০৮:০৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ০৯ মে ২০২৪

আরাফাতে ২০ লাখ মুসল্লি: আজ পবিত্র হজ

বিশেষ প্রতিবেদন
  • আপডেট সময় ১১:০৭:০৫ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৭ জুন ২০২৩
  • / ১০২ বার পড়া হয়েছে

আজ পবিত্র হজ। করোনা মহামারির ৩ বছর পর এবারই বড় পরিসরে ও স্বাভাবিক পরিবেশে পবিত্র হজ পালিত হচ্ছে। আজ  মঙ্গলবার সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করবেন সারা বিশ্ব থেকে আসা ২০ লাখেরও বেশি মুসলমান। আরাফাতের ময়দানে আজ লাখো কণ্ঠে ধ্বনিত হবে ‘লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক, লাব্বাইকা লা শারিকা লাকা লাব্বাইক, ইন্নাল হাম্দা ওয়ান নি’মাতা লাকা ওয়াল মুলক্, লা শারিকা লাক। (আমি হাজির, হে আল্লাহ আমি হাজির, তোমার কোনো শরিক নেই, সব প্রশংসা ও নিয়ামত শুধু তোমারই, সব সা¤্রাজ্যও তোমার)।
আজ মিনায় ফজরের নামাজ আদায় করেই তালবিয়া পড়তে পড়তে হজ যাত্রীরা আরাফাতের ময়দানে গিয়ে নিজ নিজ খিমায় তশরিফ নেবেন। এখানেই দিনভর ইবাদত বন্দেগিতে মশগুল থাকবেন তারা। আল্লাহর অশেষ রহমতের ময়দান আরাফাতে সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত অবস্থান করার নামই হজ। এর আগে-পরে অন্য আনুষঙ্গিক কাজ করার মাধ্যমে হজের পরিপূর্ণতা দেওয়া হয়। সোমবার মিনার মাঠে দিনভর ইবাদত বন্দেগিতে মশগুল ছিলেন সব হজযাত্রী। আজ ফজরে হজযাত্রীরা আরাফাতের ময়দানে গিয়ে সমবেত হবেন। তাদের বহন করার জন্য রয়েছে বিশেষ ট্রেন সার্ভিস। রয়েছে বাসেরও ব্যবস্থা। মিনা থেকে আরাফাতের দূরত্ব বেশি না হওয়ায় অনেকে হেঁটেও রওনা হবেন। তবে বাংলাদেশী হজযাত্রীদের বিভিন্ন ভাগে বিভক্ত করে দেয়া হয়েছে। কিছু হজযাত্রী ভিড় এড়াতে মসজিদে নামিরাহর কাছে অবস্থান করার জন্য ফজরের নামাজের আগেই রাত তিনটার দিকে মিনার মাঠ থেকে আরাফাতের উদ্দেশে রওনা হবেন।
দুই মাইল দৈর্ঘ্য ও দুই মাইল প্রস্থের বিরাট সমতল ময়দানের নাম আরাফাত। এর তিন দিকে রয়েছে জাবাল বা পাহাড়। জাবালে রহমত হলো রহমতের পাহাড়। বলা হয়ে থাকে, পৃথিবীতে এসে হজরত আদম (আ) ও হজরত হাওয়া (আ)-এর পুনর্মিলনও হয়েছিল এ ময়দানে। হজরত মুহাম্মদ (স) জাবালে রহমত পাহাড়ের কাছে দাঁড়িয়ে বিদায় হজের ভাষণ দিয়েছিলেন। এই পাহাড়ে একটি উঁচু পিলার আছে। একে কেউ কেউ দোয়ার পাহাড়ও বলেন। কোনো কোনো হজযাত্রী জাবালে রহমতে উঠে ইবাদত বন্দেগি করেন।
আরাফাতের অবস্থান সম্পর্কে হাদিস শরিফে বলা আছে, হজের মোট ফরজ কাজ হচ্ছে ৩টি। ইহরাম বাঁধা, ৯ জিলহজ নির্দিষ্ট সময়ে উকুফে আরাফায় অবস্থান করা ও কাবাঘরে তাওয়াফ করা। ইসলামী শরিয়াহ মোতাবেক হজের প্রধান রুকন উকুফে আরাফায় অবস্থান করাটা ফরজ। তাই আজ মিনার মাঠে ফজরের নামাজের পরপরই হজযাত্রীরা আল্লাহর নৈকট্য লাভ ও তামাম জিন্দেগির গুনাহ মাফ করার একান্ত বাসনা নিয়ে রওনা দেবেন আরাফার অভিমুখে। এখানে জোহরের ওয়াক্ত থেকে শুরু হবে উকুফের সময়।

এদিন জোহরের ওয়াক্ত থেকে সূর্যাস্তের পূর্ব পর্যন্ত সময়ের মধ্যে যে ব্যক্তি আরাফায় উপস্থিত হবেন- তার জন্য সূর্যাস্ত পর্যন্ত উকুফ করা ওয়াজিব। কেউ সূর্যাস্তের পূর্বে পৌঁছতে না পারলে আগত রাতের সুবেহ সাদিক পর্যন্ত সময়ের মধ্যে জ্ঞাত ও অজ্ঞাতসারে কিছুক্ষণ অবস্থান করলেও উকুফের ফরজ আদায় হয়ে যাবে। হাদিস মোতাবেক আরাফায় পৌঁছে উকুফের আগে গোসল করা সুন্নত। অনেকে গোসল না করে শুধু অজু করেই সামান্য খাবার খেয়ে নামাজের প্রস্তুতি নিয়ে থাকেন।
আজকের করণীয় হচ্ছে- আরাফার কেন্দ্রবিন্দু মসজিদে নামিরার জামায়াতে অংশগ্রহণ করা। ইমামের পেছনে এক সঙ্গে একই আজানে জোহর ও আছর আদায় করতে হয়। কিন্তু মসজিদে নামিরায় জায়গা সংকুলান না হওয়ায় নিজ নিজ খিমায় বা তাঁবুতে জোহর ও আছর আলাদা পড়ার নিয়ম। তবে এ নিয়ে মতবিরোধও রয়েছে। নিজের তাঁবুতে যদি কেউ মসজিদে নামিরার জামায়াতের সঙ্গে তাল মিলিয়ে জোহর ও আছর একত্রে পড়তে চান, সেটাও সহিহ্ হয়ে যায়। এ নিয়ে বিবাদে না জড়ানোই শ্রেয় বলে মনে করেন মসজিদে নামিরার খতিব। হাদিস অনুযায়ী উকুফে আরাফায় অন্যতম করণীয় হচ্ছে দোয়া-মোনাজাত করা।

এখানে দোয়া কবুল হওয়ার ওয়াদা রয়েছে। তাই পূর্ণ এক্বিনের সঙ্গে দোয়া করতে হয়। উত্তম হচ্ছে কিবলামুখী হয়ে দাঁড়িয়ে একেবারে সূর্যাস্ত পর্যন্ত দোয়া করা। এত দীর্ঘ সময় দাঁড়ানো কঠিন হওয়ায় প্রয়োজনে বসে বিশ্রাম নিয়ে আবার দাঁড়িয়ে দোয়া শুরু করা যেতে পারে। হাদিসে রয়েছে, আরাফাতের ময়দানে সূর্যাস্ত পর্যন্ত থাকার পর একজন হজযাত্রীর আসল হজ হয়ে যায়। সূর্যাস্তের পর সবাই হাজী হিসেবে গণ্য হবেন। আরাফার ময়দান থেকে সূর্যাস্তের পর মাগরিবের নামাজ না পড়েই মুজদালিফার দিকে সব হাজী রওনা হবেন। আরাফা বা হজের দিনটি মুসলমানদের জন্য সারাবছরের সেরা দিন। এটি বিশ্ব মুসলমানের মহাসম্মিলনের দিন।
এদিকে মিনার মাঠ থেকে হাব সভাপতি শাহাদাত হোসাইন তসলিম দৈনিক জনকণ্ঠকে জানান, মসজিদে নামিরা থেকে খুতবা দেবেন সৌদি আরবের সর্বোচ্চ উলামা পরিষদের সদস্য শায়খ ড. ইউসুফ বিন মুহাম্মদ বিন সায়িদ। বিশ্বের ৩০ কোটির বেশি মানুষের কাছে ইসলামের শান্তিপূর্ণ বাণী পৌঁছে দিতে ২০টির বেশি ভাষায় খুতবা সম্প্রচার করা হবে। এসব কাজের তত্ত্বাবধান করছে মক্কা ও মদিনার পবিত্র দুই মসজিদের জেনারেল প্রেসিডেন্সি বিভাগ। এই ২০ ভাষার মধ্যে বাংলাও রয়েছে। বাংলাভাষাভাষীদের জন্য হজের খুতবার বাংলা অনুবাদ করবেন ড. খলীলুর রহমান, আ ফ ম ওয়াহিদুর রহমান মাক্কী, মুবিনুর রহমান ফারুক ও নাজমুস সাকিব। তারা সবাই মক্কার বিখ্যাত উম্মুল কুরা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করছেন।
হাজিরা আজ সূর্যাস্ত পর্যন্ত আরাফাতে অবস্থানের পর মুজদালিফায় গিয়ে মাগরিব ও এশার নামাজ আদায় করবেন। রাতে সেখানে অবস্থান করবেন খোলা মাঠে। শয়তানের প্রতিকৃতিতে পাথর নিক্ষেপের জন্য প্রয়োজনীয় পাথর (৭০টি) সংগ্রহ করবেন সেখান থেকে। মুজদালিফায় ফজরের নামাজ আদায় করে হাজিরা কেউ ট্রেনে, কেউ গাড়িতে, কেউ হেঁটে মিনায় যাবেন এবং নিজ নিজ তাঁবুতে ফিরবেন। মিনায় বড় শয়তানকে সাতটি পাথর নিক্ষেপ করবেন। জামারায় শয়তানের প্রতিকৃতিতে পাথর নিক্ষেপের পর হাজীদের দমে শোকর বা কোরবানির প্রস্তুতি নিতে হয়।

অধিকাংশ হাজী নিজে বা বিশ্বস্ত লোক দিয়ে মুস্তাহলাকায় (পশুর হাট ও জবাই করার স্থান) গিয়ে কোরবানি দেন। কেউ কেউ ইসলামী উন্নয়ন ব্যাংকে রিয়াল জমা দিয়ে কোরবানি দেন। পশু কোরবানি দিয়ে মাথার চুল ছেঁটে বা ন্যাড়া করে গোসল করবেন। সেলাইবিহীন দুই টুকরা কাপড় বদল করবেন। এরপর স্বাভাবিক পোশাক পরে মিনা থেকে মক্কায় গিয়ে কাবা শরিফ সাতবার তাওয়াফ করবেন। কাবার সামনের দুই পাহাড় সাফা ও মারওয়ায় সাঈ  করবেন। সেখান থেকে তারা আবার মিনায় যাবেন। মিনায় যত দিন থাকবেন, তত দিন তিনটি (বড়, মধ্যম, ছোট) শয়তানকে ২১টি পাথর নিক্ষেপ করবেন। আবার মক্কায় বিদায়ী তাওয়াফ করার পর দেশে ফিরবেন। যারা হজের আগে মদিনা যাননি, তারা মদিনায় যাবেন।
আরাফার দিন আল্লাহ রাব্বুল আলামিন তার বান্দাদের এত অধিক সংখ্যক জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেন যা অন্য দিনে দেন না। তিনি এ দিনে বান্দাদের নিকটবর্তী হন ও তাদের নিয়ে ফেরেশতাদের কাছে গর্ব করে বলেন, তামরা কি বলতে পার আমার এ বান্দাগণ আমার কাছে কী চায়। তাই এ দিন বেশি বেশি ইবাদত-বন্দেগিতে মনোনিবেশ করা অপরিহার্য। আরাফার দিনে আমরা নিচের আমলগুলো করতে পারি এক. রোজা রাখা। নবী করিম (স) বলেন, আরাফার দিনের রোজার ব্যাপারে আমি আল্লাহর কাছে আশাবাদী যে, তিনি এ রোজা দ্বারা পূর্ববর্তী এক বছরের এবং পরবর্তী এক বছরের গোনাহ মাফ করে দেবেন। তবে আরাফার ময়দানে অবস্থানকারী হাজীরা এ দিন রোজা রাখবেন না। দুই. বেশি বেশি দোয়া ও এস্তেফগার পড়া।

এ দিনে দোয়া ও তওবা কবুলের সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে। নবী কারিম (স) বলেছেন, সবচেয়ে উত্তম দোয়া হলো আরাফার দিবসের দোয়া। আর সর্বশ্রেষ্ঠ কথা যা আমি বলি ও নবীগণ বলেছেন, তা হলো-উচ্চারণ ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারিকালাহু, লাহুল মুলকু ওয়া লাহুল হামদু ওয়া হুওয়া আ’লা কুল্লি শাইয়িন ক্বাদির। চার. কোরান তিলাওয়াত। পাঁচ. মহানবীর প্রতি বেশি বেশি সলাত ও সালাম পাঠানো। ছয়. যাবতীয় হারাম কাজ থেকে বিরত থাকা।

ট্যাগস

নিউজটি শেয়ার করুন

আরাফাতে ২০ লাখ মুসল্লি: আজ পবিত্র হজ

আপডেট সময় ১১:০৭:০৫ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৭ জুন ২০২৩

আজ পবিত্র হজ। করোনা মহামারির ৩ বছর পর এবারই বড় পরিসরে ও স্বাভাবিক পরিবেশে পবিত্র হজ পালিত হচ্ছে। আজ  মঙ্গলবার সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করবেন সারা বিশ্ব থেকে আসা ২০ লাখেরও বেশি মুসলমান। আরাফাতের ময়দানে আজ লাখো কণ্ঠে ধ্বনিত হবে ‘লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক, লাব্বাইকা লা শারিকা লাকা লাব্বাইক, ইন্নাল হাম্দা ওয়ান নি’মাতা লাকা ওয়াল মুলক্, লা শারিকা লাক। (আমি হাজির, হে আল্লাহ আমি হাজির, তোমার কোনো শরিক নেই, সব প্রশংসা ও নিয়ামত শুধু তোমারই, সব সা¤্রাজ্যও তোমার)।
আজ মিনায় ফজরের নামাজ আদায় করেই তালবিয়া পড়তে পড়তে হজ যাত্রীরা আরাফাতের ময়দানে গিয়ে নিজ নিজ খিমায় তশরিফ নেবেন। এখানেই দিনভর ইবাদত বন্দেগিতে মশগুল থাকবেন তারা। আল্লাহর অশেষ রহমতের ময়দান আরাফাতে সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত অবস্থান করার নামই হজ। এর আগে-পরে অন্য আনুষঙ্গিক কাজ করার মাধ্যমে হজের পরিপূর্ণতা দেওয়া হয়। সোমবার মিনার মাঠে দিনভর ইবাদত বন্দেগিতে মশগুল ছিলেন সব হজযাত্রী। আজ ফজরে হজযাত্রীরা আরাফাতের ময়দানে গিয়ে সমবেত হবেন। তাদের বহন করার জন্য রয়েছে বিশেষ ট্রেন সার্ভিস। রয়েছে বাসেরও ব্যবস্থা। মিনা থেকে আরাফাতের দূরত্ব বেশি না হওয়ায় অনেকে হেঁটেও রওনা হবেন। তবে বাংলাদেশী হজযাত্রীদের বিভিন্ন ভাগে বিভক্ত করে দেয়া হয়েছে। কিছু হজযাত্রী ভিড় এড়াতে মসজিদে নামিরাহর কাছে অবস্থান করার জন্য ফজরের নামাজের আগেই রাত তিনটার দিকে মিনার মাঠ থেকে আরাফাতের উদ্দেশে রওনা হবেন।
দুই মাইল দৈর্ঘ্য ও দুই মাইল প্রস্থের বিরাট সমতল ময়দানের নাম আরাফাত। এর তিন দিকে রয়েছে জাবাল বা পাহাড়। জাবালে রহমত হলো রহমতের পাহাড়। বলা হয়ে থাকে, পৃথিবীতে এসে হজরত আদম (আ) ও হজরত হাওয়া (আ)-এর পুনর্মিলনও হয়েছিল এ ময়দানে। হজরত মুহাম্মদ (স) জাবালে রহমত পাহাড়ের কাছে দাঁড়িয়ে বিদায় হজের ভাষণ দিয়েছিলেন। এই পাহাড়ে একটি উঁচু পিলার আছে। একে কেউ কেউ দোয়ার পাহাড়ও বলেন। কোনো কোনো হজযাত্রী জাবালে রহমতে উঠে ইবাদত বন্দেগি করেন।
আরাফাতের অবস্থান সম্পর্কে হাদিস শরিফে বলা আছে, হজের মোট ফরজ কাজ হচ্ছে ৩টি। ইহরাম বাঁধা, ৯ জিলহজ নির্দিষ্ট সময়ে উকুফে আরাফায় অবস্থান করা ও কাবাঘরে তাওয়াফ করা। ইসলামী শরিয়াহ মোতাবেক হজের প্রধান রুকন উকুফে আরাফায় অবস্থান করাটা ফরজ। তাই আজ মিনার মাঠে ফজরের নামাজের পরপরই হজযাত্রীরা আল্লাহর নৈকট্য লাভ ও তামাম জিন্দেগির গুনাহ মাফ করার একান্ত বাসনা নিয়ে রওনা দেবেন আরাফার অভিমুখে। এখানে জোহরের ওয়াক্ত থেকে শুরু হবে উকুফের সময়।

এদিন জোহরের ওয়াক্ত থেকে সূর্যাস্তের পূর্ব পর্যন্ত সময়ের মধ্যে যে ব্যক্তি আরাফায় উপস্থিত হবেন- তার জন্য সূর্যাস্ত পর্যন্ত উকুফ করা ওয়াজিব। কেউ সূর্যাস্তের পূর্বে পৌঁছতে না পারলে আগত রাতের সুবেহ সাদিক পর্যন্ত সময়ের মধ্যে জ্ঞাত ও অজ্ঞাতসারে কিছুক্ষণ অবস্থান করলেও উকুফের ফরজ আদায় হয়ে যাবে। হাদিস মোতাবেক আরাফায় পৌঁছে উকুফের আগে গোসল করা সুন্নত। অনেকে গোসল না করে শুধু অজু করেই সামান্য খাবার খেয়ে নামাজের প্রস্তুতি নিয়ে থাকেন।
আজকের করণীয় হচ্ছে- আরাফার কেন্দ্রবিন্দু মসজিদে নামিরার জামায়াতে অংশগ্রহণ করা। ইমামের পেছনে এক সঙ্গে একই আজানে জোহর ও আছর আদায় করতে হয়। কিন্তু মসজিদে নামিরায় জায়গা সংকুলান না হওয়ায় নিজ নিজ খিমায় বা তাঁবুতে জোহর ও আছর আলাদা পড়ার নিয়ম। তবে এ নিয়ে মতবিরোধও রয়েছে। নিজের তাঁবুতে যদি কেউ মসজিদে নামিরার জামায়াতের সঙ্গে তাল মিলিয়ে জোহর ও আছর একত্রে পড়তে চান, সেটাও সহিহ্ হয়ে যায়। এ নিয়ে বিবাদে না জড়ানোই শ্রেয় বলে মনে করেন মসজিদে নামিরার খতিব। হাদিস অনুযায়ী উকুফে আরাফায় অন্যতম করণীয় হচ্ছে দোয়া-মোনাজাত করা।

এখানে দোয়া কবুল হওয়ার ওয়াদা রয়েছে। তাই পূর্ণ এক্বিনের সঙ্গে দোয়া করতে হয়। উত্তম হচ্ছে কিবলামুখী হয়ে দাঁড়িয়ে একেবারে সূর্যাস্ত পর্যন্ত দোয়া করা। এত দীর্ঘ সময় দাঁড়ানো কঠিন হওয়ায় প্রয়োজনে বসে বিশ্রাম নিয়ে আবার দাঁড়িয়ে দোয়া শুরু করা যেতে পারে। হাদিসে রয়েছে, আরাফাতের ময়দানে সূর্যাস্ত পর্যন্ত থাকার পর একজন হজযাত্রীর আসল হজ হয়ে যায়। সূর্যাস্তের পর সবাই হাজী হিসেবে গণ্য হবেন। আরাফার ময়দান থেকে সূর্যাস্তের পর মাগরিবের নামাজ না পড়েই মুজদালিফার দিকে সব হাজী রওনা হবেন। আরাফা বা হজের দিনটি মুসলমানদের জন্য সারাবছরের সেরা দিন। এটি বিশ্ব মুসলমানের মহাসম্মিলনের দিন।
এদিকে মিনার মাঠ থেকে হাব সভাপতি শাহাদাত হোসাইন তসলিম দৈনিক জনকণ্ঠকে জানান, মসজিদে নামিরা থেকে খুতবা দেবেন সৌদি আরবের সর্বোচ্চ উলামা পরিষদের সদস্য শায়খ ড. ইউসুফ বিন মুহাম্মদ বিন সায়িদ। বিশ্বের ৩০ কোটির বেশি মানুষের কাছে ইসলামের শান্তিপূর্ণ বাণী পৌঁছে দিতে ২০টির বেশি ভাষায় খুতবা সম্প্রচার করা হবে। এসব কাজের তত্ত্বাবধান করছে মক্কা ও মদিনার পবিত্র দুই মসজিদের জেনারেল প্রেসিডেন্সি বিভাগ। এই ২০ ভাষার মধ্যে বাংলাও রয়েছে। বাংলাভাষাভাষীদের জন্য হজের খুতবার বাংলা অনুবাদ করবেন ড. খলীলুর রহমান, আ ফ ম ওয়াহিদুর রহমান মাক্কী, মুবিনুর রহমান ফারুক ও নাজমুস সাকিব। তারা সবাই মক্কার বিখ্যাত উম্মুল কুরা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করছেন।
হাজিরা আজ সূর্যাস্ত পর্যন্ত আরাফাতে অবস্থানের পর মুজদালিফায় গিয়ে মাগরিব ও এশার নামাজ আদায় করবেন। রাতে সেখানে অবস্থান করবেন খোলা মাঠে। শয়তানের প্রতিকৃতিতে পাথর নিক্ষেপের জন্য প্রয়োজনীয় পাথর (৭০টি) সংগ্রহ করবেন সেখান থেকে। মুজদালিফায় ফজরের নামাজ আদায় করে হাজিরা কেউ ট্রেনে, কেউ গাড়িতে, কেউ হেঁটে মিনায় যাবেন এবং নিজ নিজ তাঁবুতে ফিরবেন। মিনায় বড় শয়তানকে সাতটি পাথর নিক্ষেপ করবেন। জামারায় শয়তানের প্রতিকৃতিতে পাথর নিক্ষেপের পর হাজীদের দমে শোকর বা কোরবানির প্রস্তুতি নিতে হয়।

অধিকাংশ হাজী নিজে বা বিশ্বস্ত লোক দিয়ে মুস্তাহলাকায় (পশুর হাট ও জবাই করার স্থান) গিয়ে কোরবানি দেন। কেউ কেউ ইসলামী উন্নয়ন ব্যাংকে রিয়াল জমা দিয়ে কোরবানি দেন। পশু কোরবানি দিয়ে মাথার চুল ছেঁটে বা ন্যাড়া করে গোসল করবেন। সেলাইবিহীন দুই টুকরা কাপড় বদল করবেন। এরপর স্বাভাবিক পোশাক পরে মিনা থেকে মক্কায় গিয়ে কাবা শরিফ সাতবার তাওয়াফ করবেন। কাবার সামনের দুই পাহাড় সাফা ও মারওয়ায় সাঈ  করবেন। সেখান থেকে তারা আবার মিনায় যাবেন। মিনায় যত দিন থাকবেন, তত দিন তিনটি (বড়, মধ্যম, ছোট) শয়তানকে ২১টি পাথর নিক্ষেপ করবেন। আবার মক্কায় বিদায়ী তাওয়াফ করার পর দেশে ফিরবেন। যারা হজের আগে মদিনা যাননি, তারা মদিনায় যাবেন।
আরাফার দিন আল্লাহ রাব্বুল আলামিন তার বান্দাদের এত অধিক সংখ্যক জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেন যা অন্য দিনে দেন না। তিনি এ দিনে বান্দাদের নিকটবর্তী হন ও তাদের নিয়ে ফেরেশতাদের কাছে গর্ব করে বলেন, তামরা কি বলতে পার আমার এ বান্দাগণ আমার কাছে কী চায়। তাই এ দিন বেশি বেশি ইবাদত-বন্দেগিতে মনোনিবেশ করা অপরিহার্য। আরাফার দিনে আমরা নিচের আমলগুলো করতে পারি এক. রোজা রাখা। নবী করিম (স) বলেন, আরাফার দিনের রোজার ব্যাপারে আমি আল্লাহর কাছে আশাবাদী যে, তিনি এ রোজা দ্বারা পূর্ববর্তী এক বছরের এবং পরবর্তী এক বছরের গোনাহ মাফ করে দেবেন। তবে আরাফার ময়দানে অবস্থানকারী হাজীরা এ দিন রোজা রাখবেন না। দুই. বেশি বেশি দোয়া ও এস্তেফগার পড়া।

এ দিনে দোয়া ও তওবা কবুলের সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে। নবী কারিম (স) বলেছেন, সবচেয়ে উত্তম দোয়া হলো আরাফার দিবসের দোয়া। আর সর্বশ্রেষ্ঠ কথা যা আমি বলি ও নবীগণ বলেছেন, তা হলো-উচ্চারণ ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারিকালাহু, লাহুল মুলকু ওয়া লাহুল হামদু ওয়া হুওয়া আ’লা কুল্লি শাইয়িন ক্বাদির। চার. কোরান তিলাওয়াত। পাঁচ. মহানবীর প্রতি বেশি বেশি সলাত ও সালাম পাঠানো। ছয়. যাবতীয় হারাম কাজ থেকে বিরত থাকা।