এই কমিটির প্রতিবেদন অনুযায়ী অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে, জানালেন বিসিবি সভাপতি আমিনুল ইসলাম।
বিপিএল: এবার অভিযুক্তদের শাস্তি নির্ধারণে আরেকটি কমিটি

- আপডেট সময় ১২:৫২:০৯ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫
- / ৩১ বার পড়া হয়েছে
কমিটির পর কমিটি। এরপর আরও কমিটি! বিপিএলে দুর্নীতির অভিযোগের চূড়ান্ত সুরাহা করতে এই প্রক্রিয়ার ভেতর দিয়েই যাচ্ছে বিসিবি। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে এবার আরেকটি কমিটি গঠন করার কথা জানালেন বিসিবি সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল।
গত বিপিএলে নানা দুর্নীতির অভিযোগ, অব্যবস্থাপনা ও পদ্ধতিগত ঘাটতি খতিয়ে দেখতে শুরুতে একটি স্বাধীন তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। সেই কমিটি দীর্ঘ তদন্তের পর তাদের প্রতিবেদন জমা দেয় কিছুদিন আগে। গত ১ সেপ্টেম্বর বিসিবির ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের প্রধান নাজমুল আবেদীন জানান, সেই প্রতিবেদনের সুপারিশ বাস্তবায়নে সম্ভাব্য করণীয় ঠিক করতে আরেকটি কমিটি গঠন করেছে বোর্ড।
সপ্তাহখানেকের মধ্যে এই কমিটি বিসিবির কাছে প্রতিবেদন জমা দেবে বলে জানান নাজমুল। এরপর পেরিয়ে গেছে সাত দিন।
রাজধানী একটি হোটেলে জাতীয় লিগ টি-টোয়েন্টির উদ্বোধনী আয়োজন শেষে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে বিসিবি সভাপতি আমিনুল জানালেন আরেকটি কমিটি গঠনের খবর।
“আমরা একটি তদন্ত রিপোর্ট পেয়েছি। আমাদের যে তদন্তকারি দল ছিল, একজন বিচারপতি ছিলেন, একজন ব্যারিস্টার ও একজন সাবেক ক্রিকেটার, তারা রিপোর্টের সারাংশ জমা দিয়েছেন আমাদের কাছে এবং সারাংশে বেশ কিছু জিনিস আছে, যেগুলো আমাদেরকে অনেক চিন্তায় ফেলে দিয়েছে। এটা যথাযথভাবে বাস্তবায়নের জন্য আমরা একটা কমিটি করেছি, কারণ আমরা কেউ বিশেষজ্ঞ নই। খুব শিগগিরই আপনারা জানতে পারবেন।”
এই কমিটিও হবে তিন সদস্যের। তারা অভিযুক্তদের নাম আলাদা করে লিখে পাশে তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, কতটুকু প্রমাণ আছে এবং শাস্তি কেমন হওয়া উচিত, সেসব সুপারিশ করবেন।
সম্ভাব্য অভিযুক্ত হিসেবে বেশ কজন ক্রিকেটার ও কর্মকর্তার নাম বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে উঠে এসেছে গত কিছুদিনে। সেই তালিকায় থাকা ক্রিকেটারকে এ দিনই জাতীয় লিগ টি-টোয়েন্টির এই আয়োজনে দেখা গেছে মঞ্চে। তবে স্রেফ সন্দেহ থেকে কারও দিকে আঙুল না তুলে পুরোপুরি প্রমাণ চান বোর্ড প্রধান।
“এখানে সন্দেহ বলে কিছু নেই। একেবারে জমাট প্রমাণ না পাওয়া পর্যন্ত কাউকে নিয়ে কিছু বলা যাবে না। এটার আমি বিশেষজ্ঞও নই। এজন্যই আমরা কমিটি করে দিয়েছি। তারা খুব শিগগিরই একটি রিপোর্ট দেবে, যে রিপোর্টের প্রেক্ষিতে আমরা অ্যাকশনে যেতে পারব।”
“প্রমাণ বলতে বোঝাচ্ছি… আমাদের কাছে প্রমাণ কিছু আছে, রিপোর্ট আছে, অনুসন্ধানের ফল আছে কিছু। কিন্তু অ্যাকশন নেওয়ার জন্য যে প্রক্রিয়ার দরকার, সেই প্রক্রিয়ায় আমরা আসতে যাচ্ছি। এখানে একটাই আইনি প্রক্রিয়া সম্পৃক্ত যে, কোনো ভুল করা যাবে না।”
স্পর্শকাতর ব্যাপার বলেই এখানে কোনো ফাঁক রাখতে চান না বাংলাদেশ ক্রিকেটের নিয়ন্তা সংস্থার প্রধান। এজন্যই সবকিছু শেষ করতে সময় লাগছে। অভিযুক্তরা এই জাতীয় লিগ টি-টোয়েন্টিতে খেলবেন বলেও ধরে নেওয়া যায় এখন। তবু সময় নিয়ে হলেও সবকিছু উপযুক্তভাবে শেষ করতে চান আমিনুল।
“এটা এতটাই গুরুত্বপূর্ণ ওই ক্রিকেটারের জন্য বা ক্রিকেটারদের জন্য কিংবা কর্মকর্তাও হতে পারে, যে কেউ হতে পারে, আবারও বলছি, এখানে আমরা কোনো ভুল করতে চাই না। আমরা একদম যথাযথ পদক্ষেপ নিতে চাই। তবে আপনাদের কাছে আমার অনুরোধ, আপনাদেরও দায়িত্ব আছে খেলাটাকে সুরক্ষা দেওয়ার। যতদিন না আমরা ন্যায্য ক্রিকেট উপহার দেব, ততদিন ভালো ক্রিকেটার তুলে আনতে পারব না। প্রতিযোগিতা বাড়াতে পারব না। এটা আমাদের এক নম্বর প্রাধান্য, খেলাকে সুরক্ষা দেওয়া।”
আমিনুল বিসিবি প্রধানের দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই অবশ্য খেলাটায় সব ধরনের দুর্নীতি বন্ধ করতে বেশ সোচ্চার হওয়ার কথা বলে আসছেন বারবার। এর মধ্যেই বিসিবির দুর্নীতি দমন বিভাগের পরামর্শক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে আইসিসি ইন্টেগ্রিটি ইউনিটের সাবেক মহাব্যবস্থাপক অ্যালেক্স মার্শালকে। যুক্তরাজ্য পুলিশের সাবেক এই কর্মকর্তা কাজ শুরু করেও দিয়েছেন।
এছাড়াও সামনে আরও কিছু পদক্ষেপ নেওয়ার ঘোষণা দিলেন বিসিবি সভাপতি।
“আমরা প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে যেটা নিচ্ছি, সেটা হচ্ছে এই খেলাটায় আমাদের নিয়ন্ত্রণ আছে ক্রিকেটারদের ওপর, ম্যাচ অফিসিয়ালদের ওপর, মাঠে যারা কাজ করেন, তাদের ওপরে। তাদের সবার জন্য আমরা প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করছি। প্রতিটি বিভাগে যারা আছেন, প্রশিক্ষণের পাশাপাশি তাদেরকে স্বাক্ষর করতে হবে এবং এরপরই কেবল আমরা তাদেরকে অংশগ্রহণ করতে দেব।”
“আরেকটি ব্যাপার হচ্ছে যে, এই খেলাটিকে সুরক্ষার জন্য আমরা সংবাদমাধ্যম কাজে লাগিয়ে প্রচারণা করতে যাচ্ছি খুব শিগগিরই। সেটা হলো যে, যেখানে আমাদের সরাসরি সুযোগ নেই, অভিভাবকদের জন্য, শিক্ষকদের জন্য, কর্মকর্তাদের জন্য… এখানে বোঝানো হবে নৈতিক মূল্যবোধগুলো, বোঝানো হবে ধর্মীয় মূল্যবোধ, বাংলাদেশের আইন বোঝানো। এসবের ওপর ভিত্তি করে দ্রুতই আমরা প্রচারণা চালাব, যেন দেশের ক্রিকেটকে আমরা নিষ্কলুষ ও সুরক্ষিত করতে পারি।”
স্পোর্টস ডেস্ক : বিডিপলিটিক্স টোয়েন্টিফোর ডটকম