১২:৫৫ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৫ জুলাই ২০২৫
ময়মনসিংহের ভালুকায় মা ও দুই সন্তানের গলাকাটা লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ।

‘যে ভাইকে জেল থেকে বের করেছি, সেই আমার স্ত্রী-সন্তানদের হত্যা করল’

ময়মনসিংহ প্রতিনিধি : বিডিপলিটিক্স টোয়েন্টিফোর ডটকম
  • আপডেট সময় ০৫:৫১:১৫ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৪ জুলাই ২০২৫
  • / ৩৩ বার পড়া হয়েছে

ময়মনসিংহের ভালুকা পৌর শহরের একটি ভাড়া বাড়ি থেকে মা ও দুই শিশু সন্তানের লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ।

 

“যে ভাইকে জেল থেকে বের করেছি, সেই আমার স্ত্রী-সন্তানের মারল? তা মেনে নিতে পারছি না। তারা তো কোনো দোষ করেনি। কেন আমাকে নিঃস্ব করে দিলি ভাই? আমি কাদের নিয়ে বাঁচব।”

আহাজারি করে কথাগুলো বলছিলেন ময়মনসিংহের ভালুকা পৌর শহরের বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম।

সোমবার দুপুরে শহরের পনাশাইল এলাকার একটি ভাড়া বাসা থেকে রফিকুলের স্ত্রী ময়না আক্তার (২৫), মেয়ে রাইসা আক্তার (৭) ও ছেলে নীরব হোসেনের (২) গলাকাটা লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ।

ভাড়া বাসার দুটি কক্ষে স্ত্রী-সন্তান ও ছোট ভাই নজরুল ইসলামকে নিয়ে বসবাস করতেন রফিকুল ইসলাম। তিনজনকে হত্যার ঘটনায় ছোট ভাই নজরুলকে দায়ী করেছেন রফিকুল। ঘটনার পর থেকে নজরুল পলাতক আছেন। তাকে ধরতে অভিযান চলছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

কান্নাজড়িত কণ্ঠে রফিকুল ইসলাম বলেন, “আমার ভাই একটি হত্যা মামলার আসামি। তাকে আড়াই মাস আগে ৪০ হাজার টাকা দেনা করে জেল থেকে ছাড়িয়ে এনেছি। এরপর সে আমার সঙ্গেই থেকে অটোরিকশা চালাত।

“এক রুমের বাসায় থাকতে কষ্ট হত, তাই দেড় মাস আগে পনাশাইল এলাকায় দুই রুমের ভাড়া বাসা নেই। এক রুমে আমি পরিবার নিয়ে আর অন্য রুমে নজরুল থাকত। মাঝেমধ্যে খাওয়া-দাওয়া নিয়ে আমার স্ত্রীর সঙ্গে ঝগড়া হত। আর কোনো সমস্যা ছিল না।”

তিনি বলেন, “রোববার রাত ৮টার সময় আমি ডিউটিতে চলে যাই। পরে সাড়ে ১০টার দিকে বাসায় কল দিলে ময়নার নম্বর বন্ধ পাই। তারপর নজরুলের নম্বরে কল দিয়ে ময়নার সঙ্গে কথা বলি।

“সোমবার সকালে বাসায় এসে দরজা বন্ধ পাই এবং গেইট তালাবদ্ধ ছিল। পরে বাসার মালিককে নিয়ে তালা ভেঙে দেখি তাদের রক্তাক্ত মৃতদেহ। ভাইকেও (নজরুল) আর খুঁজে পাইনি। তার মোবাইলও বন্ধ। সে সবাইকে হত্যা করে পালিয়েছে।”

নজরুল এমন করবে জানলে তাকে জেল থেকে বের করতেন না বলে আক্ষেপ করে কথাগুলো বলেন রফিকুল।

ময়নার বোন আছমা আক্তার বলেন, “খবর শুনে এসে দেখি আমার বোন ও তার দুই সন্তানের লাশ খাটের ওপর পড়ে আছে। আমার বোন জামাই খুব ভালো মানুষ। ৯ থেকে ১০ বছর আগে তাদের বিয়ে হলেও কোনোদিন ঝগড়া হয়নি। নজরুল আমার বোন ও ভাগ্নে-ভাগনিকে মেরেছে। তা না হলে সে পলাতক কেন?”

 

 

বাসার মালিক হৃদয় হাসান হাইয়ুম বলেন, “দেড় মাস আগে বাসা ভাড়া নিয়েছেন রফিকুল। এক রুমে রফিকুল তার পরিবার নিয়ে এবং অন্য রুমে তার ভাই নজরুল থাকত। তবে তাদের মধ্যে কোনো মনোমালিন্য দেখিনি। কেন এমন ঘটনা ঘটল তাও বলতে পারছি না।”

ময়মনসিংহের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ভালুকা সার্কেল) মনতোষ সাহা বলেন, পারিবারিক কলহের জেরে হত্যাকাণ্ডটি ঘটেছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত দা উদ্ধার করা হয়েছে। তদন্ত ছাড়া বেশি কিছু বলা যাচ্ছে না।

রফিকুলের ছোট ভাই নজরুলকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে বলে জানান পুলিশের এই কর্মকর্তা।

 

 

ময়মনসিংহ প্রতিনিধি : বিডিপলিটিক্স টোয়েন্টিফোর ডটকম

নিউজটি শেয়ার করুন

ময়মনসিংহের ভালুকায় মা ও দুই সন্তানের গলাকাটা লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ।

‘যে ভাইকে জেল থেকে বের করেছি, সেই আমার স্ত্রী-সন্তানদের হত্যা করল’

আপডেট সময় ০৫:৫১:১৫ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৪ জুলাই ২০২৫

 

“যে ভাইকে জেল থেকে বের করেছি, সেই আমার স্ত্রী-সন্তানের মারল? তা মেনে নিতে পারছি না। তারা তো কোনো দোষ করেনি। কেন আমাকে নিঃস্ব করে দিলি ভাই? আমি কাদের নিয়ে বাঁচব।”

আহাজারি করে কথাগুলো বলছিলেন ময়মনসিংহের ভালুকা পৌর শহরের বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম।

সোমবার দুপুরে শহরের পনাশাইল এলাকার একটি ভাড়া বাসা থেকে রফিকুলের স্ত্রী ময়না আক্তার (২৫), মেয়ে রাইসা আক্তার (৭) ও ছেলে নীরব হোসেনের (২) গলাকাটা লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ।

ভাড়া বাসার দুটি কক্ষে স্ত্রী-সন্তান ও ছোট ভাই নজরুল ইসলামকে নিয়ে বসবাস করতেন রফিকুল ইসলাম। তিনজনকে হত্যার ঘটনায় ছোট ভাই নজরুলকে দায়ী করেছেন রফিকুল। ঘটনার পর থেকে নজরুল পলাতক আছেন। তাকে ধরতে অভিযান চলছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

কান্নাজড়িত কণ্ঠে রফিকুল ইসলাম বলেন, “আমার ভাই একটি হত্যা মামলার আসামি। তাকে আড়াই মাস আগে ৪০ হাজার টাকা দেনা করে জেল থেকে ছাড়িয়ে এনেছি। এরপর সে আমার সঙ্গেই থেকে অটোরিকশা চালাত।

“এক রুমের বাসায় থাকতে কষ্ট হত, তাই দেড় মাস আগে পনাশাইল এলাকায় দুই রুমের ভাড়া বাসা নেই। এক রুমে আমি পরিবার নিয়ে আর অন্য রুমে নজরুল থাকত। মাঝেমধ্যে খাওয়া-দাওয়া নিয়ে আমার স্ত্রীর সঙ্গে ঝগড়া হত। আর কোনো সমস্যা ছিল না।”

তিনি বলেন, “রোববার রাত ৮টার সময় আমি ডিউটিতে চলে যাই। পরে সাড়ে ১০টার দিকে বাসায় কল দিলে ময়নার নম্বর বন্ধ পাই। তারপর নজরুলের নম্বরে কল দিয়ে ময়নার সঙ্গে কথা বলি।

“সোমবার সকালে বাসায় এসে দরজা বন্ধ পাই এবং গেইট তালাবদ্ধ ছিল। পরে বাসার মালিককে নিয়ে তালা ভেঙে দেখি তাদের রক্তাক্ত মৃতদেহ। ভাইকেও (নজরুল) আর খুঁজে পাইনি। তার মোবাইলও বন্ধ। সে সবাইকে হত্যা করে পালিয়েছে।”

নজরুল এমন করবে জানলে তাকে জেল থেকে বের করতেন না বলে আক্ষেপ করে কথাগুলো বলেন রফিকুল।

ময়নার বোন আছমা আক্তার বলেন, “খবর শুনে এসে দেখি আমার বোন ও তার দুই সন্তানের লাশ খাটের ওপর পড়ে আছে। আমার বোন জামাই খুব ভালো মানুষ। ৯ থেকে ১০ বছর আগে তাদের বিয়ে হলেও কোনোদিন ঝগড়া হয়নি। নজরুল আমার বোন ও ভাগ্নে-ভাগনিকে মেরেছে। তা না হলে সে পলাতক কেন?”

 

 

বাসার মালিক হৃদয় হাসান হাইয়ুম বলেন, “দেড় মাস আগে বাসা ভাড়া নিয়েছেন রফিকুল। এক রুমে রফিকুল তার পরিবার নিয়ে এবং অন্য রুমে তার ভাই নজরুল থাকত। তবে তাদের মধ্যে কোনো মনোমালিন্য দেখিনি। কেন এমন ঘটনা ঘটল তাও বলতে পারছি না।”

ময়মনসিংহের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ভালুকা সার্কেল) মনতোষ সাহা বলেন, পারিবারিক কলহের জেরে হত্যাকাণ্ডটি ঘটেছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত দা উদ্ধার করা হয়েছে। তদন্ত ছাড়া বেশি কিছু বলা যাচ্ছে না।

রফিকুলের ছোট ভাই নজরুলকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে বলে জানান পুলিশের এই কর্মকর্তা।

 

 

ময়মনসিংহ প্রতিনিধি : বিডিপলিটিক্স টোয়েন্টিফোর ডটকম