০৬:১০ অপরাহ্ন, সোমবার, ২০ মে ২০২৪

আত্মীয়কে নিয়োগ দিতে জাবি উপাচার্যের তোড়জোড়

ক্যাম্পাস ডেস্ক
  • আপডেট সময় ১০:১৫:০৫ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৫ জুলাই ২০২৩
  • / ৬২ বার পড়া হয়েছে

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের প্রভাষক পদে উপাচার্যের আত্মীয়কে নিয়োগ দিতে তোড়জোড় চলছে। পছন্দের প্রার্থীকে নিয়োগ দিতে উপাচার্যের পক্ষ থেকে চাপ দেওয়া হচ্ছে বলেও মন্তব্য করেছেন বিভাগের সভাপতি মোহাম্মদ শওকত হোসেন।

উপাচার্যের পছন্দের প্রার্থীর নাম আয়েশা সিদ্দিকা আরশি। তিনি ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের ৪৪তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ছিলেন। সম্পর্কে আরশি উপাচার্য অধ্যাপক মো. নূরুল আলমের ভাগ্নি। এছাড়া বিভাগের একাধিক শিক্ষকের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বললে তারা বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করেন।

গত ২২ জুন ভর্তি পরীক্ষা চলাকালীন ব্যবসা প্রশাসন অনুষদের ডিন অফিসে এক আলাপচারিতায় বিভাগের অন্যান্য শিক্ষকদের উপস্থিতিতে বিভাগের সভাপতি মোহাম্মদ শওকত হোসেন উপাচার্যের পছন্দের সে প্রার্থীর নাম উল্লেখ করে বলেন, এবারের নিয়োগে তাকেই নিয়োগ দিতে হবে। কারণ তিনি উপাচার্যের ভাগ্নি।

বিভাগের সভাপতির এমন মন্তব্যে বিভাগের শিক্ষক নিয়োগে স্বজনপ্রীতির আভাসে ক্ষুব্ধ বিভাগের অন্যান্য শিক্ষকরা। তাদের ভাষ্যমতে, নিয়োগ বোর্ডই সিদ্ধান্ত নিবে কে শিক্ষক হবেন। তবে তার আগেই যদি এরকম একজনকে বাছাই করে ফেলা হয়, তাহলে নিয়োগ প্রক্রিয়াটি স্বচ্ছ থাকে না। তারা আরও বলেন, এখানে যাদের রেজাল্ট ভালো, ভাইবা বোর্ডে যে ভালো করবেন তিনিই নিয়োগ পাবেন এবং এই ক্রাইটেরিয়াতেই নিয়োগ হওয়ার কথা। কিন্তু স্বজনপ্রীতি দরুন একজন এগিয়ে থাকবে অপরদিকে অন্যজনকে পিছিয়ে রাখা হবে, এভাবে তো চলতে পারে না।

তাছাড়া একজন চেয়ারম্যানের শেষ কর্মদিবসেই কেন তড়িঘড়ি করে নিয়োগ বোর্ড বসানো হবে এই নিয়েও শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্যে উৎকণ্ঠা এবং দ্বিধার অন্ত নেই।

জানা যায়, বিভাগের শিক্ষক নিয়োগের আবেদনপত্র গ্রহণের সময়সীমা ছিলো ১ জুন থেকে ১৮ জুন। পরবর্তীতে ২৫ জুন নিয়োগ বোর্ডের সার্কুলার ঘোষণা করা হয়। তাছাড়া চলতি মাসের (জুলাই) ৫ তারিখে নিয়োগ বোর্ড বসবে বলে জানা যায়।

জানা যায়, আগামী ৬ জুলাই সভাপতি হিসেবে মোহাম্মদ শওকত হোসেনের শেষ কার্যদিবস। গত ২০ জুন বিশ্ববিদ্যালয়ের চুক্তিভিত্তিক রেজিস্ট্রার রহিমা কানিজ স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে জানানে হয়, আগামী ৮ জুলাই থেকে বিভাগের সভাপতি দায়িত্ব পালন করবেন সহযোগী অধ্যাপক মো. ইউসুফ হারুন। তাছাড়া সভাপতি হিসেবে মোহাম্মদ শওকত হোসেনের মেয়াদ শেষের মাত্র একদিন পূর্বে নিয়োগ বোর্ড বসানোকেও ত্রুটিপূর্ণ মনে করছেন অনেকে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিভাগের এক শিক্ষক বলেন, মোহাম্মদ শওকত হোসেন সম্প্রতি প্রফেসরশিপের জন্য আবেদন করেছেন। তার প্রফেসরশিপের বিনিময়ে উপাচার্যের আত্মীয়কে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার গোপন চুক্তি হয়েছে।

শিক্ষক নিয়োগের বিষয়ে বিভাগের শিক্ষক মো. ইউসুফ হারুন বলেন, একটা নিয়োগ বোর্ডের কাজ এতো দ্রুত কিভাবে সম্পন্ন হয় এ নিয়ে আমি সন্দিহান। বিভাগের চেয়ারম্যানের শেষ কর্মদিবসে এসে তড়িঘড়ি করে নিয়োগ বোর্ড বসানো নিয়ে আমি বিস্মিত ও কিছুটা অপমানিত বোধ করছি। যেখানে দুই দিন পর আমি বিভাগের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নিব, এর আগেই কেন নিয়োগ দিচ্ছে এবং কেন এতো তাড়াহুড়ো তা আমার বোধগম্য নয়।

তবে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আয়েশা সিদ্দিকা আরশি জাবির উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক মেহের নিগার কবিতার ভাতিজি। মেহের নিগার উপাচার্য অধ্যাপক মো. নূরুল আলমের নিকটাত্মীয় এবং সম্পর্কে বোন। তিনি আয়েশা সিদ্দিকা আরশির আপন চাচি। অধ্যাপক মেহের নিগার ছাত্রাবস্থায় ছাত্রদলের রাজনীতি করতেন। পরবর্তীতে তিনি বিএনপির শিক্ষক রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। তার স্বামী মনোয়ার হোসেন ১৯৯০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জিয়াউর রহমান হল ছাত্র সংসদের নির্বাচিত ভিপি ছিলেন এবং শাখা ছাত্রদলের সংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। আরশির পিতা প্রয়াত আরজু মিয়া মিরপুরের স্থায়ী বাসিন্দা এবং বিএনপির সক্রিয় কর্মী ছিলেন।

এ বিষয়ে জানতে চেয়ে বিভাগের সভাপতি সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ শওকত হোসেন ও উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. নূরুল আলমকে একাধিক বার ফোন কল করা হলেও তাদের কেউই ফোন রিসিভ করেননি। তাদেরকে মোবাইল ফোনে ক্ষুদেবার্তা পাঠানো হলেও কেউই সাড়া দেননি।

ট্যাগস

নিউজটি শেয়ার করুন

আত্মীয়কে নিয়োগ দিতে জাবি উপাচার্যের তোড়জোড়

আপডেট সময় ১০:১৫:০৫ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৫ জুলাই ২০২৩

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের প্রভাষক পদে উপাচার্যের আত্মীয়কে নিয়োগ দিতে তোড়জোড় চলছে। পছন্দের প্রার্থীকে নিয়োগ দিতে উপাচার্যের পক্ষ থেকে চাপ দেওয়া হচ্ছে বলেও মন্তব্য করেছেন বিভাগের সভাপতি মোহাম্মদ শওকত হোসেন।

উপাচার্যের পছন্দের প্রার্থীর নাম আয়েশা সিদ্দিকা আরশি। তিনি ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের ৪৪তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ছিলেন। সম্পর্কে আরশি উপাচার্য অধ্যাপক মো. নূরুল আলমের ভাগ্নি। এছাড়া বিভাগের একাধিক শিক্ষকের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বললে তারা বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করেন।

গত ২২ জুন ভর্তি পরীক্ষা চলাকালীন ব্যবসা প্রশাসন অনুষদের ডিন অফিসে এক আলাপচারিতায় বিভাগের অন্যান্য শিক্ষকদের উপস্থিতিতে বিভাগের সভাপতি মোহাম্মদ শওকত হোসেন উপাচার্যের পছন্দের সে প্রার্থীর নাম উল্লেখ করে বলেন, এবারের নিয়োগে তাকেই নিয়োগ দিতে হবে। কারণ তিনি উপাচার্যের ভাগ্নি।

বিভাগের সভাপতির এমন মন্তব্যে বিভাগের শিক্ষক নিয়োগে স্বজনপ্রীতির আভাসে ক্ষুব্ধ বিভাগের অন্যান্য শিক্ষকরা। তাদের ভাষ্যমতে, নিয়োগ বোর্ডই সিদ্ধান্ত নিবে কে শিক্ষক হবেন। তবে তার আগেই যদি এরকম একজনকে বাছাই করে ফেলা হয়, তাহলে নিয়োগ প্রক্রিয়াটি স্বচ্ছ থাকে না। তারা আরও বলেন, এখানে যাদের রেজাল্ট ভালো, ভাইবা বোর্ডে যে ভালো করবেন তিনিই নিয়োগ পাবেন এবং এই ক্রাইটেরিয়াতেই নিয়োগ হওয়ার কথা। কিন্তু স্বজনপ্রীতি দরুন একজন এগিয়ে থাকবে অপরদিকে অন্যজনকে পিছিয়ে রাখা হবে, এভাবে তো চলতে পারে না।

তাছাড়া একজন চেয়ারম্যানের শেষ কর্মদিবসেই কেন তড়িঘড়ি করে নিয়োগ বোর্ড বসানো হবে এই নিয়েও শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্যে উৎকণ্ঠা এবং দ্বিধার অন্ত নেই।

জানা যায়, বিভাগের শিক্ষক নিয়োগের আবেদনপত্র গ্রহণের সময়সীমা ছিলো ১ জুন থেকে ১৮ জুন। পরবর্তীতে ২৫ জুন নিয়োগ বোর্ডের সার্কুলার ঘোষণা করা হয়। তাছাড়া চলতি মাসের (জুলাই) ৫ তারিখে নিয়োগ বোর্ড বসবে বলে জানা যায়।

জানা যায়, আগামী ৬ জুলাই সভাপতি হিসেবে মোহাম্মদ শওকত হোসেনের শেষ কার্যদিবস। গত ২০ জুন বিশ্ববিদ্যালয়ের চুক্তিভিত্তিক রেজিস্ট্রার রহিমা কানিজ স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে জানানে হয়, আগামী ৮ জুলাই থেকে বিভাগের সভাপতি দায়িত্ব পালন করবেন সহযোগী অধ্যাপক মো. ইউসুফ হারুন। তাছাড়া সভাপতি হিসেবে মোহাম্মদ শওকত হোসেনের মেয়াদ শেষের মাত্র একদিন পূর্বে নিয়োগ বোর্ড বসানোকেও ত্রুটিপূর্ণ মনে করছেন অনেকে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিভাগের এক শিক্ষক বলেন, মোহাম্মদ শওকত হোসেন সম্প্রতি প্রফেসরশিপের জন্য আবেদন করেছেন। তার প্রফেসরশিপের বিনিময়ে উপাচার্যের আত্মীয়কে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার গোপন চুক্তি হয়েছে।

শিক্ষক নিয়োগের বিষয়ে বিভাগের শিক্ষক মো. ইউসুফ হারুন বলেন, একটা নিয়োগ বোর্ডের কাজ এতো দ্রুত কিভাবে সম্পন্ন হয় এ নিয়ে আমি সন্দিহান। বিভাগের চেয়ারম্যানের শেষ কর্মদিবসে এসে তড়িঘড়ি করে নিয়োগ বোর্ড বসানো নিয়ে আমি বিস্মিত ও কিছুটা অপমানিত বোধ করছি। যেখানে দুই দিন পর আমি বিভাগের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নিব, এর আগেই কেন নিয়োগ দিচ্ছে এবং কেন এতো তাড়াহুড়ো তা আমার বোধগম্য নয়।

তবে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আয়েশা সিদ্দিকা আরশি জাবির উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক মেহের নিগার কবিতার ভাতিজি। মেহের নিগার উপাচার্য অধ্যাপক মো. নূরুল আলমের নিকটাত্মীয় এবং সম্পর্কে বোন। তিনি আয়েশা সিদ্দিকা আরশির আপন চাচি। অধ্যাপক মেহের নিগার ছাত্রাবস্থায় ছাত্রদলের রাজনীতি করতেন। পরবর্তীতে তিনি বিএনপির শিক্ষক রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। তার স্বামী মনোয়ার হোসেন ১৯৯০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জিয়াউর রহমান হল ছাত্র সংসদের নির্বাচিত ভিপি ছিলেন এবং শাখা ছাত্রদলের সংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। আরশির পিতা প্রয়াত আরজু মিয়া মিরপুরের স্থায়ী বাসিন্দা এবং বিএনপির সক্রিয় কর্মী ছিলেন।

এ বিষয়ে জানতে চেয়ে বিভাগের সভাপতি সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ শওকত হোসেন ও উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. নূরুল আলমকে একাধিক বার ফোন কল করা হলেও তাদের কেউই ফোন রিসিভ করেননি। তাদেরকে মোবাইল ফোনে ক্ষুদেবার্তা পাঠানো হলেও কেউই সাড়া দেননি।