“এই পাঁচ-ছয়জন ব্যক্তি, কেউ আমেরিকা থেকে এসেছেন, কেউ লন্ডন থেকে এসেছেন, তাদের কথায় তো সংবিধান পরিবর্তন হতে পারে না,” বলেন তিনি।
বাংলাদেশকে নিয়ে ‘খেলাফেলা’ হচ্ছে. মুক্তিযোদ্ধারা সজাগ থাকুন: বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য হাফিজ উদ্দিন

- আপডেট সময় ০৫:২৫:০১ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৮ অগাস্ট ২০২৫
- / ৩৫ বার পড়া হয়েছে

জাতীয় প্রেসক্লাবের আবদুস সালাম হলে জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য হাফিজ উদ্দিন আহমেদ।
বাংলাদেশকে নিয়ে ‘আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র হচ্ছে’ মন্তব্য করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য হাফিজ উদ্দিন আহমেদ মুক্তিযোদ্ধাদের সজাগ থাকার আহ্বান জানিয়েছেন।
বৃহস্পতিবার দুপুরে ঢাকায় এক আলোচনা সভায় তিনি বলেন, “এই পাঁচ-ছয়জন ব্যক্তি, কেউ আমেরিকা থেকে এসেছেন, কেউ লন্ডন থেকে এসেছেন, তাদের কথায় তো সংবিধান পরিবর্তন হতে পারে না।
“তাদের দুই-চার জনের অভিমত কখনো সংবিধানের উপরে অগ্রাধিকার পেতে পারে না।”
হাফিজ বলেন, “বাংলাদেশকে নিয়ে অনেক খেলাফেলা করা হচ্ছে. বাংলাদেশকে নিয়ে আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র চলছে। সুতরাং এই সময় মুক্তিযোদ্ধা এবং মুক্তিযুদ্ধের প্রজন্মকে আমাদেরকে সজাগ হতে হবে। অনেকে বৃদ্ধ, কিন্তু আপনারা তো ট্রেনিং জমা দেননি।”
ছাত্র-গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগের পতনের পর মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার রাষ্ট্র সংস্কারের উদ্যোগ নেয়, সেখানে সংবিধানের মূলনীতিসহ বেশকিছু পরিবর্তনের প্রস্তাবও এসেছে।
অপরদিকে বাহাত্তরের সংবিধান বাতিল করে নতুন সংবিধান লিখতে গণপরিষদের নির্বাচন দাবি করছে অভ্যুত্থানের সামনের সারির নেতাদের গড়া রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টি।
বিভিন্ন সময় ‘জাতির পিতা’, মুক্তিযুদ্ধ ও তার ইতিহাস নিয়ে বিতর্কিত বক্তব্য আলোচনায় এসেছে।
‘মুক্তিযোদ্ধার জাতিতে পরিণত করা হবে’
প্রতিবেশী কোনো দেশ বা অন্য কেউ যেন বাংলাদেশকে ‘রক্তচক্ষু’ দেখাতে না পারে সেজন্য বিএনপি ক্ষমতায় গেলে ছাত্রদের সামরিক সামরিক প্রশিক্ষণ দেওয়ার কথা বলেছেন মুক্তিযোদ্ধা হাফিজ।
তিনি বলেন, “বিএনপি যদি রাষ্ট্র ক্ষমতায় যায় আমরা এই পুরা জাতিকে মুক্তিযোদ্ধার জাতিতে পরিণত করব।
“৬ কোটি লোকের দেশ মিয়ানমার, ১৮ কোটি লোকের দেশ বাংলাদেশের উপরে হামলা করতে চায়। ১১ লক্ষ রোহিঙ্গা আমাদের উপর তারা চাপিয়ে দিয়েছে।”
জাতীয় প্রেসক্লাবের আবদুস সালাম হলে জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের ৩৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনার সভায় বিষয়বস্তু ছিল ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় মুক্তিযোদ্ধারা আমৃত্যু আপোষহীন’। সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখছিলেন হাফিজ উদ্দিন আহমেদ।
‘ওরা বিভেদ সৃষ্টি করছে’
শেখ হাসিনার সরকারের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে লড়াইয়ের প্রসঙ্গ ধরে বিএনপির এই নেতা বলেন, রাষ্ট্র ক্ষমতায় দৃশ্যমান হয়ে অনেকেই ‘বিভেদ’ সৃষ্টি করেছে।
বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর মধ্যকার বর্তমান সম্পর্কের প্রসঙ্গ টেনে বিগত বিএনপি সরকারের এই মন্ত্রী বলেন, “জামায়াতে ইসলামী আমরা এত বছর আশ্রয় দিয়েছি, আমাদের প্রতীক নিয়ে তারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছে, তাদেরকে বেগম জিয়া মন্ত্রিসভায় স্থান দিয়েছেন।”
এ সময় হাফিজ দলের অনেকের নাম নিয়ে বলেন, তারা মন্ত্রী হতে পারতেন। কিন্তু জামায়াত বিএনপি জোটের শরিক থাকায় তাদের মন্ত্রিসভায় রাখা হয়।
“আজকে তার প্রতিদানে তারা কি বলছে-‘দুই সাপের একই বিষ, নৌকা আর ধানের শীষ’। এজন্য কী এদেরকে মন্ত্রী বানিয়েছিলাম আমরা।”
তার মতে, বিএনপির প্রতি জামায়াতের ক্ষোভের কারণ হল, জনগণ বিএনপিকে সমর্থন করে।
বিএনপির জনপ্রিয়তা কারণ এবং আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে ধারাবাহিক সংগ্রামের কথা তুলে ধরে দলের স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, “আমরা ১৬/১৭ বছর সংগ্রাম করেছি। বারবার আমরা জেলে গিয়েছি, আমাদের হাজার হাজার কর্মী জীবন দিয়েছে, গুম হয়েছে।
আর যেখানে আওয়ামী লীগ মাফিয়াতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছে, গণতন্ত্র ধ্বংস করেছে, প্রত্যেকটি রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করেছে, বিরোধী দলকে দমন করেছে। আমাদের বহু নেতা হারিয়ে গিয়েছে সেজন্যই তো আজকে বিএনপির এই জনপ্রিয়তা।”
‘সংবিধান সংশোধন হবে সংসদে’
হাফিজ বলেন, “আমরা নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণ করতে চাই। সংবিধান যেকোনো সময়ে যেকোনো দল পরিবর্তন করতে পারে। সারা পৃথিবীতে সংবিধান প্রণয়ন করে নির্বাচিত প্রতিনিধিরা।
“বাংলাদেশেও এটি হয়ে এসেছে…আগামী দিনেও ইনশাল্লাহ সেটিই হবে। কোনো অনির্বাচিত ব্যক্তির দ্বারা সংবিধান সংশোধন হতে পারে না।”
সুষ্ঠু নির্বাচন দাবি করে তিনি বলেন, “অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে আশা করি সুষ্ঠ নির্বাচন পাবো এবং সেখানে নির্বাচিত প্রতিনিধিরাই ঠিক করবে বাংলাদেশের সংবিধান কেমন হবে।”
‘স্বাধীনতা বিরোধীরা দেশের মালিক-মোক্তার হতে চায়’
জামায়াতে ইসলামীর সমালোচনা করে হাফিজ উদ্দিন বলেন, “এই দলটি শুধু একাত্তর সালে বাংলাদেশের বিরোধিতা করেছে তাই নয়, তারা ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠারও বিরোধিতা করেছে। এই দল এখন জনগণের মালিক-মোক্তার হয়ে বসতে চায়।”
তার মতে, জামায়াত ইতোমধ্যে উপলব্ধি করেছে যে, জনগণের মাধ্যমে তাদের ক্ষমতায় যাওয়ার সুযোগ নেই, জনগণ তাদের ভোট দেবে না।
“তাদের একমাত্র চেষ্টা হলো বিএনপি ঠেকাও, বিএনপি যেন রাষ্ট্র ক্ষমতায় না আসতে পারে। সুতরাং নির্বাচন দরকার নাই, নির্বাচনকে বিলম্বিত করার জন্যে তারা অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছে। বাংলাদেশে যে এই ধরনের একটা পরিস্থিতি হবে, আমরা কিন্তু কখনো চিন্তাই করিনি।”
‘ওদের মতো কাজ করবেন না’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য হাফিজ বলেন, “আমাদেরও সাবধান হতে হবে, আওয়ামী লীগ যা যা করেছে…আমরা বিএনপিকর্মীরা যদি একই কাজ করি, আমাদের পরিণতি কিন্তু আওয়ামী লীগের মতো হবে।”
তিনি বলেন, “প্রতিবেশী রাষ্ট্র ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে। সেখানে অফিস খুলেছে এবং মাফিয়া নেত্রী সেখানে পলায়ন করে সেখানে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত।”
জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের সভাপতি ইশতিয়াক আজিজ উলফাতের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য জয়নুল আবদিন ফারুক, হাবিবুর রহমান হাবিব, মজিবুর রহমান সারওয়ার, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, মুক্তিযোদ্ধা দলের সম্পাদক জয়নাল আবেদীন, নির্বাহী কমিটির সদস্য মিজানুর রহমান।
নিঝুম আহমেদ – জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক : বিডিপলিটিক্স টোয়েন্টিফোর ডটকম