০৫:০৫ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪

এখন নৌকাকে মানুষ ভালোবাসে না: কাদের সিদ্দিকী

ডেস্ক রিপোর্ট
  • আপডেট সময় ০৭:১২:৪৯ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৬ অক্টোবর ২০২৩
  • / ১৯১ বার পড়া হয়েছে

কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বলেছেন, যেই নৌকা দেখলে মানুষের চোখে পানি আসত এখন সেই নৌকাকে মানুষ এত ভালোবাসে না। ২০১৮ সালে কি একটা ভোট হয়েছে, তারপরও আপনারা নেতা, নৌকা মার্কা হইলেই পাশ। বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশটা কি ডুবে যাক, যদি না চান তাহলে মানুষের কাছে যান।

শুক্রবার দুপুরে কুমিল্লার দেবিদ্বার উপজেলার হোসেনপুর গ্রামের ফাঁসির দণ্ড থেকে মুক্তি পেয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ভোগ শেষে সদ্য কারামুক্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা রাখালচন্দ্র নাহার বাড়িতে তাকে দেখতে গিয়ে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীরউত্তম এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু জাতির পিতা, জাতির পিতাই হওয়া উচিত ছিল, আওয়ামী লীগের না। এ দেশটাকে চেয়েছিলাম মানুষের দেশ, দানবের নয়। মুক্তিযুদ্ধ করে ছিলাম সাধারণ মানুষের জন্য, কিন্তু তা হয় নাই। পাকিস্তান আমলে অফিসার ও দারোগা পুলিশরা যা ছিলেন তার চেয়ে দেশ অনেক খারাপ হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, কোনো মুক্তিযোদ্ধার একটি অপরাধে বা একটি মামলায় ফাঁসি হতে পারে না, বীর মুক্তিযোদ্ধা রাখাল নাহার ওপর অবিচার করা হয়েছে, যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ১৪ বছরের স্থলে তাকে ২৪ বছর কারাভোগ করতে হয়েছে।

এ সময় উপস্থিত সাবেক মন্ত্রী আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী দেবিদ্বারবাসীর উদ্দেশে বলেন, স্বাধীনতার পরাজিত শক্তি আজকে স্বাধীনতার চেতনাকে, স্বাধীনতার মর্মবাণীকে হত্যা করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে। আপনারা সতর্ক থেকে সচেতনতার সঙ্গে সব অপশক্তির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ আন্দোলন গড়ে তুলুন।

এ সময় বক্তব্য রাখেন- কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান খোকা বীরপ্রতীক, সাংগঠনিক সম্পাদক মো. শফিকুল ইসলাম দেলোয়ার, কোষাধ্যক্ষ আব্দুল্লাহ বিপ্লব বীরপ্রতীক, সদস্য সারোয়ার হোসেন সজিব, সৈয়দ মাহববুর রহমান পারভেজ, যুব আন্দোলন কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি হাবিবুন্নবী সোহেল, সদস্য মাহবুবুর রহমান রবিন, মো. সাকিল, আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি হুমায়ুন কবির, সদ্য কারামুক্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা রাখালচন্দ্র নাহা প্রমুখ।

কাদের সিদ্দিকী ও লতিফ সিদ্দিকী মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ের ‘বীরনিবাসের বরাদ্দের চিঠি’ ও ব্যক্তিগত তহবিল থেকে নগদ দুই লাখ টাকা রাখালচন্দ্র নাহার হাতে তুলে দেন।

রাখালচন্দ্র নাহা বলেন, আমি এখন মুক্ত আকাশের নিচে আছি, শান্তিতে আছি, কারাগারে নাই। আমার মুক্তির জন্য দেশবাসী অনেক আন্দোলন করেছেন, আপনাদের কারণে মৃত্যুর দরজা থেকে ফিরে এসেছি, তাই সবার কাছে কৃতজ্ঞ।

উপজেলার হোসেনপুর গ্রামে ১৯৯৯ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি প্রতিবেশী দীনেশ চন্দ্র দত্তকে হত্যার অভিযোগে রাখালচন্দ্র নাহা ও তার ভাই নেপাল চন্দ্র নাহার বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন নিহতের ছেলে নিখিল চন্দ্র দত্ত। হত্যা মামলার পর ওই দিনই সন্ধ্যায় পুলিশ স্থানীয় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে রাখালচন্দ্র নাহাকে গ্রেফতার করে। নেপাল চন্দ্র নাহা পলাতক অবস্থায় মারা যান। মামলার তদন্ত শেষে পুলিশ রাখালচন্দ্র ও তার ভাই নেপাল চন্দ্রের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিল করলে ২০০৩ সালের ২০ জানুয়ারি অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ (প্রথম আদালত) খান আবদুল মান্নান বীর মুক্তিযোদ্ধা রাখালচন্দ্রকে মৃত্যুদণ্ড দেন। এরপর ২০০৮ সালের ৭ এপ্রিল মধ্যরাতে রাখালচন্দ্র নাহার মৃত্যুদণ্ডাদেশ কার্যকরের সিদ্ধান্ত হয়। এ বিষয়ে ৩ এপ্রিল কারা কর্তৃপক্ষের চিঠি পায় পরিবার। পরের দিন ‘আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান’ সংগঠন ও দেবিদ্বার উপজেলা প্রেস ক্লাবের পক্ষ থেকে দেবিদ্বারে এবং ৫ এপ্রিল জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধন করে ফাঁসির দণ্ড রহিত করার জন্য দাবি জানানো হয়। এ আন্দোলনে যোগ দেন বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীও।

পর দিন বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে ‘মুক্তিযোদ্ধার ফাঁসি কাল’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হলে তৎকালীন সেনাপ্রধান জেনারেল মইন ইউ আহমেদের দৃষ্টিগোচর হয়। তিনি রাষ্ট্রপতি ইয়াজ উদ্দিনকে বীর মুক্তিযোদ্ধার ফাঁসির দণ্ড মওকুফ করার জন্য অনুরোধ করেন। ফাঁসি হওয়ার তিন ঘণ্টা আগে অর্থাৎ রাত ৯টায় রাষ্ট্রপতি স্বাক্ষরিত এক ফ্যাক্স বার্তায় ফাঁসির দণ্ড রহিত করেন। ২৫ জুন রাষ্ট্রপতি তার মৃত্যুদণ্ড মওকুফ করেন।

অবশেষে বীর মুক্তিযোদ্ধা রাখালচন্দ্র নাহা যাবজ্জীবন সাজা ভোগ করে পাঁচ বছর সাত মাস সাজা রেয়াত পাওয়ায় দীর্ঘ ২৪ বছরের কারা জীবনের অবসান ঘটে এবং গত ৩ জুলাই দুপুরে কুমিল্লা কারাগার থেকে তিনি মুক্তি লাভ করেন।

ট্যাগস

নিউজটি শেয়ার করুন

এখন নৌকাকে মানুষ ভালোবাসে না: কাদের সিদ্দিকী

আপডেট সময় ০৭:১২:৪৯ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৬ অক্টোবর ২০২৩

কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বলেছেন, যেই নৌকা দেখলে মানুষের চোখে পানি আসত এখন সেই নৌকাকে মানুষ এত ভালোবাসে না। ২০১৮ সালে কি একটা ভোট হয়েছে, তারপরও আপনারা নেতা, নৌকা মার্কা হইলেই পাশ। বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশটা কি ডুবে যাক, যদি না চান তাহলে মানুষের কাছে যান।

শুক্রবার দুপুরে কুমিল্লার দেবিদ্বার উপজেলার হোসেনপুর গ্রামের ফাঁসির দণ্ড থেকে মুক্তি পেয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ভোগ শেষে সদ্য কারামুক্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা রাখালচন্দ্র নাহার বাড়িতে তাকে দেখতে গিয়ে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীরউত্তম এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু জাতির পিতা, জাতির পিতাই হওয়া উচিত ছিল, আওয়ামী লীগের না। এ দেশটাকে চেয়েছিলাম মানুষের দেশ, দানবের নয়। মুক্তিযুদ্ধ করে ছিলাম সাধারণ মানুষের জন্য, কিন্তু তা হয় নাই। পাকিস্তান আমলে অফিসার ও দারোগা পুলিশরা যা ছিলেন তার চেয়ে দেশ অনেক খারাপ হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, কোনো মুক্তিযোদ্ধার একটি অপরাধে বা একটি মামলায় ফাঁসি হতে পারে না, বীর মুক্তিযোদ্ধা রাখাল নাহার ওপর অবিচার করা হয়েছে, যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ১৪ বছরের স্থলে তাকে ২৪ বছর কারাভোগ করতে হয়েছে।

এ সময় উপস্থিত সাবেক মন্ত্রী আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী দেবিদ্বারবাসীর উদ্দেশে বলেন, স্বাধীনতার পরাজিত শক্তি আজকে স্বাধীনতার চেতনাকে, স্বাধীনতার মর্মবাণীকে হত্যা করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে। আপনারা সতর্ক থেকে সচেতনতার সঙ্গে সব অপশক্তির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ আন্দোলন গড়ে তুলুন।

এ সময় বক্তব্য রাখেন- কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান খোকা বীরপ্রতীক, সাংগঠনিক সম্পাদক মো. শফিকুল ইসলাম দেলোয়ার, কোষাধ্যক্ষ আব্দুল্লাহ বিপ্লব বীরপ্রতীক, সদস্য সারোয়ার হোসেন সজিব, সৈয়দ মাহববুর রহমান পারভেজ, যুব আন্দোলন কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি হাবিবুন্নবী সোহেল, সদস্য মাহবুবুর রহমান রবিন, মো. সাকিল, আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি হুমায়ুন কবির, সদ্য কারামুক্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা রাখালচন্দ্র নাহা প্রমুখ।

কাদের সিদ্দিকী ও লতিফ সিদ্দিকী মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ের ‘বীরনিবাসের বরাদ্দের চিঠি’ ও ব্যক্তিগত তহবিল থেকে নগদ দুই লাখ টাকা রাখালচন্দ্র নাহার হাতে তুলে দেন।

রাখালচন্দ্র নাহা বলেন, আমি এখন মুক্ত আকাশের নিচে আছি, শান্তিতে আছি, কারাগারে নাই। আমার মুক্তির জন্য দেশবাসী অনেক আন্দোলন করেছেন, আপনাদের কারণে মৃত্যুর দরজা থেকে ফিরে এসেছি, তাই সবার কাছে কৃতজ্ঞ।

উপজেলার হোসেনপুর গ্রামে ১৯৯৯ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি প্রতিবেশী দীনেশ চন্দ্র দত্তকে হত্যার অভিযোগে রাখালচন্দ্র নাহা ও তার ভাই নেপাল চন্দ্র নাহার বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন নিহতের ছেলে নিখিল চন্দ্র দত্ত। হত্যা মামলার পর ওই দিনই সন্ধ্যায় পুলিশ স্থানীয় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে রাখালচন্দ্র নাহাকে গ্রেফতার করে। নেপাল চন্দ্র নাহা পলাতক অবস্থায় মারা যান। মামলার তদন্ত শেষে পুলিশ রাখালচন্দ্র ও তার ভাই নেপাল চন্দ্রের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিল করলে ২০০৩ সালের ২০ জানুয়ারি অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ (প্রথম আদালত) খান আবদুল মান্নান বীর মুক্তিযোদ্ধা রাখালচন্দ্রকে মৃত্যুদণ্ড দেন। এরপর ২০০৮ সালের ৭ এপ্রিল মধ্যরাতে রাখালচন্দ্র নাহার মৃত্যুদণ্ডাদেশ কার্যকরের সিদ্ধান্ত হয়। এ বিষয়ে ৩ এপ্রিল কারা কর্তৃপক্ষের চিঠি পায় পরিবার। পরের দিন ‘আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান’ সংগঠন ও দেবিদ্বার উপজেলা প্রেস ক্লাবের পক্ষ থেকে দেবিদ্বারে এবং ৫ এপ্রিল জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধন করে ফাঁসির দণ্ড রহিত করার জন্য দাবি জানানো হয়। এ আন্দোলনে যোগ দেন বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীও।

পর দিন বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে ‘মুক্তিযোদ্ধার ফাঁসি কাল’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হলে তৎকালীন সেনাপ্রধান জেনারেল মইন ইউ আহমেদের দৃষ্টিগোচর হয়। তিনি রাষ্ট্রপতি ইয়াজ উদ্দিনকে বীর মুক্তিযোদ্ধার ফাঁসির দণ্ড মওকুফ করার জন্য অনুরোধ করেন। ফাঁসি হওয়ার তিন ঘণ্টা আগে অর্থাৎ রাত ৯টায় রাষ্ট্রপতি স্বাক্ষরিত এক ফ্যাক্স বার্তায় ফাঁসির দণ্ড রহিত করেন। ২৫ জুন রাষ্ট্রপতি তার মৃত্যুদণ্ড মওকুফ করেন।

অবশেষে বীর মুক্তিযোদ্ধা রাখালচন্দ্র নাহা যাবজ্জীবন সাজা ভোগ করে পাঁচ বছর সাত মাস সাজা রেয়াত পাওয়ায় দীর্ঘ ২৪ বছরের কারা জীবনের অবসান ঘটে এবং গত ৩ জুলাই দুপুরে কুমিল্লা কারাগার থেকে তিনি মুক্তি লাভ করেন।