তাদের হাতে যুক্তরাজ্যের ইউনিয়ন জ্যাক পতাকা, ইংল্যান্ডের লাল-সাদা সেন্ট জর্জ ক্রস পতাকা, এমনকি মার্কিন ও ইসরায়েলি পতাকাও দেখা যায়।
লন্ডনে অভিবাসনবিরোধী বিক্ষোভে লাখো মানুষ

- আপডেট সময় ০১:১৩:৫০ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫
- / ২৩ বার পড়া হয়েছে
যুক্তরাজ্যের অভিবাসনবিরোধী ও ইসলামবিরোধী ডানপন্থী আন্দোলনকারী টমি রবিনসনের ডাকা প্রতিবাদ আয়োজনে সাড়া দিয়ে লন্ডনের কেন্দ্রীয় অংশের রাস্তাগুলো দিয়ে মিছিল করেছে লাখো বিক্ষোভকারী।
শনিবারের এ আয়োজনে অংশগ্রহণকারীরা ইংল্যান্ডের ও ব্রিটেনের পতাকা হাতে যোগ দেয়।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, এদিন একই সময়ে কাছেই ‘স্ট্যান্ড আপ টু রেসিজম’ শীর্ষক পাল্টা প্রতিবাদও অনুষ্ঠিত হয়।
ব্রিটিশ পুলিশ জানায়, দিনভর বিক্ষোভ সামলাতে লন্ডনে ১ হাজার ৬০০ এর বেশি পুলিশ সদস্যকে মোতায়েন করা হয়, যাদের মধ্যে ৫০০ এসেছেন অন্যান্য অঞ্চল থেকে। এর পাশাপাশি লন্ডনে উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ ফুটবল ম্যাচ ও কনসার্ট থাকায় পরিস্থিতি সামাল দিতে পুলিশকে চাপে পড়ে।
স্থানীয় সময় দুপুর নাগাদ টেমস নদীর দক্ষিণ পাশের রাস্তাগুলোতে লাখো বিক্ষোভকারী জড়ো হয়। পরে তারা যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্ট ভবন যেখানে সেই ওয়েস্টমিনস্টারের দিকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে আগাতে শুরু করে। এ সময় তাদের হাতে যুক্তরাজ্যের ইউনিয়ন জ্যাক পতাকা, ইংল্যান্ডের লাল-সাদা সেন্ট জর্জ ক্রস, এমনকি মার্কিন ও ইসরায়েলি পতাকা দেখা যায়। অনেকে পরে ছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের প্রচারণার ‘মেক আমেরিকা গ্রেইট এগেইন’ টুপি।
মিছিলে তারা যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের বিরুদ্ধে স্লোগান দেন। তাদের বহন করা প্ল্যাকার্ডে লেখা ছিল ‘ওদের ফেরত পাঠাও’। মিছিলে অনেক পরিবারের শিশুদেরও সঙ্গে এনেছিলেন।
‘আমরা টমিকে বিশ্বাসী করি’

রবিনসন এই সমাবেশের নাম দিয়েছেন ‘ইউনাইট দ্য কিংডম’। তার ভাষায়, এটি ‘মুক্ত মত প্রকাশের উৎসব’, পাশাপাশি এতে বুধবার গুলিতে নিহত মার্কিন রক্ষণশীল প্রচারণা কর্মী চার্লি কার্ককে স্মরণও করা হবে।
সামাজিক মাধ্যম এক্সে রবিনসন বলেছেন, “ইতোমধ্যেই লন্ডনের কেন্দ্রস্থলে লাখ লাখ মানুষ জড়ো হয়েছে, আমরা আমাদের স্বাধীনতার জন্য এক হয়েছি।”
টমি রবিনসনের আসল নাম স্টিফেন ক্রিস্টোফার ইয়াক্সলে-লেনন। নিজেকে তিনি রাষ্ট্রীয় অন্যায় উন্মোচনকারী সাংবাদিক দাবি করেন। তিনি মার্কিন ধনকুবের ইলন মাস্ককেও তার সমর্থক হিসেবে ধরেন।
তবে সাম্প্রতিক সময়ে মতামত জরিপে শীর্ষে থাকা ব্রিটেনের সবচেয়ে বড় অভিবাসনবিরোধী রাজনৈতিক দল রিফর্ম ইউকে তার থেকে দূরত্ব বজায় রেখেছে। রবিনসনের বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি ফৌজদারি মামলা আছে।
বিক্ষোভে যোগ দেওয়া স্যান্ড্রা মিচেল বলেন, “আমরা আমাদের দেশ ফেরত চাই, আমরা চাই আমাদের মুক্ত মত প্রকাশ স্বাভাবিক অবস্থায় ফেরত আসুক। অবৈধ অভিবাসন বন্ধ করতে হবে। আমরা টমিকে বিশ্বাস করি।”
পুলিশের সতর্কতা
লন্ডন মেট্রোপলিটন পুলিশের কমান্ডার ক্লেয়ার হেইন্স বলেন, “আমরা আইন মেনে চলা অধিকার নিশ্চিত করব, তবে অপরাধ বা বিশৃঙ্খলা ঘটলে দৃঢ়ভাবে ব্যবস্থা নেব।”
তিনি জানান, বিক্ষোভগুলোতে সংখ্যালঘু কিছু লোকের মধ্যে ইসলামবিদ্বেষী বক্তব্য ও আক্রমণাত্মক স্লোগান শোনা গেছে। তবে এজন্য লন্ডনের জনগণকে ঘরে বসে থাকার প্রয়োজন নেই।
গত শনিবার ফিলিস্তিনপন্থী একটি বিক্ষোভ থেকে প্রায় ৯০০ জনকে গ্রেপ্তার করেছিল লন্ডন পুলিশ।
অভিবাসন রাজনৈতিক ইস্যুর কেন্দ্রে
ব্রিটেনে এখন অর্থনৈতিক সংকটের চেয়েও বড় রাজনৈতিক ইস্যু হয়ে উঠেছে অভিবাসন। চলতি বছর এখন পর্যন্ত ২৮ হাজারের বেশি অভিবাসী ছোট নৌকায় ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দিয়ে দেশটিতে পৌঁছেছে। এই সংখ্যা রেকর্ড পরিমাণ।
লাল-সাদা ইংল্যান্ডের পতাকা এখন লন্ডনের রাস্তায়, দেয়ালে, এমনকি সড়কের ওপর আঁকা হচ্ছে। সমর্থকদের ভাষায়, এটি জাতীয় গৌরবের বহিঃপ্রকাশ। কিন্তু বর্ণবাদবিরোধী কর্মীদের চোখে, এটি বিদেশিদের প্রতি শত্রুতার বার্তা।
মিজানুর রহমান খান – বিশেষ প্রতিনিধি, আন্তর্জাতিক ডেস্ক : বিডিপলিটিক্স টোয়েন্টিফোর ডটকম