সার্জিও গরকে ভারতে রাষ্ট্রদূত করে পাঠাচ্ছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। তবে গরের দায়িত্ব কেবল ভারতেই সীমাবদ্ধ থাকছে না, দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়ার দেশগুলোরও বাড়তি দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে তাকে।
‘ঘনিষ্ঠ বন্ধু’ গরকে ভারতে পাঠাচ্ছেন ট্রাম্প, দিল্লিতে মিশ্র প্রতিক্রিয়া

- আপডেট সময় ০৫:১৯:৫১ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২ সেপ্টেম্বর ২০২৫
- / ৩১ বার পড়া হয়েছে
ডনাল্ড ট্রাম্পের লেখা বই প্রকাশ করেছেন, তার ২০২৪ নির্বাচনী প্রচারে কোটি কোটি ডলার তুলেছেন, এমনকি ওয়াশিংটনে ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে অনুগত কর্মকর্তাদের নিয়োগেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। এবার সেই মহান ‘ঘনিষ্ঠ বন্ধু’ সার্জিও গরকেই ভারতে রাষ্ট্রদূত করে পাঠাচ্ছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।
ট্রাম্প গত সপ্তাহে গরকে ভারতের নতুন মার্কিন রাষ্ট্রদূত করার ঘোষণা দেন। তাকে ট্রাম্প বলেছেন নিজের “ঘনিষ্ঠ বন্ধু” এবং এমন একজন, যার ওপর তিনি “পুরোপুরি ভরসা” করতে পারেন।
তবে গরের দায়িত্ব কেবল ভারতেই সীমাবদ্ধ থাকছে না, দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়ার অন্যান্য দেশ—যার মধ্যে পাকিস্তানও পড়বে সেগুলোর বড়তি দায়িত্বও দেওয়া হচ্ছে তাকে। তিনি এই দেশগুলোতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের বিশেষ দূত হিসেবে কাজ করবেন।
ভারতে গরের নিয়োগ এমন সময়ে হল যখন রাশিয়া থেকে তেল কেনা নিয়ে দিল্লির সঙ্গে যখন ওয়াশিংটনের টানাপোড়েন চলছে। গরের নিয়োগ নিয়ে ভারতে দেখা দিয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া।
কারও মতে, ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ সহযোগীকে ভারতে পাঠানো ইতিবাচক বার্তা; অন্যরা বলছেন, পাকিস্তানসহ দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়ার দেশগুলোও গরের দায়িত্বে থাকাটা ভারতের জন্য অস্বস্তির কারণ হতে পারে, বিশেষত কাশ্মীরের মতো সংবেদনশীল বিষয়ে।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র নীতি বিষয়ক থিংকট্যাংক ‘কাউন্সিল অন ফরেন রিলেশনস’-এর অ্যালিসা আয়রেস বলেন, “ভারত সাধারণত চায় না পাকিস্তানের সঙ্গে এক কাতারে দেখা হোক তাদেরকে। ফলে এই অতিরিক্ত দায়িত্ব ভারতের জন্য জটিলতা তৈরি করতে পারে।”
আর ‘আমেরিকান ফরেন পলিসি কাউন্সিল’ এর সিনিয়র ফেলো লরেন্স হাসের মতে, ট্রাম্প হয়ত ভারতকে এই ইঙ্গিতও দিতে চাইছেন যে, ভারতের রাষ্ট্রদূতের পদে একজন কর্মকর্তার ফুলটাইম কজ করার প্রয়োজন আছে বলে তিনি মনে করেন না‘‘‘।
তিনি বলেন, “ভারতের নেতারা এটিকে অসম্মান এবং অপমান হিসেবেই নেবেন এবং এর ফলে যুক্তরাষ্ট্র-ভারত সম্পর্ক আরও তিক্ত হবে।”
এমন ঘটনা এর আগে ঘটেছিল ২০০৯ সালে, যখন তৎকালীন বারাক ওবামা প্রশাসন রিচার্ড হলব্রুককে পাকিস্তান-আফগানিস্তান ও ভারতের বিশেষ দূত বানানোর চিন্তা-ভাবনা করেছিল। নয়াদিল্লির এই নিয়োগের বিরুদ্ধে লবিং করে। শেষ পর্যন্ত ভারত বাদে হলব্রুককে দায়িত্ব দেওয়া হয় পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের।
কিন্তু ট্রাম্প ওবামার মতো নন। তিনি প্রকাশ্যে দাবি করেছেন, সম্প্রতি চারদিনের ভারত-পাকিস্তান সংঘাত নিরসনে মধ্যস্থতার কৃতিত্ব তারই; যা ভারত সরাসরি অস্বীকার করেছে। এছাড়া, বাণিজ্য আলোচনায় ট্রাম্প প্রশাসন বারবার ভারতকে চাপ দিয়েছে কৃষি ও দুগ্ধ খাত খুলে দিতে, যা ভারত বরাবরই রক্ষা করতে চাইছে।
গর এই প্রেক্ষাপটে ভারতের সঙ্গে এই চড়াই-উৎরাই ঠিক করতে কতটা সহায়ক হবেন সেটিই এখন প্রশ্ন। হাডসন ইনস্টিটিউটের বিশ্লেষক বিল ড্রেক্সেল বলছেন, “সিদ্ধান্ত আসলে ট্রাম্পই নেন, তাই তার সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ সহযোগীকে ভারত পাঠানো ভারত-যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কের জন্য বড় সম্পদ হতে পারে।” তবে তিনি সতর্ক করেছেন, গরের কূটনৈতিক অভিজ্ঞতা খুবই সীমিত, ফলে শুরুটা কঠিন হতে পারে।
‘কাউন্সিল অন ফরেন রিলেশনস’-এর অ্যালিসা আয়রেসও মনে করেন, গরের প্রেসিডেন্টের কাছাকাছি থাকা জটিল নীতিগত অচলাবস্থা কাটাতে সহায়ক হতে পারে।
কিন্তু ‘আমেরিকান ফরেন পলিসি কাউন্সিল’ এর সিনিয়র ফেলো লরেন্স হাসের মতে, গরের কূটনৈতিক অভিজ্ঞতার অভাব আছে। সেকারণে ভারত-যুক্তরাষ্ট্রের ইতোমধ্যেই টানাপোড়েনের সম্পর্কের মাঝে তিনি বরং একটি সমস্যা হয়ে দাঁড়াতে পারেন।
সেক্ষেত্রে ভারত গরের নিয়োগকে তাদের মুখে চপেটাঘাত হিসাবে দেখতে পারে এবং এতে এটাই আরও বেশি করে প্রমাণিত হতে পারে যে, ট্রাম্প ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের পরোয়া করেন না।
কে এই গর?
গর কেবল ট্রাম্প নন, পুরো ট্রাম্প পরিবারের কাছেই প্রিয়। ইভাঙ্কা, জ্যারেড কুশনার, ট্রাম্প জুনিয়র—সবার সঙ্গেই তার ঘনিষ্ঠতা। কুশনার তাকে বলেছেন “বিশ্বস্ত ও সহজ-সরল”।
প্রাক্তন কংগ্রেসম্যান ম্যাট গেইটস স্মরণ করেছেন, ট্রাম্পের নির্বাসনের সময়ে ফ্লোরিডার পার্টিতে ডিজে হিসেবেও গান বাজাতেন তিনি। তবে পশ্চিমা সংবাদমাধ্যমে গরকে দেখা হয়, ট্রাম্পের অন্যতম নির্ভরযোগ্য সেনানীরূপে—যিনি কাজ শেষ না করে থামেন না।
তিনি ট্রাম্প প্রশাসনে নিয়োগ পাওয়া কর্মকর্তাদের আনুগত্য যাচাইয়ের কাজ করেছেন। গত জুনে ধনকুবের ইলন মাস্ক তাকে “সাপ” আখ্যা দেন, যখন নিউ ইয়র্ক পোস্ট রিপোর্ট করে যে, গর নিজের স্থায়ী নিরাপত্তা ছাড়পত্রের আবেদন করেননি।
তবে হোয়াইট হাউজ জানায়, তার কার্যকর ছাড়পত্র রয়েছে এবং তিনি নিয়ম মেনেই কাজ করছেন। ২০২৪ সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ট্রাম্পের জয়ের পিছনে গরের বড় অবদান ছিল। ট্রাম্প দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় আসার পর হোয়াইট হাউসে প্রেসিডেন্সিয়াল পার্সোনেল পদে সার্জিও গরকে নিয়োগ করেন।
মাঝে মাঝে নিজেকে মাল্টিজ পরিচয় দিলেও ১৯৮৬ সালে গর জন্ম নিয়েছিলেন তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের উজবেকিস্তানে। শৈশব কেটেছে মাল্টায়, আর ১২ বছর বয়সে চলে যান যুক্তরাষ্ট্রে।
ছাত্রজীবন থেকেই রিপাবলিকান রাজনীতির প্রতি টান ছিল। তখন তিনি নিজের আসল পদবি গোরোখভস্কি ব্যবহার করতেন, পরে সংক্ষিপ্ত করে রাখেন ‘গর’।
২০০৮ সালে রিপাবলিকান ন্যাশনাল কমিটিতে জুনিয়র স্টাফার হন। সেসময় ওবামাকে লক্ষ্য করে প্রচারণায় তাকে কাঠবিড়ালির পোশাকও পরতে হয়েছিল। দুই বছর ফক্স নিউজে কাজ করার পর কয়েকজন রিপাবলিকান নেতার সঙ্গে যুক্ত হন, আর ২০২০ সালে ট্রাম্পের তহবিল সংগ্রহ টিমে যোগ দেন।
এক বছর পর ট্রাম্প জুনিয়রের সঙ্গে মিলে গড়ে তোলেন উইনিং টিম পাবলিশিং, যেখান থেকে ট্রাম্পের বেশ কয়েকটি বই প্রকাশিত হয়েছে, যার মধ্যে ফটোবুক ‘সেভ আমেরিকা’ উল্লেখযোগ্য।
২০২২ সাল থেকে তিনি ফ্লোরিডায় একটি বাড়ির মালিক, মার-আ-লাগো থেকে অল্প দূরত্বে। ফলে ট্রাম্পের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখার সুযোগ তার সবসময়ই আছে।
মিজানুর রহমান খান – বিশেষ প্রতিনিধি, আন্তর্জাতিক ডেস্ক : বিডিপলিটিক্স টোয়েন্টিফোর ডটকম