এ প্রজন্মের ৫০ শতাংশ মানুষ বলেছেন, প্রতিদিন তিন ঘণ্টার বেশি সময় স্মার্টফোনে কাটান তারা। ২০ শতাংশ মানুষ আবার দিনে ৫ ঘণ্টারও বেশি সময় ফোনে থাকেন।
‘বেবি বুমার’ প্রজন্মের অর্ধেকই দৈনিক মোবাইলে কাটায় ৩ ঘণ্টা

- আপডেট সময় ১২:৩৯:২৯ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৫
- / ৩৩ বার পড়া হয়েছে
বেবি বুমার প্রজন্মের অর্ধেক মানুষ প্রতিদিন তিন ঘণ্টার বেশি সময় তাদের ফোনে কাটাচ্ছেন বলে উঠে এসেছে সাম্প্রতিক এক জরিপে।
‘অ্যাডিকশনরিসোর্স ডটনেট’-এর জরিপে উঠে এসেছে, ফোন ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম অতিরিক্ত ব্যবহারের কারণে ডিজিটাল আসক্তির লক্ষণ দেখা গিয়েছে ৬১ থেকে ৭৯ বছর বয়সীদের মধ্যে।
বেশিরভাগ মানুষের ধারণা, এ ধরনের আসক্তি সাধারণত তরুণদের মধ্যে বেশি দেখা যায়। তবে বড়রাও এই ‘দৌড়ে’ পিছিয়ে নেই। তারাও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম আসক্তির সমস্যায় পড়েছেন।
১৯৪৬ থেকে ১৯৬৪ সালের মধ্যে যাদের জন্ম তাদেরকে বেবি বুমার প্রজন্ম বলা হয়। এদের বয়স এখন ৬১ থেকে ৭৯ বছর চলছে।
‘অ্যাডিকশনরিসোর্স ডটনেট’ প্রতিবেদনে লিখেছে, তাদের জরিপে অংশ নেওয়া মানুষদের মধ্যে বেশিরভাগই বেবি বুমার প্রজন্ম। এ প্রজন্মের ৫০ শতাংশ মানুষ বলেছেন, প্রতিদিন তিন ঘণ্টার বেশি সময় স্মার্টফোনে কাটান তারা। যার মধ্যে প্রায় ২০ শতাংশ মানুষ আবার দিনে ৫ ঘণ্টারও বেশি সময় ফোনে থাকেন।
প্রাপ্তবয়স্ক বা বয়স্কব্যক্তিদের ফোন-টিভি-কম্পিউটার মিলিয়ে অবসর কাটানো বা বিনোদনের জন্য স্ক্রিনে তাকিয়ে থাকার সময় দুই ঘণ্টার কম হলে ভালো হয়। তবে অনেকেই এর চেয়ে অনেক বেশি সময় ব্যয় করছেন বলে প্রতিবেদনে লিখেছে আমেরিকান সাপ্তাহিক সাময়িকী নিউজউইক।
২০২৪ সালে ‘পিউ রিসার্চ’-এর এক গবেষণায় দেখা গিয়েছিল, প্রায় অর্ধেক আমেরিকান টিনএজার ‘প্রায় সবসময়ই’ অনলাইনে থাকে। এখন দেখা যাচ্ছে, এ আচরণ কেবল তরুণদের মধ্যেই সীমিত নয়, বয়স্করাও অনেকেই এখন একই রকমভাবে অনলাইনে থাকছেন।
ছোটবেলায় মোবাইল ফোন বা ইন্টারনেট ছাড়া বড় হয়েছেন বেবি বুমার প্রজন্ম। ফলে এখন বয়সের শেষ সময়ে তারা মোবাইল ফোন অনেক বেশি ব্যবহার করছেন।
‘অ্যাডিকশনরিসোর্স ডটনেট’-এর জরিপটি করা হয়েছে ৫৯ থেকে ৭৭ বছর বয়সী দুই হাজারেরও বেশি মানুষের ওপর। যাদের বেশিরভাগই বেবি বুমার প্রজন্মের।
জরিপে পাওয়া তথ্য অনুসারে, ৪০ শতাংশ মানুষ বলেছেন, ফোন বা অন্য কোনো ডিজিটাল ডিভাইসের কাছে না থাকলে তারা উদ্বিগ্ন বা অস্বস্তি বোধ করেন। ৫০ শতাংশ মানুষ বলেছেন, প্রতিদিন ঘুম থেকে ওঠার এক ঘণ্টার মধ্যেই ফোন চেক করেন তারা।
যুক্তরাষ্ট্রের ‘এইচআর কনসালটেন্ট’ ও প্রজন্ম বিশ্লেষক ব্রায়ান ড্রিসকল বলেছেন, “বুমাররা ঘণ্টার পর ঘণ্টা ফোনে চোখ গুঁজে থাকেন। তবে বিষয়টি আসলে সংযোগ নয়, বরং বিচ্ছিন্নতা। অনেকেই অনলাইনে সত্য আর মিথ্যার পার্থক্য করতে পারেন না। ফলে তারা ভুল তথ্য ও ডিজিটাল ‘ইকো চেম্বার’-এর মধ্যে পড়ে যান। এটি কেবল বেশি সময় ফোনে থাকার সমস্যাই নয়, বরং একটি প্রজন্মের একাকিত্ব ও মানসিক দ্বন্দ্ব নিয়ে বিভ্রান্ত হওয়ারই ইঙ্গিত।”
‘অ্যাডিকশনরিসোর্স ডটনেট’-এর মানসিক স্বাস্থ্য পরামর্শক রুথ হার্নান্দেজ বলেছেন, “সত্যি বলতে এখন আর অবাক হওয়ার কিছু নেই যে, বেবি বুমাররা ঘণ্টার পর ঘণ্টা ফোনে কাটান। অনেকেই এখন ফোন ব্যবহার করেন প্রায় সব কিছুর জন্য, পরিবারের সঙ্গে কথা বলা, স্বাস্থ্য সম্পর্কিত অ্যাপের ব্যবহার, খবর পড়া, সামাজিক মাধ্যমে যুক্ত থাকা, এমনকি শো দেখা বা ভিডিও দেখার জন্যও। এটি তাদের দৈনন্দিন জীবনের অংশ হয়ে উঠেছে, ঠিক যেমনটি তরুণদের বেলায় হয়েছে।”
হার্নান্দেজ বলেছেন, জরিপের বিভিন্ন ফলাফল থেকে ইঙ্গিত মেলে, ডিজিটাল আসক্তি কেবল তরুণ প্রজন্মেরই সমস্যা নয়।
“শেষ পর্যন্ত ডিজিটাল বিভিন্ন অভ্যাস কেবল আর বয়সের সঙ্গে সম্পর্কিত বিষয় হয়ে রইল না। এগুলো এখন আমাদের সবার জীবন, কাজ আর যোগাযোগের অংশ হয়ে গিয়েছে। আপনি ২৫ হোন বা ৭৫– ফোনের প্রতি টান সবার জন্যই বাস্তব।”
তথ্যপ্রযুক্তি ডেস্ক : বিডিপলিটিক্স টোয়েন্টিফোর ডটকম