পরিবহন মালিকদের কাছে জিম্মি বরিশালের ঘরমুখী মানুষ
- আপডেট সময় ০৭:০৪:৪৬ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৬ জুন ২০২৩
- / ৯২ বার পড়া হয়েছে
আসন্ন ঈদ-উল-আজহায় বরিশালসহ দক্ষিণাঞ্চলের ঘরমুখী মানুষের নিরাপদ যাতায়াত নিশ্চিত করতে রাষ্ট্রীয় সড়ক, নৌ ও আকাশ পরিবহন সংস্থাগুলোর নিস্ক্রিয়তায় বেসরকারি পরিবহন বাণিজ্য প্রতিষ্ঠানগুলোর এবার পোয়াবারো। ভোগান্তিতে সাধারণ মানুষ। এমনকি অনেক ক্ষেত্রেই বেসরকারি পরিবহন মালিকদের খামখেয়ালীর কাছে জিম্মি হয়ে পড়ছে ঘরমুখী মানুষ।
বিগত ঈদ-উল-ফিতরের আগে রাষ্ট্রীয় নৌবাণিজ্য প্রতিষ্ঠান-বিআইডব্লিউটিসি মাত্র দুদিন ঢাকার সাথে বরিশাল ও বাগেরহাটের সন্যাশী হয়ে পিরোজপুরের বড় মাছুয়া পর্যন্ত স্টিমার সার্ভিস পরিচালনা করলেও ঈদ-উল-আজহায় সম্পূর্ণ হাত গুটিয়ে বসে আছে। রাষ্ট্রীয় আকাশ পরিবহন সংস্থা-বিমান একইভাবে ঈদের আগে বিশেষ ফ্লাইট দুরের কথা, নিয়মিত ফ্লাইটেও যাত্রী পরিবহন করছে না। ফলে বেসরকারি ‘ইউএস বাংলা এয়ার’ দেশের স্বল্পতম বরিশাল সেক্টরের আকাশ পথে সাড়ে ১১ হাজার টাকায়ও টিকেট বিক্রি করছে। যা ঢাকা-কলকাতা-ঢাকা রুটের ভাড়ার প্রায় সমান।
অথচ রোববারে নিয়মিত ফ্লাইটের পরে গত বৃহস্পতিবারে ঈদের আগে আর কোনো ফ্লাইট পরিচালনা করছে না বিমান। এমনকি রাষ্ট্রীয় সড়ক পরিবহন সংস্থা-বিআরটিসি’ও দেশের সবচেয়ে লাভজনক বরিশাল বাস ডিপো থেকে কোনো রুটেই বিশেষ বাস সার্ভিস পরিচালনা করছে না।
তবে পদ্মা সেতু চালু হবার এক বছর পরেও বরিশাল অঞ্চলের নৌপথে যাত্রীদের ফিরিয়ে আনতে পারেনি সরকারি-বেসরকারী নৌ-বাণিজ্য প্রতিষ্ঠানগুলে। ফলে শুধু বরিশাল-ঢাকা নৌপথে রুট পারমিট ধারী প্রায় ২৫টি বেসরকারি যাত্রীবাহী নৌযানের এখন ১০-১২টির বেশি যাত্রী পরিবহনে নেই। আগে স্বাভাবিক সময়ে যেখানে বরিশাল নৌবন্দর থেকেই প্রতিদিন ৭-৮টি নৌযান যাত্রী বোঝাই করে ঢাকায় যেত, সেখানে এখন গড়ে ২টির বেশি নৌযান চলছে না। তবে এর পেছনেও নৌযান মালিকদের সিন্ডিকেট বাণিজ্য রয়েছে বলে অভিযোগ। সীমিত নৌযানে বেশি যাত্রী বহনে অধিক মুনাফার প্রবণতায় যাত্রী হয়রানী বাড়ছে। ফলে নৌপথের উপর আরো বিরক্ত হয়ে স্বল্প সময়ে সড়কপথে ঢাকা যাবার প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে সাধারণ মানুষের মাঝে। এমনকি আসন্ন ঈদ উল-আজহায় ঘরমুখী জনস্রোত সামাল দিতে ঢাকা-বরিশালসহ দক্ষিণাঞ্চলের অন্যান্য নৌপথে এবার পর্যাপ্ত নৌযান থাকছে না। ঈদের দুদিন আগে সর্বোচ্চ ৭টি করে বেসরকারি নৌযান চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়ে রেখেছে বেসরকারি নৌযান মালিক সমিতি। ফলে ডেক থেকে শুরু করে প্রথম শ্রেণি ও ভিআইপি শ্রেণির টিকেট ইতোমধ্যে সোনার হরিণ হয়ে উঠেছে। আর রাষ্ট্রীয় নৌ বাণিজ্য প্রতিষ্ঠান-বিআইডিব্লিউটিসি’র ৪টি প্যাডেল হুইল ও ৩টি স্ক্রু-হুইল নৌযান ঢাকায় অনেকটা পরিত্যক্ত অবস্থাতেই পড়ে আছে।
এরমধ্যে একটি প্যাডেল ও ১টি স্ক্রু-হুইল যাত্রীবাহী নৌযান বিনা দরপত্রে বেসরকারি দুটি প্রতিষ্ঠানের কাছে দীর্ঘ মেয়াদে লীজ প্রদান করা হলেও তা যাত্রী পরিবহন করছে না। আসন্ন ঈদ-উল-আজহার আগে-পরে সংস্থাটি রাজধানী থেকে বরিশাল বিভাগীয় সদরসহ দক্ষিণাঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ স্থানেও যাত্রী পরিবহনে সম্পূর্ণ উদাসীন।
ফলে বাধ্য হয়েই মানুষ সড়কপথ মুখী হলেও সেখানেও রাষ্ট্রীয় সড়ক পরিবহন সংস্থাটির সীমাহীন উদাসীনতার অভিযোগ রয়েছে। সংস্থাটির বরিশাল বাস ডিপোটিতে বর্তমানে ৭০টি নতুন ও পুরনো বাসের মধ্যে গড়ে চালু থাকছে ৪০টি। এরমধ্যে এসি ও ননএসি মিলিয়ে নতুন গাড়ীর সংখ্যা মাত্র ২০টির মতো। এসব বাস নিয়মিত রুটে চলাচল করতেই হিমশীম খাচ্ছে। ফলে ঈদ স্পেশাল বাস সার্ভিস পরিচালন শুধু দুরুহই নয়, তা রীতিমত অসম্ভব বলেও জানিয়েছে বিআরটিসি’র বরিশাল ডিপোর দায়িত্বশীল সূত্র। আর রাষ্ট্রীয় সড়ক পরিবহন সংস্থাটির বরিশাল ডিপোটি তার মাথা ভারি প্রশাসনিক ব্যয় নিয়ে ইতোমধ্যে পরিচালন মুনাফায় ছুটে চললেও নির্ভরযোগ্য বাসের অভাবে আনেক জরুরি প্রয়োজনেও জনগণের কাঙ্খিত সেবা দিতে পারছে না।
সূত্র: ইনকিলাব।