ঈদে মার্কেট ঘিরে সক্রিয় ছিনতাইকারী চক্র, টার্গেট ক্রেতাদের ভিড়
- আপডেট সময় ০৯:৪২:৪৫ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৮ এপ্রিল ২০২৩
- / ১২০ বার পড়া হয়েছে
আসন্ন ঈদ উৎসবকে সামনে রেখে গাজীপুরের শ্রীপুর পৌরসভার শিল্পাঞ্চল হিসেবে পরিচতি ব্যস্ততম মাওনা চৌরাস্তার বিভিন্ন বিপণিবিতানে জমে উঠেছে বেচাবিক্রি। শপিংমলগুলোতে মানুষের উপচে পড়া ভিড়। বেড়েছে মানুষের চলাচল, বেড়েছে যানচলাচল। আর এ সুযোগেই তৎপরতা শুরু করেছে অপরাধীরা।
নিজেদের পছন্দের পোশাক কিনতে উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে ক্রেতারা ভিড় জমাচ্ছেন দোকানগুলোতে। ঈদ ঘিরে পছন্দের কেনাকাটায় ক্রেতার সরগরম উপস্থিতির সুযোগে মাওনা উড়াল সেতুর নিচে ছিনতাইকারী চক্রের দৌরাত্ম্যও বেড়েছে। ব্যবসায়ীরা জানান, ছিনতাইকারীদের ধরে থানায় ফোন দিলেও পুলিশ ‘আসতেছি’ বলে দুই/তিন ঘণ্টা পার হলেও আসে না। তাছাড়া থানায় দেওয়ার পর পুলিশ ব্যবসায়ীদেরকে বাদী হতে বলে। বাদী হওয়ার ঝামেলা এড়াতে তারা ব্যবসায়ীরা আটক ছিনতাইকারীদের থানায় সোপর্দ করার আগ্রহও হারিয়ে ফেলছেন।
ছিনতাইকারী চক্রের খপ্পরে পড়ে মোবাইল ফোন খুইয়েছেন মার্কেটে ঈদের কেনাকাটা করতে আসা একাধিক ক্রেতা। পাশাপাশি ছিনতাইকারী চক্রের কবলে পড়ে মূল্যবান মালামাল হারিয়েছেন অনেকেই। ঈদ ঘিরে মাওনা এলাকায় ছিনতাইকারী চক্রের দৌরাত্ম্য বৃদ্ধিতে ক্রেতার পাশাপাশি চরম উদ্বিগ্ন হয়ে উঠেছেন ব্যবসায়ীরাও। স্থানীয় ইয়াকুব আলী মাস্টার টাওয়ারের সিকদার ফ্যাশনের মালিক টিটু সিকদার বলেন, ঈদ সামনে রেখে মাওনা চৌরাস্তার প্রতিটি মার্কেটের দোকানগুলোতে জমজমাট হয়ে উঠেছে বেচাবিক্রি।
নিজের পছন্দ অনুযায়ী পোশাক কিনতে উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে কেনাকাটা করতে আসছেন হাজারও মানুষ। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে বাজারে হঠাৎ সক্রিয় হয়ে উঠেছে একাধিক ছিনতাইকারী চক্র। তারা বিভিন্ন মার্কেটে ক্রেতার ভিড়ের সুযোগ কাজে লাগিয়ে হাতিয়ে নিচ্ছে মোবাইল ফোন ও মূল্যবান মালামাল। সম্প্রতি মাওনা চৌরাস্তা উড়াল সেতুর নিচ দিয়ে উত্তর পাশের কাটা দিয়ে ভিড়ের মধ্যে মহাসড়ক পার হওয়ার সময় নারী পথচারী তাসলিমা খাতুনের ব্যাগের চেইন কেটে নগদ টাকা ও সময় টিভির লোগো সম্বলিত একটি চাবির রিং ছিনতাই করে নিয়ে যায়।
ব্যবসায়ীরা জানান, রমজান শুরুর এক সপ্তাহ পর থেকে কিতাব আলী প্লাজা, ভাই ভাই সুপার মার্কেট, আব্দুল বাতেন পাইকারি মার্কেট, ইয়াকুব আলী মাস্টার টাওয়ার, আবুল হাসেম সুপার মার্কেট, মোবাইল মার্কেট, মালেক মাস্টার সুপার মার্কেট ও ইয়াকুব আলী মাস্টার ১নং সুপার মার্কেট রয়েছে। এসব মার্কেটে ১০ রমজানের পর থেকেই বিক্রি প্রচুর বিক্রি হচ্ছে। গত কয়েকদিনে মার্কেটের সামনে থেকে অন্তত ১৫ জন ক্রেতার মোবাইল ছিনতাই করেছে ছিনতাইকারী চক্র।
জানা গেছে, শুক্রবার (৭ এপ্রিল) দুপুর ১২টার দিকে ঈদের কেনাকাটা করতে আসা এক নারীর ব্যাগ থেকে মোবাইল ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় স্থানীয়রা এক ছিনতাইকারীকে আটক করলেও আরেকজন দৌড়ে পালিয়ে যায়। জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করে, সে উপজেলার রঙ্গীলা বাজার এলাকার তোফাজ্জল হোসেনের বাড়িতে ভাড়া থাকে। তার বাড়ি ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলায়। তার সঙ্গে হোসেন, আজহারুল রাকিব, মোফাজ্জল, জহিরুল ইসলাম রয়েছে। তারা ১০/১২ জনের একটি চক্র মাওনা চৌরাস্তা এলাকায় ছিনতাইয়ের সঙ্গে জড়িত রয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যবসায়ী জানান, স্থানীয় কয়েকজনের নেতৃত্বে ১৫/২০ জনের একটি কিশোর গ্যাং রয়েছে মাওনা চৌরাস্তা উড়াল সেতুর নিচে। নারীরাও জড়িত রয়েছে এই সংঘবদ্ধ চক্রের সঙ্গে। এ চক্রের সদস্যরা সার্বক্ষণিক সেতুর আশপাশ এবং বিভিন্ন শপিং সেন্টার, মার্কেটে সার্বক্ষণিক অবস্থান নেয়। তাদের প্রত্যেকের সঙ্গে ছুরিও থাকে। এখানে প্রতিদিনই নারী এবং পুরুষ ক্রেতাদের মোবাইল ও টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে। ঈদ বাজার জমে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে চোর-ছিনতাইকারীদের তৎপরতা বৃদ্ধি পেলেও এখন পর্যন্ত প্রশাসনের তেমন কোনও ভূমিকা না থাকায় চরম উদ্বিগ্নতার পাশাপাশি হতাশায় ভুগছেন ব্যবসায়ীসহ ক্রেতারা। কিন্তু এসব প্রতিরোধে যেন কেউ নেই। দ্রুত এসব ছিনতাই রোধে ব্যবস্থা নিতে প্রশাসনের সহযোগিতা ও হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন তারা।
মাওনা চৌরাস্তা বণিক সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট আশরাফুল ইসলাম রতন বলেন, ‘স্থানীয়ভাবে ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে ছিনতাইকারী চক্রের হাত থেকে নিজেকে ও মূল্যবান মালামাল রক্ষার্থে মাইকিংয়ের মাধ্যমে নিয়মিত সচেতনতামূলক প্রচারণা চালালেও এখনও মার্কেটে পুলিশি টহল জোরদার করা হয়নি।’ শ্রীপুর থানার ওসি আবুল ফজল মো. নাসিম বলেন, ছিনতাইয়ের বিষয়টি ব্যবসায়ীরা আমাকে জানায়নি। আপনার (সাংবাদিক) মাধ্যমে আমি এই মাত্র বিষয়টি জানতে পারলাম। আজ থেকেই গুরুত্বপূর্ণ বাজারে টহল জোরদার করে ক্রেতা-বিক্রেতাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে।