ইরানের মানবাধিকার পরিষদের মন্তব্য
‘২৫টি দেশের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা অবৈধ এবং বেআইনি’

- আপডেট সময় ১০:৪৫:৩০ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৭ জুন ২০২৩
- / ১৩১ বার পড়া হয়েছে
ইরানের বিচার বিভাগের মানবাধিকার বিষয়ক পরষদের প্রধান কাজেম গারিবাবাদি নিষেধাজ্ঞাকে মানবতার বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড় অপরাধ হিসেবে আখ্যায়িত করে বলেছেন, আমেরিকা প্রায় ২৫টি দেশের বিরুদ্ধে যেসব একতরফা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে তা বেআইনি এবং অবৈধ।
ইরানের সর্বোচ্চ মানবাধিকার পরিষদের সচিব গারিবাবাদি রোববার তেহরানে স্মরণ সভার এক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়ের সময় বলেন, ইরানি জনগণের বিরুদ্ধে একতরফা ও অবৈধ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা আমেরিকার জঘন্যতম অপরাধগুলোর মধ্যে অন্যতম এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইরানের জনগণের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বেশি বেপরোয়া এবং নিপীড়নমূলক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে।
সাম্প্রতিক দশকগুলোতে অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞাগুলো অন্য দেশের উপর চাপ সৃষ্টি করার জন্য শক্তিশালী দেশগুলির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার হয়ে উঠেছে। এ পর্যন্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং আরো কিছু সমৃদ্ধ দেশ অন্যান্য দেশের বিরুদ্ধে শত শত অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। আর এসব নিষেধাজ্ঞা পরমাণু অস্ত্র বিস্তার কিংবা মিথ্যা মানবাধিকার ইস্যুতে দেয়া হয়েছে। অন্যদিকে এসব নিষেধাজ্ঞার পিছনে সবসময় রাজনৈতিক এবং দুরভিসন্ধিমূলক উদ্দেশ্য থাকে। মার্কিন পররাষ্ট্র নীতিতে অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞাকে অন্য দেশের ওপর চাপ সৃষ্টি করার জন্য শক্তিশালী হাতিয়ার হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে। আমেরিকার প্রায় সব প্রেসিডেন্ট এই অস্ত্রটি ব্যবহার করেছেন কিংবা তা ব্যবহারের ওপর জোর দিয়েছেন। বিশ্বের অনেক চিন্তাবিদ মার্কিন নিষেধাজ্ঞাকে এ দেশের ‘অর্থনৈতিক অস্ত্র’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
আমেরিকার সাবেক প্রেসিডেন্ট উড্রো উইলসন বলেছেন: “যে জাতি নিষেধাজ্ঞায় আছে তারা আত্মসমর্পণ বা অবরুদ্ধ হওয়ার জন্য দায়ী; এই নীরব এবং শান্তিপূর্ণ অর্থনৈতিক অস্ত্র প্রয়োগ করা হলে কোনো সামরিক শক্তি ব্যবহারের প্রয়োজন নেই।”
নিষেধাজ্ঞার অধীনে থাকা দেশগুলির জনগণের উপর এসব নিষেধাজ্ঞার মানবতাবিরোধী নেতিবাচক প্রভাব অস্বীকার করা যায় না। অর্থনৈতিক অস্ত্র হিসেবে নিষেধাজ্ঞা যুদ্ধের মতোই ধ্বংসাত্মক পরিণতি বয়ে আনতে পারে। মার্কিন গবেষক “বো রাম কওন” এ সম্পর্কে বলেছেন: অতীতে বিভিন্ন দেশ অন্য দেশের ওপর চাপ সৃষ্টি করার হাতিয়ার হিসাবে সামরিক শক্তি এবং অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা দুটোই ব্যবহার করত। ফলে মানুষের মধ্যে হতাহত না ঘটিয়ে এবং জনমতের মধ্যে ব্যাপক ভিত্তিক আতঙ্ক সৃষ্টি না করে এসব নিষেধাজ্ঞা অন্য দেশের উপর মারাত্মক অর্থনৈতিক ক্ষতি বয়ে আনতে পারে। ফলে বলা যায় টার্গেটকৃত দেশকে আত্মসমর্পণে বাধ্য করার জন্য বা তাদের আচরণ পরিবর্তনের জন্য যুদ্ধের চেয়ে এই অস্ত্রটিই আধিপত্যকামী দেশগুলোর কাছে অধিক পছন্দনীয়।
বিভিন্ন দেশের উপর নিষেধাজ্ঞার প্রভাব সম্পর্কে অর্থনৈতিক গবেষক “ম্যাথিয়াস নেভিনকির্শ” এবং “ফ্লোরিয়ান নিউমিয়ার” তাদের প্রতিবেদনে লিখেছে যে নিষেধাজ্ঞা মানুষের মধ্যে আয় বৈষম্য, দারিদ্র্য এবং টার্গেট দেশগুলোর জিডিপি বৃদ্ধির হ্রাস ঘটিয়েছে। যেমন ১৯৯১ সাল থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে মার্কিন নিষেধাজ্ঞাগুলো টার্গেটকৃত দেশগুলোতে দারিদ্র্য প্রায় ৩.৫ শতাংশ বাড়িয়েছে এবং এসব দেশের মাথাপিছু জিডিপির বৃদ্ধির হার ২ শতাংশের বেশি হ্রাস করেছে।