়ারে ডিফেন্ড আওয়ার জুরিজ আয়োজিত বিক্ষোভে বিপুল সংখ্যক মানুষ অংশ নেয়। লন্ডনের মেট্রোপলিটন পুলিশ আগেই সতর্ক করেছিল যে, নিষিদ্ধ সংগঠনকে সমর্থনকারী যে কাউকে গ্রেপ্তার করা হবে।
ইংল্যান্ডের সারে থেকে আসা ৮০ বছর বয়সী এক নারী বিক্ষোভকারী নাম প্রকাশ না করে সিএনএনকে বলেন, প্যালেস্টাইন অ্যাকশনকে নিষিদ্ধ করার সরকারি সিদ্ধান্তকে ‘একটি প্রহসন’ হিসেবে প্রমাণের জন্য তিনি বিক্ষোভে যোগ দিয়েছেন।
তিনি বলেন, আয়োজকরা অন্তত ৫০০ জনকে শান্তিপূর্ণভাবে প্ল্যাকার্ড হাতে বসাতে চেয়েছিলেন।
“আমি দেখেছি কয়েকজনকে পুলিশ টেনে নিয়ে যাচ্ছে, কিন্তু সেখানে সবাইকে গ্রেপ্তার করার মত পর্যাপ্ত পুলিশ ছিল না।”
আয়োজকরা সোশাল মিডিয়ায় বলেছেন, বিক্ষোভে এক হাজারের বেশি মানুষ অংশ নেয়। ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ইভেট কুপারের নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে গণ-প্রতিবাদ হিসেবে তাদের হাতে প্ল্যাকার্ডে লেখা ছিল ‘আমি গণহত্যার বিরোধিতা করি, আমি প্যালেস্টাইন অ্যাকশনকে সমর্থন করি’।
মেট্রোপলিটন পুলিশের ভাষ্য, বিক্ষোভ শুরু হওয়ার সময় প্রায় ৫০০ থেকে ৬০০ জন উপস্থিত ছিলেন।

“তাদের মধ্যে অনেকে ছিল দর্শক, সাংবাদিক বা এমন কেউ- যাদের কাছে প্যালেস্টাইন অ্যাকশন সমর্থনকারী কোনো প্ল্যাকার্ড ছিল না।”
নগর পুলিশের সদরদপ্তর স্কটল্যান্ড ইয়ার্ড বলেছে, “আমরা নিশ্চিত যে, আজ যারা পার্লামেন্ট স্কয়ারে এসে প্যালেস্টাইন অ্যাকশন সমর্থনকারী প্ল্যাকার্ড ধরেছিলেন, তাদের হয় গ্রেপ্তার করা হয়েছে বা গ্রেপ্তারের প্রক্রিয়ায় রয়েছে।”
গ্রেপ্তারদের ওয়েস্টমিনস্টার এলাকায় ‘প্রিজনার প্রসেসিং পয়েন্ট’-এ নেওয়া হয় এবং তাদের মধ্যে যাদের পরিচয় যাচাই করা গেছে, তাদেরকে ভবিষ্যতে প্যালেস্টাইন অ্যাকশন সমর্থিত বিক্ষোভে অংশ না নেওয়ার মুচলেকায় জামিন দেওয়া হয়।
সিএনএন লিখেছে, প্যালেস্টাইন অ্যাকশনকে সমর্থনের জন্য গ্রেপ্তারের সময় পুলিশ ও বিক্ষোভকারীদের মধ্যে ধস্তাধস্তি হয়। যখন ওই এলাকা থেকে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভকারীদের পুলিশ সরিয়ে দিচ্ছিল, তখন মানুষ ‘তোমাদের লজ্জা হওয়া উচিত’ বলে চিৎকার করছিল।

ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ইভেট কুপার ‘অপরাধের সীমা অতিক্রমকারী এ স্বল্প সংখ্যক লোকজনকে সামাল দেওয়ার জন্য’ পুলিশকে ধন্যবাদ জানান।
যুক্তরাজ্যের প্রেস অ্যাসোসিয়েশনকে তিনি বলেন, “বিক্ষোভ করার অধিকার আমরা দৃঢ়ভাবেই রক্ষা করি, কিন্তু এটি আলাদা প্রেক্ষাপট; একটি নির্দিষ্ট, নিষিদ্ধ সংগঠনের প্রতি সমর্থনের বিষয়।”
এ গ্রেপ্তারের নিন্দা জানিয়ে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ইউকে এক্স পোস্টে বলেছে, “এ ঘটনায় মতপ্রকাশ ও শান্তিপূর্ণ জমায়েতের অধিকার রক্ষার প্রশ্নে যুক্তরাজ্য আন্তর্জাতিক বাধ্যবাধকতা লঙ্ঘন করেছে।”
সিএনএন লিখেছে, প্যালেস্টাইন অ্যাকশনের সহ-প্রতিষ্ঠাতা হুদা আম্মোরি নিষেধাজ্ঞা চ্যালেঞ্জ করার অনুমোদন পেয়েছেন, লন্ডন হাই কোর্টের এক বিচারক বিচারিক পর্যালোচনার অনুমতি দেন।
আন্তর্জাতিক ডেস্ক : বিডিপলিটিক্স টোয়েন্টিফোর ডটকম