১১:২৮ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৫
নেপালে এই মুহূর্তে নেতৃত্বে শূন্যতা তৈরি হয়েছে। দ্রুত কোনও সরকার বা অন্তর্বর্তী কর্তৃপক্ষ দায়িত্ব না নিলে সহিংস পরিস্থিতি আরও কদর্য রূপ নেওয়ার আশঙ্কা আছে।

পরিবর্তনের সন্ধিক্ষণে নেপাল, শৃঙ্খলা ফেরানোই এ মুহূর্তে জরুরি

মিজানুর রহমান খান - বিশেষ প্রতিনিধি, আন্তর্জাতিক ডেস্ক : বিডিপলিটিক্স টোয়েন্টিফোর ডটকম
  • আপডেট সময় ০২:১৯:৩৪ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • / ২৪ বার পড়া হয়েছে

ছবি: রয়টার্স

 

হিমালয়ের দেশ নেপালে বিক্ষোভ কেবল নজিরবিহীনই নয়, বরং রাজনৈতিক শ্রেণির প্রতি ব্যাপক জনঅসন্তোষকেও স্পষ্ট করেছে।

কয়েকজন মন্ত্রীর বাড়িসহ রাজনীতিকদের বাসভবন ভাঙচুর ও আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। নিরাপত্তা বাহিনীর আশ্রয়ে চলে গেছেন অনেক নেতা, এমনকি মন্ত্রীও। এর মধ্য দিয়ে রাজনৈতিক নেতাদের বিরুদ্ধে মানুষের ক্ষোভ স্পষ্টই ধরা পড়েছে।

এখনও পর্যন্ত বিক্ষোভকারীরা দুর্নীতিবিরোধী স্লোগান ছাড়া অন্য কোনও নির্দিষ্ট দাবি তুলে ধরেনি। আন্দোলনটি স্বতঃস্ফূর্তই মনে হয়েছে, কোনও সংগঠিত নেতৃত্বও দেখা যায়নি।

প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলির পদত্যাগে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের এক সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে আছে নেপাল। তবে কে ওলির স্থলাভিষিক্ত হবেন বা নতুন কোনও শাসন কাঠামো গড়ে উঠবে কি না—সে বিষয়টি তাৎক্ষণিকভাবে স্পষ্ট হয়নি।

প্রবীণ রাজনীতিবিদরা পালিয়ে বেড়াচ্ছেন, নেতৃত্বে কেউ নেই। নিরাপত্তা বাহিনীর প্রধান ও আমলারা শান্তির আহ্বান জানাচ্ছেন—এতে বোঝা যাচ্ছে রাজনৈতিক নেতৃত্ব একপাশে সরে গেছে।

ফলে নেপালে এই মুহূর্তে ক্ষমতায় শূন্যতা তৈরি হয়েছে। দ্রুত কোনও সরকার বা অন্তর্বর্তী কর্তৃপক্ষ দায়িত্ব না নিলে সহিংস পরিস্থিতি আরও কদর্য রূপ নেওয়ার আশঙ্কা আছে।

নেপালের সেনাবাহিনী জনগণের কাছে সম্মানিত। এবং আইনশৃঙ্খলা ফেরাতে তারা ভূমিকাও রাখতে পারে। তবে মাওবাদীদের সঙ্গে দীর্ঘদিন গৃহযুদ্ধে লড়ে আসা সেনাবাহিনী আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় দ্বিধাগ্রস্ত হতে পারে।

কারণ, এ দায়িত্ব মূলত পুলিশ ও অন্যান্য নিরাপত্তা সংস্থার। তবে এই মুহূর্তে কারও নেতৃত্ব নেওয়াটা জরুরি।

বাংলাদেশ বা শ্রীলঙ্কার বিদ্রোহের সঙ্গে নেপালের বিক্ষোভের পার্থক্য হল: দেশটিতে মানুষ গোটা রাজনৈতিক শ্রেণি এবং দশকের পর দশক ধরে দেশে তাদের অব্যবস্থাপনা নিয়ে ক্ষুব্ধ।

২০০৮ সালে মাওবাদীরা রাজনীতির মূলধারায় আসার পর থেকে নেপালে ১৪ জন প্রধানমন্ত্রী হয়েছে। দলগুলোর জোট ভাঙা-গড়ার রাজনীতি তরুণদের হতাশ করেছে।

নেতৃত্বহীনতায় কোন পথে এগোবে নেপাল তা অনিশ্চিত। তবে এই মুহূর্তে অগ্রাধিকার একটাই। আর তা হল দেশে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা।

কারণ, সরকার পতনের পরও গণরোষের ইতি দেখা যাচ্ছে না দেশটিতে। খোঁজ নেই নেতাদের। কিন্তু কেন এমন পরিস্থিতি?

ফেইসবুক-সহ ২৬টি সমাজমাধ্যম নিষিদ্ধ করার প্রতিবাদে তরুণ ছাত্র-যুবদের গণবিক্ষোভের জেরে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই পতন হয়েছে প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলির নেতৃত্বাধীন কমিউনিস্ট পার্টি অফ নেপাল (ইউএমএল) এবং নেপালি কংগ্রেসের জোট সরকারের।

পদত্যাগে বাধ্য হয়েছেন প্রেসিডেন্ট রামচন্দ্র পৌড়েলও। সোমবার রাতে সামাজিকযোগাযোগমাধ্যমে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হলেও আন্দোলন থামেনি। দীর্ঘদিনের জমে থাকা ক্ষোভই বিস্ফোরিত হয়েছে।

নেপালে এমন বিক্ষোভ আগে দেখা যায়নি। অংশগ্রহণকারীরা নিজেদের ‘জেন জি’ নামে পরিচয় দিয়েছে। আর সেটিই আন্দোলনের প্রতীকে পরিণত হয়েছে।

কাঠমান্ডু, পোখারা ও ইতাহারিসহ বড় বড় শহরের কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের রাস্তায় নামতে আহ্বান জানানো হয়েছে।

তাদের দুটো স্পষ্ট দাবি ছিল: ১. সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সরকারের নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া (যা ইতোমধ্যে হয়েছে)। ২. দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহার বন্ধ করা।

নেপালের অর্থনীতি অনেকাংশেই পর্যটনের উপর নির্ভরশীল। পর্যটনের সঙ্গে জড়িত ব্যবসায়ীরা তাদের পেশাগত কাজের জন্য সমাজমাধ্যমেই যোগাযোগ করেন।

পাশাপাশি প্রবাসীদের সঙ্গে পরিবারের সদস্যদের যোগাযোগেরও অন্যতম মাধ্যম এই সমাজমাধ্যমগুলো। ফলে সমাজমাধ্যমের উপর নিষেধাজ্ঞা শুধুমাত্র তরুণ প্রজন্মকেই নয়, সবাইকেই সমস্যায় ফেলেছিল।

সাইবার অপরাধ, ভুয়ো এবং বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়ানোর উপর রাশ টানার কথা বলে সরকার সমাজমাধ্যমগুলো নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে আসছিল।

নেপালের সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের প্রেক্ষিতে গত মাসেই নেপাল সরকার বিভিন্ন সমাজমাধ্যম সংস্থার নিবন্ধীকরণ -এর জন্য উদ্যোগী হয়। এর জন্য গত ২৮ অগস্ট থেকে এক সপ্তাহের সময়সীমা দেওয়া হয়েছিল সমাজমাধ্যম সংস্থাগুলোকে।

এর মধ্যে যে সমাজমাধ্যমগুলো নেপাল সরকারের সঙ্গে নিবন্ধীকরণ হয়নি, সেগুলোকেই গত সপ্তাহে নিষিদ্ধ করে নেপাল প্রশাসন।

তবে কেবল সমাজমাধ্যমের উপর নিষেধাজ্ঞাই নয়, মূল ধারার দলগুলোর বিরুদ্ধে মানুষের ক্ষোভের অন্যতম কারণ হয়ে উঠেছিল ধারাবাহিক দুর্নীতির অভিযোগও।

 

সোমের রক্তপাতের ‘প্রতিশোধ’ হয় মঙ্গলবার:

তরুণদের বিক্ষোভে সোমবার অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতি ছিল নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুতে। হাজার হাজার তরুণ ছাত্র যুবক নেপালের পার্লামেন্টের বাইরে জড়ো হয়েছিলেন। বিক্ষোভকারীদের মধ্যে অনেক স্কুলে পড়ুয়াও ছিল।

শুধু রাজধানীতে নয়, বিক্ষোভ-বিদ্রোহের আঁচ ছড়িয়েছিল নেপালের অন্যস্থানেও। সোমবারের ওই বিক্ষোভে ওলির পুলিশ গুলি চালানোয় ১৯ জনের মৃত্যু হয়েছিল।

সোমবার গভীর রাতে ওলি সরকার সমাজমাধ্যমের উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের ঘোষণা দিলেও জনরোষ কমেনি। বরং মঙ্গলবার সকাল হতেই সেই ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ দেখা যায় কাঠমান্ডুর রাজপথে।

বেলা গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে পরিস্থিতি ক্রমশ পুলিশের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। মঙ্গলবারের বিক্ষোভে অন্তত তিনজন নিহত হয়। এ নিয়ে বিক্ষোভ শুরুর পর থেকে মোট মৃতের সংখ্যা দাঁড়ায় ২২ জনে।

সহিংস বিক্ষোভে ভরা এক দিনে সরকারি অফিসে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগসহ সিপিএম (ইউএমএল), নেপালি কংগ্রেসের সদর দপ্তরের পাশাপাশি হামলা হয় বিভিন্ন নেতা-মন্ত্রীদের বাড়িতে।

প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শের বাহাদুর দেউবা এবং তার স্ত্রী প্রহৃত হন। নেপালের উপপ্রধানমন্ত্রী তথা অর্থমন্ত্রী বিষ্ণু পৌডেলকে রাস্তায় ফেলে পেটায় জনতা।

মঙ্গলবার দুপুরে নেপালের পার্লামেন্ট ভবন এবং সুপ্রিম কোর্টেও উত্তেজিত জনতা ভাঙচুর চালিয়েছে। ভাঙচুর হয়েছে নেপালের অ্যাটর্নি জেনারেলের দপ্তরেও।

প্রধানমন্ত্রী ওলির ব্যক্তিগত বাসভবনে আগুন দেয় উত্তেজিত জনতা। তার আগে নেপালের প্রেসিডেন্ট ভবনে হামলা হয়।

রাতে পোখরার জেলে ঢুকে পড়েন আন্দোলনকারীরা। সেখান থেকে পালায় প্রায় ৯০০ বন্দি। নেপালের পশ্চিমাঞ্চলের দুই জেলায় কারাগার ভাঙার ঘটনাও ঘটেছে বলে নিশ্চিত করেছে কর্তৃপক্ষ।

কাশ্কি জেলার পুলিশ জানায়, মঙ্গলবার দুপুরে জেনারেশন জেড বিক্ষোভকারীরা কারাগারে প্রবেশ করলে সেখান থেকে ৭৭৩ জন কয়েদি পালিয়ে যায়। কাঠমান্ডুর নাখু জেলের একাংশে আগুন ধরানো হয় বলেও অভিযোগ আছে।

 

 

মিজানুর রহমান খান – বিশেষ প্রতিনিধি, আন্তর্জাতিক ডেস্ক : বিডিপলিটিক্স টোয়েন্টিফোর ডটকম

নিউজটি শেয়ার করুন

নেপালে এই মুহূর্তে নেতৃত্বে শূন্যতা তৈরি হয়েছে। দ্রুত কোনও সরকার বা অন্তর্বর্তী কর্তৃপক্ষ দায়িত্ব না নিলে সহিংস পরিস্থিতি আরও কদর্য রূপ নেওয়ার আশঙ্কা আছে।

পরিবর্তনের সন্ধিক্ষণে নেপাল, শৃঙ্খলা ফেরানোই এ মুহূর্তে জরুরি

আপডেট সময় ০২:১৯:৩৪ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৫

 

হিমালয়ের দেশ নেপালে বিক্ষোভ কেবল নজিরবিহীনই নয়, বরং রাজনৈতিক শ্রেণির প্রতি ব্যাপক জনঅসন্তোষকেও স্পষ্ট করেছে।

কয়েকজন মন্ত্রীর বাড়িসহ রাজনীতিকদের বাসভবন ভাঙচুর ও আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। নিরাপত্তা বাহিনীর আশ্রয়ে চলে গেছেন অনেক নেতা, এমনকি মন্ত্রীও। এর মধ্য দিয়ে রাজনৈতিক নেতাদের বিরুদ্ধে মানুষের ক্ষোভ স্পষ্টই ধরা পড়েছে।

এখনও পর্যন্ত বিক্ষোভকারীরা দুর্নীতিবিরোধী স্লোগান ছাড়া অন্য কোনও নির্দিষ্ট দাবি তুলে ধরেনি। আন্দোলনটি স্বতঃস্ফূর্তই মনে হয়েছে, কোনও সংগঠিত নেতৃত্বও দেখা যায়নি।

প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলির পদত্যাগে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের এক সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে আছে নেপাল। তবে কে ওলির স্থলাভিষিক্ত হবেন বা নতুন কোনও শাসন কাঠামো গড়ে উঠবে কি না—সে বিষয়টি তাৎক্ষণিকভাবে স্পষ্ট হয়নি।

প্রবীণ রাজনীতিবিদরা পালিয়ে বেড়াচ্ছেন, নেতৃত্বে কেউ নেই। নিরাপত্তা বাহিনীর প্রধান ও আমলারা শান্তির আহ্বান জানাচ্ছেন—এতে বোঝা যাচ্ছে রাজনৈতিক নেতৃত্ব একপাশে সরে গেছে।

ফলে নেপালে এই মুহূর্তে ক্ষমতায় শূন্যতা তৈরি হয়েছে। দ্রুত কোনও সরকার বা অন্তর্বর্তী কর্তৃপক্ষ দায়িত্ব না নিলে সহিংস পরিস্থিতি আরও কদর্য রূপ নেওয়ার আশঙ্কা আছে।

নেপালের সেনাবাহিনী জনগণের কাছে সম্মানিত। এবং আইনশৃঙ্খলা ফেরাতে তারা ভূমিকাও রাখতে পারে। তবে মাওবাদীদের সঙ্গে দীর্ঘদিন গৃহযুদ্ধে লড়ে আসা সেনাবাহিনী আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় দ্বিধাগ্রস্ত হতে পারে।

কারণ, এ দায়িত্ব মূলত পুলিশ ও অন্যান্য নিরাপত্তা সংস্থার। তবে এই মুহূর্তে কারও নেতৃত্ব নেওয়াটা জরুরি।

বাংলাদেশ বা শ্রীলঙ্কার বিদ্রোহের সঙ্গে নেপালের বিক্ষোভের পার্থক্য হল: দেশটিতে মানুষ গোটা রাজনৈতিক শ্রেণি এবং দশকের পর দশক ধরে দেশে তাদের অব্যবস্থাপনা নিয়ে ক্ষুব্ধ।

২০০৮ সালে মাওবাদীরা রাজনীতির মূলধারায় আসার পর থেকে নেপালে ১৪ জন প্রধানমন্ত্রী হয়েছে। দলগুলোর জোট ভাঙা-গড়ার রাজনীতি তরুণদের হতাশ করেছে।

নেতৃত্বহীনতায় কোন পথে এগোবে নেপাল তা অনিশ্চিত। তবে এই মুহূর্তে অগ্রাধিকার একটাই। আর তা হল দেশে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা।

কারণ, সরকার পতনের পরও গণরোষের ইতি দেখা যাচ্ছে না দেশটিতে। খোঁজ নেই নেতাদের। কিন্তু কেন এমন পরিস্থিতি?

ফেইসবুক-সহ ২৬টি সমাজমাধ্যম নিষিদ্ধ করার প্রতিবাদে তরুণ ছাত্র-যুবদের গণবিক্ষোভের জেরে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই পতন হয়েছে প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলির নেতৃত্বাধীন কমিউনিস্ট পার্টি অফ নেপাল (ইউএমএল) এবং নেপালি কংগ্রেসের জোট সরকারের।

পদত্যাগে বাধ্য হয়েছেন প্রেসিডেন্ট রামচন্দ্র পৌড়েলও। সোমবার রাতে সামাজিকযোগাযোগমাধ্যমে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হলেও আন্দোলন থামেনি। দীর্ঘদিনের জমে থাকা ক্ষোভই বিস্ফোরিত হয়েছে।

নেপালে এমন বিক্ষোভ আগে দেখা যায়নি। অংশগ্রহণকারীরা নিজেদের ‘জেন জি’ নামে পরিচয় দিয়েছে। আর সেটিই আন্দোলনের প্রতীকে পরিণত হয়েছে।

কাঠমান্ডু, পোখারা ও ইতাহারিসহ বড় বড় শহরের কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের রাস্তায় নামতে আহ্বান জানানো হয়েছে।

তাদের দুটো স্পষ্ট দাবি ছিল: ১. সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সরকারের নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া (যা ইতোমধ্যে হয়েছে)। ২. দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহার বন্ধ করা।

নেপালের অর্থনীতি অনেকাংশেই পর্যটনের উপর নির্ভরশীল। পর্যটনের সঙ্গে জড়িত ব্যবসায়ীরা তাদের পেশাগত কাজের জন্য সমাজমাধ্যমেই যোগাযোগ করেন।

পাশাপাশি প্রবাসীদের সঙ্গে পরিবারের সদস্যদের যোগাযোগেরও অন্যতম মাধ্যম এই সমাজমাধ্যমগুলো। ফলে সমাজমাধ্যমের উপর নিষেধাজ্ঞা শুধুমাত্র তরুণ প্রজন্মকেই নয়, সবাইকেই সমস্যায় ফেলেছিল।

সাইবার অপরাধ, ভুয়ো এবং বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়ানোর উপর রাশ টানার কথা বলে সরকার সমাজমাধ্যমগুলো নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে আসছিল।

নেপালের সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের প্রেক্ষিতে গত মাসেই নেপাল সরকার বিভিন্ন সমাজমাধ্যম সংস্থার নিবন্ধীকরণ -এর জন্য উদ্যোগী হয়। এর জন্য গত ২৮ অগস্ট থেকে এক সপ্তাহের সময়সীমা দেওয়া হয়েছিল সমাজমাধ্যম সংস্থাগুলোকে।

এর মধ্যে যে সমাজমাধ্যমগুলো নেপাল সরকারের সঙ্গে নিবন্ধীকরণ হয়নি, সেগুলোকেই গত সপ্তাহে নিষিদ্ধ করে নেপাল প্রশাসন।

তবে কেবল সমাজমাধ্যমের উপর নিষেধাজ্ঞাই নয়, মূল ধারার দলগুলোর বিরুদ্ধে মানুষের ক্ষোভের অন্যতম কারণ হয়ে উঠেছিল ধারাবাহিক দুর্নীতির অভিযোগও।

 

সোমের রক্তপাতের ‘প্রতিশোধ’ হয় মঙ্গলবার:

তরুণদের বিক্ষোভে সোমবার অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতি ছিল নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুতে। হাজার হাজার তরুণ ছাত্র যুবক নেপালের পার্লামেন্টের বাইরে জড়ো হয়েছিলেন। বিক্ষোভকারীদের মধ্যে অনেক স্কুলে পড়ুয়াও ছিল।

শুধু রাজধানীতে নয়, বিক্ষোভ-বিদ্রোহের আঁচ ছড়িয়েছিল নেপালের অন্যস্থানেও। সোমবারের ওই বিক্ষোভে ওলির পুলিশ গুলি চালানোয় ১৯ জনের মৃত্যু হয়েছিল।

সোমবার গভীর রাতে ওলি সরকার সমাজমাধ্যমের উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের ঘোষণা দিলেও জনরোষ কমেনি। বরং মঙ্গলবার সকাল হতেই সেই ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ দেখা যায় কাঠমান্ডুর রাজপথে।

বেলা গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে পরিস্থিতি ক্রমশ পুলিশের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। মঙ্গলবারের বিক্ষোভে অন্তত তিনজন নিহত হয়। এ নিয়ে বিক্ষোভ শুরুর পর থেকে মোট মৃতের সংখ্যা দাঁড়ায় ২২ জনে।

সহিংস বিক্ষোভে ভরা এক দিনে সরকারি অফিসে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগসহ সিপিএম (ইউএমএল), নেপালি কংগ্রেসের সদর দপ্তরের পাশাপাশি হামলা হয় বিভিন্ন নেতা-মন্ত্রীদের বাড়িতে।

প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শের বাহাদুর দেউবা এবং তার স্ত্রী প্রহৃত হন। নেপালের উপপ্রধানমন্ত্রী তথা অর্থমন্ত্রী বিষ্ণু পৌডেলকে রাস্তায় ফেলে পেটায় জনতা।

মঙ্গলবার দুপুরে নেপালের পার্লামেন্ট ভবন এবং সুপ্রিম কোর্টেও উত্তেজিত জনতা ভাঙচুর চালিয়েছে। ভাঙচুর হয়েছে নেপালের অ্যাটর্নি জেনারেলের দপ্তরেও।

প্রধানমন্ত্রী ওলির ব্যক্তিগত বাসভবনে আগুন দেয় উত্তেজিত জনতা। তার আগে নেপালের প্রেসিডেন্ট ভবনে হামলা হয়।

রাতে পোখরার জেলে ঢুকে পড়েন আন্দোলনকারীরা। সেখান থেকে পালায় প্রায় ৯০০ বন্দি। নেপালের পশ্চিমাঞ্চলের দুই জেলায় কারাগার ভাঙার ঘটনাও ঘটেছে বলে নিশ্চিত করেছে কর্তৃপক্ষ।

কাশ্কি জেলার পুলিশ জানায়, মঙ্গলবার দুপুরে জেনারেশন জেড বিক্ষোভকারীরা কারাগারে প্রবেশ করলে সেখান থেকে ৭৭৩ জন কয়েদি পালিয়ে যায়। কাঠমান্ডুর নাখু জেলের একাংশে আগুন ধরানো হয় বলেও অভিযোগ আছে।

 

 

মিজানুর রহমান খান – বিশেষ প্রতিনিধি, আন্তর্জাতিক ডেস্ক : বিডিপলিটিক্স টোয়েন্টিফোর ডটকম