এর মধ্য দিয়ে ইসি কর্মকর্তাদের দীর্ঘদিনের একটি দাবি পূরণ হতে যাচ্ছে, কারণ সংশোধিত আইন কার্যকর হলে ইসি সচিবালয়ের নিজস্ব কর্মকর্তারাও পদোন্নতি পেয়ে সচিব হওয়ার সুযোগ পাবেন।
ইসি কর্মকর্তাদের সচিব হওয়ার পথ খুলছে

- আপডেট সময় ১২:৪৩:২৩ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫
- / ২৮ বার পড়া হয়েছে

নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের কর্মকর্তা ও কর্মচারী নিয়োগের জন্য ‘নির্বাচন কমিশন সার্ভিস’ চালুর পথ খুলতে আইন সংশোধনের প্রস্তাবে সম্মতি দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার।
নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের কর্মকর্তা ও কর্মচারী নিয়োগের জন্য ‘নির্বাচন কমিশন সার্ভিস’ চালুর পথ খুলতে আইন সংশোধনের প্রস্তাবে সম্মতি দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার।
এর মধ্য দিয়ে ইসি কর্মকর্তাদের দীর্ঘদিনের একটি দাবি পূরণ হতে যাচ্ছে, কারণ সংশোধিত আইন কার্যকর হলে ইসি সচিবালয়ের নিজস্ব কর্মকর্তারাও পদোন্নতি পেয়ে সচিব হওয়ার সুযোগ পাবেন।
বৃহস্পতিবার উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে ২০০৯ সালের আইন সংশোধন করে ‘নির্বাচন কমিশন সচিবালয় (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫’ এর খসড়া অনুমোদন করা হয়। রাষ্ট্রপতি সই করতেই তা অধ্যাদেশ আকারে জারি করা হবে।
বিদ্যমান আইনে বলা আছে, নির্বাচন কমিশন সচিবালয় বিধি দ্বারা নির্ধারিত পদ্ধতিতে নিযুক্ত একজন সচিব ও অন্যান্য কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সমন্বয়ে গঠিত হবে।
এতদিন স্বাধীন নির্বাচন কমিশনের সচিবালয়ে প্রেষণে উপসচিব, যুগ্মসচিব, অতিরিক্ত সচিব ও সচিব পদে কর্মকর্তা নিয়োগ করা হত। ইসির নিজস্ব কর্মকর্তাদের সচিব হিসেবে পদোন্নতির সুযোগ থাকত না।
এমন পরিস্থিতিতে ইসির স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে এবং কর্মকর্তাদের নিয়ন্ত্রণের সুবিধার্থে ইসির নিজস্ব কর্মকর্তাদের জন্য ‘নির্বাচন কমিশন সার্ভিসের’ সুপারিশ করে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন। এর ধারাবাহিকতায় বর্তমান নির্বাচন কমিশনও বিদ্যমান আইনের সংশোধন চেয়ে সরকারের একই প্রস্তাব রাখে।
সংশোধিত খসড়া অধ্যাদেশে (ধারা ৩ এর উপধারা (৪) প্রতিস্থাপিত হবে) বলা হয়েছে, নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের কর্মকর্তা ও কর্মচারী নিয়োগের জন্য নির্বাচন কমিশন সার্ভিস নামে একটি সার্ভিস থাকবে।
একই সঙ্গে ‘জাতীয় পরিচয়পত্র তথ্যভাণ্ডার প্রস্তুত ও সংরক্ষণ’ কাজটি নির্বাচন কমিশনকে সহায়তা দেওয়ার বিষয়ে ইসি সচিবালয়ের দায়িত্ব হিসেবে যুক্ত করা হয়েছে।
ইসি সচিবালয়ের নিজস্ব কর্মকর্তাদের জন্য আলাদা সার্ভিস থাকার সুপারিশ বাস্তবায়নে উপদেষ্টা পরিষদ সায় দেওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করেছেন নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সদস্য আব্দুল আলীম।
তিনি বলেন, “অন্তবর্তী সরকারের এ সিদ্ধান্ত একটি মাইলফলক হয়ে থাকবে। নির্বাচন কমিশন সার্ভিস করার বিষয়ে আমরা সুপারিশ করেছিলাম, নির্বাচন কমিশনও তাতে সম্মতি দিয়েছে। এখন সরকার সংশাধন অধ্যাদেশ অনুমোদন দিল। এ সার্ভিস ব্যবস্থা থাকলে স্বাধীন ইসি সচিবালয়ের পুরো কার্যক্রম পরিচালনায় কমিশনের পরিপূর্ণ এখতিয়ার প্রতিষ্ঠা পাবে।”
তিনি বলেন, ইসি সচিবালয়ে এখন প্রেষণে সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নিয়োগ দেওয়া হয়; অতীতে তাদের ওপর সরকারের নিয়ন্ত্রণ দেখা গেছে।
“এখন নিজস্ব কর্মকর্তাদের পদোন্নতি দিয়ে সচিব, অতিরিক্ত সচিব, যুগ্মসচিব করা যাবে। সেক্ষেত্রে সুষ্ঠু নির্বাচনের ক্ষেত্রে নিজেদের কর্মকর্তাদের নিয়ন্ত্রণ পূর্ণভাবে করবে ইসি। জবাবদিহিতা নিশ্চিত যেমন হবে, তেমনি কোনো ধরনের স্বচ্ছতা, নিরপেক্ষতার ঘাটতি হলে কারো মুখাপেক্ষী হতে হবে না।”
ইসি সচিবালয়ে সহকারী সচিব থেকে মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের যোগ্যতা বিবেচনায় সার্ভিসের মাধ্যমে আগামীতে স্বাধীন ও শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন প্রতিষ্ঠার বিষয়টি ‘পূর্ণতা পাবে; বলে মনে করেন এ বিশ্লেষক।

বর্তমানে ইসি সচিবালয়ের কেন্দ্রীয়, দশ আঞ্চলিক নির্বাচন অফিস, ৬৪ জেলা ও পাঁচ শতাধিক উপজেলা/থানা নির্বাচন অফিসে প্রায় ৫ হাজার কর্মকর্তা কর্মচারী নিয়োজিত রয়েছেন।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ ইলেকশন কমিশন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের আহ্বায়ক মোহাম্মদ মনির হোসেন বলেন, “সংস্কার কমিশনের সুপারিশ ও নির্বাচন কমিশনের প্রস্তাব উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে অনুমোদন হওয়ায় আমরা খুব খুশি। এটা খুবই ইতিবাচক। এর মধ্য দিয়ে আমাদের নির্বাচন কর্মকর্তাদের দাবি পূরণের পথ প্রশস্ত হল।”
তিনি বলেন, সংবিধানের ১১৮ অনুচ্ছেদে নির্বাচন কমিশনকে একটি সম্পূর্ণ স্বাধীন সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। এ সাংবিধানিক স্বাতন্ত্র বজায় রাখতে কমিশনের প্রশাসনিক কাঠামোরও স্বাধীনতা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা আবশ্যক। এজন্য সংস্কার কমিশন ও নির্বাচন কমিশন কর্মকর্তাদের জন্য আলাদা সার্ভিসের পক্ষে।
“এ সংশোধন অধ্যাদেশ জারি হওয়ার পর নির্বাচন কমিশন সার্ভিস সংক্রান্ত বিধি প্রণয়নসহ আনুষাঙ্গিক বিষয় রয়েছে। পরবর্তী পদক্ষেপ কমিশনই সিদ্ধান্ত নেবে,” বলেন এ কর্মকর্তা।
কর্তৃত্ব বাড়ল ইসির
বৃহস্পতিবার তেজঁগাও প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে ১৯৯১ সালের নির্বাচন কর্মকর্তা (বিশেষ বিধান) আইন সংশোধনের খসড়াও অনুমোদন করা হয়।
খসড়া অধ্যাদেশে বলা হয়েছে, সরকার ও নির্বাচন কমিশনের মধ্যে কোনো ধরনের মতবিরোধী দেখা দিলে নির্বাচন কশিমনই অগ্রাধিকার পাবে।
সেই সঙ্গে নির্বাচন কর্মকর্তা হিসেবে কোনো মন্ত্রণালয় বা বিভাগের কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষমতাও বাড়ানো হয়েছে।
নির্বাচন কর্মকর্তাকে খসড়ায় সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে নতুনভাবে। বলা হয়েছে, নির্বাচন সংক্রান্ত কোনো দায়িত্ব বা কর্মে নিযুক্ত কোনো ব্যক্তি বা নির্বাচন পরিচালনার সঙ্গে সম্পৃক্ত কোনো ব্যক্তি বা রিটার্নিং অফিসার বা ভোটকেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত ভোট গ্রহণকারী কর্মকর্তাও (যেমন- প্রিসাইডিং অফিসার, সহকারী প্রিসাইডিং অফিসার, পোলিং অফিসার বা আইন-শৃঙ্খলা বজায় রাখার দায়িত্বে নিয়োজিত আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্য) নির্বাচন কর্মকর্তা হিসেবে বিবেচিত হবেন।
>> নির্বাচনি কর্মকর্তা অসদাচরণ করলে তার নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ তাকে চাকরি থেকে অপসারণ বা বরখাস্ত করতে পারবে বা বাধ্যতামূলক অবসর দিতে পারবে বা তার পদাবনতি করতে পারবে বা তার পদোন্নতি বা বেতন বৃদ্ধি অনধিক দুই বছরের জন্য স্থগিত রাখতে পারবে।
>> অসদাচরণ করলে অনধিক দুই মাসের জন্য সাময়িকভাবে চাকরি থেকে বরখাস্তের আদেশ দিতে পারবে এবং ওই বরখাস্তের আদেশ তার নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ কর্তৃক তার চাকরিবিধি অনুযায়ী প্রদত্ত হয়েছে বলে গণ্য হবে এবং সে অনুযায়ী কার্যকর হবে।
>> কর্তৃপক্ষ প্রস্তাব পাওয়ার এক মাসের মধ্যে ওই প্রস্তাব বাস্তবায়ন করবে এবং সেই সম্পর্কে কমিশনকে জানাবে।
>> কমিশনের প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে যে কার্যক্রম নেওয়া হয়েছে, তা ওই কর্মকর্তা বা ব্যক্তির ব্যক্তিগত নথি, চাকরি বই এবং বার্ষিক গোপনীয় অনুবেদনে লিপিবদ্ধ ও ডোসিয়ারে অন্তর্ভুক্ত থাকবে এবং সেই সম্পর্কে কমিশনকে জানাতে হবে।
>> সরকার এবং কমিশনের মধ্যে এই ধারার কোনো বিধান সম্পর্কে ভিন্নমত দেখা দিলে সে বিষয়ে কমিশনের সিদ্ধান্ত প্রাধান্য পাবে।
নির্বাচন বিশ্লেষক আব্দুল আলীম বলেন, “নির্বাচন কর্মকর্তা বিশেষ বিধান সংশোধনের মাধ্যমে ইসির কর্তৃত্ব বাড়ল। এর মাধ্যমে কেউ কোনো অনিয়ম করলে যেমন ব্যবস্থা নেওয়া হবে, জবাবদিহিতা নিশ্চিত হবে।
“সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য এ ধরনের ব্যবস্থা নেওয়ার প্রস্তাব সংস্কার কমিশন থেকে দিয়েছিলাম আমরা। এটা খুব ইতিবাচক পদক্ষেপ সরকারের।”
নিঝুম আহমেদ – জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক : বিডিপলিটিক্স টোয়েন্টিফোর ডটকম