কিংবদন্তি এই শিল্পীর জন্ম নাটোরে হলেও বাবার কর্মসূত্রে তার শৈশব-কৈশোর কেটেছে কুষ্টিয়ায়। লালনের গান করায় শিল্পীর অনেক স্মৃতি জড়িয়ে রয়েছে শহরটিতে।
বাবা-মায়ের কবরে শায়িত হলেন ফরিদা পারভীন

- আপডেট সময় ১১:৫৬:৩৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫
- / ২৩ বার পড়া হয়েছে
বরেণ্য লালনশিল্পী ফরিদা পারভীনকে তার শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী বাবা-মায়ের কবরে দাফন করা হয়েছে।
কুষ্টিয়া পৌর কবরস্থানে তার দ্বিতীয় জানাজা শেষে রোববার রাত ৯টার পরে তাকে দাফন করা হয়।
এর আগে রাত সাড়ে ৮টায় কিংবদন্তি এই শিল্পীর মরদেহবাহী ফ্রিজিং গাড়ি এসে পৌঁছায় কুষ্টিয়া পৌর কবরস্থানের সামনে। সেখানে রাত ৮টা ৪০ মিনিটে তার জানাজা অনুষ্তি হয়।
এতে অংশ নেন তার পরিবারের সদস্য, চিন্তক ও কলামনিস্ট ফরহাদ মজহার, লালন গবেষক ও লেখক লালিম হক, কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক আবু হাসনাত মোহাম্মদ আরেফীনসহ সাংস্কৃতিক অঙ্গনের ব্যক্তি, সংগীত শিল্পী, আত্মীয়-স্বজন ও শুভাকাঙ্খীরা।
তারা সন্ধ্যা থেকেই ফরিদা পারভীনের মরদেহ কুষ্টিয়ায় আসার অপেক্ষায় ছিলেন। মাগরিবের পর তার দাফন হওয়ার কথা থাকলেও মরদেহবাহী গাড়ি কুষ্টিয়ায় পৌঁছাতে দেরি হওয়ায় পরে সময় বদলে এশার পরে নির্ধারণ করা হয়। এর আগে বিকালে তার জন্য কবর প্রস্তুত করা হয়।
রাজধানীর মহাখালীর ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে শনিবার রাত সোয়া ১০টায় মারা যান ফরিদা পারভীন। তার বয়স হয়েছিল ৭১ বছর।
রোববার বৃষ্টিভেজা দুপুরে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে লালন গানের বরণ্য শিল্পী ফরিদা পারভীনের প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানান বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ।
পরে জোহর নামাজের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদে তার প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজা শেষে লাশবাহী গাড়িতে করে শিল্পীর মরদেহ কুষ্টিয়ায় পথে রওনা হয়।
এ শিল্পীর ইচ্ছে অনুযায়ী কুষ্টিয়া পৌর কবরস্থানে বাবা-মায়ের কবরে তাকে দাফন করার কথা আগেই পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল।
কিংবদন্তি এই শিল্পীর জন্ম নাটোরে হলেও বাবার কর্মসূত্রে তার শৈশব-কৈশোর অতিবাহিত হয়েছে কুষ্টিয়ায়। এছাড়া লালনের গান করায় শিল্পীর অনেক স্মৃতি জড়িয়ে রয়েছে শহরটিতে। সেখানে গেলে প্রাণ ভরে স্বস্তির সময় কাটাতেন।
ফরিদা পারভীন বেশ কিছু দিন ধরে কিডনি জটিলতা ও ডায়াবেটিসসহ নানা শারীরিক জটিলতায় ভুগছিলেন। কিডনি ডায়ালাইসিস চলছিল সপ্তাহে দুদিন করে। তবে মাঝেমধ্যে অবস্থার অবনতি হত তার। চলতি বছরে তিন দফায় হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিতে হয়েছে তাকে।
সর্বশেষ গেল ২ সেপ্টেম্বর মহাখালীর ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয় ফরিদা পারভীনকে। অবস্থা গুরুতর হওয়ায় হাসপাতালে নেওয়ার পরই নিয়ে যাওয়া হয় আইসিইউতে। পরে তাকে লাইফ সাপোর্টেও নেওয়া হয়। সেখান থেকে আর ফেরানো গেল না তাকে।
মৃত্যুকালে ফরিদা পারভীনের বয়স হয়েছিল ৭১ বছর। তিনি স্বামী এবং চার সন্তান রেখে গেছেন।
১৯৫৪ সালে ৩১ ডিসেম্বর নাটোরের সিংড়া থানায় জন্ম নেওয়া ফরিদা পারভীন গানে গানে কাটিয়েছেন ৫৫ বছর। ১৪ বছর বয়সে ১৯৬৮ সালে তার পেশাদার সংগীতজীবন শুরু হয়।
শুরুতে দেশাত্মবোধক গান গাইলেও ফরিদা পারভীনের পরিচয় গড়ে ওঠে লালনকন্যা হিসেবে। তার কণ্ঠে ‘মিলন হবে কত দিনে, ‘অচিন পাখি’ গানগুলো বাঙালির চেতনার অংশ হয়ে আছে।
সংগীতে অবদানের জন্য ১৯৭৮ সালে একুশে পদক পেয়েছেন ফরিদা। জাপান সরকার তাকে কুফুওয়া এশিয়ান কালচারাল পদক দিয়েছে। তিনি কেবল নিজের গান করেননি; বরং ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে লালনের গান শিখিয়েছেন। তার উদ্যোগে গড়ে তোলা হয় অচিন পাখি স্কুল, যেখানে শিশুদের শেখানো হয় গান।
কুষ্টিয়া প্রতিনিধি : বিডিপলিটিক্স টোয়েন্টিফোর ডটকম