কাঞ্চন না থাকলে নিপুণের নাম আসত না : নূতন
- আপডেট সময় ০৭:৪৮:১৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ১১ মার্চ ২০২৩
- / ১১১ বার পড়া হয়েছে
বাংলা চলচ্চিত্রের অন্যতম তারকা রোজী আফসারী। তার মৃত্যুবার্ষিকীতে শিল্পী সমিতির পক্ষ থেকে কোনো মিলাদ মাহফিলের আয়োজন না করায় ক্ষোভ ঝেড়েছেন স্বামী নির্মাতা মালেক আফসারী। এরপরই বিষয়টি নজরে আসে ঢাকাই সিনেমার এক সময়ের জনপ্রিয় অভিনেত্রী নূতনের।
নূতন বরাবরই স্পষ্টভাষী। সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রতিনিয়ত বিভিন্ন বিষয়ে নিজের মতামত তুলে ধরেন তিনি। রোজী আফসারীর মৃত্যুবার্ষিকীতে কোনো আয়োজন না থাকায় তাকেও ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা গেছে। ফেসবুকে একটি দীর্ঘ স্ট্যাটাসে শিল্পী সমিতির নেতৃত্বের ব্যর্থতা নিয়ে খোলামেলা কথা বলেছেন এ অভিনেত্রী।
নূতনের স্ট্যাটাসটি হুবহু তুলে ধরা হলো-
কথা বললেই সম্মান হারানোর ভয়ে আমরা সিনিয়র শিল্পীরা এখন বোবা হয়ে গেছি। সাথে আবার ক্ষমতার দাপটও আছে। আমি মৃত্যু ছাড়া বোবা হতে চাই না। আর ছোট থেকেই ভয় একটু কম, তার ওপর আবার সাপের সিনেমার নায়িকা। তবে আবেগ অনেক, একটু ব্যথা পেলেই কান্না করি। মালেক আফসারীকে আমি এই প্যানেলের (কাঞ্চন-নিপুণ) পক্ষে কথা বলতে দেখেছি। যদিও সেটা তার ব্যক্তিগত ব্যাপার, সে কেন কথা বলেছে আমি জানিনা। তবে আমি কথা বলেছি কাঞ্চনের জন্য। কাঞ্চন আমার পরম আত্মার বন্ধু। যদিও আমাকে নিপুণ আক্তার শাড়ি উপহার দিয়েছিলো, যা এখনও আমার বাসায় সেভাবেই আছে। তবে কাঞ্চন না থাকলে আমি যতটুকু কথা বলেছি, তাও বলতাম না। এখন মনে হচ্ছে, ভুল করেছি।
একজন রোজী আফসারীকে নিয়ে না ভাবা, বর্তমান শিল্পী সমিতির জন্য ব্যর্থতা। কাঞ্চন একজন গুণী সিনিয়র শিল্পী, আমার বন্ধু। সে সবসময় রাগী একরোখা, সততার একটা মনোভাব নিয়ে থাকে। যা সে লালন করে- তবে তার এই গুণের পাশাপাশি তাকে আবেগী হওয়া উচিত। তা না হলে তার এই একরোখা স্বভাব মূল্যহীন হয়ে যাবে। নিপুণ, সে অনেক ছোট এবং চলচ্চিত্র ইতিহাস বা আমাদের আগের শিল্পীদের মর্ম তার না জানারই কথা। আপু বলে ডাকে আমায়, আমি ছোট বোন জানি। আমি তাকে আমার শেষ মুহূর্তে দেখেছি, তাও খুব সামান্য। কিছু ভালো সিনেমা সে করেছে, মেধাবী, শিক্ষিত। নির্বাচন কেন্দ্র করে আলোচনা না হলে আরও ৮-১০ জনের মতো হারিয়ে যাওয়া তালিকায় তার নাম থাকত। নেত্রী হিসেবে শেষ নির্বাচনে বা তার আগেই তার নাম আমার কানে অধিকবার বেজেছে।
যদিও অনেক গুণীরা আবার তাকে দুইবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পাওয়াতে গুণী শিল্পী বলে। সুচরিতাকেও হেয় করা হয়েছে। আমি একবার পেয়েছি, তাও সহশিল্পী হিসেবে। যাই হোক সে উত্তর প্রয়োজন হলে হাতে কলমে বুঝিয়ে দিব। তার প্রতি আমার রাগ নেই, আমার ছোট বোন, সম্মান করে। এখন তা মনে হয় দেখানো সম্মান। তার এই মহানেত্রী সুলভ আচরণে বা অধিক ক্ষমতায়নে এসব নিয়ে ভাবার সময় নাই থাকতে পারে। তার ধারণা সারা বাংলাদেশ তার সাথে, যদিও কাঞ্চন না থাকলে আর জায়েদের ভুল না হলে নিপুণের নাম সেভাবে আসত না।
তবে আমি তাকে অনুরোধ করব, ছোট বোন হিসেবে বড়দের সম্মান করা, মনে লালন করতে হবে। নেতৃত্ত্বগুণ নিয়ে সবাই জন্মায় না- তা লালন করতে হয়। অভিনেত্রী, আলোচনা, ভালোবাসা, যোগ্য নেতা- নেত্রী হওয়া এক নয়। কিন্তু কাঞ্চন সাহেবের রোজী আফসারীকে মনে রেখে একটা মিলাদ মাহফিল করার দরকার ছিল। এই ভুলে যাওয়া, বুঝে না বুঝে সম্মান ঘাটতির খেসারত দিতে গিয়ে আজ চলচ্চিত্র ধ্বংস। সিনিয়ররা মৃত প্রায় চলচ্চিত্রে নির্বাচনে অনিহা বলেই অনেকে এই সুযোগ নেয়। তা সত্য। কাঞ্চন সাহেব নেতা হওয়ার আগে একজন অভিনেতা, বন্ধু, সেই সোনালী যুগের সাক্ষী। তাকে সেটা মাথায় রাখা উচিত।
তাছাড়া একজন সিনিয়র শিল্পীও এ ব্যাপারে কথা বললো না? আজ রোজী নাই, তাই কথা নাই, স্বার্থ নাই। কাল আমি না থাকলে- কাঞ্চন আপনি না থাকলেও কোন কথা হবে না। আমি আমার বা আমাদের সহশিল্পী/ বন্ধুকে মনে না রাখলে, আমাকে মনে রাখবে তা ভাবা ভুল। সময় সবার এক রকম থাকে না, অসম্মানিত হওয়া সময়ের ব্যাপার মাত্র। কাদের গুছানো চেয়ারে কারা বসে। আইয়ুব বাচ্চুর একটা গান মনে পড়ে গেল। এক পুরুষে করে ধন, আরেক পুরুষ খায়। সবশেষ কাঞ্চন সাহেবের প্রতি আমার অনুরোধ, দয়া করে কারও মিথ্যা আদর আর দেখানো সম্মানে আপনার অবচেতন মনে কারও স্বার্থে ব্যবহার হবেন না। আমাদের একটু সম্মান দিলেই ব্যবহার করা যায়। কারণ আমরা সম্মানিত হতেই জন্মাইছি।
তবুও আপনি সভাপতি, গুণী- তাই একটু সচেতন হওয়ার অনুরোধ। বন্ধু, এই সব কথা আমি আমার স্বার্থে বলেছি। যেনো আমি মারা গেলে কেহ আমার/আমাদের নাম নেয়। কেহ যেন স্বীকার করে আমরাই চলচ্চিত্র। দয়া করে মুর্খতা সুলভ আচরণ করবেন না যে, আপনি কি জায়েদের পক্ষে। আমি জায়েদ-নিপুণদের জন্মাতে দেখেছি। আমি আমার সময়ের বন্ধু, আমার সহকর্মীদের পক্ষে। এইসব শিল্পী সমিতি ছোটখাটো কারও পক্ষে-বিপক্ষে থাকার জন্য আমি নায়িকা হয়নি বা জন্মাইনি।