রোগ প্রথম শনাক্ত হয়েছে এক শিশুর মধ্যে, যার ‘এলওয়াইএল’ জিনে সমস্যা ছিল। পরে আরও দুই শিশুর মধ্যে একই জিনে আলাদা ধরনের সমস্যা পাওয়া গিয়েছে।
নতুন ধরনের জেনেটিক রোগ শনাক্ত করলেন বিজ্ঞানীরা

- আপডেট সময় ১২:১৭:৩০ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১১ অগাস্ট ২০২৫
- / ৪৬ বার পড়া হয়েছে
মানবদেহের জেনেটিক বা বংশগতির কারণে হয় এমন নতুন ধরনের রোগ শনাক্ত করেছেন বিজ্ঞানীরা।
‘লিন কাইনেজ-অ্যাসোসিয়েটেড ভাস্কুলোপ্যাথি অ্যান্ড লিভার ফাইব্রোসিস’ বা ল্যাভলি নামের নতুন এক জেনেটিক রোগ শনাক্তের বিষয়টি চিকিৎসা বিজ্ঞানে গুরুত্বপূর্ণ এক আবিষ্কার বলে দাবি তাদের।
নতুন রোগটি মানবদেহের ‘এলওয়াইএন’ জিনের পরিবর্তনের সঙ্গে জড়িত, যা দেহের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা বা ইমিউন সিস্টেমকে কীভাবে কাজ করতে হবে তা নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে বলে প্রতিবেদনে লিখেছে বিজ্ঞানভিত্তিক সাইট নোরিজ।
অটোইমিউন রোগের ক্ষেত্রে সাধারণত কোনো উদ্দীপকের প্রয়োজন হয়। কিন্তু অটোইনফ্লেমেটরি রোগে রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থা নিজে থেকেই অতিমোত্রায় সক্রিয় হয়ে শরীরকে আক্রমণ করতে শুরু করে। এতে ত্বক, জয়েন্ট ও অঙ্গপ্রত্যঙ্গসহ শরীরের নানা অংশে প্রদাহ দেখা দিতে পারে। এই ধরনের কিছু পরিচিত রোগের মধ্যে রয়েছে লুপাস, রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস ও ক্রনের রোগ।
ল্যাভলি রোগ প্রথম শনাক্ত হয়েছে এক শিশুর মধ্যে, যার ‘এলওয়াইএল’ জিনে সমস্যা ছিল। পরে আরও দুই শিশুর মধ্যে একই জিনে আলাদা ধরনের সমস্যা পাওয়া যায়। এ তিন শিশুরই ছোটবেলা থেকে যকৃত ও রক্তনালীর সমস্যা রয়েছে।
এসব শিশুর দেহে এমন গুরুতর লক্ষণ দেখা গেছে, যেখানে সাদা রক্তকণিকার অংশ বা ‘নিউট্রোফিল’ ত্বকের ক্ষুদ্র রক্তনালীগুলোকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। এই অবস্থাকে বলা হয় ‘নিউট্রোফিলিক কিউটেনিয়াস স্মল ভেসেল ভাস্কুলাইটিস’।
এ ছাড়া ওই দুই শিশুর জীবনের প্রথম বছরের মধ্যেই যকৃতের টিস্যুতে দাগ বা স্কার টিস্যু জমে যকৃতের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হয়েছিল। চিকিৎসা পরিভাষায় এই অবস্থা ‘লিভার ফাইব্রোসিস’ নামে পরিচিত।
গবেষকদের মতে, এসব শিশুর ‘এলওয়াইএল’ জিন থেকে উৎপন্ন ‘লিন কাইনেজ’ নামের প্রোটিন অস্বাভাবিকভাবে অতিমোত্রায় সক্রিয় ছিল এবং সময়মতো বন্ধ হচ্ছিল না। এর ফলে রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থার অতিরিক্ত কোষ দেহে ছড়িয়ে পড়ে, প্রদাহের সংকেত আরও তীব্র করে এবং যকৃতের বিভিন্ন কোষ অতিরিক্ত সক্রিয় হয়ে স্কার বা দাগের টিস্যু তৈরি করতে থাকে।
কিছু রোগ কীভাবে শুরু হয় তা বোঝার জন্য এই নতুন রোগের আবিষ্কারটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। শুধু ল্যাভলি নয়, ভাসকুলাইটিস বা রক্তনালীর প্রদাহ এবং লিভার ফাইব্রোসিসের মতো অন্যান্য রোগের চিকিৎসার পথও এই আবিষ্কার থেকে পাওয়া যেতে পারে।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, ভবিষ্যতে এমন ওষুধ তৈরি করা যাবে যা সরাসরি ‘এলওয়াইএন’ জিনকে টার্গেট করে কাজ করবে ও এ ধরনের রোগ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করবে।
গবেষণায় ইঙ্গিত মিলেছে, বিরল রোগ নির্ণয়ে জেনেটিক টেস্টিং কতটা উপকারী হতে পারে। এ নতুন রোগটি আবিষ্কারের ফলে ভবিষ্যতে একই ধরনের স্বাস্থ্য সমস্যায় ভোগা মানুষদের জন্য নতুন চিকিৎসার উপায়ও বের করা যেতে পারে।
এ ধরনের আবিষ্কার চিকিৎসক ও বিজ্ঞানীদের রোগের বিরুদ্ধে লড়ার জন্য আরও ভালো উপায় বা টুল দেবে। একইসঙ্গে, যারা বিরল ও কঠিন রোগে আক্রান্ত তাদের ও তাদের পরিবারের জন্য আশার আলো নিয়ে আসবে।
গবেষকরা বলেছেন, গবেষণা যত এগোবে ততই আমরা জেনেটিক বা বংশগত সমস্যার কারণে হওয়া রোগের জন্য আরও কার্যকর ও টার্গেটনির্ভর চিকিৎসা পদ্ধতি পেতে পারি।
গবেষণাটি পরিচালনা করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের ‘ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ অ্যালার্জি অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেস’-এর ড. অ্যাড্রিয়ানা এ. ডি জেসুস ও তার গবেষণা দলটি।
গবেষণার ফলাফল প্রকাশ পেয়েছে বিজ্ঞানভিত্তিক জার্নাল ‘নেচার কমিউনিকেশনস’-এ।
প্রযুক্তি ডেস্ক : বিডিপলিটিক্স টোয়েন্টিফোর ডটকম