০৪:২২ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪

সৌদি যাওয়ার তিন দিনের মাথায় মারা গেলেন ঝিনাইদহের গৃহবধূ, নির্যাতনের অভিযোগ

ডেস্ক রিপোর্ট
  • আপডেট সময় ০১:৪৭:২৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ১ অক্টোবর ২০২৩
  • / ২০০ বার পড়া হয়েছে

ভাগ্যবদল হলো না দুই শিশু সন্তানের জননী ঝিনাইদহের গৃহবধু সাবিনা খাতুনের (২৭)। শুক্রবার (২২ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশ থেকে সৌদি আরবে যান তিনি। মক্কাতে যাওয়ার মাত্র ৩ দিন পর বুধবার (২৫ সেপ্টেম্বর) রাতে পরিবারের কাছে খবর আসে মৃত্যু হয়েছে তার।

দালালের মাধ্যমে খবর পান ওই গৃহবধুর স্বামী রুবেল মিয়া। মরদেহ দেশে আনার চেষ্টা করছে পরিবারের সদস্যরা। তবে বিষয়টি নিয়ে এখনো কোথাও অভিযোগ করা হয়নি।

জানা গেছে, পরিবারের আর্থিক সংকট কাটাতে সৌদি আরবের মক্কায় যান সাবিনা খাতুন (২৭)। মৃত সাবিনা খাতুন ঝিনাইদহ সদর উপজেলার ৩নং সাগান্না ইউনিয়নের বাদপুকুরিয়া গ্রামের মো. রুবেল মিয়ার স্ত্রী ও চুয়াডাঙ্গা জেলার কুতুবপুর ইউনিয়নের চন্ডিপুর গ্রামের মৃত সামেদ মন্ডলের মেয়ে।

সাবিনার খালা জানান, সাবিনাকে বিদেশ যেতে নিষেধ করা হয়েছিল। দালালকেও নিষেধ করেছিলাম যেন সাবিনাকে বিদেশ না পাঠায়। একজন মেয়েকে সৌদি পাঠাতে পারলে একজন দালাল দুই লাখ করে টাকা পায়।

তিনি (খালা) আরো অভিযোগ করে বলেন, দারিদ্রতার সুযোগ কাজে লাগিয়ে ফুসলিয়ে বিদেশ পাঠিয়েছিল সাবিনাকে। ওই দালাল রফিকুল তাকেও বিদেশ নিয়ে গিয়েছিল। সেখানে যাবার পর বাড়ির মালিক তার ওপরে অনেক নির্যাতন করত। সইতে না পেরে পালিয়ে দেশে চলে এসেছেন। সাবিনা যাবার পরেই শারীরিক নির্যাতন শুরু হয়। পরে সে মারা যায়।

সাবিনার শ্বাশুড়ি জানান, সৌদি যাওয়ার পর থেকে দুই তিনবার সাবিনার সঙ্গে কথা হয়েছে। ওখান থেকে সাবিনা জানায়, এয়ারপোর্ট থেকে দুইজন ব্যক্তি রিসিভ করে নিয়ে যায় তাকে। যে বাড়িতে কাজের জন্য দেওয়ার কথা সেখানে তাকে ঠিক মতো খেতে দিত না। ফোন ব্যবহার করতে দিত না। ওই বাড়িতে দুইদিন থাকার পর সে অসুস্থ হয়ে পড়ে। এরপর বাড়ির ড্রাইভারকে দিয়ে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যায়। তখন ওই ড্রাইভারের মোবাইলে কল দিয়ে শ্বাশুড়ির সঙ্গে কথা বলে। তখন সাবিনা জানায়, তাকে খুব নির্যাতন করা হয়েছে। সে অসুস্থ হয়ে হাসপতালে এসেছে। তার দুইটা বাচ্চার কথা বলে ড্রাইভারের মোবাইল দিয়ে কথা বলছে। সাবিনা আরো বলে, আমি হয়তো আর বাঁচবো না। আমার দুই মেয়েকে দেখে রেখো।

তিনি( শ্বাশুড়ি) আরো অভিযোগ করেন, সাবিনাকে নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে।

নিহতের স্বামী রুবেল মিয়া বলেন, আমি অসুস্থ। পরিবারে দুইটা মেয়ে। বড় মেয়ে রুবিনার বয়স ৭ বছর, ছোট মেয়ের বয়স মাত্র ৩ বছর। অভাবের কারণে মেয়েদের কথা ভেবে বিদেশ যাওয়ার চিন্তা করে সাবিনা। একই গ্রামের (বাদপুকুরিয়া) রফিকুল দালালের মাধ্যমে ২২ সেপ্টেম্বর সৌদি আরবে যায় তার স্ত্রী সাবিনা। বিদেশ যাওয়ার আগে মেডিকেল রিপোর্ট সবঠিক ছিলো। সৌদি যাওয়ার তিন দিনের মাথায় মৃত্যু রহস্যজনকভাবে মৃত্যু হয়েছে সাবিনার।

স্বামী রুবেল মিয়া আরো বলেন, দালাল রফিকুলের কাছে ভিসা এবং কাজের বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়। দালাল জানায় ভিসা অফিসে আছে। যাওয়ার দিন হাতে দেওয়া হবে। আমাদের হাতে কোন ভিসার কপিও দেওয়া হয়নি। শারীরিকভাবে নির্যাতন করে মেরে ফেলা হয়েছে সাবিনাকে। জড়িতদের বিচার চান তিনি।

দালাল রফিকুল ইসলাম বলেন, সাবিনাকে সৌদি আরবের বাসাবাড়িতে গৃহকর্মী হিসেবে কাজে পাঠানো হয়। যাওয়ার সময় তার (সাবিনা) শারীরিক অবস্থা ভালো ছিল। হঠাৎ তিন দিন পর ওই দেশ থেকে ফোন আসে সাবিনা অসুস্থ হয়ে মারা গেছে। আমরা অফিসের মাধ্যমে সৌদি থেকে তার মরদেহ আনার জন্য চেষ্টা করছি।

তিনি আরো বলেন, আমি গ্রামের মেম্বার আকবরের সাথে কথা বলেছি। তিনি ওই পরিবারের সাথে কথা বলেছেন। ওই মহিলার অভিভাবকদের সাথেও কথা হয়েছে। সাবিনার দুইটা বাচ্চার কথা ভেবে আমাদের অফিস থেকে দুই লাখ টাকার ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও ওই দেশ থেকে সরকারিভাবে কিছু টাকা দেবে। আমি ব্যক্তিগতভাবে লাশ দেশে আনার চেষ্টা করছি। নিউজ করলে অফিস থেকে সাবিনাকে যে টাকা দেওয়ার কথা বলছে সেই টাকা আর দেবেনা। এতে সাবিনার পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আমাদের কিছুই হবে না।

বাদপুকুরিয়া ওয়ার্ডের মেম্বার আকবার বলেন, আপনারা এখন যদি নিউজ করেন তাহলে হয়তো এই টাকা আর পাওয়া যাবে না। আবার সাবিনার লাশ দেশে এনে দেবে না। আপনাদের নিউজ করার দরকার নেই। আমরা বললে তখন আপনারা নিউজ কইরেন।

ট্যাগস

নিউজটি শেয়ার করুন

সৌদি যাওয়ার তিন দিনের মাথায় মারা গেলেন ঝিনাইদহের গৃহবধূ, নির্যাতনের অভিযোগ

আপডেট সময় ০১:৪৭:২৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ১ অক্টোবর ২০২৩

ভাগ্যবদল হলো না দুই শিশু সন্তানের জননী ঝিনাইদহের গৃহবধু সাবিনা খাতুনের (২৭)। শুক্রবার (২২ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশ থেকে সৌদি আরবে যান তিনি। মক্কাতে যাওয়ার মাত্র ৩ দিন পর বুধবার (২৫ সেপ্টেম্বর) রাতে পরিবারের কাছে খবর আসে মৃত্যু হয়েছে তার।

দালালের মাধ্যমে খবর পান ওই গৃহবধুর স্বামী রুবেল মিয়া। মরদেহ দেশে আনার চেষ্টা করছে পরিবারের সদস্যরা। তবে বিষয়টি নিয়ে এখনো কোথাও অভিযোগ করা হয়নি।

জানা গেছে, পরিবারের আর্থিক সংকট কাটাতে সৌদি আরবের মক্কায় যান সাবিনা খাতুন (২৭)। মৃত সাবিনা খাতুন ঝিনাইদহ সদর উপজেলার ৩নং সাগান্না ইউনিয়নের বাদপুকুরিয়া গ্রামের মো. রুবেল মিয়ার স্ত্রী ও চুয়াডাঙ্গা জেলার কুতুবপুর ইউনিয়নের চন্ডিপুর গ্রামের মৃত সামেদ মন্ডলের মেয়ে।

সাবিনার খালা জানান, সাবিনাকে বিদেশ যেতে নিষেধ করা হয়েছিল। দালালকেও নিষেধ করেছিলাম যেন সাবিনাকে বিদেশ না পাঠায়। একজন মেয়েকে সৌদি পাঠাতে পারলে একজন দালাল দুই লাখ করে টাকা পায়।

তিনি (খালা) আরো অভিযোগ করে বলেন, দারিদ্রতার সুযোগ কাজে লাগিয়ে ফুসলিয়ে বিদেশ পাঠিয়েছিল সাবিনাকে। ওই দালাল রফিকুল তাকেও বিদেশ নিয়ে গিয়েছিল। সেখানে যাবার পর বাড়ির মালিক তার ওপরে অনেক নির্যাতন করত। সইতে না পেরে পালিয়ে দেশে চলে এসেছেন। সাবিনা যাবার পরেই শারীরিক নির্যাতন শুরু হয়। পরে সে মারা যায়।

সাবিনার শ্বাশুড়ি জানান, সৌদি যাওয়ার পর থেকে দুই তিনবার সাবিনার সঙ্গে কথা হয়েছে। ওখান থেকে সাবিনা জানায়, এয়ারপোর্ট থেকে দুইজন ব্যক্তি রিসিভ করে নিয়ে যায় তাকে। যে বাড়িতে কাজের জন্য দেওয়ার কথা সেখানে তাকে ঠিক মতো খেতে দিত না। ফোন ব্যবহার করতে দিত না। ওই বাড়িতে দুইদিন থাকার পর সে অসুস্থ হয়ে পড়ে। এরপর বাড়ির ড্রাইভারকে দিয়ে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যায়। তখন ওই ড্রাইভারের মোবাইলে কল দিয়ে শ্বাশুড়ির সঙ্গে কথা বলে। তখন সাবিনা জানায়, তাকে খুব নির্যাতন করা হয়েছে। সে অসুস্থ হয়ে হাসপতালে এসেছে। তার দুইটা বাচ্চার কথা বলে ড্রাইভারের মোবাইল দিয়ে কথা বলছে। সাবিনা আরো বলে, আমি হয়তো আর বাঁচবো না। আমার দুই মেয়েকে দেখে রেখো।

তিনি( শ্বাশুড়ি) আরো অভিযোগ করেন, সাবিনাকে নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে।

নিহতের স্বামী রুবেল মিয়া বলেন, আমি অসুস্থ। পরিবারে দুইটা মেয়ে। বড় মেয়ে রুবিনার বয়স ৭ বছর, ছোট মেয়ের বয়স মাত্র ৩ বছর। অভাবের কারণে মেয়েদের কথা ভেবে বিদেশ যাওয়ার চিন্তা করে সাবিনা। একই গ্রামের (বাদপুকুরিয়া) রফিকুল দালালের মাধ্যমে ২২ সেপ্টেম্বর সৌদি আরবে যায় তার স্ত্রী সাবিনা। বিদেশ যাওয়ার আগে মেডিকেল রিপোর্ট সবঠিক ছিলো। সৌদি যাওয়ার তিন দিনের মাথায় মৃত্যু রহস্যজনকভাবে মৃত্যু হয়েছে সাবিনার।

স্বামী রুবেল মিয়া আরো বলেন, দালাল রফিকুলের কাছে ভিসা এবং কাজের বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়। দালাল জানায় ভিসা অফিসে আছে। যাওয়ার দিন হাতে দেওয়া হবে। আমাদের হাতে কোন ভিসার কপিও দেওয়া হয়নি। শারীরিকভাবে নির্যাতন করে মেরে ফেলা হয়েছে সাবিনাকে। জড়িতদের বিচার চান তিনি।

দালাল রফিকুল ইসলাম বলেন, সাবিনাকে সৌদি আরবের বাসাবাড়িতে গৃহকর্মী হিসেবে কাজে পাঠানো হয়। যাওয়ার সময় তার (সাবিনা) শারীরিক অবস্থা ভালো ছিল। হঠাৎ তিন দিন পর ওই দেশ থেকে ফোন আসে সাবিনা অসুস্থ হয়ে মারা গেছে। আমরা অফিসের মাধ্যমে সৌদি থেকে তার মরদেহ আনার জন্য চেষ্টা করছি।

তিনি আরো বলেন, আমি গ্রামের মেম্বার আকবরের সাথে কথা বলেছি। তিনি ওই পরিবারের সাথে কথা বলেছেন। ওই মহিলার অভিভাবকদের সাথেও কথা হয়েছে। সাবিনার দুইটা বাচ্চার কথা ভেবে আমাদের অফিস থেকে দুই লাখ টাকার ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও ওই দেশ থেকে সরকারিভাবে কিছু টাকা দেবে। আমি ব্যক্তিগতভাবে লাশ দেশে আনার চেষ্টা করছি। নিউজ করলে অফিস থেকে সাবিনাকে যে টাকা দেওয়ার কথা বলছে সেই টাকা আর দেবেনা। এতে সাবিনার পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আমাদের কিছুই হবে না।

বাদপুকুরিয়া ওয়ার্ডের মেম্বার আকবার বলেন, আপনারা এখন যদি নিউজ করেন তাহলে হয়তো এই টাকা আর পাওয়া যাবে না। আবার সাবিনার লাশ দেশে এনে দেবে না। আপনাদের নিউজ করার দরকার নেই। আমরা বললে তখন আপনারা নিউজ কইরেন।