০২:৫৬ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২১ অগাস্ট ২০২৫
জাতিসংঘ নিষেধাজ্ঞা লঙ্ঘন করে রাশিয়ায় উত্তর কোরীয় শ্রমিক পাঠানো হচ্ছে। দাসের মতো পরিবেশে তাদেরকে সেখানে কাজ করানো হচ্ছে বলে জানিয়েছেন পালিয়ে যাওয়া শ্রমিকরা।

রাশিয়ায় ‘দাসের মতো’ কাজ করানো হচ্ছে উত্তর কোরিয়ার নাগরিকদের

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : বিডিপলিটিক্স টোয়েন্টিফোর ডটকম
  • আপডেট সময় ১১:০৩:৪৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১২ অগাস্ট ২০২৫
  • / ৫৩ বার পড়া হয়েছে

ছবি: বিবিসি।

 

ইউক্রেইনে রাশিয়ার যুদ্ধের কারণে সৃষ্ট তীব্র শ্রম সংকট মোকাবেলায় হাজার হাজার উত্তর কোরীয়কে ‘দাসের মতো’ পরিবেশে কাজ করতে মস্কোয় পাঠানো হচ্ছে বলে বিবিসি জানতে পেরেছে।

যুদ্ধে লড়ার জন্য রাশিয়া বারবারই উত্তর কোরিয়ার দিকে ঝুঁকেছে; তাদের ক্ষেপণাস্ত্র, কামানের গোলা ব্যবহার করেছে এমনকি সেনাও কাজে লাগিয়েছে।

দক্ষিণ কোরিয়ার গোয়েন্দা কর্মকর্তারা বিবিসি-কে বলেছেন, বর্তমান সময়ে রাশিয়ার বহু পুরুষ যুদ্ধক্ষেত্রে নিহত, আহত বা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ায় মস্কো ক্রমেই উত্তর কোরিয়ার শ্রমিকদের ওপর নির্ভরতা বাড়াচ্ছে।

বিবিসি জানিয়েছে, তারা যুদ্ধ শুরুর পর এ পর্যন্ত রাশিয়া থেকে পালিয়ে আসা ছয়জন উত্তর কোরিয়ার শ্রমিকের পাশাপাশি দক্ষিণ কোরিয়ার সরকারি কর্মকর্তা, গবেষক এবং শ্রমিকদের উদ্ধারে সহায়তা করা ব্যক্তিদের সাক্ষাৎকার নিয়েছে।

তারা বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করেছেন যে, কীভাবে এই শ্রমিকরা ভয়ানক কর্মপরিবেশের শিকার হচ্ছে এবং কীভাবে উত্তর কোরিয়া কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদের পালানো বন্ধ করতে তাদের ওপর নিয়ন্ত্রণ কঠোর করছে।

জিন নামের এক শ্রমিক বিবিসি-কে বলেন, রাশিয়ার ফার ইস্টে বিমানবন্দরে অবতরণের পর এক উত্তর কোরীয় নিরাপত্তা এজেন্ট তাকে সেখান থেকে একটি নির্মাণস্থলে নিয়ে যান। ওই এজেন্ট তাকে কারও সঙ্গে কথা না বলা বা কোনও কিছুর দিকে না তাকানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন।

এজেন্ট তাকে বলেছিলেন, “বাইরের পৃথিবী আমাদের শত্রু।” জিনকে ১৮ ঘন্টারও বেশি সময় ধরে বহুতল অ্যাপার্টমেন্ট ব্লক নির্মাণের কাজ করানো হয়েছিল।

বিবিসি যে ছয়জন শ্রমিকের সঙ্গে কথা বলেছে তারা সবাই একই শাস্তিমূলক কর্মদিবসের বর্ণনা দিয়েছেন। তারা বলেন, নির্মাণস্থলে প্রতিদিন ভোর ৬টা থেকে রাত ২টা পর্যন্ত ১৮ ঘণ্টার বেশি কাজ করতে হয়েছে। বছরে মাত্র দু’দিন ছুটি দেওয়া হয়।

আরেক নির্মাণ শ্রমিক তায়ে বলেন, “ঘুম থেকে ওঠা ছিল ভয়াবহ। বুঝতে পারতাম যে, আরেকটি একই দিনের পুনরাবৃত্তি করতে হবে।” এই শ্রমিক গত বছর রাশিয়া থেকে পালাতে পেরেছিলেন।

চ্যান নামের আরেক শ্রমিক বলেন, “কিছু মানুষ দিনের বেলা ঘুমাতে কাজ ছেড়ে যেত, অথবা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়েই ঘুমিয়ে পড়ত, কিন্তু তত্ত্বাবধায়করা তাদের দেখতে পেলেই মারধর করত। বিষয়টা সত্যিই এমন ছিল যেন আমরা মারা যাচ্ছি।”

দক্ষিণ কোরিয়ার ডং-এ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কাং ডং-ওয়ান একাধিকবার রাশিয়া ভ্রমণ করেছেন উত্তর কোরিয়ার শ্রমিকদের সাক্ষাৎকার নেওয়ার জন্য।

তিনি বলেন, “পরিস্থিতি সত্যিই ভয়াবহ। শ্রমিকদেরকে খুবই বিপজ্জনক পরিস্থিতিতে কাজ করানো হচ্ছে। রাতে আলো নিভিয়ে দিয়ে শ্রমিকদেরকে অন্ধকারের মধ্যে কাজ করানো হয়। তাদের নিরাপত্তার জন্য সাজ-সরঞ্জামও খুব বেশি নেই।”

পালিয়ে আসা শ্রমিকরা বিবিসি’কে জানিয়েছেন, তাদেরকে সারা দিনরাত নির্মাণস্থলেই রাখা হয়। তাদের ওপর উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা বিভাগের কড়া নজরদারি থাকে, যাতে কেউ পালাতে না পারে।

নোংরা জাহাজের কনটেইনারে গাদাগাদি করে শ্রমিকদের রাখা হয় বা অর্ধনির্মিত ভবনের ভেতরে তাদেরকে রাখা হয়। সেখানে খাবার, চিকিৎসা ও নিরাপত্তা সরঞ্জামের তীব্র অভাব রয়েছে।

ন্যাম মামের এক শ্রমিক বলেন, একবার নির্মীয়মান একটি ভবনের চারমিটার উঁচু থেকে পড়ে গিয়ে মুখে আঘাত পাওয়ায় তিনি কাজ করতে পারছিলেন না। কিন্তু তারপরও তাকে চিকিৎসা নেওয়ার জন্য নির্মাণস্থল থেকে হাসপাতালে যেতে দেওয়া হয়নি।

অতীতে শতসহস্র উত্তর কোরীয় রাশিয়ায় কাজ করেছে। তারা বছরে লাখ লাখ পাউন্ড আয় করেছে উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উন ও তার দুর্বল অর্থনীতি পিড়ীত প্রশাসনের জন্য।

তবে ২০১৯ সালে জাতিসংঘ কিমের অর্থ উপার্জন কমানো এবং তার পারমাণবিক অস্ত্র উন্নয়ন কর্মসূচি বন্ধ করার চেষ্টায় উত্তর কোরীয় শ্রমিকদের বিদেশে কাজ করানোর ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। ফলে বেশিরভাগ শ্রমিক দেশে ফেরত যায়।

তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দক্ষিণ কোরিয়ার এক গোয়েন্দা কর্মকর্তা বিবিসি-কে জানান, গত বছর উত্তর কোরিয়া ১০ হাজারের বেশি শ্রমিক রাশিয়ায় পাঠিয়েছে।

এ বছর আরও অনেককে পাঠানো হবে বলে জানিয়েছেন ওই শ্রমিকরা। এভাবে উত্তর কোরিয়া মোট ৫০ হাজারের বেশি শ্রমিক রাশিয়ায় পাঠাতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

এই হারে রাশিয়ায় উত্তর কোরিয়ায় শ্রমিক পাঠানোর মানে তারা এখন ছড়িয়ে আছে রাশিয়ার সবখানে, বলেন দক্ষিণ কোরিয়ার ওই কর্মকর্তা।

তাদের অনেকেই বড় পরিসরের নির্মাণ প্রকল্পে কাজ করছে, অন্যরা বস্ত্র কারখানায় কিংবা আইটি সেন্টারে নিয়োজিত আছে বলে জানিয়েছে। জাতিসংঘ নিষেধাজ্ঞা লঙ্ঘন করেই উত্তর কোরীয় শ্রমিকদের এভাবে কাজ করানো হচ্ছে।

রাশিয়ার সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২৪ সালে দেশটিতে ঢুকেছে ১৩ হাজারের বেশি উত্তর কোরীয়। ২০২৩ সালের তুলনায় এই হার ১২ গুন বেশি। এই শ্রমিকদের প্রায় ৮ হাজার জন রাশিয়ায় ঢুকেছে শিক্ষার্থী ভিসায়।

গোয়েন্দা কর্মকর্তা ও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জাতিসংঘ নিষেধাজ্ঞা এড়াতে রাশিয়া এই কৌশল ব্যবহার করছে। উত্তর কোরিয়ার এই শ্রমিকদেরকে দেশের তুলনায় ভাল বেতনের প্রতিশ্রুতি দিয়ে রাশিয়ায় পাঠানো হয়।

বেশিরভাগ শ্রমিকই দারিদ্র্য থেকে মুক্তি পেতে কিংবা কাজ শেষে দেশে ফিরে এসে পরিবারের জন্য বাড়ি কেনা কিংব ব্যবসা শুরু করার আশা নিয়ে রাশিয়ায় যায়।

কিন্তু পরিবার পরিজনকে ছেড়ে রাশিয়ায় কাজ করতে যাওয়া এই শ্রমিকদের বেশিরভাগের আয় সরাসরি উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্রীয় কোষাগারে চলে যায় ‘নিষ্ঠা ফি’ হিসেবে। হাতে থাকে মাসে মাত্র ১০০ থেকে ২০০ ডলার, সেটিও উত্তর কোরিয়ায় ফেরত না যাওয়া পর্যন্ত হাতে পাওয়া যায় না।

এতে অনেক শ্রমিকই পালানোর ঝুঁকি নেন। তবে সম্প্রতি কড়াকড়ির কারণে শ্রমিকদের পালাতে সক্ষম হওয়ার ঘটনা কমে গেছে।

দক্ষিণ কোরিয়া সরকার বিবিসি-কে জানিয়েছে, প্রতিবছর রাশিয়া থেকে পালিয়ে সিউল পৌঁছানো শ্রমিকের সংখ্যা ২০২২ সাল থেকে বর্তমানে কমে অর্ধেকে নেমে এসেছে। বছরে প্রায় ২০ জনের জায়গায় এখন দাঁড়িয়েছে মাত্র ১০ জনে।

উত্তর কোরিয়া–রাশিয়া সম্পর্ক বিশেষজ্ঞ আন্দ্রেই লানকভ বলেন, “এই শ্রমিকরাই হবে কিম ও পুতিনের যুদ্ধকালীন বন্ধুত্বের দীর্ঘস্থায়ী উত্তরাধিকার। যুদ্ধ শেষ হলেও এদের পাঠানো চলবে।”

 

 

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : বিডিপলিটিক্স টোয়েন্টিফোর ডটকম

নিউজটি শেয়ার করুন

জাতিসংঘ নিষেধাজ্ঞা লঙ্ঘন করে রাশিয়ায় উত্তর কোরীয় শ্রমিক পাঠানো হচ্ছে। দাসের মতো পরিবেশে তাদেরকে সেখানে কাজ করানো হচ্ছে বলে জানিয়েছেন পালিয়ে যাওয়া শ্রমিকরা।

রাশিয়ায় ‘দাসের মতো’ কাজ করানো হচ্ছে উত্তর কোরিয়ার নাগরিকদের

আপডেট সময় ১১:০৩:৪৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১২ অগাস্ট ২০২৫

 

ইউক্রেইনে রাশিয়ার যুদ্ধের কারণে সৃষ্ট তীব্র শ্রম সংকট মোকাবেলায় হাজার হাজার উত্তর কোরীয়কে ‘দাসের মতো’ পরিবেশে কাজ করতে মস্কোয় পাঠানো হচ্ছে বলে বিবিসি জানতে পেরেছে।

যুদ্ধে লড়ার জন্য রাশিয়া বারবারই উত্তর কোরিয়ার দিকে ঝুঁকেছে; তাদের ক্ষেপণাস্ত্র, কামানের গোলা ব্যবহার করেছে এমনকি সেনাও কাজে লাগিয়েছে।

দক্ষিণ কোরিয়ার গোয়েন্দা কর্মকর্তারা বিবিসি-কে বলেছেন, বর্তমান সময়ে রাশিয়ার বহু পুরুষ যুদ্ধক্ষেত্রে নিহত, আহত বা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ায় মস্কো ক্রমেই উত্তর কোরিয়ার শ্রমিকদের ওপর নির্ভরতা বাড়াচ্ছে।

বিবিসি জানিয়েছে, তারা যুদ্ধ শুরুর পর এ পর্যন্ত রাশিয়া থেকে পালিয়ে আসা ছয়জন উত্তর কোরিয়ার শ্রমিকের পাশাপাশি দক্ষিণ কোরিয়ার সরকারি কর্মকর্তা, গবেষক এবং শ্রমিকদের উদ্ধারে সহায়তা করা ব্যক্তিদের সাক্ষাৎকার নিয়েছে।

তারা বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করেছেন যে, কীভাবে এই শ্রমিকরা ভয়ানক কর্মপরিবেশের শিকার হচ্ছে এবং কীভাবে উত্তর কোরিয়া কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদের পালানো বন্ধ করতে তাদের ওপর নিয়ন্ত্রণ কঠোর করছে।

জিন নামের এক শ্রমিক বিবিসি-কে বলেন, রাশিয়ার ফার ইস্টে বিমানবন্দরে অবতরণের পর এক উত্তর কোরীয় নিরাপত্তা এজেন্ট তাকে সেখান থেকে একটি নির্মাণস্থলে নিয়ে যান। ওই এজেন্ট তাকে কারও সঙ্গে কথা না বলা বা কোনও কিছুর দিকে না তাকানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন।

এজেন্ট তাকে বলেছিলেন, “বাইরের পৃথিবী আমাদের শত্রু।” জিনকে ১৮ ঘন্টারও বেশি সময় ধরে বহুতল অ্যাপার্টমেন্ট ব্লক নির্মাণের কাজ করানো হয়েছিল।

বিবিসি যে ছয়জন শ্রমিকের সঙ্গে কথা বলেছে তারা সবাই একই শাস্তিমূলক কর্মদিবসের বর্ণনা দিয়েছেন। তারা বলেন, নির্মাণস্থলে প্রতিদিন ভোর ৬টা থেকে রাত ২টা পর্যন্ত ১৮ ঘণ্টার বেশি কাজ করতে হয়েছে। বছরে মাত্র দু’দিন ছুটি দেওয়া হয়।

আরেক নির্মাণ শ্রমিক তায়ে বলেন, “ঘুম থেকে ওঠা ছিল ভয়াবহ। বুঝতে পারতাম যে, আরেকটি একই দিনের পুনরাবৃত্তি করতে হবে।” এই শ্রমিক গত বছর রাশিয়া থেকে পালাতে পেরেছিলেন।

চ্যান নামের আরেক শ্রমিক বলেন, “কিছু মানুষ দিনের বেলা ঘুমাতে কাজ ছেড়ে যেত, অথবা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়েই ঘুমিয়ে পড়ত, কিন্তু তত্ত্বাবধায়করা তাদের দেখতে পেলেই মারধর করত। বিষয়টা সত্যিই এমন ছিল যেন আমরা মারা যাচ্ছি।”

দক্ষিণ কোরিয়ার ডং-এ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কাং ডং-ওয়ান একাধিকবার রাশিয়া ভ্রমণ করেছেন উত্তর কোরিয়ার শ্রমিকদের সাক্ষাৎকার নেওয়ার জন্য।

তিনি বলেন, “পরিস্থিতি সত্যিই ভয়াবহ। শ্রমিকদেরকে খুবই বিপজ্জনক পরিস্থিতিতে কাজ করানো হচ্ছে। রাতে আলো নিভিয়ে দিয়ে শ্রমিকদেরকে অন্ধকারের মধ্যে কাজ করানো হয়। তাদের নিরাপত্তার জন্য সাজ-সরঞ্জামও খুব বেশি নেই।”

পালিয়ে আসা শ্রমিকরা বিবিসি’কে জানিয়েছেন, তাদেরকে সারা দিনরাত নির্মাণস্থলেই রাখা হয়। তাদের ওপর উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা বিভাগের কড়া নজরদারি থাকে, যাতে কেউ পালাতে না পারে।

নোংরা জাহাজের কনটেইনারে গাদাগাদি করে শ্রমিকদের রাখা হয় বা অর্ধনির্মিত ভবনের ভেতরে তাদেরকে রাখা হয়। সেখানে খাবার, চিকিৎসা ও নিরাপত্তা সরঞ্জামের তীব্র অভাব রয়েছে।

ন্যাম মামের এক শ্রমিক বলেন, একবার নির্মীয়মান একটি ভবনের চারমিটার উঁচু থেকে পড়ে গিয়ে মুখে আঘাত পাওয়ায় তিনি কাজ করতে পারছিলেন না। কিন্তু তারপরও তাকে চিকিৎসা নেওয়ার জন্য নির্মাণস্থল থেকে হাসপাতালে যেতে দেওয়া হয়নি।

অতীতে শতসহস্র উত্তর কোরীয় রাশিয়ায় কাজ করেছে। তারা বছরে লাখ লাখ পাউন্ড আয় করেছে উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উন ও তার দুর্বল অর্থনীতি পিড়ীত প্রশাসনের জন্য।

তবে ২০১৯ সালে জাতিসংঘ কিমের অর্থ উপার্জন কমানো এবং তার পারমাণবিক অস্ত্র উন্নয়ন কর্মসূচি বন্ধ করার চেষ্টায় উত্তর কোরীয় শ্রমিকদের বিদেশে কাজ করানোর ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। ফলে বেশিরভাগ শ্রমিক দেশে ফেরত যায়।

তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দক্ষিণ কোরিয়ার এক গোয়েন্দা কর্মকর্তা বিবিসি-কে জানান, গত বছর উত্তর কোরিয়া ১০ হাজারের বেশি শ্রমিক রাশিয়ায় পাঠিয়েছে।

এ বছর আরও অনেককে পাঠানো হবে বলে জানিয়েছেন ওই শ্রমিকরা। এভাবে উত্তর কোরিয়া মোট ৫০ হাজারের বেশি শ্রমিক রাশিয়ায় পাঠাতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

এই হারে রাশিয়ায় উত্তর কোরিয়ায় শ্রমিক পাঠানোর মানে তারা এখন ছড়িয়ে আছে রাশিয়ার সবখানে, বলেন দক্ষিণ কোরিয়ার ওই কর্মকর্তা।

তাদের অনেকেই বড় পরিসরের নির্মাণ প্রকল্পে কাজ করছে, অন্যরা বস্ত্র কারখানায় কিংবা আইটি সেন্টারে নিয়োজিত আছে বলে জানিয়েছে। জাতিসংঘ নিষেধাজ্ঞা লঙ্ঘন করেই উত্তর কোরীয় শ্রমিকদের এভাবে কাজ করানো হচ্ছে।

রাশিয়ার সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২৪ সালে দেশটিতে ঢুকেছে ১৩ হাজারের বেশি উত্তর কোরীয়। ২০২৩ সালের তুলনায় এই হার ১২ গুন বেশি। এই শ্রমিকদের প্রায় ৮ হাজার জন রাশিয়ায় ঢুকেছে শিক্ষার্থী ভিসায়।

গোয়েন্দা কর্মকর্তা ও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জাতিসংঘ নিষেধাজ্ঞা এড়াতে রাশিয়া এই কৌশল ব্যবহার করছে। উত্তর কোরিয়ার এই শ্রমিকদেরকে দেশের তুলনায় ভাল বেতনের প্রতিশ্রুতি দিয়ে রাশিয়ায় পাঠানো হয়।

বেশিরভাগ শ্রমিকই দারিদ্র্য থেকে মুক্তি পেতে কিংবা কাজ শেষে দেশে ফিরে এসে পরিবারের জন্য বাড়ি কেনা কিংব ব্যবসা শুরু করার আশা নিয়ে রাশিয়ায় যায়।

কিন্তু পরিবার পরিজনকে ছেড়ে রাশিয়ায় কাজ করতে যাওয়া এই শ্রমিকদের বেশিরভাগের আয় সরাসরি উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্রীয় কোষাগারে চলে যায় ‘নিষ্ঠা ফি’ হিসেবে। হাতে থাকে মাসে মাত্র ১০০ থেকে ২০০ ডলার, সেটিও উত্তর কোরিয়ায় ফেরত না যাওয়া পর্যন্ত হাতে পাওয়া যায় না।

এতে অনেক শ্রমিকই পালানোর ঝুঁকি নেন। তবে সম্প্রতি কড়াকড়ির কারণে শ্রমিকদের পালাতে সক্ষম হওয়ার ঘটনা কমে গেছে।

দক্ষিণ কোরিয়া সরকার বিবিসি-কে জানিয়েছে, প্রতিবছর রাশিয়া থেকে পালিয়ে সিউল পৌঁছানো শ্রমিকের সংখ্যা ২০২২ সাল থেকে বর্তমানে কমে অর্ধেকে নেমে এসেছে। বছরে প্রায় ২০ জনের জায়গায় এখন দাঁড়িয়েছে মাত্র ১০ জনে।

উত্তর কোরিয়া–রাশিয়া সম্পর্ক বিশেষজ্ঞ আন্দ্রেই লানকভ বলেন, “এই শ্রমিকরাই হবে কিম ও পুতিনের যুদ্ধকালীন বন্ধুত্বের দীর্ঘস্থায়ী উত্তরাধিকার। যুদ্ধ শেষ হলেও এদের পাঠানো চলবে।”

 

 

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : বিডিপলিটিক্স টোয়েন্টিফোর ডটকম