২০২২ সালের সিএইচআইপিএস বা চিপস আইন থেকে অর্থ ব্যবহার করে ইনটেলে বিনিয়োগ করার পরিকল্পনা করছে সরকার।
সরকারি বিনিয়োগের জল্পনায় শেয়ার মূল্য বাড়ল ইনটেলের

- আপডেট সময় ০৬:৩১:০১ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৭ অগাস্ট ২০২৫
- / ৩০ বার পড়া হয়েছে
সংকটে থাকা চিপ নির্মাতা ইনটেলকে যুক্তরাষ্ট্র সরকার আর্থিক সহায়তা দিতে পারে এমন খবরে কোম্পানিটির শেয়ার মূল্য চার শতাংশ বেড়ে গিয়েছে।
এর আগে মার্কিন সংবাদমাধ্যম ব্লুমবার্গের এক প্রতিবেদেনে উঠে আসে, যুক্তরাষ্ট্রের সরকার ইনটেলের শেয়ার কিনতে পারে।
এর আগে সোমবার ইনটেল প্রধান লিপ-বু ট্যানের সঙ্গে প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের বৈঠক হয়। বৈঠকটি এমন এক সময়ে হল যখন ট্রাম্প লিপ-বু ট্যানের সঙ্গে চীনা কোম্পানিগুলোর সম্পর্ককে ‘গভীরভাবে স্বার্থসংঘাতপূর্ণ’ আখ্যা দিয়ে তার পদত্যাগ দাবি করেছিলেন। বৈঠকটিকে পরে অবশ্য ট্রাম্প ‘খুবই আকর্ষণীয়’ বলে মন্তব্য করেন।
রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ট্রাম্প প্রশাসন এর আগেও কোম্পানিগুলোতে অস্বাভাবিকভাবে হস্তক্ষেপ করেছে। এক পর্যায়ে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়কে বিরল খনিজ উৎপাদনকারী এমপি ম্যাটিরিয়ালসের সবচেয়ে বড় শেয়ারহোল্ডার বানানো হয়েছিল।
এবার নতুন করে ব্লুমবার্গ লিখেছে, ২০২২ সালের সিএইচআইপিএস বা চিপস আইন থেকে অর্থ ব্যবহার করে ইনটেলে বিনিয়োগ করার পরিকল্পনা করছে সরকার। আইনটি ট্রাম্পের আগে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সময়ে পাশ হয়েছিল। যার লক্ষ্য নিজস্ব সেমিকন্ডাক্টর উৎপাদন, গবেষণা এবং উন্নয়ন বৃদ্ধি করা, সেইসঙ্গে দেশের প্রতিযোগিতা জোরদার করা ।
গত বছর ইনটেল এই আইনের আওতায় প্রায় আটশো কোটি ডলারের ভর্তুকি পেয়েছিল। ওই অর্থ দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ওহাইওসহ কয়েকটি অঙ্গরাজ্যে নতুন কারখানা নির্মাণ শুরু হয়েছিল।
ইনটেলের সেই সময়ের প্রধান নির্বাহী প্যাট গেলসিঙ্গারের বিশ্বাস ছিল, এ কারখানাগুলোই কোম্পানিকে আবারও বিশ্বমানের উৎপাদন সক্ষমতায় ফিরিয়ে আনবে। তবে বর্তমান ইনটেল প্রধান লিপ-বু ট্যান সেই পরিকল্পনা কিছুটা রাশ টেনেছেন।
তিনি ঘোষণা করেন, নতুন কারখানা হবে বাজারের চাহিদা অনুযায়ী, সরাসরি বড় কোনো ঝুঁকি নিয়ে নয়। বিশ্লেষকদের মতে তার এই অবস্থান ট্রাম্পের ‘আমেরিকান ম্যানুফ্যাকচারিং’ শক্তিশালী করার চাপে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে।
বিশ্লেষকদের ধারণা, সরকারি সহায়তা পেলে ইনটেল তার লোকসানে থাকা ফাউন্ড্রি ব্যবসা পুনরুদ্ধারে কিছুটা সুযোগ পাবে। তবে কোম্পানির দুর্বল প্রোডাক্ট রোডম্যাপ এবং নতুন কারখানার জন্য গ্রাহক টানার সমস্যাই বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে থাকবে।
আর্থিক সেবাদাতা কোম্পানি হারগ্রিভস ল্যান্ডসডাউনের সিনিয়র ইক্যুইটি বিশ্লেষক ম্যাট ব্রিটজম্যান বলেন, “সরকারি সহায়তা ইনটেললের জন্য বড় পরিবর্তন আনতে পারে।” তবে তিনি সতর্ক করে বলেন, “এই সহায়তা আত্মবিশ্বাস বাড়াতে পারে কিন্তু উন্নত প্রযুক্তির প্রতিযোগিতায় যে ফারাক তৈরি হয়েছে, তা মেটাতে পারবে না।”
ইনটেল অনেক বছর ধরে তার প্রতিযোগিতামূলক শক্তি হারাচ্ছে, বিশেষ করে তাইওয়ানের চিপ নির্মাতা টিএসএমসি-এর সঙ্গে টেক্কা দেওয়ার ক্ষেত্রে। দ্রুত বর্ধনশীল এআই চিপ বাজারেও কোম্পানির প্রায় কোনো উপস্থিতি নেই, যা প্রধানত এনভিডিয়া নিয়ন্ত্রণ করছে। এ ছাড়া পিসি এবং ডেটা সেন্টার বাজারেও ইনটেল এএমডির-এর কাছে বাজার শেয়ার হারাচ্ছে।
কোম্পানির সর্বশেষ ১৮এ উৎপাদন প্রক্রিয়ায় মানের সমস্যা দেখা দিয়েছে। তৈরি চিপের মাত্র একটি ক্ষুদ্র অংশই গ্রাহকদের কাছে ব্যবহারযোগ্য। তাছাড়া, ইনটেল এখনও কিছু পরিমাণ চিপ তৈরিতে টিএসএমসি-এর উপর নির্ভরশীল।
বিশ্লেষকরা বলছেন, সরকারি সহায়তা ইনটেলকে আর্থিকভাবে সহায়তা করতে পারে, তবে সেটি কার্যকর হতে হলে কোম্পানির কাছে দৃঢ় এবং নির্ভরযোগ্য উৎপাদন প্রক্রিয়ার পরিকল্পনা থাকা জরুরি। সেটি ছাড়া সরকারি সহায়তা দেওয়া, “শত শত কোটি ডলার স্রেফ ফেলে দেওয়ার সমান” হবে।
ইনটেল ও হোয়াইট হাউস এ বিষয়ে মন্তব্য করেনি।
প্রযুক্তি ডেস্ক : বিডিপলিটিক্স টোয়েন্টিফোর ডটকম