০১:২৬ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৮ অগাস্ট ২০২৫
রেল ভবনে সরকারের দুই উপদেষ্টার সঙ্গে শিক্ষার্থীদের বৈঠকও ফলপ্রসু হয়নি বলে দাবি আন্দোলনকারীদের।

ডিএমপি কমিশনারের দুঃখ প্রকাশের পর শাহবাগ ছাড়লেন প্রকৌশল শিক্ষার্থীরা

মোহাম্মদ আলিমুজ্জামান - বিশেষ প্রতিনিধি : বিডিপলিটিক্স টোয়েন্টিফোর ডটকম
  • আপডেট সময় ১২:২৪:০১ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৮ অগাস্ট ২০২৫
  • / ৩৩ বার পড়া হয়েছে

 

বিভিন্ন দাবি নিয়ে প্রকৌশল শিক্ষার্থীদের যমুনামুখী মিছিলে পুলিশের লাঠিচার্জ ও হামলার ঘটনায় ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলীর দুঃখ প্রকাশের পর জনদুর্ভোগের মত কর্মসূচি থেকে সরে আসার ঘোষণা দিয়েছেন আন্দোলনকারীরা।

বুধবার রাত ১০টার পর শাহবাগে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের মাঝে এসে ডিএমপি কমিশনার শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশের বলপ্রয়োগকে অপ্রীতিকর হিসেবে তুলে ধরে দুঃখ প্রকাশ করেন ও ক্ষমা চান।

এ ঘটনা তদন্তে বৃহস্পতিবার পুলিশের তরফ থেকে একটি কমিটি গঠন করার কথাও বলেন তিনি।

ডিএমপি কমিশনার চলে যাওয়ার পর পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করে প্রায় ১২ ঘণ্টা পর রাত পৌনে ১১টার দিকে শাহবাগ ছেড়ে যান আন্দোলনরত বুয়েটসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।

অবস্থান কর্মসূচি তুলে নেওয়ার আগে তারা পরবর্তীতে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি হয় এমন কোনো কর্মসূচি পালন না করার ঘোষণা দেন। একই সঙ্গে তাদের দাবিগুলো নিয়ে সরকারের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার কথা বলেন।

এর আগে সন্ধ্যা ৭টা থেকে সাড়ে ৮টা পর্যন্ত রেল ভবনে সরকারের দুই উপদেষ্টার সঙ্গে চলমান আন্দোলনের দাবিগুলো নিয়ে (প্রথমে তিন দফা ও পরে শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশের হামলার পর ঘোষণা করা পাঁচ দফা) শিক্ষার্থীদের বৈঠক হয়। সেই বৈঠকে ফলপ্রসু কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি বলে দাবি করেন শিক্ষার্থীরা।

নিজেদের দাবি-দাওয়া নিয়ে আগের কয়েকদিনের ধারাবাহিক কর্মসূচির অংশ হিসেবে বুধবার বেলা ১১টা থেকে শাহবাগ মোড় অবরোধ করেন প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা, যার নেতৃত্বে ছিল বুয়েট। আগের দিন বেলা ৩টা থেকে রাত ৮টা অবধি চলা কর্মসূচির পর দ্বিতীয় দিনে তাদের শাহবাগে অবস্থানের কারণে পুরো এলাকায় যানজট ছড়িয়ে পড়ে।

বিক্ষোভের মধ্যে দুপুরের দিকে শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনার দিকে যাত্রা শুরু করলে ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলের মোড়ে পুলিশ বাধা দেয়।

এসময় লাঠিপেটা, জল কামান, টিয়ার গ্যাস ও সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়ে মিছিলকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয় পুলিশ। আন্দোলনকারীদের সঙ্গে ধাক্কাধাক্তি থেকে তা সংঘর্ষে রূপ নেয়। এতে বেশ কয়েকজন ছাত্র ও পুলিশ সদস্য আহত হন। ছাত্রদের উপর পুলিশের হামলা ও লাঠিচার্জের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে সমালোচনামুখর হন নেটিজেনরা।

সংঘর্ষের পর আবার শাহবাগে জমায়েত হয়ে বিক্ষোভ চালিয়ে যেতে থাকেন শিক্ষার্থীরা।

এরপর বিকাল ৫টার দিকে বিফ্রিং করে আন্দোলনকারীদের ওপর হামলার জন্য স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার ক্ষমা চাওয়ার দাবিসহ পাঁচ দাবি দেয় তারা। তা না হলে শাহবাগে অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয় তাদের তরফে। পরে রেলভবনে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন দুই উপদেষ্টা।

 

এরপর রাত সোয়া ৯টার দিকে শাহবাগ থানায় আসেন ডিএমপি কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলীসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। রাত ১০টার পরে কমিশনারসহ পুলিশ কর্মকর্তারা থানা থেকে বের হয়ে শাহবাগের শিক্ষার্থীদের জমায়েতে যান। ছাত্রদের চিৎকার চেঁচামেচি ও ভুয়া ভুয়া স্লোগানের মাঝেই মাইক হাতে কথা বলেন ডিএমপি কমিশনার।

তিনি বলেন, “হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের সামনে যে অপ্রীতিকর ঘটনা হয়েছে, সেজন্য আমি এই ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার হিসেবে দুঃখ প্রকাশ করছি। আমি অত্যন্ত দুঃখিত।”

পাশাপাশি রংপুরে বুয়েটের সাবেক শিক্ষার্থীকে ফোনে হত্যার হুমকি দেওয়ার ঘটনায় জড়িতকে গ্রেপ্তারে পুলিশ কাজ করছে বলে তুলে ধরেন তিনি।

এ প্রসঙ্গে ডিএমপি কমিশনার বলেন, “রংপুরের ঘটনায় রংপুরের নগর পুলিশ কমিশনারের সাথে আমি এইখানে আসার আগে কথা বলছি। সেখানে একটা জিডি হয়েছে। এই জিডির আসামিকে ধরার জন্য উনার সাথে কথা বলছি। উনি আমাকে কথা দিয়েছেন, যত দ্রুত সম্ভব সেই আসামিকে উনি ধরে দিবে।”

দেড় মিনিটের মত কমিশনার কথা বলার পুরোটা সময় শিক্ষার্থীরা ভুয়া ভুয়া স্লোগান দেন। এসময় তারা রমনা জোনের ডিসি মাসুদ আলমকে বরখাস্তের দাবিও তোলেন।

পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়, শিক্ষার্থীদের আন্দোলন সামাল দিতে গিয়ে ডিসি মাসুদ আলমসহ ৮ জন পুলিশ আহত হয়েছেন।

 

উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক

এর আগে সন্ধ্যা সোয়া ৭টায় গনি রোডের রেলভবনে সরকারের দুই উপদেষ্টার সঙ্গে ১১ শিক্ষার্থীর একটি প্রতিনিধি দল প্রায় সোয়া এক ঘণ্টা আলোচনা করেন। সেখানে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান এবং পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান তাদের সঙ্গে কথা বলেন।

বৈঠক থেকে বেরিয়ে উপদেষ্টারা সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কোনো কথা বলেননি।

শিক্ষার্থীরা বলছেন, সেখানে ফলপ্রসূ কোনো সিদ্ধান্তে তারা পৌঁছাতে পারেননি। বৃহস্পতিবার বিকালে সরকারের সঙ্গে আবারও আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে তাদের।

 

পরবর্তী কর্মসূচি

ডিএমপি কমিশনার চলে যাওয়ার পর প্রকৌশল অধিকার আন্দোলনের সভাপতি মোহাম্মদ ওয়ালিউল্লাহসহ কয়েকজন সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেন। এরপর তারা শাহবাগ ছেড়ে উঠে যান।

অলিউল্লাহ বলেন, বৃহস্পতিবার তারা জনদুর্ভোগ সৃষ্টিকারী কোনো কর্মসূচি দিচ্ছেন না। বিকেল ৫টার দিকে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার ইনস্টিটিউশনে একটি সভা করে তারা পরবর্তী কর্মসূচির বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানাবেন। শিক্ষার্থীদের কেউ কেউ বৃহস্পতিবার ক্লাস বর্জনের ঘোষণা দেন।

মোহাম্মদ জুবায়ের আহমেদ নামের একজন শিক্ষার্থী মাইক হাতে নিয়ে বৃহস্পতিবার সব প্রকৌশল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কমপ্লিট শাটডাউনের ঘোষণা দেন। তার ঘোষণা অনুযায়ী বৃহস্পতিবার কোনো প্রকৌশল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কোনো ধরনের ক্লাস পরীক্ষা হবে না।

 

পুলিশের বিবৃতি

এর আগে ডিএমপির এক বিবৃতিতে বলা হয়, প্রকৌশল শিক্ষার্থীদের সমাবেশকে অবৈধ হিসেবে তুলে ধরে আইনগতভাবেই তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেওয়া হয়েছে।

বুধবার রাতে এ বিবৃতিতে বলা হয়, উশৃঙ্খল জনতার মারমুখী আচরণ এবং তাদের ছোড়া ইটপাটকেলের আঘাতে ডিএমপির রমনা বিভাগের উপকমিশনার মাসুদ আলম, অতিরিক্ত উপকমিশনার রেজোয়ানুল ইসলামসহ কয়েকজন পুলিশ সদস্য আহত হন।

ঢাকা মহানগর পুলিশ অর্ডিন্যান্স অনুযায়ী সভা সমাবেশ নিষিদ্ধ ঘোষিত এলাকায় আরোপিত বিধি নিষেধ অমান্য করে প্রকৌশল শিক্ষার্থীদের যমুনা অভিমুখে যাওয়ার চেষ্টা করে।

বিবৃতিতে বলা হয়, “দুপুর অনুমান ১টায় রাজধানীর ব্যস্ততম সড়ক শাহবাগ মোড় দখল করে আন্দোলনরত প্রকৌশল শিক্ষার্থীরা সমাবেশ করতে থাকে। জনসাধারনের চলাচলকে স্বাভাবিক করতে শাহবাগ মোড়ে সমাবেত শিক্ষার্থীদেরকে রাস্তা ছেড়ে দিতে বারংবার অনুরোধ করা হয়। তথাপিও তারা রাস্তা বন্ধ করে সমাবেশ অব্যাহত রাখে এবং দুপুর অনুমান দেড়টায় তারা বেআইনি জনতাবদ্ধ হয়ে প্রধান উপদেষ্টার সরকারি বাসভবন যমুনা অভিমুখে রওনা করে ডিবিবিএল ফোয়ারার সম্মুখে অবস্থান নেয়।”

একপর্যায়ে তারা যমুনায় প্রবেশে উদ্যত হলে ‘অবৈধ সমাবেশকে’ পুলিশ আইনগতভাবে ছত্রভঙ্গ করে বলে বিবৃতিতে বলা হয়েছে।

জনসাধারণের চলাচলের রাস্তা বন্ধ করে সভা-সমাবেশ না করার জন্য ডিএমপির পক্ষ থেকে বারংবার বলা হওয়ার কথা তুলে ধরে বলা হয়, “জনজীবনে দুর্ভোগ সৃষ্টি করে এরূপ কর্মসূচি থেকে বিরত থাকার জন্য সংশ্লিষ্ট সকলকে পুনরায় অনুরোধ করা হলো।”

 

 

মোহাম্মদ আলিমুজ্জামান – বিশেষ প্রতিনিধি : বিডিপলিটিক্স টোয়েন্টিফোর ডটকম

নিউজটি শেয়ার করুন

রেল ভবনে সরকারের দুই উপদেষ্টার সঙ্গে শিক্ষার্থীদের বৈঠকও ফলপ্রসু হয়নি বলে দাবি আন্দোলনকারীদের।

ডিএমপি কমিশনারের দুঃখ প্রকাশের পর শাহবাগ ছাড়লেন প্রকৌশল শিক্ষার্থীরা

আপডেট সময় ১২:২৪:০১ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৮ অগাস্ট ২০২৫

 

বিভিন্ন দাবি নিয়ে প্রকৌশল শিক্ষার্থীদের যমুনামুখী মিছিলে পুলিশের লাঠিচার্জ ও হামলার ঘটনায় ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলীর দুঃখ প্রকাশের পর জনদুর্ভোগের মত কর্মসূচি থেকে সরে আসার ঘোষণা দিয়েছেন আন্দোলনকারীরা।

বুধবার রাত ১০টার পর শাহবাগে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের মাঝে এসে ডিএমপি কমিশনার শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশের বলপ্রয়োগকে অপ্রীতিকর হিসেবে তুলে ধরে দুঃখ প্রকাশ করেন ও ক্ষমা চান।

এ ঘটনা তদন্তে বৃহস্পতিবার পুলিশের তরফ থেকে একটি কমিটি গঠন করার কথাও বলেন তিনি।

ডিএমপি কমিশনার চলে যাওয়ার পর পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করে প্রায় ১২ ঘণ্টা পর রাত পৌনে ১১টার দিকে শাহবাগ ছেড়ে যান আন্দোলনরত বুয়েটসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।

অবস্থান কর্মসূচি তুলে নেওয়ার আগে তারা পরবর্তীতে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি হয় এমন কোনো কর্মসূচি পালন না করার ঘোষণা দেন। একই সঙ্গে তাদের দাবিগুলো নিয়ে সরকারের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার কথা বলেন।

এর আগে সন্ধ্যা ৭টা থেকে সাড়ে ৮টা পর্যন্ত রেল ভবনে সরকারের দুই উপদেষ্টার সঙ্গে চলমান আন্দোলনের দাবিগুলো নিয়ে (প্রথমে তিন দফা ও পরে শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশের হামলার পর ঘোষণা করা পাঁচ দফা) শিক্ষার্থীদের বৈঠক হয়। সেই বৈঠকে ফলপ্রসু কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি বলে দাবি করেন শিক্ষার্থীরা।

নিজেদের দাবি-দাওয়া নিয়ে আগের কয়েকদিনের ধারাবাহিক কর্মসূচির অংশ হিসেবে বুধবার বেলা ১১টা থেকে শাহবাগ মোড় অবরোধ করেন প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা, যার নেতৃত্বে ছিল বুয়েট। আগের দিন বেলা ৩টা থেকে রাত ৮টা অবধি চলা কর্মসূচির পর দ্বিতীয় দিনে তাদের শাহবাগে অবস্থানের কারণে পুরো এলাকায় যানজট ছড়িয়ে পড়ে।

বিক্ষোভের মধ্যে দুপুরের দিকে শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনার দিকে যাত্রা শুরু করলে ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলের মোড়ে পুলিশ বাধা দেয়।

এসময় লাঠিপেটা, জল কামান, টিয়ার গ্যাস ও সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়ে মিছিলকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয় পুলিশ। আন্দোলনকারীদের সঙ্গে ধাক্কাধাক্তি থেকে তা সংঘর্ষে রূপ নেয়। এতে বেশ কয়েকজন ছাত্র ও পুলিশ সদস্য আহত হন। ছাত্রদের উপর পুলিশের হামলা ও লাঠিচার্জের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে সমালোচনামুখর হন নেটিজেনরা।

সংঘর্ষের পর আবার শাহবাগে জমায়েত হয়ে বিক্ষোভ চালিয়ে যেতে থাকেন শিক্ষার্থীরা।

এরপর বিকাল ৫টার দিকে বিফ্রিং করে আন্দোলনকারীদের ওপর হামলার জন্য স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার ক্ষমা চাওয়ার দাবিসহ পাঁচ দাবি দেয় তারা। তা না হলে শাহবাগে অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয় তাদের তরফে। পরে রেলভবনে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন দুই উপদেষ্টা।

 

এরপর রাত সোয়া ৯টার দিকে শাহবাগ থানায় আসেন ডিএমপি কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলীসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। রাত ১০টার পরে কমিশনারসহ পুলিশ কর্মকর্তারা থানা থেকে বের হয়ে শাহবাগের শিক্ষার্থীদের জমায়েতে যান। ছাত্রদের চিৎকার চেঁচামেচি ও ভুয়া ভুয়া স্লোগানের মাঝেই মাইক হাতে কথা বলেন ডিএমপি কমিশনার।

তিনি বলেন, “হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের সামনে যে অপ্রীতিকর ঘটনা হয়েছে, সেজন্য আমি এই ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার হিসেবে দুঃখ প্রকাশ করছি। আমি অত্যন্ত দুঃখিত।”

পাশাপাশি রংপুরে বুয়েটের সাবেক শিক্ষার্থীকে ফোনে হত্যার হুমকি দেওয়ার ঘটনায় জড়িতকে গ্রেপ্তারে পুলিশ কাজ করছে বলে তুলে ধরেন তিনি।

এ প্রসঙ্গে ডিএমপি কমিশনার বলেন, “রংপুরের ঘটনায় রংপুরের নগর পুলিশ কমিশনারের সাথে আমি এইখানে আসার আগে কথা বলছি। সেখানে একটা জিডি হয়েছে। এই জিডির আসামিকে ধরার জন্য উনার সাথে কথা বলছি। উনি আমাকে কথা দিয়েছেন, যত দ্রুত সম্ভব সেই আসামিকে উনি ধরে দিবে।”

দেড় মিনিটের মত কমিশনার কথা বলার পুরোটা সময় শিক্ষার্থীরা ভুয়া ভুয়া স্লোগান দেন। এসময় তারা রমনা জোনের ডিসি মাসুদ আলমকে বরখাস্তের দাবিও তোলেন।

পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়, শিক্ষার্থীদের আন্দোলন সামাল দিতে গিয়ে ডিসি মাসুদ আলমসহ ৮ জন পুলিশ আহত হয়েছেন।

 

উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক

এর আগে সন্ধ্যা সোয়া ৭টায় গনি রোডের রেলভবনে সরকারের দুই উপদেষ্টার সঙ্গে ১১ শিক্ষার্থীর একটি প্রতিনিধি দল প্রায় সোয়া এক ঘণ্টা আলোচনা করেন। সেখানে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান এবং পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান তাদের সঙ্গে কথা বলেন।

বৈঠক থেকে বেরিয়ে উপদেষ্টারা সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কোনো কথা বলেননি।

শিক্ষার্থীরা বলছেন, সেখানে ফলপ্রসূ কোনো সিদ্ধান্তে তারা পৌঁছাতে পারেননি। বৃহস্পতিবার বিকালে সরকারের সঙ্গে আবারও আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে তাদের।

 

পরবর্তী কর্মসূচি

ডিএমপি কমিশনার চলে যাওয়ার পর প্রকৌশল অধিকার আন্দোলনের সভাপতি মোহাম্মদ ওয়ালিউল্লাহসহ কয়েকজন সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেন। এরপর তারা শাহবাগ ছেড়ে উঠে যান।

অলিউল্লাহ বলেন, বৃহস্পতিবার তারা জনদুর্ভোগ সৃষ্টিকারী কোনো কর্মসূচি দিচ্ছেন না। বিকেল ৫টার দিকে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার ইনস্টিটিউশনে একটি সভা করে তারা পরবর্তী কর্মসূচির বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানাবেন। শিক্ষার্থীদের কেউ কেউ বৃহস্পতিবার ক্লাস বর্জনের ঘোষণা দেন।

মোহাম্মদ জুবায়ের আহমেদ নামের একজন শিক্ষার্থী মাইক হাতে নিয়ে বৃহস্পতিবার সব প্রকৌশল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কমপ্লিট শাটডাউনের ঘোষণা দেন। তার ঘোষণা অনুযায়ী বৃহস্পতিবার কোনো প্রকৌশল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কোনো ধরনের ক্লাস পরীক্ষা হবে না।

 

পুলিশের বিবৃতি

এর আগে ডিএমপির এক বিবৃতিতে বলা হয়, প্রকৌশল শিক্ষার্থীদের সমাবেশকে অবৈধ হিসেবে তুলে ধরে আইনগতভাবেই তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেওয়া হয়েছে।

বুধবার রাতে এ বিবৃতিতে বলা হয়, উশৃঙ্খল জনতার মারমুখী আচরণ এবং তাদের ছোড়া ইটপাটকেলের আঘাতে ডিএমপির রমনা বিভাগের উপকমিশনার মাসুদ আলম, অতিরিক্ত উপকমিশনার রেজোয়ানুল ইসলামসহ কয়েকজন পুলিশ সদস্য আহত হন।

ঢাকা মহানগর পুলিশ অর্ডিন্যান্স অনুযায়ী সভা সমাবেশ নিষিদ্ধ ঘোষিত এলাকায় আরোপিত বিধি নিষেধ অমান্য করে প্রকৌশল শিক্ষার্থীদের যমুনা অভিমুখে যাওয়ার চেষ্টা করে।

বিবৃতিতে বলা হয়, “দুপুর অনুমান ১টায় রাজধানীর ব্যস্ততম সড়ক শাহবাগ মোড় দখল করে আন্দোলনরত প্রকৌশল শিক্ষার্থীরা সমাবেশ করতে থাকে। জনসাধারনের চলাচলকে স্বাভাবিক করতে শাহবাগ মোড়ে সমাবেত শিক্ষার্থীদেরকে রাস্তা ছেড়ে দিতে বারংবার অনুরোধ করা হয়। তথাপিও তারা রাস্তা বন্ধ করে সমাবেশ অব্যাহত রাখে এবং দুপুর অনুমান দেড়টায় তারা বেআইনি জনতাবদ্ধ হয়ে প্রধান উপদেষ্টার সরকারি বাসভবন যমুনা অভিমুখে রওনা করে ডিবিবিএল ফোয়ারার সম্মুখে অবস্থান নেয়।”

একপর্যায়ে তারা যমুনায় প্রবেশে উদ্যত হলে ‘অবৈধ সমাবেশকে’ পুলিশ আইনগতভাবে ছত্রভঙ্গ করে বলে বিবৃতিতে বলা হয়েছে।

জনসাধারণের চলাচলের রাস্তা বন্ধ করে সভা-সমাবেশ না করার জন্য ডিএমপির পক্ষ থেকে বারংবার বলা হওয়ার কথা তুলে ধরে বলা হয়, “জনজীবনে দুর্ভোগ সৃষ্টি করে এরূপ কর্মসূচি থেকে বিরত থাকার জন্য সংশ্লিষ্ট সকলকে পুনরায় অনুরোধ করা হলো।”

 

 

মোহাম্মদ আলিমুজ্জামান – বিশেষ প্রতিনিধি : বিডিপলিটিক্স টোয়েন্টিফোর ডটকম