০১:২১ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২১ অগাস্ট ২০২৫
ট্রাম্পের হাতে শুল্ক যেন এক জাদুর কাঠি— যার ছোঁয়ায় বদলে যাচ্ছে মার্কিন কূটনৈতিক সম্পর্কের রসায়ন। এক ছাতার নিচে ঐক্যবদ্ধ হচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি ক্ষুব্ধ দেশগুলো এবং এভাবেই হয়তো তৈরি হতে যাচ্ছে পরাশক্তির নতুন বলয়।

ট্রাম্পের শুল্ক যুদ্ধ কি নতুন পরাশক্তির বীজবপন?

অলোক আচার্য : শিক্ষক , কলামিস্ট
  • আপডেট সময় ০২:৪৯:২০ অপরাহ্ন, সোমবার, ১১ অগাস্ট ২০২৫
  • / ৪৬ বার পড়া হয়েছে

শুল্কের চাল আর কূটনীতির খেলা—ট্রাম্প কি জেনে শুনে নিজের বিরুদ্ধে পরাশক্তির নতুন বলয় গড়ে তুলছেন? ছবি: এআই

 

মার্কিন শুল্ক নীতি এখন যেন এক বিশাল শুল্কের দাবার বোর্ড—যেখানে ডনাল্ড ট্রাম্প একের পর এক অপ্রত্যাশিত চাল দিয়ে নরেন্দ্র মোদীর আরও ভালো বন্ধুদের কিস্তিমাত করছেন। বিশ্ব বাণিজ্য আর কূটনীতির ঘুঁটি এমনভাবে সরানো হচ্ছে যে পুরোনো মিত্রও রাতারাতি প্রতিদ্বন্দ্বীতে পরিণত হচ্ছে। সবাই বুঝে গেছে—আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে স্থায়ী শত্রু যেমন নেই, স্থায়ী বন্ধু তেমনই বিলাসিতা।

এই শুল্কযুদ্ধ থেকে ট্রাম্প কারও জন্যই ছাড় রাখেননি। আলোচনার টেবিলে সবাইকে বসিয়ে এমন শর্ত দিচ্ছেন, যেন হোয়াইট হাউস আসলে কোনো বহুজাতিক ব্যাংকের ঋণ শাখা। যারা আপস করতে রাজি নয়, তাদের জন্য আছে বোনাস শুল্ক প্যাকেজ। ফলাফল—বাণিজ্যে অনিশ্চয়তা আর বাজারে মৃদু কূটনৈতিক কাশির ধমক।

সবচেয়ে বড় চমক হজম করতে হয়েছে ভারতকে। দীর্ঘদিনের ‘প্রশ্নাতীত’ মিত্র, এশিয়ায় মার্কিন স্বার্থের পাহারাদার, এমনকি ট্রাম্প–মোদী বন্ধুত্বের পোস্টারবয় দেশটির ওপর হঠাৎই বসে গেল ৫০ শতাংশ শুল্কের ভার। বিশ্লেষকরা চমকে উঠেছেন, আর নয়া দিল্লি বুঝে গেছে—আন্তর্জাতিক বাজারে আবেগের কোনো দাম নেই, সবটাই স্বার্থের অঙ্ক। শর্তের এই খেলা চালায় তারা যাদের হাতে শুল্কের ঘুঁটি থাকে, তারা কখনও দাবা খেলার নিয়ম মেনে চলে না—ইচ্ছে হলেই ছক বদলে দেয়।

খবর অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্র চাইছিল ভারত কৃষি ও দুগ্ধপণ্যে শুল্ক কমাক, যাতে মার্কিন পণ্য ঢুকে পড়ে ভারতীয় বাজারে। কিন্তু ভারত দৃঢ়ভাবে ‘না’ বলেছে। মোদী স্পষ্ট করে দিয়েছেন—“আমরা মিত্র হতে পারি, কিন্তু গরুর দুধে শুল্ক ছাড় দেব না।”

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ঘোষণা দিলেন—তিনি ভারতীয় কৃষক, পশুপালক, মৎস্যজীবীদের স্বার্থের এক চুলও ক্ষতি হতে দেবেন না। মোদীর এই দৃঢ় উচ্চারণ যেন টেবিলে থাপ্পড় মারার মতো শক্তিশালী বার্তা। কিন্তু সমস্যা হলো, টেবিলের অন্য প্রান্তে যে ডনাল্ড ট্রাম্প এবং সহজাত কারণেই এতে চরম ক্ষুব্ধ হয়েছেন তিনি।

যেখানে কড়া শুল্কের পর বেশিরভাগ দেশই দ্রুত যুক্তরাষ্ট্রের দরজায় গিয়ে দেনদরবার শুরু করেছে, নানান চুক্তির ফাইল সাজিয়েছে, সেখানে ভারত দাঁড়িয়ে আছে একেবারে জায়গামতো—না এগোচ্ছে, না পিছু হটছে। এর ফলে দুই ‘বন্ধু’ রাষ্ট্রের এই বাণিজ্য-নাটক উভয় দেশের জন্যই সমান ক্ষতিকর হয়ে উঠছে। ভারত ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্র থেকে অস্ত্র কেনার পরিকল্পনা স্থগিত করেছে।

অর্থনীতির ক্যালকুলেটরও এর ফলাফল দেখাচ্ছে ভয়ঙ্কর সংখ্যা। যুক্তরাষ্ট্র ভারতের পোশাক ও বস্ত্রশিল্পের সবচেয়ে বড় বাজার; গত অর্থবছরে সেখানে ভারতের পোশাক রপ্তানি হয়েছিল ৪.৬৯ বিলিয়ন ডলারের। কিন্তু শুল্ক বাড়ায় এই অর্ডারের বড় অংশ গা বাঁচিয়ে চলে আসতে পারে বাংলাদেশে। যেতে পারে ভিয়েতনামের দিকেও। অর্থাৎ ভারত কেবল কূটনীতিতে নয়, অর্থনীতিতেও ধাক্কা খেতে যাচ্ছে। এখান থেকে দ্রুত ঘুরে দাঁড়ানো ভারতের জন্য সহজ হবে না—যেমন হঠাৎ করে বলিউডের সিনেমা থেকে নায়ক-নায়িকার নাচ-গান বাদ দিয়ে শুধুই গল্প বলা শুরু করলে যেমন হবে।

তবু বাস্তবতা হলো—মিত্র হিসেবে ভারত যুক্তরাষ্ট্রের জন্য এখনো দরকারি। পাকিস্তানের সঙ্গে ওয়াশিংটনের হাল-আমলের সম্পর্ক অবশ্য ভালোবাসা দিবসের ফুলের মতো—দেখতে সুন্দর, কিন্তু বেশিদিন টেকসই নয়। কৌশলগত কারণে ও খনিজ ইস্যুতে পাকিস্তান এখনো তুলনামূলক কম শুল্কের সুবিধা ভোগ করছে, কিন্তু দেশটি বরাবরই চীনের সঙ্গে উষ্ণ সম্পর্কের চাদর মুড়ি দিয়ে অভ্যস্ত—এবং সেটা ছাড়তে চাইছে না। রাশিয়ার সঙ্গেও তাদের বন্ধুত্ব রয়েছে।

তবে যুক্তরাষ্ট্রের খাতায় এই বন্ধুত্ব কতদিন টিকবে, সেটাই প্রশ্ন। রাশিয়া থেকে তেল কেনা যেমন ভারতের জন্য ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে, তেমনই একদিন চীন থেকে সামরিক সরঞ্জাম কেনা পাকিস্তানের জন্য ইস্যু হয়ে যেতে পারে। আর তখন যে পাকিস্তানকে চাপ দেওয়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্র একই রকম নাটক মঞ্চায়ন করবে না—এমনটা ভাবা রাজনৈতিক সরলতা ছাড়া আর কিছু নয়।

স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট ইস্যুগুলোতে ঐকমত্য হলেই কেবল শুল্ক কমানোর সুযোগ মিলছে। কিছু বিষয় প্রকাশ্যে আসছে, বাকিটা রয়ে যাচ্ছে পর্দার আড়ালে। যেহেতু বর্তমানে পৃথিবীর একচ্ছত্র ক্ষমতা যুক্তরাষ্ট্রের হাতে, তাই তাদের খুশি রাখাটাই যেন বৈশ্বিক কূটনীতির প্রধান দায়িত্বে পরিণত হয়েছে।

রাশিয়া থেকে জ্বালানি তেল কেনা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অসন্তোষ নতুন কিছু নয়। তারা অনেকদিন ধরেই চোখ রাঙানি দিয়ে আসছিল, যুক্তি দিচ্ছিল—এর ফলে রাশিয়া ইউক্রেইন যুদ্ধে আরও সহযোগিতা পাচ্ছে। ভারতের ব্যাখ্যা সরল—যেখানে দাম কম, সেখান থেকেই কেনা হবে। ব্যক্তিগত জীবনের মতোই রাষ্ট্রের নীতিতেও দাম বড় বিষয়।

ডনাল্ড ট্রাম্পের বাণিজ্যিক সিদ্ধান্তগুলো—অতীত, বর্তমান কিংবা সম্ভাব্য ভবিষ্যৎ—সবই যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক স্বার্থকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে নেওয়া। দেশগুলোকে চাপে রাখাই তার প্রধান কৌশল। ট্রাম্প জানেন, অর্থনীতিতে আঘাত করলেই রাষ্ট্রগুলো নরম হয়ে আসে এবং শেষ পর্যন্ত শর্ত মেনে নিতে বাধ্য হয়। বাস্তবতার নির্মম সূত্রও তাই—মানুষ যেমন খাদ্যের জন্য অন্যের দরজায় কড়া নাড়ে, রাষ্ট্রও অর্থনৈতিক চাপের মুখে অন্য রাষ্ট্রের মুখাপেক্ষী হয়।

যেসব দেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যিক ঘাটতি রয়েছে, সেই ঘাটতি পূরণে ট্রাম্প দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। এখানে মিত্রতা কোনো প্রাধান্য পায় না—ব্রাজিল, কানাডার মতো ঘনিষ্ঠ দেশও কোনো ছাড় পায়নি। ভারতের ক্ষেত্রে ক্ষোভের আরেকটি উৎস হলো ব্রিকস জোট। এই জোট ধীরে ধীরে বৈশ্বিক বাণিজ্যে প্রভাব বিস্তার করছে—ডলার পাশ কাটিয়ে নিজেদের মুদ্রায় বাণিজ্য করা, ডলারের বিকল্প মুদ্রা দাঁড় করানোর উদ্যোগ এবং বিশ্বব্যাপী একটি বিশাল বাজারের নিয়ন্ত্রণের সম্ভাবনা যুক্তরাষ্ট্রকে উদ্বিগ্ন করে তুলেছে।

বিশেষ করে, এই জোটে রাশিয়া ও চীনের অন্তর্ভুক্তি ট্রাম্পকে আরও চিন্তিত করছে। ভারতের পক্ষে এখান থেকে সরে আসার কোনো কারণ বা সম্ভাবনা নেই, বরং সামনের দিনে এই জোট আরও শক্তিশালী হবে—এমনই ইঙ্গিত মিলছে। বিশ্লেষকদের মতে, এ পরিস্থিতি ভারতকে চীনের কাছাকাছি যেতে এবং রাশিয়াকে বিকল্প হিসেবে বেছে নিতে উৎসাহিত করছে। বহু দশক ধরে রাশিয়ার সঙ্গে ভারতের মিত্রতা গভীর এবং বর্তমান প্রেক্ষাপটে সেই সম্পর্ক নতুন মাত্রা পাচ্ছে।

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় সোভিয়েত ইউনিয়নের ইতিবাচক ভূমিকা ভারতের সঙ্গে এখনও রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ককে এতটাই উষ্ণ রেখেছে যে, আজও সেই বন্ধুত্বের ক্রেডিট কার্ড খরচ হয়ে যায়নি। চীনের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক যদিও গরম-ঠান্ডা রোলারকোস্টারের মতো, তবে রাশিয়ার উপস্থিতি এই সম্পর্ককে পুরোপুরি বরফ হয়ে যেতে দেয়নি। মাঝে মাঝেই দুই দেশ থেকে শোনা যায় ‘আমরা একসঙ্গে আছি’—যদিও অনেক সময় সেই সুরটা শোনায় বেশি রাজনৈতিক, কম আবেগের।

এতদিন হয়তো তেমন প্রয়োজন ছিল না, কিন্তু এখন মার্কিন বিকল্প বাজারের সন্ধানে ভারত হয়তো বাধ্য হচ্ছে রাশিয়া ও চীনের দিকে আরও খোলা চোখে তাকাতে। এতে যুক্তরাষ্ট্রের একটু হলেও দুশ্চিন্তার কারণ আছে—কারণ দক্ষিণ এশিয়ায় একটি শক্তিশালী মিত্রকে দূরে সরিয়ে দেওয়ার ঝুঁকি নেওয়া তাদের পক্ষে খুব কৌশলগত হয় না। তাছাড়া, ভারত বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম অর্থনীতি। এটাকে ধসিয়ে দেওয়ার স্বপ্ন দেখা ট্রাম্প হয়তো দেখতে পারেন, কিন্তু বাস্তবে সেই শো চালানো সহজ হবে না। ক্ষতি অবশ্য হবেই—কিন্তু একেবারে ধ্বংস? সে আশায় থাকাই বোধ হয় ট্রাম্পের ‘আমেরিকান ড্রিম’-এর অংশ।

এই প্রেক্ষাপটেই শুরু হয়েছে এক সফর কূটনীতির ব্যস্ত মৌসুম। মস্কোয় ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল ইতিমধ্যেই রাশিয়ার জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা সের্গেই শোইগুর সঙ্গে আলাপ সেরে ঘোষণা করেছেন—পুতিনের ভারত সফর পাক্কা। এই বৈঠকের তাৎপর্য নিয়ে আন্তর্জাতিক কূটনীতির বাজার এখন গরম।

অন্যদিকে, আগামী ৩১ অগাস্ট চীনের তিয়ানজিন শহরে অনুষ্ঠেয় সাংহাই সহযোগিতা সংস্থার (এসসিও) সম্মেলনে যাচ্ছেন নরেন্দ্র মোদী। চীনের সঙ্গে সম্পর্ক পুনর্মূল্যায়ন এবং যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভারসাম্য রক্ষার কৌশল—দুই দিকেই এই সফরকে গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হিসেবে দেখা হচ্ছে। যদিও ২০২০ সালে গালওয়ান উপত্যকায় ভারত-চীনের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের পর পরিস্থিতি এমন ছিল যে দুই দেশের নেতারা একে অপরকে ফোনে শুভেচ্ছা জানালেও সঙ্গে ‘ফ্রিজ ইমোজি’ পাঠাতেন। এবার দেখা যাক, মোদীর সফর সেই বরফ কতটা গলাতে পারে।

সব মিলিয়ে, ডনাল্ড ট্রাম্পের শুল্ক যুদ্ধ এখন এমন এক ম্যাজিক শো, যেখানে এক পাক্ষিক সিদ্ধান্তে যে কোনো বৈশ্বিক হিসাব মুহূর্তে বদলে যেতে পারে। ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলো ক্রমশ এক ছাতার নিচে এসে হয়তো ভাবছে—‘যেহেতু সবাই মার খাচ্ছি, চল একসঙ্গে দাঁড়াই।’ আগের মেয়াদে এই যুদ্ধ ছিল একরকম চীন বনাম যুক্তরাষ্ট্র ম্যাচ; এবার সেটি বিশ্বকাপ ফরম্যাটে ছড়িয়ে পড়েছে।

ট্রাম্পের আপাত উদ্দেশ্য বাণিজ্য ঘাটতি কমানো হলেও মূল পরিকল্পনাটা অনেকটা পুরোনো ঔপনিবেশিক খাতার মতো—মিত্রদের এমনভাবে বেঁধে রাখা যাতে তারা মার্কিন কক্ষপথ থেকে খুব বেশি সরে যেতে না পারে। উপনিবেশবাদ যদিও পাঠ্যবই থেকে বিদায় নিয়েছে, কিন্তু তার মনোভাব এখনো কূটনৈতিক স্যুটকেসে সুন্দর করে ভাঁজ করে রাখা।

তবু, আন্তর্জাতিক রাজনীতি এমন এক মঞ্চ যেখানে দৃশ্যপট বদলাতে সময় লাগে না। আজকের তিক্ত সম্পর্ক কালই মিষ্টি হতে পারে—বিশেষত যখন দুই পক্ষের পকেটে বিনিয়োগ, অভিবাসী জনসংখ্যা আর সাংস্কৃতিক বন্ধন রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত বিপুল ভারতীয় বংশোদ্ভূত, শিক্ষার্থী ও বিনিয়োগের উপস্থিতি ট্রাম্পকেও মনে করিয়ে দেবে—ভারতকে দূরে ঠেলে রাখা মানে দক্ষিণ এশিয়ায় প্রভাব বিস্তারের সেরা বিকল্পটিকে হাতছাড়া করা। সামিগ্রকভাবে দক্ষিণ এশিয়ায় প্রভাব ধরে রাখার জন্য ভারতই সবচেয়ে ভালো বিকল্প যুক্তরাষ্ট্রের হাতে, পাকিস্তান নয়।

ট্রাম্পের শুল্ক নীতি কেবল বাণিজ্যের হিসাব-নিকাশ নয়, এটি একটি জটিল কূটনৈতিক খেলা যা বিশ্ব রাজনীতির মানচিত্র বদলে দিতে যাচ্ছে বলে বিশ্লেষকদের ধারণা। মিত্র-প্রতিদ্বন্দ্বীর সীমানা ঘুচে গিয়ে নতুন শক্তি সমীকরণ তৈরি হচ্ছে। শেষ পর্যন্ত, শুল্কের এই যুদ্ধ হয়ে যেতে পারে পরাশক্তির নতুন বলয়ের বীজবপন।

 

 

 

 

অলোক আচার্য -শিক্ষক , কলামিস্ট

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্রাম্পের হাতে শুল্ক যেন এক জাদুর কাঠি— যার ছোঁয়ায় বদলে যাচ্ছে মার্কিন কূটনৈতিক সম্পর্কের রসায়ন। এক ছাতার নিচে ঐক্যবদ্ধ হচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি ক্ষুব্ধ দেশগুলো এবং এভাবেই হয়তো তৈরি হতে যাচ্ছে পরাশক্তির নতুন বলয়।

ট্রাম্পের শুল্ক যুদ্ধ কি নতুন পরাশক্তির বীজবপন?

আপডেট সময় ০২:৪৯:২০ অপরাহ্ন, সোমবার, ১১ অগাস্ট ২০২৫

 

মার্কিন শুল্ক নীতি এখন যেন এক বিশাল শুল্কের দাবার বোর্ড—যেখানে ডনাল্ড ট্রাম্প একের পর এক অপ্রত্যাশিত চাল দিয়ে নরেন্দ্র মোদীর আরও ভালো বন্ধুদের কিস্তিমাত করছেন। বিশ্ব বাণিজ্য আর কূটনীতির ঘুঁটি এমনভাবে সরানো হচ্ছে যে পুরোনো মিত্রও রাতারাতি প্রতিদ্বন্দ্বীতে পরিণত হচ্ছে। সবাই বুঝে গেছে—আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে স্থায়ী শত্রু যেমন নেই, স্থায়ী বন্ধু তেমনই বিলাসিতা।

এই শুল্কযুদ্ধ থেকে ট্রাম্প কারও জন্যই ছাড় রাখেননি। আলোচনার টেবিলে সবাইকে বসিয়ে এমন শর্ত দিচ্ছেন, যেন হোয়াইট হাউস আসলে কোনো বহুজাতিক ব্যাংকের ঋণ শাখা। যারা আপস করতে রাজি নয়, তাদের জন্য আছে বোনাস শুল্ক প্যাকেজ। ফলাফল—বাণিজ্যে অনিশ্চয়তা আর বাজারে মৃদু কূটনৈতিক কাশির ধমক।

সবচেয়ে বড় চমক হজম করতে হয়েছে ভারতকে। দীর্ঘদিনের ‘প্রশ্নাতীত’ মিত্র, এশিয়ায় মার্কিন স্বার্থের পাহারাদার, এমনকি ট্রাম্প–মোদী বন্ধুত্বের পোস্টারবয় দেশটির ওপর হঠাৎই বসে গেল ৫০ শতাংশ শুল্কের ভার। বিশ্লেষকরা চমকে উঠেছেন, আর নয়া দিল্লি বুঝে গেছে—আন্তর্জাতিক বাজারে আবেগের কোনো দাম নেই, সবটাই স্বার্থের অঙ্ক। শর্তের এই খেলা চালায় তারা যাদের হাতে শুল্কের ঘুঁটি থাকে, তারা কখনও দাবা খেলার নিয়ম মেনে চলে না—ইচ্ছে হলেই ছক বদলে দেয়।

খবর অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্র চাইছিল ভারত কৃষি ও দুগ্ধপণ্যে শুল্ক কমাক, যাতে মার্কিন পণ্য ঢুকে পড়ে ভারতীয় বাজারে। কিন্তু ভারত দৃঢ়ভাবে ‘না’ বলেছে। মোদী স্পষ্ট করে দিয়েছেন—“আমরা মিত্র হতে পারি, কিন্তু গরুর দুধে শুল্ক ছাড় দেব না।”

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ঘোষণা দিলেন—তিনি ভারতীয় কৃষক, পশুপালক, মৎস্যজীবীদের স্বার্থের এক চুলও ক্ষতি হতে দেবেন না। মোদীর এই দৃঢ় উচ্চারণ যেন টেবিলে থাপ্পড় মারার মতো শক্তিশালী বার্তা। কিন্তু সমস্যা হলো, টেবিলের অন্য প্রান্তে যে ডনাল্ড ট্রাম্প এবং সহজাত কারণেই এতে চরম ক্ষুব্ধ হয়েছেন তিনি।

যেখানে কড়া শুল্কের পর বেশিরভাগ দেশই দ্রুত যুক্তরাষ্ট্রের দরজায় গিয়ে দেনদরবার শুরু করেছে, নানান চুক্তির ফাইল সাজিয়েছে, সেখানে ভারত দাঁড়িয়ে আছে একেবারে জায়গামতো—না এগোচ্ছে, না পিছু হটছে। এর ফলে দুই ‘বন্ধু’ রাষ্ট্রের এই বাণিজ্য-নাটক উভয় দেশের জন্যই সমান ক্ষতিকর হয়ে উঠছে। ভারত ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্র থেকে অস্ত্র কেনার পরিকল্পনা স্থগিত করেছে।

অর্থনীতির ক্যালকুলেটরও এর ফলাফল দেখাচ্ছে ভয়ঙ্কর সংখ্যা। যুক্তরাষ্ট্র ভারতের পোশাক ও বস্ত্রশিল্পের সবচেয়ে বড় বাজার; গত অর্থবছরে সেখানে ভারতের পোশাক রপ্তানি হয়েছিল ৪.৬৯ বিলিয়ন ডলারের। কিন্তু শুল্ক বাড়ায় এই অর্ডারের বড় অংশ গা বাঁচিয়ে চলে আসতে পারে বাংলাদেশে। যেতে পারে ভিয়েতনামের দিকেও। অর্থাৎ ভারত কেবল কূটনীতিতে নয়, অর্থনীতিতেও ধাক্কা খেতে যাচ্ছে। এখান থেকে দ্রুত ঘুরে দাঁড়ানো ভারতের জন্য সহজ হবে না—যেমন হঠাৎ করে বলিউডের সিনেমা থেকে নায়ক-নায়িকার নাচ-গান বাদ দিয়ে শুধুই গল্প বলা শুরু করলে যেমন হবে।

তবু বাস্তবতা হলো—মিত্র হিসেবে ভারত যুক্তরাষ্ট্রের জন্য এখনো দরকারি। পাকিস্তানের সঙ্গে ওয়াশিংটনের হাল-আমলের সম্পর্ক অবশ্য ভালোবাসা দিবসের ফুলের মতো—দেখতে সুন্দর, কিন্তু বেশিদিন টেকসই নয়। কৌশলগত কারণে ও খনিজ ইস্যুতে পাকিস্তান এখনো তুলনামূলক কম শুল্কের সুবিধা ভোগ করছে, কিন্তু দেশটি বরাবরই চীনের সঙ্গে উষ্ণ সম্পর্কের চাদর মুড়ি দিয়ে অভ্যস্ত—এবং সেটা ছাড়তে চাইছে না। রাশিয়ার সঙ্গেও তাদের বন্ধুত্ব রয়েছে।

তবে যুক্তরাষ্ট্রের খাতায় এই বন্ধুত্ব কতদিন টিকবে, সেটাই প্রশ্ন। রাশিয়া থেকে তেল কেনা যেমন ভারতের জন্য ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে, তেমনই একদিন চীন থেকে সামরিক সরঞ্জাম কেনা পাকিস্তানের জন্য ইস্যু হয়ে যেতে পারে। আর তখন যে পাকিস্তানকে চাপ দেওয়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্র একই রকম নাটক মঞ্চায়ন করবে না—এমনটা ভাবা রাজনৈতিক সরলতা ছাড়া আর কিছু নয়।

স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট ইস্যুগুলোতে ঐকমত্য হলেই কেবল শুল্ক কমানোর সুযোগ মিলছে। কিছু বিষয় প্রকাশ্যে আসছে, বাকিটা রয়ে যাচ্ছে পর্দার আড়ালে। যেহেতু বর্তমানে পৃথিবীর একচ্ছত্র ক্ষমতা যুক্তরাষ্ট্রের হাতে, তাই তাদের খুশি রাখাটাই যেন বৈশ্বিক কূটনীতির প্রধান দায়িত্বে পরিণত হয়েছে।

রাশিয়া থেকে জ্বালানি তেল কেনা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অসন্তোষ নতুন কিছু নয়। তারা অনেকদিন ধরেই চোখ রাঙানি দিয়ে আসছিল, যুক্তি দিচ্ছিল—এর ফলে রাশিয়া ইউক্রেইন যুদ্ধে আরও সহযোগিতা পাচ্ছে। ভারতের ব্যাখ্যা সরল—যেখানে দাম কম, সেখান থেকেই কেনা হবে। ব্যক্তিগত জীবনের মতোই রাষ্ট্রের নীতিতেও দাম বড় বিষয়।

ডনাল্ড ট্রাম্পের বাণিজ্যিক সিদ্ধান্তগুলো—অতীত, বর্তমান কিংবা সম্ভাব্য ভবিষ্যৎ—সবই যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক স্বার্থকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে নেওয়া। দেশগুলোকে চাপে রাখাই তার প্রধান কৌশল। ট্রাম্প জানেন, অর্থনীতিতে আঘাত করলেই রাষ্ট্রগুলো নরম হয়ে আসে এবং শেষ পর্যন্ত শর্ত মেনে নিতে বাধ্য হয়। বাস্তবতার নির্মম সূত্রও তাই—মানুষ যেমন খাদ্যের জন্য অন্যের দরজায় কড়া নাড়ে, রাষ্ট্রও অর্থনৈতিক চাপের মুখে অন্য রাষ্ট্রের মুখাপেক্ষী হয়।

যেসব দেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যিক ঘাটতি রয়েছে, সেই ঘাটতি পূরণে ট্রাম্প দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। এখানে মিত্রতা কোনো প্রাধান্য পায় না—ব্রাজিল, কানাডার মতো ঘনিষ্ঠ দেশও কোনো ছাড় পায়নি। ভারতের ক্ষেত্রে ক্ষোভের আরেকটি উৎস হলো ব্রিকস জোট। এই জোট ধীরে ধীরে বৈশ্বিক বাণিজ্যে প্রভাব বিস্তার করছে—ডলার পাশ কাটিয়ে নিজেদের মুদ্রায় বাণিজ্য করা, ডলারের বিকল্প মুদ্রা দাঁড় করানোর উদ্যোগ এবং বিশ্বব্যাপী একটি বিশাল বাজারের নিয়ন্ত্রণের সম্ভাবনা যুক্তরাষ্ট্রকে উদ্বিগ্ন করে তুলেছে।

বিশেষ করে, এই জোটে রাশিয়া ও চীনের অন্তর্ভুক্তি ট্রাম্পকে আরও চিন্তিত করছে। ভারতের পক্ষে এখান থেকে সরে আসার কোনো কারণ বা সম্ভাবনা নেই, বরং সামনের দিনে এই জোট আরও শক্তিশালী হবে—এমনই ইঙ্গিত মিলছে। বিশ্লেষকদের মতে, এ পরিস্থিতি ভারতকে চীনের কাছাকাছি যেতে এবং রাশিয়াকে বিকল্প হিসেবে বেছে নিতে উৎসাহিত করছে। বহু দশক ধরে রাশিয়ার সঙ্গে ভারতের মিত্রতা গভীর এবং বর্তমান প্রেক্ষাপটে সেই সম্পর্ক নতুন মাত্রা পাচ্ছে।

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় সোভিয়েত ইউনিয়নের ইতিবাচক ভূমিকা ভারতের সঙ্গে এখনও রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ককে এতটাই উষ্ণ রেখেছে যে, আজও সেই বন্ধুত্বের ক্রেডিট কার্ড খরচ হয়ে যায়নি। চীনের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক যদিও গরম-ঠান্ডা রোলারকোস্টারের মতো, তবে রাশিয়ার উপস্থিতি এই সম্পর্ককে পুরোপুরি বরফ হয়ে যেতে দেয়নি। মাঝে মাঝেই দুই দেশ থেকে শোনা যায় ‘আমরা একসঙ্গে আছি’—যদিও অনেক সময় সেই সুরটা শোনায় বেশি রাজনৈতিক, কম আবেগের।

এতদিন হয়তো তেমন প্রয়োজন ছিল না, কিন্তু এখন মার্কিন বিকল্প বাজারের সন্ধানে ভারত হয়তো বাধ্য হচ্ছে রাশিয়া ও চীনের দিকে আরও খোলা চোখে তাকাতে। এতে যুক্তরাষ্ট্রের একটু হলেও দুশ্চিন্তার কারণ আছে—কারণ দক্ষিণ এশিয়ায় একটি শক্তিশালী মিত্রকে দূরে সরিয়ে দেওয়ার ঝুঁকি নেওয়া তাদের পক্ষে খুব কৌশলগত হয় না। তাছাড়া, ভারত বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম অর্থনীতি। এটাকে ধসিয়ে দেওয়ার স্বপ্ন দেখা ট্রাম্প হয়তো দেখতে পারেন, কিন্তু বাস্তবে সেই শো চালানো সহজ হবে না। ক্ষতি অবশ্য হবেই—কিন্তু একেবারে ধ্বংস? সে আশায় থাকাই বোধ হয় ট্রাম্পের ‘আমেরিকান ড্রিম’-এর অংশ।

এই প্রেক্ষাপটেই শুরু হয়েছে এক সফর কূটনীতির ব্যস্ত মৌসুম। মস্কোয় ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল ইতিমধ্যেই রাশিয়ার জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা সের্গেই শোইগুর সঙ্গে আলাপ সেরে ঘোষণা করেছেন—পুতিনের ভারত সফর পাক্কা। এই বৈঠকের তাৎপর্য নিয়ে আন্তর্জাতিক কূটনীতির বাজার এখন গরম।

অন্যদিকে, আগামী ৩১ অগাস্ট চীনের তিয়ানজিন শহরে অনুষ্ঠেয় সাংহাই সহযোগিতা সংস্থার (এসসিও) সম্মেলনে যাচ্ছেন নরেন্দ্র মোদী। চীনের সঙ্গে সম্পর্ক পুনর্মূল্যায়ন এবং যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভারসাম্য রক্ষার কৌশল—দুই দিকেই এই সফরকে গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হিসেবে দেখা হচ্ছে। যদিও ২০২০ সালে গালওয়ান উপত্যকায় ভারত-চীনের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের পর পরিস্থিতি এমন ছিল যে দুই দেশের নেতারা একে অপরকে ফোনে শুভেচ্ছা জানালেও সঙ্গে ‘ফ্রিজ ইমোজি’ পাঠাতেন। এবার দেখা যাক, মোদীর সফর সেই বরফ কতটা গলাতে পারে।

সব মিলিয়ে, ডনাল্ড ট্রাম্পের শুল্ক যুদ্ধ এখন এমন এক ম্যাজিক শো, যেখানে এক পাক্ষিক সিদ্ধান্তে যে কোনো বৈশ্বিক হিসাব মুহূর্তে বদলে যেতে পারে। ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলো ক্রমশ এক ছাতার নিচে এসে হয়তো ভাবছে—‘যেহেতু সবাই মার খাচ্ছি, চল একসঙ্গে দাঁড়াই।’ আগের মেয়াদে এই যুদ্ধ ছিল একরকম চীন বনাম যুক্তরাষ্ট্র ম্যাচ; এবার সেটি বিশ্বকাপ ফরম্যাটে ছড়িয়ে পড়েছে।

ট্রাম্পের আপাত উদ্দেশ্য বাণিজ্য ঘাটতি কমানো হলেও মূল পরিকল্পনাটা অনেকটা পুরোনো ঔপনিবেশিক খাতার মতো—মিত্রদের এমনভাবে বেঁধে রাখা যাতে তারা মার্কিন কক্ষপথ থেকে খুব বেশি সরে যেতে না পারে। উপনিবেশবাদ যদিও পাঠ্যবই থেকে বিদায় নিয়েছে, কিন্তু তার মনোভাব এখনো কূটনৈতিক স্যুটকেসে সুন্দর করে ভাঁজ করে রাখা।

তবু, আন্তর্জাতিক রাজনীতি এমন এক মঞ্চ যেখানে দৃশ্যপট বদলাতে সময় লাগে না। আজকের তিক্ত সম্পর্ক কালই মিষ্টি হতে পারে—বিশেষত যখন দুই পক্ষের পকেটে বিনিয়োগ, অভিবাসী জনসংখ্যা আর সাংস্কৃতিক বন্ধন রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত বিপুল ভারতীয় বংশোদ্ভূত, শিক্ষার্থী ও বিনিয়োগের উপস্থিতি ট্রাম্পকেও মনে করিয়ে দেবে—ভারতকে দূরে ঠেলে রাখা মানে দক্ষিণ এশিয়ায় প্রভাব বিস্তারের সেরা বিকল্পটিকে হাতছাড়া করা। সামিগ্রকভাবে দক্ষিণ এশিয়ায় প্রভাব ধরে রাখার জন্য ভারতই সবচেয়ে ভালো বিকল্প যুক্তরাষ্ট্রের হাতে, পাকিস্তান নয়।

ট্রাম্পের শুল্ক নীতি কেবল বাণিজ্যের হিসাব-নিকাশ নয়, এটি একটি জটিল কূটনৈতিক খেলা যা বিশ্ব রাজনীতির মানচিত্র বদলে দিতে যাচ্ছে বলে বিশ্লেষকদের ধারণা। মিত্র-প্রতিদ্বন্দ্বীর সীমানা ঘুচে গিয়ে নতুন শক্তি সমীকরণ তৈরি হচ্ছে। শেষ পর্যন্ত, শুল্কের এই যুদ্ধ হয়ে যেতে পারে পরাশক্তির নতুন বলয়ের বীজবপন।

 

 

 

 

অলোক আচার্য -শিক্ষক , কলামিস্ট