বিচার-বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বারবার রক্তাক্ত করেছে বাংলাদেশকে। দেশ কি একদিন এই সব হত্যার অভিশাপ থেকে মুক্তি পাবে?
যে কোনো হত্যাকাণ্ডকেই প্রশ্ন করা কেন জরুরি?

- আপডেট সময় ১১:৩৯:১৬ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৫ অগাস্ট ২০২৫
- / ৮ বার পড়া হয়েছে
স্বাধীন বাংলাদেশে প্রথম বিচার-বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হন সিরাজ শিকদার, ১৯৭৫ সালের ২ জানুয়ারি। তারও দুই বছর আগে, ১৯৭৩ সালের ১ জানুয়ারি ভিয়েতনাম সংহতি দিবসে পুলিশের গুলিতে শহীদ হন মিছিলরত বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের দুই কর্মী মতিউল ও কাদের। প্রতিবাদে ডাকসুর তৎকালীন ভিপি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকসুর আজীবন সদস্যপত্রটি ছিড়ে ফেলেন।
এই দুই বছরের মধ্যে দেশের রাজনীতি অনেকটাই বদলে গেছে। ‘জনতার জননায়ক’ ও ‘ভালোবাসার বঙ্গবন্ধু’ রাষ্ট্র প্রধান থেকে সরকার প্রধান হতে চাইলেন। ফলে, বাংলাদেশ রাষ্ট্র সংসদীয় গণতন্ত্রে রূপান্তরিত হলো। ১৯৭৩ সালের ৭ মার্চের প্রথম সাধারণ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে নিরঙ্কুশ বিজয় লাভ করল আওয়ামী লীগ। এই নিরঙ্কুশ বিজয় বাংলাদেশকে বিপথে ঠেলে দিল। ১৯৭৫ সালের ২৫ জানুয়ারি সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হলো বাকশাল৷ এবার বঙ্গবন্ধু আবার রাষ্ট্রপতি হয়ে গেলেন।
দেশ স্বাধীনের পর প্রত্যাবর্তন করে রাষ্ট্রপতি, তার পর দুই মাস কম দুই বছরের জন্য প্রধানমন্ত্রী, এবং ১৫ অগাস্ট ১৯৭৫ পর্যন্ত রাষ্ট্রপতি—এত অল্প সময়ের মধ্যে এতবার একজন জননন্দিত নেতার রাষ্ট্রের চরিত্র বদলে দেওয়ার নজির অত্যন্ত বিপজ্জনক হয়েছে তার নিজের জন্য যেমন, দেশের জন্যও তেমন। গণতন্ত্রের জন্য আজীবন লড়াই করা একজন তৃণমূল থেকে তৈরি হয়ে আসা নেতা একটি মহাকাব্যিক জনযুদ্ধের পর তৈরি হওয়া জনগোষ্ঠীর ভাষা বুঝতে পারলেন না এবং নিজের হাতে গণতন্ত্রকে সমাধিস্থ করলেন, এ বড় অদ্ভুত ব্যাপারই হয়ে থাকবে ইতিহাসে। আমরা কি এই বাংলাদেশ চেয়েছিলাম?
২.
আমরা তো এই বাংলাদেশও চাইনি, যেখানে স্বাধীন বাংলাদেশের সবচেয়ে ভয়ানক ও ন্যক্কারজনক বিচার-বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হবে ১০ বছরের একজন শিশু। শিশুটির নাম জানেন না আপনি?
সেই শিশুটির পরিবারের মা-বাবা, ভাই-ভাবিসহ আরও ২০ জনকে হত্যা করা হয়েছে। সেই হত্যাকাণ্ডের শিকার অন্তত তিনজনকে রাজনৈতিকভাবে পরাস্ত করা একদম অনিবার্য ছিল। করতেন। সেই তিনজনকে শুধু রাজনৈতিকভাবে নয়, বিচারিকভাবেও পরাস্ত করা প্রয়োজন ছিল। করতেন। কিন্তু, বিনা বিচারে কেন হত্যা করা হলো—এই প্রশ্ন করবেন না আপনি?
তিনজন বাদে সেই শিশুটিসহ মোট ১৮ জনকে কেন বিনা বিচারে হত্যা করা হলো—এই প্রশ্ন করবেন না আপনি?
১৭ বছর তো করতে পারেননি, কারণ বাধা ছিল প্রবল। ছিল ভয়ের সংস্কৃতি। আশ্চর্য বটে, সেই নিরপরাধ ১৮ জন মানুষের হত্যাকাণ্ড নিয়ে গত ১৭ বছরেও তেমন কথাই হয়নি।
বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের ১৭ বছরে পত্রপত্রিকা, ইউটিউবের ভিডিও থেকে ডেটা বিশ্লেষণ করে দেখেন, একটা সরকার, একটা পার্টি, একটা পরিবারের উত্তরসূরি এবং তাদের চাটুকাররা এই ১৮ জন নিরপরাধ মানুষের জীবনকে কোনো অর্থেই মূল্যায়ন করতে পারেনি।
তারা শুধু বাবার নাম জপে মেয়েকে খুশি করে ফায়দা লোটার ব্যবস্থা করেছেন। আর এটাকেই সহি প্রেম ও পপুলার গ্রাউন্ড ভেবে বাবার মতো মেয়েও একনায়ক হয়ে উঠেছিলেন। ভ্রম থেকেই এই মানসিকতার জন্ম নেয় আর সেই ভ্রম উৎপাদনে সহায়ক হয়ে ওঠে স্তুতিকাররা।
অথচ, বিচার-বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের ফ্রেমটাকে যে প্রশ্নবিদ্ধ করতে হবে, এই ১৮ জনের মানবাধিকার ক্ষুণ্ণ হওয়ার জায়গাটা যে চিহ্নিত করতে হবে, সেটা তারা ইচ্ছে করেই এড়িয়ে গেছেন। কেননা, ব্যবসা এই ১৮ জনের নাম জপলে জমবে না। এমনকি ২০ জনের নাম জপলেও না। নাম ওই একটাই, কেননা তিনিই সবচেয়ে শক্তিশালী, তার নামে দোকান খুললেই ব্যবসায় বাজিমাৎ!
এক বছর আগের আন্দোলনের সময় ‘স্বজন হারানোর বেদনা’কে ডিহিউমেনেইজ করার ব্যাপারটা তাই জরুরি হয়ে উঠেছিল। কেননা, রাজন্যের শোকই শুধু শোক নয়, সাধারণ্যের শোকও যে শোক—এই ন্যারেটিভ শক্তিশালী করা দরকার ছিল। আজকে আমাদের মতো তারাও আর রাজন্য না, চাইলেই তারা তাদের ন্যারেটিভ এজেন্সির জোরে চাপিয়ে দিতে পারবে না৷ শোক পালনে জোরজবরদস্তি ও বাধ্য করতে পারবে না।
বরং, আজকে শোক পালনে যারা বাধা দিচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধেই মানুষের রোষাণল ফেটে বের হয়েছে। ফেইসবুক দেখে দেশ চালানো সরকার নিশ্চয়ই সেটা টের পাচ্ছে। আজকে তো সেই দিন আর নেই। চেতনার ব্যবসা বন্ধ। তাহলে, এখন সেই বিচার-বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড নিয়ে প্রশ্ন করতে আপনাকে বাধা দেওয়া হলে, আপনি মানবেন কেন?
৩.
১৭ বছরের বিচার-বহির্ভূতসহ সকল ধরনের হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধেই কথা বলতে হবে। কথা বলতে হবে গত এক বছরের বিচার-বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড নিয়েও। তাহলে সেই শিশুটিসহ ২১ জনের কথাও মন খুলে বলতে হবে তো, নাকি?
যে নিষ্পাপ শিশুটিকে হত্যা করা হয়েছিল, যে ১৮ জন নিরপরাধ মানুষকে হত্যা করা হয়েছিল, তাদের এই হত্যার শিকার হওয়ার কথা না, কোনোভাবেই না। একজনের অপরাধ একজনেরই, বাকিদের না। কিন্তু, সেই অপরাধ নিরূপণ করবে কি অস্ত্রধারী ক্ষমতাবানরা নাকি রাষ্ট্রের জনগণ? তাহলে জনগণ কেন সে সুযোগ পেল না—এই প্রশ্ন করার প্রয়োজন নেই? আর জনগণও যদি সুযোগ পায়, তার বিচারের পদ্ধতিও তো বিচার-বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড হতে পারে না। জনগণেরও তো অধিকার নেই দঙ্গলবাজি করার। জনগণের শক্তি প্রয়োগের জায়গা তার ব্যালট পেপারে আর রাজপথের আন্দোলনে। সে জায়গাতেই তার থাকতে হবে, সকল বাহিনীর ক্ষেত্রেও সে কথাটিই প্রযোজ্য। কোনো যুক্তিতেই বিচার-বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড তো বটেই, কোনো হত্যাকাণ্ডকেই সমর্থন করার সুযোগ নেই।
১৫ অগাস্টের পর এদেশে জেলহত্যা ঘটেছে, কী অপরাধ ছিল জাতীয় চারনেতার? একে তো নিরপরাধ, তার ওপর জেলে আটক। উপরন্তু বিচার নেই, কিন্তু বিচার-বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়ে গেলেন তারা । বুঝলাম, বঙ্গবন্ধুর সহচর ছিলেন তারা, সেটাই অপরাধ? কিন্তু, সেই ‘অপরাধে’র মাত্রা নির্ধারণ না করেই এমন নেতাদের হত্যা করা হবে? মুক্তিযুদ্ধে তাদের অবদানকেও বিবেচনা করা হবে না? নাকি মুক্তিযুদ্ধের সমস্ত চিহ্ন মুছে ফেলতেই এ সমস্ত আয়োজন?
এরপর হত্যা করা হলো রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান বীর উত্তমকে। জেড ফোর্সের অধিনায়ক মেজর জিয়া অবিশ্বাস্য ঘটনার জন্ম দিয়ে একাত্তরের ২৭ মার্চ চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতারকেন্দ্র থেকে বঙ্গবন্ধুর পক্ষে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন। শেখ হাসিনা তার সঙ্গে রাজনৈতিক বিরোধ বোধ করেছেন, কিন্তু, মুক্তিযুদ্ধের আওয়ামীকরণে ‘আই মেজর জিয়া’ উচ্চারণটা নাকচ করা যায় না। পূর্বের হিসাবনিকাশের জের ধরে শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ তার অবদানের স্বীকৃতি দিতে কার্পণ্য করেছে বরাবরই। অথচ, ওই সময় জিয়াউর রহমানের ঘোষণা বা স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র পাঠ জনমনে যে সাহস সঞ্চার করেছিল এবং আত্মবিশ্বাস দিয়েছিল যে সেনাবাহিনী জনগণের সঙ্গে আছে, সেই সত্যকে উপলব্ধি করার মানসিকতা আওয়ামী লীগারদের কখনই ছিল না। মুক্তিযুদ্ধ অবশ্যই জনযুদ্ধ, কিন্তু আতাউল গনি ওসমানী, কে এম শফিউল্লাহ, জিয়াউর রহমান, খালেদ মোশাররফ, আবু তাহেররা সামনে না থাকলে নিরস্ত্র ও অপেশাদার জনগণের পক্ষে এ যুদ্ধজয় এত সহজ হতো না৷ সেই জিয়াউর রহমানকেও হত্যা করা হলো, কী অপরাধে? বিচার-বহির্ভূত নয় এই হত্যাকাণ্ড?
বস্তুত, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ থেকে আজ পর্যন্ত গত ৫৫ বছরে যত হত্যাকাণ্ড ও বিচার-বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড হয়েছে, সবগুলো নিয়েই তো কথা বলা দরকার, নাকি? এগুলোর কার্যকারণ ও রাজনৈতিক লাভ-ক্ষতি নিয়ে বিচার-বিশ্লেষণ করা দরকার নেই?
করতে গেলে দেখা যাবে, পঁচাত্তরের ১৫ অগাস্টের যে রাজনৈতিক তাৎপর্য, তা অত্যন্ত গভীর। নইলে এতগুলো নিরপরাধ মানুষকে বিনা বিচারে হত্যা করার কোনো কারণ থাকতে পারে না। সঙ্গে এটাও বলা দরকার যে, একটা রাষ্ট্র, সময়ান্তরে তার রাজনৈতিক অবস্থান যাই হোক না কেন, তার ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড নিয়ে ন্যূনতম কোনো সচেতনতাবোধ দেখাবে না, বিচার-বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের মতো অপরাধকে রাষ্ট্রীয় পর্যায় থেকে নিরুৎসাহিত করার জন্য টানা আলাপ-আলোচনা চালিয়ে যাবে না, উল্টো ফরমান জারি করে শোক পালনে বাধা দেবে, এটা কোনো ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করতে চাওয়া রাষ্ট্রের বন্দোবস্ত হতে পারে না।
৪.
রাজনীতিতে শেষ কথা বলে কিছু নেই। ফলে, কোন রাজনৈতিক বাস্তবতায় কী ঘটবে, তা বলা মুশকিল। আজকে মনে হচ্ছে শেখ হাসিনার বাংলাদেশের রাজনীতিতে প্রত্যাবর্তনের আশঙ্কা ক্ষীণ, সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু, বাংলাদেশের রাজনীতি ঘটনঅঘটনপটিয়সী৷ তাই, সম্ভবত শেখ হাসিনার ব্যাপারে শেষ কথা বলার সময় আসেনি। এই সরকারও সেই অর্থে ব্যর্থ যে, তারা জানেই না শেখ হাসিনাকে তারা কী করে মোকাবিলা করবে, তাই আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করতে হয়েছে তাদের এবং সেই জুজুর ভয় থেকে ধানমন্ডি বত্রিশে পাহারা বসাতে হয়েছে। ভাঙা বত্রিশের এত শক্তি!
বত্রিশ ভাঙা হয়েছে, পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে যাদের ইন্ধনে, তারা চায় না শেখ মুজিবের অস্তিত্ব থাকুক। তার মেয়ের কর্মকাণ্ডের দায় তার ওপর চাপানো হয়েছে৷ পিতার পদাঙ্ক অনুসরণ করে কন্যা নির্বাচনি ব্যবস্থা ধ্বংস করে দেশকে অগণতন্ত্রের দিকে ঠেলে দিয়েছেন। কিন্তু, নির্বাচন ও তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রশ্নে আলাপ তুললে ৫৫ বছরে আসা প্রতিটি সরকারের কর্মকাণ্ড প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে যাবে। সবাই ক্ষমতার মধু পেতে মসনদে টিকে থাকতে চেয়েছে, এমনকি আমরা নির্বাচন না-হওয়ার পদধ্বনি এখনও শুনতে পাচ্ছি। কিন্তু, শেখ হাসিনা এর ‘সফল প্রয়োগ’ করে দেখিয়ে এটাকে শিল্পে পরিণত করে গেছেন। সেজন্য তার পতনও হয়েছে সেরকমই নির্মম। সেই নির্মমতার বলি হয়েছেন বঙ্গবন্ধু নিজেও। তার মেয়ে ও চাটুকারের দল তাকে গত ১৭ বছরে বারবার হত্যার শিকার বানিয়েছেন, যেটা ১৯৯৬-২০০১ সালে ঘটেনি। এবার কেন ঘটল, এটা বারবার আলোচনায় আসার দরকার নেই?
সবাই প্রায় একমত যে, তাকে দ্বিতীয়বার হত্যা করা হয়েছে ৫ অগাস্ট। প্রথমবার তার জাগতিক বিয়োগ ঘটেছে তারই মহিমান্বিত ভুলে, ১৫ অগাস্ট, যেটা ছিল সর্বৈবভাবে বিচার-বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড। আর দ্বিতীয়বার মেয়ের কারণে। কিন্তু, আমি বলি, তাকে কয়েক শতবার হত্যা করা হয়েছে বিগত ১৭ বছরে এবং সেটা তার মহীরুহ চরিত্রকে বিক্রি করার মাধ্যমেই৷ তার নামেই মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশ নিয়ে ব্যবসা চলেছে। আঙুল ফুলে কলা গাছ হয়েছে। সব তারই নামে। ‘শেখের বেটি’ একটা সাইনবোর্ড মাত্র। মুজিব আসলেই কত শক্তিশালী! ফলে, মুজিবকে হত্যা করার প্রয়োজন হয়েছে আবারও। সেজন্যই ৫ অগাস্ট হয়েছে তার সর্বশেষ হত্যাকাণ্ড।
৫.
এখানেই সম্ভবত ইতিহাসের খেলা। যে খেলায় শেখ হাসিনার শুধু একার না, আরও অনেকেরই নিজস্ব কোনো এজেন্সি থাকবে না৷ কিন্তু, শেখ মুজিবের থাকবে। যে কারণে, সর্বশেষবার হত্যা হওয়ার মাত্র এক বছরের মধ্যেই তিনি ফিরে এসেছেন আবারও। কারও উস্কানিতে না, চর্বিতচর্বণ ভক্তিতে না, মাখোমাখো তেলবাজিতে না, দিস্তা দিস্তা গার্বেজ লেখালেখিতে না, ভাঙা মাইকের কচকচানিতেও না। তার নিজের অপার শক্তিতে।
তার শক্তি এতটাই যে, আজ তার মেয়েকে লাগছে না, সরকার লাগছে না, পার্টি লাগছে না, চাটুকার লাগছে না। খোদ জনতাই তাকে তাদের কাতারে নিয়ে এসেছে, এমনকি যারা তাকে দেখেনওনি কোনোদিন, তারাও। গত ১৭ বছর তিনি একটা বন্দিশালায় ছিলেন, জীবন থাকতে যেমন ছিলেন, তেমনই৷ কিন্তু, বন্দিদশা থেকে মুক্তি পেয়ে তিনি বরাবরই এসে দাঁড়াতেন জনতার মঞ্চে, ওটাই তার অধিষ্ঠিত জায়গা। এবারও সেটার ব্যত্যয় ঘটল না।
তার ঘর নেই, বাড়ি নেই, ঠাঁই নেই—গুঁড়িয়ে ও পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে তার সমস্ত স্মৃতিচিহ্ন—তবুও তিনি কী আশ্চর্যভাবে ফিরে এসেছেন! তার ভ্রান্তি আছে, ভুল আছে, দুর্বলতা আছে এবং অবশ্যই আছে অদ্ভুতুরে একনায়কতন্ত্রের অপরাধ। কিন্তু, পৃথিবীর সর্বোচ্চ শৃঙ্গ যেমন হিমালয়ের মাউন্ট এভারেস্ট, বাংলাদেশের সর্বোচ্চ শৃঙ্গের নাম বত্রিশের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান!
বাংলাদেশের ইতিহাস তার নাম ছাড়া অপূর্ণ। বাংলাদেশকে দাঁড়াতে হলে তার বিচার-বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের ওপরেই দাঁড়াতে হবে। এই নির্মম বিচার-বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডকে প্রশ্নবিদ্ধ না করতে পারলে, বাংলাদেশের কোনো ভবিষ্যৎ নেতৃত্বই সুরক্ষিত থাকতে পারবে না।
সৌমিত জয়দ্বীপ : লেখক ও শিক্ষক