নাড়ির টানে ঢাকা ছাড়ছে মানুষ, মহাসড়কে চাপ
- আপডেট সময় ১০:৪৩:৩১ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৭ জুন ২০২৩
- / ১১৬ বার পড়া হয়েছে
সড়ক পথে বাসের ভাড়া দ্বিগুন-তিনগুন আদায় বাস-ট্রেনের টিকিট সোনার হরিণ, ডিজিটাল সিন্ডিকেটের খপ্পড়ে ট্রেনের টিকিট, সরগরম সদরঘাট নৌ-টার্মিনাল, মহাখালী-গাবতলী-সায়েদাবাদের টার্মিনালে যাত্রীদের ভিড়, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যানবাহনের চাপ, উত্তরাঞ্চলগামী যাত্রীদের বঙ্গবন্ধু সেতুতে যানজটে পড়তে হচ্ছে, আমিন বাজারে তীব্রজট, অভ্যন্তরীণ উড়োজাহাজে যাত্রী বেড়েছে
প্রিয়জনের সঙ্গে পবিত্র ঈদুল আজহার আনন্দ ভাগাভাগি করতে রাজধানী ছাড়ছে মানুষ। নাড়ির টানে সবাই ছুঁটছেন বাস, ট্রেন আর লঞ্চ টার্মিনালে। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের উদ্দেশে মানুষ ঢাকা ছাড়লেও গতকাল সোমবার থেকে বাড়ি ফেরা মানুষের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। লঞ্চ টার্মিনালে, বাস ও রেল স্টেশনে শুধু মানুষ আর মানুষ। কমলাপুর রেলস্টেশনে তেমন ভিড় না থাকলেও গাবতলী, মহাখালী, সায়েদাবাদ, কল্যাণপুর বাসস্ট্যান্ডে উপচে পড়া ভিড়। সামর্থবানরা এখন আকাশ পথেও ঘরে ফিরছেন স্বজনদের সঙ্গে ঈদ উদযাপন করতে। ঘরমুখো মানুষের ভিড় সবচেয়ে বেশি সড়ক পথে। রেলপথের চাপ থাকলেও ডিজিটাল সিন্ডিকেট সাধারণ মানুষ টিকিট পাননি। তবে সড়ক ও লেপথের পাশাপাশি নৌপথ ও আকাশপথে ভিড় বেড়েছে। পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় আগের মতো যাত্রীর ভিড় না থাকলেও ঈদে ঘরমুখো মানুষের চাপ বেড়েছে রাজধানীর সদরঘাটে। তবে সড়ক পথে বাসভাড়া দ্বিগুন-তিনগুন বৃদ্ধির অভিযোগ করছেন যাত্রীরা।
তবে পরিবহন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ঈদের ছুটি চারদিন এবং সঙ্গে সাপ্তাহিক ছুটি যোগ হওয়ায় যাত্রীদের আগের মতো কষ্ট করতে হচ্ছে না। তবে বাস ভাড়া নজীরবিহীনভাবে বৃদ্ধি করা নিয়ে যাত্রীদের মধ্যে অসন্তোষ রয়েছে।
গাবতলী বাসটার্মিনালে কথা হয় মো. মেহেদী হাসানের সঙ্গে। তিনি রাজধানীর মিরপুরে থাকেন। পরিবারের সঙ্গে ঈদ করতে ঝিনাইদহ যাবেন। গাবতলী বাস টার্মিনালে এসে প্রায় এক ঘণ্টা টিকিটের জন্য চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। বিভিন্ন কাউন্টার ঘুরে টিকিট না পেলেও এখনো চেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন। তিনি বলেন, পরিবারের সঙ্গে ঈদ করব। এজন্য অফিস থেকে তাড়াতাড়ি বেরিয়ে গাবতলী এসেছি। এক ঘণ্টা ধরে চেষ্টা করেও টিকিট সংগ্রহ করতে পারিনি। আর কিছুক্ষণ চেষ্টা করব, না হলে ফেরি পার হয়ে ভেঙে ভেঙে বাড়ি যাব।
রাজবাড়ীর যাত্রী মো. সোহান হোসেন বলেন, অন্য সময়ে ৩৫০ টাকা টিকিট রাখলেও বর্তমানে তা ৬০০ টাকা নিচ্ছেন সৌহার্দ্য পরিবহন কাউন্টারের টিকিট বিক্রেতা। রংপুরের যাত্রী আহমদ হোসেন জানান, গাবতলীয় থেকে আগে এসি বাসে ১২০০ টাকা নেয়া হলেও ঈদে নেয়া হচ্ছে ২৬০০ টাকা। অন্যান্য রুটের যাত্রীরা জানান, বাসের ভাড়া দ্বিগুন-তিনগুন বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে। তারপরও টিকিট পাওয়া যাচ্ছে না।
যানজট নেই ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে : ঈদ এলেই যানজটের শঙ্কা তৈরি হতো দেশের ‘লাইফলাইন’ খ্যাত ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক হয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে ঘরমুখো মানুষের। ঢাকার থেকে বের হতে যাত্রাবাড়ী থেকে চিটাগাং রোড পর্যন্ত শনিরআখড়ায় কোরবানির পশুর হাটের কারছে কিছুটা যানজন দেখা গেলেও ঈদযাত্রায় মহাসড়কের কুমিল্লা অংশের কোথাও যানজটের খবর পাওয়া যায়নি। সরেজমিনে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লার বিভিন্ন অংশে গিয়ে দেখা যায়, মহাসড়কে গাড়ির চাপ কিছুটা বেড়েছে। তবে গাড়ি চলছে নির্বিঘেœ। কোথাও যানজট নেই। যানজটমুক্ত মহাসড়ক পেয়ে খুশি কুমিল্লার যাত্রীরা।
ঢাকা থেকে কুমিল্লার পদুয়ার বাজার বিশ্বরোডে আসা যাত্রী ওমর ফারুক বলেন, রাজধানীর টিকাটুলি মোড় থেকে বাসে উঠে মাত্র দেড় ঘণ্টায় কুমিল্লায় পৌঁছেছি। এর আগে কোনো ঈদে এত তাড়াতাড়ি কুমিল্লায় পৌঁছাতে পারিনি। চট্টগ্রাম থেকে কুমিল্লায় আসা যাত্রী শেখ ফরিদ জানান, চট্টগ্রামের অলংকার থেকে বাসে উঠেছি। শুরুতে রাস্তায় গাড়ির চাপ বেশি মনে হচ্ছিল। একটু পর রাস্তা কিছুটা ফাঁকা মনে হয়। চট্টগ্রাম থেকে কুমিল্লায় আসতে আড়াই ঘণ্টা সময় লেগেছে।
হাইওয়ে পুলিশের কুমিল্লা রিজিয়নের পুলিশ সুপার মুহাম্মদ রহমত উল্লাহ বলেন, গত ১৮ জুন একটি মিটিংয়ে মহাসড়কে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ছাড়া কোনো যানবাহন না থামানোর নির্দেশনা দেই। কুমিল্লা রিজিয়নের ২২টি থানা ও ফাঁড়ির ৬৬টি পেট্রল টিমের পাশাপাশি ইমার্জেন্সি সামাল দিতে ৩০টি কুইক রেসপন্স টিম কাজ করছে। যেকোনো ধরনের প্রতিবন্ধকতা দূর করতে ৫টি সরকারি ও ১২টি বেসরকারি রেকার প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এছাড়াও যদি কোনো দুর্ঘটনা ঘটে তাদের সেবার জন্য অতিরিক্ত অ্যাম্বুলেন্স রাখা হয়েছে।
ঢাকার সাভার : গাবতলীর পশুর হাটের কারণে ঈদে ঘরমুখো মানুষের রাজধানী থেকে বের হতে দীর্ঘ সময় লাগছে। আমিনবাজার পর্যন্ত তীব্র যানজটে পড়ছে যানবাহন। কল্যাণপুর থেকে বিভিন্ন জেলা রুটে চলাচল করা বাসযাত্রীদের বেশ ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। তবে সাভারের সড়ক ও বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ডে যাত্রী-যানবাহনের জটলা দেখা যাচ্ছে। গড়াতেই সড়ক-মহাসড়কে যানবাহনের চাপ বাড়তে থাকে। তবে সকাল থেকে বেলা ১২টার আগ পর্যন্তও তেমন চাপ ছিল না। দিনভর ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে সাভার বাসস্ট্যান্ডে ঈদযাত্রার বাসগুলোর জটলা দেখা যায়। এ ছাড়া নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়কের নবীনগর বাসস্ট্যান্ড ও বাইপাইল বাসস্ট্যান্ডে যাত্রীবাহী বাসের দীর্ঘসারি দেখা যায়। সড়কে ধীরগতিতে চলছে পরিবহনগুলো।
পরিবার সঙ্গে নিয়ে ঈদ উদযাপন করদে রাজশাহী যাচ্ছেন মনিরুল ইসলাম। অফিস আজ সন্ধ্যায় ছুটি দেওয়ার কথা থাকলেও ভিড়ের চিন্তা করে আগেই ছুটি নিয়ে দুপুরেই বাসস্ট্যান্ডে চলে এসেছেন। তবে যাত্রীদের অভিযোগ বাসের টিকেটের তীব্র সংকটের সুযোগ নিয়ে বাস মালিকরা ভাড়া দ্বিগুন-তিনগুন বাড়িয়ে দিয়েছে।
ঢাকা জেলা উত্তর ট্রাফিক ইনচার্জ (টিআই) জাহিদুল ইসলাম বলেন, আমরা সড়কে আছি। সকাল থেকে পরিবহন বা যাত্রী তেমন চাপ ছিল না। দুপুর থেকে ধীরে ধীরে যাত্রীর চাপ ও যানবাহন বাড়তে শুরু করেছে। আজ বিকেল থেকে এই চাপ আরও বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
গাজীপুর মহাসড়কের চিত্র : ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে যাত্রীদের বাড়তি চাপ দেখা দেয়। গতকাল বেল বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সড়কে চাপ আরও বাড়তে শুরু করেছে। গাজীপুরস্থ ঢাকা-ময়মনসিংহ ও ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে দুপুরের পর থেকে অতিরিক্ত যাত্রী ও যানবাহন চাপ সৃষ্টি হয়। এতে দুটি মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে যানবাহন ধীরগতিতে অগ্রসর হতে দেখা গেছে। ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের চন্দ্রা ত্রিমোড় এলাকায় যানবাহনে অতিরিক্ত চাপ দেখা গেছে।
শিল্প অধ্যুষিত গাজীপুর জেলায় শিল্প পুলিশের তথ্য অনুযায়ী জানা গেছে, গাজীপুরে পোশাক কারখানা রয়েছে ২ হাজার ২৮৭টি। এরমধ্যে বিজিএমইএ ৭৪৯ টি, বি কে এম ই এ ১৩৫টি, বিটিএমএ ১২৯ ও অন্যান্য ১ হাজার ২৭৪টি কারখানা রয়েছে। এসব কারখানার অধিকাংশ ছুটি হয়েছে। বাকিগুলো আজ মঙ্গলবার ছুটি হবে।
বগুড়া গামী যাত্রী সেতু ইসলাম বলেন, বাস ভাড়া দ্বিগুন-তিনগুন বাড়ানো হয়েছে। ১০ দিনের ছুটি পেয়ে গ্রামে যাচ্ছি। যানজট নেই, তবে প্রচুর মানুষ। গাড়ির ভাড়া ১ হাজার টাকার নিচে নেই। ভাড়া একটু বেশি হলেও সমস্যা নেই আমরা চাই যানজট যেনো না হয়।
সালনা হাইওয়ে পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আতিকুল ইসলাম বলেন, অনেক শিল্পকারখানা ছুটি হয়েছে। যার ফলে মহাসড়কে যাত্রী ও যানবাহনের চাপ বেড়েছে। মঙ্গলবার আরও বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে মহাসড়কে যানজট এবং অপ্রীতিকর ঘটনা যেন না হয় এজন্য সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
উত্তরবঙ্গের মহাসড়কের চালচিত্র : উত্তরবঙ্গের প্রবেশদ্বরখ্যাত টাঙ্গাইলের বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্ব এলাকায় উত্তরবঙ্গ ও ঢাকামুখী পরিবহনের যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। আবার কখনো কখনো যানজট কমলে ধীরগতিতে চলাচল করে যানবাহন। ফলে ব্যাপক ভোগান্তি পড়ছেন চালক ও যাত্রীরা। যানজটের কারণে বিশেষ করে নারী ও শিশুরা বেশি ভোগান্তি পোহাচ্ছেন। গতকাল সোমবার দুপুর পর্যন্ত সেতু পূর্ব টোলপ্লাজা থেকে ৩ থেকে ৪ কিলোমিটার এলাকাজুরে উত্তরবঙ্গগামী পরিবহনের তীব্র যানজট দেখা গেছে। কিছুক্ষণ পর পর সে পরিবহনগুলো চলাচল করলেও একেবারেই ছিল তা ধীরগতি। তারমধ্যে ট্রাক ও ব্যক্তিগত গাড়ি বেশি লক্ষ্য করা যায়।
এলেঙ্গা হাইওয়ে থানা পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ জাহিদ হাসান জানান, সেতুর ওপর দুর্ঘটনার কারণে ভোর থেকে যানবাহনের চাপ বেড়ে যায়। যার কারণে মহাসড়কের সেতু পূর্ব এলাকায় দীর্ঘ কয়েক কিলোমিটার যানজট ও ধীরগতি লক্ষ্য করা গেছে। পরে বেলা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে স্বাভাবিক হয়ে আসে। বঙ্গবন্ধু সেতু-ভূঞাপুর-এলেঙ্গা আঞ্চলিক মহাসড়কের সেতু পূর্ব এলাকা থেকে প্রায় ২ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে যানজটসহ যানবাহন ধীরগতিতে চলাচল করে। এছাড়া সিরাজকান্দি বাজার, মাটিকাটা, গোবিন্দাসী টি-রোড, ভূঞাপুর বাসস্ট্যান্ডসহ বিভিন্ন এলাকায় থেমে থেমে যানজট সৃষ্টি হচ্ছে।
হাটিকুমরুল গোলচত্বর এলাকা থেকে হাটিকুমরুল হাইওয়ে থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বদরুল কবীর বলেন, রাত থেকে মহাসড়কে গাড়ির চাপ কিছুটা বেড়েছে। এখন স্বাভাবিকের চেয়ে কিছু গাড়ি বেশি চলাচল করছে। তবে কোথাও ধীরগতি বা যানজটের মতো অবস্থা তৈরি হয়নি। এ ছাড়াও যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় আমরা তৎপর রয়েছি।
সিরাজগঞ্জের ট্রাফিক পরিদর্শক (প্রশাসন) সালেকুজ্জামান খান সালেক বলেন, মহাসড়কে যানবাহন ধীরে ধীরে বাড়ছে। তবে মহাসড়কে চাপ থাকলেও কোনো যানজট নেই। আশা করছি উত্তরবঙ্গের ঘরেফেরা মানুষের এবারের ঈদযাত্রাও নির্বিঘœ হবে। এ ছাড়াও যানবাহন ও ঘরেফেরা মানুষের ভোগান্তি কমাতে ও সার্বিক নিরাপত্তায় আমরা সর্বোচ্চ সচেষ্ট রয়েছি। তবে বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্বপাড়ে টোল প্লাজার কারণে কিছুটা সমস্যা হচ্ছে। আমরা চেষ্টা করছি টোল প্লাজা ও পূর্ব পাড়ের ট্রাফিক বিভাগের সঙ্গে কথা বলে এই সমস্যার সমাধান করার। যেন সেই অতিরিক্ত চাপ একবারে এসে সেতু পশ্চিম পাড়ে যানজটের বা ধীরগতির সৃষ্টি করতে না পারে।’
প্রসঙ্গত, বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম গোলচত্বর হয়ে হাটিকুমরুল গোলচত্বর দিয়ে দেশের উত্তর ও দক্ষিণের ২২ জেলার মানুষ চলাচল করে। এই মহাসড়ক দিয়ে প্রতিদিন গড়ে ১৭ থেকে ১৮ হাজার যানবাহন চলাচল করে। তবে ঈদের সময় এ সংখ্যা দাঁড়ায় ৩৫ থেকে ৪৫ হাজারে। এই সময়ে অতিরিক্ত যানবাহন চলাচলের কারণে প্রতি বছরই যানজটের সৃষ্টি হয়। এতে ভোগান্তিতে পড়েন যাত্রীরা। তবে গত ঈদুল ফিতরে তেমন কোনও যানজট সৃষ্টি হয়নি এই মহাসড়কে। এই ভোগান্তি এড়াতে এবার ঈদযাত্রায় নলকা আন্ডারপাস ও কড্ডা ফ্লাইওভার খুলে দেওয়া হয়েছে।
ট্রেনের স্ট্যান্ডিং টিকিট : বাংলাদেশ রেলওয়ের যাত্রীসেবার মান কমতে কমতে সর্বনিম্নে নেমেছিল কয়েক বছর আগে। এরপর একের পর এক নতুন ট্রেন চালু, পুরাতন রেকের বদলে নতুন রেক পুনঃস্থাপন, অনলাইনে টিকিট বিক্রি, টিকিট ছাড়া স্টেশনে প্রবেশ করতে না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তারপরই বদলে যেতে শুরু করেছে যাত্রীসেবার মান, বাড়ছে সুযোগ সুবিধা। যাত্রা হচ্ছে নির্ঝঞ্ঝাট ও বাধাহীন। তবে পর্দার আড়ালে অন্য ঘটনা। নিবন্ধন করে অনলাইনে টিকিট কাটার নিয়ম করার পর ট্রেনের টিকিট কার্যত সিন্ডিকেটের কবলে পড়ে গেছে। সাধারণ মানুষ এখন আর টিকিট কাটতে পারেন না। অনলাইনে টিকিট কাটার চেষ্টা করলেই টিকিট নেই জানানো হয়। অথচ ভিন্নপথে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে বেশি টাকা দিয়ে টিকিট কিনতে চাইলে তা সহজেই মেলে। রেল কর্তৃপক্ষের অসৎ কর্মকর্তারা নিজেদের সিন্ডিকেট ব্যবসা বাধাহীন করতে গণমাধ্যমের কিছু সাংবাদিকদের হাত করেছে। ফলে তারা নির্বিঘেœ ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। আর সাধারণ মানুষ টিকিট কাটতে চাইলে আসনবিহীন টিকিট কাটতে পারছেন। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এবার ঈদযাত্রায় আসনবিহীন বা স্ট্যান্ডিং টিকিট বিক্রি হচ্ছে মোট আসনের ২৫ শতাংশ। ঢাকা, ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট, বিমানবন্দর ও জয়দেবপুর স্টেশন থেকে এসব টিকিট পাওয়া যাচ্ছে। যাত্রার দিন আসনবিহীন টিকিট স্টেশনের কাউন্টার থেকে কেনা যায়। গতকাল কমলাপুর রেলস্টেশনের ম্যানেজার মোহাম্মদ মাসুদ সারওয়ার জানান, দুই-তিনটি ট্রেনে ছাড়তে বিলম্ব হলেও প্রায় সবগুলো ট্রেনই যথাসময়ে যথা নিয়মে চলাচল করছে। ট্রেনে এখন আর আগের দিন নেই। ট্রেনযাত্রা এখন আরও সহজ হয়েছে। টিকিট ছাড়া কাউকে স্টেশনে প্রবেশ করতে না দেয়ায় মনে হচ্ছে কমলাপুর রেলস্টেশন ফকফকা। টিকিটের জন্য যাত্রীদের কোনো ভোগান্তি নেই। কিন্তু পর্দার অন্তরালে সিন্ডিকেট গোটা রেলওয়ের টিকিট গিলে খাচ্ছে। গতকাল সংবাদ সম্মেলন করে কমলাপুর রেলস্টেশন ম্যানেজার মোহাম্মদ মাসুদ সারওয়ার বলেন, শুধুমাত্র রংপুর এক্সপ্রেস আসতে কিছুটা বিলম্ব হয়েছিল। আমরা আগে দেখেছি সকালের ট্রেন রাতে গিয়েছে। মানুষ টিকিট কাটতে ভোগান্তিতে পড়েছেন। সোমবার সারাদিন মোট ৫৩ জোড়া ট্রেন ছেড়ে যাবে। ১০৬টি ট্রেনের মাঝে ৩ জোড়া স্পেশাল ট্রেন ছেড়ে যাবে। এছাড়া ৪১ জোড়া আন্তঃনগর ট্রেন রয়েছে। তবে সব মিলিয়ে মোট ট্রেন ৫৩ জোড়া ট্রেন চলাচল করবে। তিনি বলেন, ঈদে শতভাগ টিকিট অনলাইনে পাওয়ায় যাত্রীদের কোনো ভোগান্তি নেই। কোনো বিষয় নিয়ে তাদের অভিযোগও নেই।
সদরঘাটের চিত্র : পদ্মা সেতু চালুর পর রাজধানীর সদরঘাটে যাত্রী চাপ কমে যায়। তবে গতকাল সোমবার সদরঘাটে ছিল ঘরমুখো মানুষের ব্যাপক উপস্থিতি। তবে যাত্রীর চাপ বাড়লেও স্বস্তি নিয়েই ঘরে ফিরেছেন মানুষ। যাত্রী বাড়ায় বেড়েছে লঞ্চের সংখ্যা। যাত্রীবোঝাই করে দক্ষিণাঞ্চলের লঞ্চগুলো ছেড়ে গেছে। গত বৃহস্পতিবার থেকেই ঈদ উপলক্ষে সদরঘাটে ঘরমুখো মানুষের চাপ বাড়তে থাকে।
বিআইডব্লিউটিএ সূত্র জানায়, শনিবার ঢাকার এ নদীবন্দর থেকে ঢাকা-বরিশাল রুটে চারটি, ঢাকা-হাতিয়া রুটে তিনটি, ঢাকা-ভোলা রুটে তিনটিসহ দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন রুটে প্রতিদিন শতাধিক লঞ্চ ছেড়ে গেছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ঈদ উপলক্ষে স্কুল-কলেজ ছুটি হয়ে যাওয়ায় গত বৃহস্পতিবার থেকে যাত্রীর সংখ্যা স্বাভাবিকের চেয়ে বেড়েছে। লঞ্চ মালিকরা বলছেন, পোশাক কারখানাগুলোতে ছুটি ঘোষণা করা হলে লঞ্চে যাত্রীর চাপ আরো বাড়বে। এজন্য লঞ্চের সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে।
লঞ্চ মালিকরা জানান, ঈদ উপলক্ষে অগ্রিম টিকিট বিক্রি শেষ হয়ে গেছে। কোনো কোনো রুটে ২৯ জুন পর্যন্ত কেবিনের অগ্রিম টিকিট শেষ হয়ে গেছে। তবে ঢাকা-বরিশাল রুটে অগ্রিম টিকিট বিক্রির হার কিছুটা কম। যাত্রী টানতে গত ঈদের মতো এবারও ভাড়ায় কিছুটা ছাড় দিচ্ছেন মালিকরা। রুট ভেদে ডেকের ভাড়া ৫০ থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত কম নেওয়া হচ্ছে।
ঢাকা-বরিশাল রুটে চলাচলকারী এমভি প্রিন্স আওলাদ লঞ্চের টিকিট বিক্রেতা জামাল উদ্দিন বলেন, ভাড়া কিছুটা কম রাখা হচ্ছে। ডেকে ৩০০ টাকা, সিঙ্গেল কেবিন ১ হাজার, আর ডাবল ২ হাজার করে। যাত্রী আগের চেয়ে কিছুটা বেড়েছে। গার্মেন্টস ছুটি হলে আরো বাড়বে। তবে এ রুটে যাত্রীর সংখ্যা অন্যান্য রুটের চেয়ে কিছুটা কম। আমাদের অগ্রিম টিকিটও ২৭ জুন পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে।
গতকাল সদরঘাটে বরিশালগামী যাত্রী মো. সবুর শেখ বলেন, তিনি এসেই টিকিট পেয়েছেন। পরিবার নিয়ে বাড়ি যাচ্ছেন। যাত্রাবাড়ী থেকে আসা বরগুনাগামী যাত্রী পারভীন জামান বলেন, আগে ঈদে টার্মিনালেই ঢোকা যেত না ভিড়ের কারণে। এখন আর তেমন অবস্থা নেই। অনেকটা স্বস্তি নিয়েই পরিবারের সঙ্গে ঈদের ছুটি কাটাতে বাড়ি যাচ্ছেন। ভাড়াও বাড়ানো হয়নি।
লঞ্চ মালিক সমিতির মহাসচিব শহিদুল হক ভূঁইয়া বলেন, কিছু রুটে অগ্রিম টিকিট অনেকটাই বিক্রি হয়েছে। সরকার নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে কিছুটা কম নিচ্ছি। ঈদের আগে শেষ দুই-তিন দিন যাত্রী বেশি হবে বলে আশা করছি। লঞ্চের সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে।
উড়োজাহাজের অভ্যন্তরীণ রুটের যাত্রীদের চাপ : ঈদুল আজহা উপলক্ষে আকাশপথে বাড়তি ফ্লাইট থাকবে না কিন্তু যাত্রীসংখ্যা স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরছে। প্রতিদিনই অভ্যন্তরীণ রুটে ফ্লাইট বাড়াচ্ছে এয়ারলাইন্সগুলো। ঈদকে কেন্দ্র করে টিকিটের চাহিদাও বেড়েছে। অন্য পরিবহনের চেয়ে প্লেনে ভ্রমণ নিরাপদ হওয়ায় ঈদ যাত্রায় সামর্থবানরা প্লেনের দিকেই ঝুঁকছে।
জানা যায়, করোনাভাইরাসকালে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) ১ জুন থেকে ফ্লাইট চালুর অনুমতি দেয়। প্রথম দিকে যাত্রীর অভাবে অনেক ফ্লাইট বাতিল করতে হয়েছে এয়ারলাইন্সগুলোকে। জুনে দুই-একদিন অভ্যন্তরীণ রুটে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স ফ্লাইট পরিচালনা করে যাত্রীর অভাবে ফ্লাইট বন্ধ করে দেয়।
বেসরকারি ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স ও নভোএয়ার জানায়, তাদের যাত্রীসংখ্যা বেড়েছে। প্রতি রুটেই ফ্লাইট বেড়েছে স্বাভাবিক সময়ের মতো।
এয়ারলাইন্স সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ২৭ জুলাই থেকে ৩০ জুলাই এবং ৩ আগস্ট থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত টিকিটের
চাহিদা বেশি। তবে অন্য ঈদের মতো চাহিদা ও টিকিটের মূল্য বেশি নেই এ ঈদে। তবে যাত্রীসংখ্যা বাড়াকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন খাত সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, এর মাধ্যমেই অ্যাভিয়েশন খাত স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরছে।
ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের রিজার্ভেশন ডিপার্টমেন্ট জানায়, এখন চট্টগ্রামে প্রতিদিন পাঁচটি, সৈয়দপুরে পাঁচটি, যশোরে চারটি, সিলেটে দু’টি, রাজশাহীতে দু’টি ও বরিশালে দু’টি ফ্লাইট পরিচালনা করা হচ্ছে। যাত্রীসংখ্যা বাড়ায় স্বাভাবিক সময়েরমতো ফ্লাইটসংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। ২৭ জুলাই থেকে ৬ আগস্ট পর্যন্ত অধিকাংশ টিকিট বিক্রি হয়েছে। নভোএয়ার জানিয়েছে, ঈদে টিকিটের চাহিদা রয়েছে। ২৭ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত টিকিটের চাহিদা বেশি। প্রতি রুটেই ফ্লাইটসংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। কক্সবাজার ছাড়া সব রুটেই এখন ফ্লাইট পরিচালনা করা হচ্ছে।