০৬:১৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৬ অগাস্ট ২০২৫
কুওনের সর্বোচ্চ ২৫ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড হতে পারে এবং আগামী ১১ ডিসেম্বর এ মামলার রায় ঘোষণা করবেন বিচারক এনগেলমায়ার।

৪ হাজার কোটি ডলারের বাজার ধসে দায় স্বীকার ‘ক্রিপ্টো মোঘলের’

প্রযুক্তি ডেস্ক : বিডিপলিটিক্স টোয়েন্টিফোর ডটকম
  • আপডেট সময় ১১:২২:৩৭ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৫ অগাস্ট ২০২৫
  • / ২৫ বার পড়া হয়েছে

দক্ষিণ কোরিয়াতেও তার বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে। ছবি: রয়টার্স

 

চার হাজার কোটি ডলারের বাজার ধসে যাওয়ার পেছনে জালিয়াতির অভিযোগ স্বীকার করেছেন দক্ষিণ কোরিয়ার ‘ক্রিপ্টো মোঘল’ ডু কুওন।

২০২২ সালে দুটি ক্রিপ্টোকারেন্সি প্রকল্পের মাধ্যমে আনুমানিক চার হাজার কোটি ডলারের ক্ষতির কারণ হন এই উদ্যোক্তা। এর ফলে ওই সময় পুরো ক্রিপ্টো বাজারে ধস নেমেছিল বলে প্রতিবেদনে লিখেছে ব্রিটিশ দৈনিক পত্রিকা গার্ডিয়ান।

মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রের জালিয়াতির ষড়যন্ত্র ও ওয়্যার ফ্রড বা তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে জালিয়াতি সংক্রান্ত দুটি অভিযোগে নিজের দোষ স্বীকার করেছেন কুওন।

সিঙ্গাপুরভিত্তিক ‘টেরাফর্ম ল্যাবস’-এর সহপ্রতিষ্ঠাতা ও ‘টেরাইউএসডি’ ও ‘লুনা’ নামের ক্রিপ্টোকারেন্সির নির্মাতা ৩৩ বছর বয়সী কুওন। নিউ ইয়র্কের এক ফেডারেল আদালতে নিজের দোষ স্বীকার করেছেন তিনি।

এর আগে, জানুয়ারিতে নিরাপত্তা জালিয়াতি, ওয়্যার ফ্রড, কমোডিটি জালিয়াতি ও মানি লন্ডারিং ষড়যন্ত্রসহ নয়টি অভিযোগে নিজেকে নির্দোষ দাবি করেছিলেন কুওন।

তার বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, ২০২১ সালে ‘টেরাইউএসডি’ নিয়ে বিনিয়োগকারীদের বিভ্রান্ত করেছিলেন তিনি। ‘টেরাইউএসডি’ হচ্ছে এক ধরনের ‘স্টেবলকয়েন’, যার মূল্য সবসময় এক ডলার থাকার কথা।

এ অভিযোগের ভিত্তিতে ম্যানহাটনের মার্কিন অ্যাটর্নি অফিসের সঙ্গে করা এক সমঝোতার অধীনে দুটি অভিযোগে দোষ স্বীকার করেছেন কুওন।

কুওনের সর্বোচ্চ ২৫ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড হতে পারে এবং আগামী ১১ ডিসেম্বর এ মামলার সাজা ঘোষণা করবেন বিচারক এনগেলমায়ার।

তবে প্রসিকিউটর কিম্বারলি র‍্যাভেনার বলেছেন, কুওন যদি নিজের অপরাধের দায় স্বীকার করেন তাহলে সরকার তার সর্বোচ্চ ১২ বছরের সাজার পক্ষে রাষ্ট্র সুপারিশ করবে।

গত বছরের শেষের দিকে মন্টিনেগ্রো থেকে তাকে যুক্তরাষ্ট্রে ফেরত আনার পর থেকেই জেলে রয়েছেন কুওন।

২০২২ সালে ডিজিটাল মুদ্রার দামে বড় ধস নামার ফলে অনেক ক্রিপ্টো কোম্পানি ধসে পড়েছিল। সেই ঘটনার পর কুওনসহ একাধিক ক্রিপ্টো উদ্যোক্তার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রে ফেডারেল মামলা দায়ের হয়।

এ ঘটনার আরেক বড় মুখ ছিলেন স্যাম ব্যাংকম্যান-ফ্রিড। যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় ক্রিপ্টো এক্সচেঞ্জ ‘এফটিএক্স’-এর প্রতিষ্ঠাতা তিনি। ২০২৪ সালে ২৫ বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়েছে তাকে।

প্রসিকিউটররা অভিযোগ করেছেন, ২০২১ সালের মে মাসে যখন ‘টেরাইউএসডি’ তার নির্ধারিত এক ডলার মূল্যের নিচে নেমে যায় তখন বিনিয়োগকারীদের কুওন বলেছেন, ‘টেরা প্রোটোকল’ নামে পরিচিত এক কম্পিউটার অ্যালগরিদম ক্রিপ্টো কয়েনটির মূল্য আবার ঠিক করে দিয়েছে।

তবে প্রসিকিউটরদের দাবি, এমনটি করেননি কুওন, বরং তিনি গোপনে এক হাই-ফ্রিকোয়েন্সি ট্রেডিং কোম্পানিকে কোটি কোটি ডলারের ‘টেরাইউএসডি’ কিনতে বলেন। আর এতে করে কৃত্রিমভাবে এর মূল্য বাড়ানো সম্ভব হয়েছিল ও বাজারে কয়েনটির স্থিতিশীলতা বজায় থাকে।

প্রসিকিউটররা আরও বলেছেন, কুওনের ওই মিথ্যা দাবি এবং আরও কিছু ভুল তথ্যের কারণে সাধারণ মানুষ বা রিটেইল বিনিয়োগকারী ও বড় প্রতিষ্ঠানের বিনিয়োগকারীরা ‘টেরাফর্ম’-এর বিভিন্ন পণ্য কিনতে শুরু করেন। ফলে লুনা নামের আরেকটি টোকেনের মূল্য ব্যাপকভাবে বেড়ে যায়। ‘টেরাইউএসডি’-এর সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত ছিল এটি। লুনার মূল্য ওঠানামার ফলে ২০২২ সালের বসন্ত নাগাদ লুনা টোকেনের মোট মূল্য পাঁচ হাজার কোটি ডলার পর্যন্ত পৌঁছে যায়।

আদালতে নিজের আচরণের জন্য ক্ষমা চেয়েছেন কুওন।

তিনি আদালতে বলেছেন, “আমি টেরাইউএসডির মূল্য আবার এক ডলারে ফিরে আসার কারণ নিয়ে মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর তথ্য দিয়েছিলাম। আমি ইচ্ছাকৃতভাবে ট্রেডিং ফার্মের গোপন ভূমিকা প্রকাশ করিনি। আমি যা করেছি, তা ভুল ছিল।”

২০২৪ সালে আট কোটি ডলার অর্থদণ্ড পরিশোধ করতে ও ক্রিপ্টো লেনদেন থেকে নিষিদ্ধ হতে রাজি হয়েছেন কুওন, যা ছিল তিনি ও ‘টেরাফর্ম’-এর যুক্তরাষ্ট্রের সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের সঙ্গে হওয়া মোট সাড়ে চারশ কোটি ডলারের নিষ্পত্তির অংশ।

দক্ষিণ কোরিয়াতেও তার বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে।

চুক্তির অংশ হিসেবে, প্রসিকিউটররা বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রে নিজের সাজার অর্ধেক সময় যদি কুওন কারাভোগ করেন তবে তার বিদেশে স্থানান্তরের জন্য আবেদন করার সম্ভাবনাকে বিরোধিতা করবেন না তারা।

 

 

প্রযুক্তি ডেস্ক : বিডিপলিটিক্স টোয়েন্টিফোর ডটকম

নিউজটি শেয়ার করুন

কুওনের সর্বোচ্চ ২৫ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড হতে পারে এবং আগামী ১১ ডিসেম্বর এ মামলার রায় ঘোষণা করবেন বিচারক এনগেলমায়ার।

৪ হাজার কোটি ডলারের বাজার ধসে দায় স্বীকার ‘ক্রিপ্টো মোঘলের’

আপডেট সময় ১১:২২:৩৭ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৫ অগাস্ট ২০২৫

 

চার হাজার কোটি ডলারের বাজার ধসে যাওয়ার পেছনে জালিয়াতির অভিযোগ স্বীকার করেছেন দক্ষিণ কোরিয়ার ‘ক্রিপ্টো মোঘল’ ডু কুওন।

২০২২ সালে দুটি ক্রিপ্টোকারেন্সি প্রকল্পের মাধ্যমে আনুমানিক চার হাজার কোটি ডলারের ক্ষতির কারণ হন এই উদ্যোক্তা। এর ফলে ওই সময় পুরো ক্রিপ্টো বাজারে ধস নেমেছিল বলে প্রতিবেদনে লিখেছে ব্রিটিশ দৈনিক পত্রিকা গার্ডিয়ান।

মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রের জালিয়াতির ষড়যন্ত্র ও ওয়্যার ফ্রড বা তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে জালিয়াতি সংক্রান্ত দুটি অভিযোগে নিজের দোষ স্বীকার করেছেন কুওন।

সিঙ্গাপুরভিত্তিক ‘টেরাফর্ম ল্যাবস’-এর সহপ্রতিষ্ঠাতা ও ‘টেরাইউএসডি’ ও ‘লুনা’ নামের ক্রিপ্টোকারেন্সির নির্মাতা ৩৩ বছর বয়সী কুওন। নিউ ইয়র্কের এক ফেডারেল আদালতে নিজের দোষ স্বীকার করেছেন তিনি।

এর আগে, জানুয়ারিতে নিরাপত্তা জালিয়াতি, ওয়্যার ফ্রড, কমোডিটি জালিয়াতি ও মানি লন্ডারিং ষড়যন্ত্রসহ নয়টি অভিযোগে নিজেকে নির্দোষ দাবি করেছিলেন কুওন।

তার বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, ২০২১ সালে ‘টেরাইউএসডি’ নিয়ে বিনিয়োগকারীদের বিভ্রান্ত করেছিলেন তিনি। ‘টেরাইউএসডি’ হচ্ছে এক ধরনের ‘স্টেবলকয়েন’, যার মূল্য সবসময় এক ডলার থাকার কথা।

এ অভিযোগের ভিত্তিতে ম্যানহাটনের মার্কিন অ্যাটর্নি অফিসের সঙ্গে করা এক সমঝোতার অধীনে দুটি অভিযোগে দোষ স্বীকার করেছেন কুওন।

কুওনের সর্বোচ্চ ২৫ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড হতে পারে এবং আগামী ১১ ডিসেম্বর এ মামলার সাজা ঘোষণা করবেন বিচারক এনগেলমায়ার।

তবে প্রসিকিউটর কিম্বারলি র‍্যাভেনার বলেছেন, কুওন যদি নিজের অপরাধের দায় স্বীকার করেন তাহলে সরকার তার সর্বোচ্চ ১২ বছরের সাজার পক্ষে রাষ্ট্র সুপারিশ করবে।

গত বছরের শেষের দিকে মন্টিনেগ্রো থেকে তাকে যুক্তরাষ্ট্রে ফেরত আনার পর থেকেই জেলে রয়েছেন কুওন।

২০২২ সালে ডিজিটাল মুদ্রার দামে বড় ধস নামার ফলে অনেক ক্রিপ্টো কোম্পানি ধসে পড়েছিল। সেই ঘটনার পর কুওনসহ একাধিক ক্রিপ্টো উদ্যোক্তার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রে ফেডারেল মামলা দায়ের হয়।

এ ঘটনার আরেক বড় মুখ ছিলেন স্যাম ব্যাংকম্যান-ফ্রিড। যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় ক্রিপ্টো এক্সচেঞ্জ ‘এফটিএক্স’-এর প্রতিষ্ঠাতা তিনি। ২০২৪ সালে ২৫ বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়েছে তাকে।

প্রসিকিউটররা অভিযোগ করেছেন, ২০২১ সালের মে মাসে যখন ‘টেরাইউএসডি’ তার নির্ধারিত এক ডলার মূল্যের নিচে নেমে যায় তখন বিনিয়োগকারীদের কুওন বলেছেন, ‘টেরা প্রোটোকল’ নামে পরিচিত এক কম্পিউটার অ্যালগরিদম ক্রিপ্টো কয়েনটির মূল্য আবার ঠিক করে দিয়েছে।

তবে প্রসিকিউটরদের দাবি, এমনটি করেননি কুওন, বরং তিনি গোপনে এক হাই-ফ্রিকোয়েন্সি ট্রেডিং কোম্পানিকে কোটি কোটি ডলারের ‘টেরাইউএসডি’ কিনতে বলেন। আর এতে করে কৃত্রিমভাবে এর মূল্য বাড়ানো সম্ভব হয়েছিল ও বাজারে কয়েনটির স্থিতিশীলতা বজায় থাকে।

প্রসিকিউটররা আরও বলেছেন, কুওনের ওই মিথ্যা দাবি এবং আরও কিছু ভুল তথ্যের কারণে সাধারণ মানুষ বা রিটেইল বিনিয়োগকারী ও বড় প্রতিষ্ঠানের বিনিয়োগকারীরা ‘টেরাফর্ম’-এর বিভিন্ন পণ্য কিনতে শুরু করেন। ফলে লুনা নামের আরেকটি টোকেনের মূল্য ব্যাপকভাবে বেড়ে যায়। ‘টেরাইউএসডি’-এর সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত ছিল এটি। লুনার মূল্য ওঠানামার ফলে ২০২২ সালের বসন্ত নাগাদ লুনা টোকেনের মোট মূল্য পাঁচ হাজার কোটি ডলার পর্যন্ত পৌঁছে যায়।

আদালতে নিজের আচরণের জন্য ক্ষমা চেয়েছেন কুওন।

তিনি আদালতে বলেছেন, “আমি টেরাইউএসডির মূল্য আবার এক ডলারে ফিরে আসার কারণ নিয়ে মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর তথ্য দিয়েছিলাম। আমি ইচ্ছাকৃতভাবে ট্রেডিং ফার্মের গোপন ভূমিকা প্রকাশ করিনি। আমি যা করেছি, তা ভুল ছিল।”

২০২৪ সালে আট কোটি ডলার অর্থদণ্ড পরিশোধ করতে ও ক্রিপ্টো লেনদেন থেকে নিষিদ্ধ হতে রাজি হয়েছেন কুওন, যা ছিল তিনি ও ‘টেরাফর্ম’-এর যুক্তরাষ্ট্রের সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের সঙ্গে হওয়া মোট সাড়ে চারশ কোটি ডলারের নিষ্পত্তির অংশ।

দক্ষিণ কোরিয়াতেও তার বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে।

চুক্তির অংশ হিসেবে, প্রসিকিউটররা বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রে নিজের সাজার অর্ধেক সময় যদি কুওন কারাভোগ করেন তবে তার বিদেশে স্থানান্তরের জন্য আবেদন করার সম্ভাবনাকে বিরোধিতা করবেন না তারা।

 

 

প্রযুক্তি ডেস্ক : বিডিপলিটিক্স টোয়েন্টিফোর ডটকম